নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তেজষ্ক্রিয় রশ্মি

রাকিব পলাশ

ভালবাসার ধুম্রজালে পুরোদমে আটকা আমি

রাকিব পলাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিথ্যাবাদী আমি_

১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৩১

০৬ এপ্রিল ২০১৪ হঠাৎ করেই বেজে উঠল ফোনটা। রিসিভ করতেই জরুরী রক্ত লাগবে বলে জানালো রজিব। ৮ বছরের একটা ছেলের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল এ রক্ত লাগবে। বিকেল ৪টার দিকে রওনা হলাম। পৌছানোর পর যখন ছেলেটার বাবাকে ফোন দিলাম। সে আরেকটা নাম্বার দিয়ে বলল সেই নাম্বারে যোগাযোগ করতে। একজন মহিলা ফোন ধরলেন এবং আমাকে রিসিভ করলেন। পেশেন্টের বেডে কাছে গিয়ে প্রথমেই বিস্মিত হলাম। আমার ব্লাড দেয়ার কথা ছিল একটা ৮ বছরের ছেলেকে কিন্তু এখানে একটা মেয়েকে দেখা যাচ্ছে। আমি মেয়েটার মাকে বললাম রক্ত কি এর লাগবে। উনি বললেন, হ্যা, আর তুমি যে ছেলেকে রক্ত দিতে আসছিলে তাকে রক্ত দেয়া হয়েছে। ঐ ছেলেটার আব্বু তোমাকে আমার কাছে পাঠাইছে আমার মেয়ের ও বি পজিটিভ লাগবে। আমি মেয়টার রোগ এবং অবস্থা সম্পর্কে ধারণা নিলাম।



মেয়েটার নাম নুপুর, বয়স ১১ বছর। অত্যন্ত মায়াবী চেহারা। ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। ওর মা আগে থেকে বুঝতে পারেনি। হঠাৎ করেই রক্ত বমি শুরু হলে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসা হয়েছে। আমি যখন ওকে দেখছি তখন ওর বেড থেকে ডক্টর’স রুমে আনা হয়েছে ক্যানোলা করার জন্য, কারন পূর্ববর্তী ক্যানোলা কাজ করছে না। মেয়েটার সারা ঠোঁটে, নাকে এবং চোখে এখনো রক্তের চিহ্ন বিদ্যমান। নড়াচড়া করার বিশেষ ক্ষমতা আর অবশিষ্ট নেই। কর্তব্যরত নার্স ক্যানোলা করার জন্য হাত বাঁধলেন কিন্তু দেখা মিললো না কোন ভেইন এর। আমি ওর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলাম তবুও বিশেষ কোনো সুবিধা হলোনা। নার্সটা নিডল ঢুকিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কার্যক্ষম ভেইন খুঁজছে, আর ব্যাথার দরুন মেয়েটা চোখ মুখ শক্ত করে চেপে ধরছে। যতটা কষ্ট পাচ্ছিলাম নুপুরের কষ্ট দেখে তার থেকে বেশি অবাক হচ্ছিলাম নার্সটার ধৈর্য্য দেখে। প্রায় দশ মিনিট চেষ্টার পর সফল হলাম আমরা। সাথের মহিলাটা মেয়েটাকে উঠানোর চেষ্টা করছে। আমি জানতে চাইলাম কোখায় নিয়ে যাবেন। উনি জানালেন পাশের কেবিনে ওর বেড। আমি দেখেই বুঝতে পারছি এই মেয়ের দ্বারা হেঁটে এতদূর যাওয়া সম্ভব না। অথচ এরা এভাবেই ওকে মুভ করাচ্ছে, কারন ওদের সাথে কোনও পুরুষ মানুষ নেই। মেয়েটার বাবা অনেক আগেই মারা গেছে। মা-ই ওর সব ধরনের দেখাশুনা করছে। আমি মেয়েটাকে কোলে নিয়ে ওর বেড পর্যন্ত নিয়ে গেলাম। হাঁটার সময় বারবার মেয়েটার নিষ্পাপ মুখটার দিকে তাকাচ্ছিলাম। কেমন যেন মায়াচ্ছন্ন হয়ে গেলাম। বেডে শুইয়ে দিয়ে একদম ওর মুখের কাছে বসে কথা বললাম কিছুক্ষন। ওর কথা বলতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল তবু আমার সাথে কথা বলল।



ইতিমধ্যেই নুপুরের আম্মুর ফোনে একটা কল এসেছে, আরেকজন ডোনার আসছেন, মেয়ে। উনি তাকে রিসিভ করে আনলেন। মেয়েটির সাথে কথা বললাম। উনিও আমার মতই ফেসবুকে দেখে এসেছেন। চার ব্যাগ রক্ত লাগবে, তিনজন ডোনার ম্যানেজ হয়েছে আরো একজন লাগবে। নুপুরকে আশ্বাস দিলামঃ



“তুমি খুব তাড়াতাড়িই সুস্থ হয়ে যাবে, ঠিক আছে?? টেনশন করো না, এই আমি আর এই আপু রক্ত দিলে সেটা তোমাকে দিলেই তুমি বাড়ি যেতে পারবা”



মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যা বোধক সাড়া দিল মেয়েটি। তারপর চলে গেলাম কোয়ান্টাম ব্লাড ব্যাংকে। আমার সাথের মেয়েটার ব্লাড স্ক্রিনিং রিপোর্টে ধরা পড়ল তার হিমোগ্লোবিন কম। সুতরাং সে দিতে পারল না। সাথে সাথেই চলে গেলেন রাবেয়া বসরী রুবা আপু। আরেকজন ডোনার তখনো এসে পোছায়নি। আমি তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। আমার ব্লাড দেয়া শেষ হলে আন্টিকে বিদায় জানিয়ে চলে এলাম। আন্টি রাত সাড়ে দশটার দিকে ফোন দিয়ে জানলেন আমি ঠিকমত পৌছেছি কিনা। বিস্মিত হলাম।



না নুপরকে বাঁচাতে পারেনি আমার রক্ত। রুবা আপু হয়ত জানতেও পারেনি সেই ফুটফুটে চেহারার মেয়েটা আর নেই। ০৯ এপ্রিল ২০১৪ তে নুপুর আমাকে মিথ্যে আশ্বাস প্রদানকারী জেনে চলে গেছে গভীর অভিমান নিয়ে। পচন্ড অপরাধী মনে হয় নিজেকে কারন আমার দেয়া আশ্বাসগুলো মিথ্যে প্রমানিত হয়েছে। হয়ত আমার আশ্বাসে আশায় বুক বেধেছিল ছোট্ট মেয়েটি, আবার বাড়ী যাবে, হুই হল্লোড় করবে, পুতুলের বিয়ে দিবে, মিছামিছি রান্না করবে, এই ভাইটাকে দাওয়াত করে খাওয়াবে সেই মিছে খাবার। নুপুর বাড়ি ফিরল ঠিকই কিন্তু লাশ হয়ে। মাফ করে দিস বোন তোকে বাঁচাতে পারলাম না।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:০০

কাজী রায়হান বলেছেন: :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.