নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রমিত

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল!

রমিত

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! ব্যাটা নিয়াজী বলেছিলো, “বাঙালী মার্শাল রেস না”। ২৫শে মার্চের পরপরই যখন লক্ষ লক্ষ তরুণ লুঙ্গি পরে হাটু কাদায় দাঁড়িয়ে অস্র হাতে প্রশিক্ষন নিতে শুরু করল, বাঙালীর এই রাতারাতি মার্শাল রেস হয়ে যাওয়া দেখে পাকিস্তানি শাসক চক্র রিতিমত আহাম্মক বনে যায়। সেই অসম সাহস সেই পর্বত প্রমাণ মনোবল আবার ফিরে আসুক বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে। দূর হোক দুর্নীতি, হতাশা, গ্লানি, অমঙ্গল। আর একবার জয় হোক বাংলার অপরাজেয় তারুণ্যের।

রমিত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধম্মপদ ও তাঁর কিছু বাণী

৩০ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:৪৪

ধম্মপদ ও তাঁর কিছু বাণী
--------------- ড. রমিত আজাদ



ধম্মপদ (পালি; প্রাকৃত: धम्मपद; সংস্কৃত: धर्मपद ধর্মপদ) হল কবিতার আকারে লেখা গৌতম বুদ্ধের বাণীর একটি সংকলন গ্রন্থ। এটি বৌদ্ধধর্মের সর্বাধিক পঠিত ও সর্বাধিক পরিচিত ধর্মগ্রন্থ। মূল ধম্মপদ গ্রন্থটি থেরবাদ বৌদ্ধধর্মের পালি ধর্মগ্রন্থ খুদ্দক নিকায়-এর অন্তর্গত।

পালি সুত্তপিটকের (সুত্রপিটকের) পাঁচটি নিকায় বা অংশ; তার পঞ্চমটির নাম খুদ্দক নিকায়। খুদ্দক নিকায় ১৬টি পুস্তকের সমষ্টি; তার দ্বিতীয় পুস্তকখানীর নাম ধম্মপদ। অনেকে মনে করে যে, ধম্মপদ পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম ধর্মগ্রন্থ।

বৌদ্ধ পণ্ডিত ও টীকাকার বুদ্ধঘোষের ব্যাখ্যা অনুসারে, বুদ্ধের জীবন ও তাঁর ধর্মসংঘের ইতিহাসে এক একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এই গ্রন্থের বাণীগুলি উচ্চারিত ও সংকলিত হয়েছে। তাঁর ধম্মপদ অট্ঠকথা টীকায় তিনি প্রতিটি ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। এই বইটি বুদ্ধের জীবন ও সময়ের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

ধম্মপদ শব্দটি “ধম্ম” ও “পদ” শব্দদুটি নিয়ে গঠিত। এই শব্দদুটির একাধিক অর্থ রয়েছে। সাধারণত, “ধম্ম” বলতে বুদ্ধের মতবাদ বা একটি “চিরন্তন সত্য” বা “সদ্গুণ” বা সবধরনের “ভাব”কে বোঝায়। এবং “পদ” বলতে “পথ” বা “কবিতা” অথবা দুটিকেই বোঝায়। ধম্মপদ-এর ইংরেজি অনুবাদে, এই জাতীয় শব্দেরই নানা জোড় ব্যবহৃত হয়েছে।

প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, ধম্মপদ-এর শ্লোকগুলি বুদ্ধের উক্তি। “বুদ্ধের বাণীকে তার জটিল গঠনভঙ্গিমা, তত্ত্বকথা, কাব্যিক ভঙ্গি ও আকারগত স্থূলতাকে পরিহার করে সংক্ষিপ্ত ও স্বচ্ছ কাব্যভাষায় প্রকাশ করে ধম্মপদ বুদ্ধের ধর্মকে সকলের কাছে উন্মুক্ত করে দিয়েছে… সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সশতাব্দীতে এই গ্রন্থ সংকলিত হয়েছিল ভারতের প্রাচীন বৌদ্ধসম্প্রদায়গুলির মধ্যে বুদ্ধের মূল বাণীকে সহজলভ্য করে তোলার জন্য।” এই গ্রন্থটি সুত্ত পিটকের খুদ্দক নিকায়ের একটি অংশ। যদিও এর শ্লোকগুলি অন্যান্য পালি গ্রন্থেও পাওয়া যায়। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে বুদ্ধঘোষ তাঁর ভাষ্যে এই গ্রন্থের সঙ্গে সম্পর্কিত ৩০৫টি গল্পের উল্লেখ করেন এবং সেই গল্পগুলির সঙ্গে ধম্মপদ-এর নির্দিষ্ট শ্লোকের সম্পর্ক দেখিয়ে দেন।

ধম্মপদ হল থেরবাদ সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় ধর্মগ্রন্থ। মূল পালি গ্রন্থটিই সর্বাধিক পরিচিত। তবে এই গ্রন্থের আরও কয়েকটি সংস্করণ রয়েছে।

নীচে ধম্মপদের কিছু বাণী উল্লেখ করলাম ও পাশাপাশি আমার মনের কিছু চিন্তাভাবনাও বললাম (আমি নির্জ্ঞান-মূর্খ মানুষ, তারপরেও চেষ্টা করলাম কিছু বোঝার)।

১. চিন্তা বা অভিপ্রায়ের প্রতিফলন ঘটে স্বভাব বা প্রকৃতিতে । যদি কেউ মন্দ অভিপ্রায় নিয়ে কথা বলে বা কাজ করে দুঃখ তাকে অনুগমন করে । আর কেউ যদি সুচিন্তা নিয়ে কথা বলে বা কাজ করে সুখ তাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করে । [যমকবগগোঃ ১-২]

(অর্থাৎ আভ্যন্তরিন ব্যাক্তিত্বই বহিঃব্যাক্তিত্ব হিসাবে প্রকাশ পায়)

২. আমাকে বকেছে, আমাকে মেরেছে, আমার জিনিষ কেড়ে নিয়েছে – এমন চিন্তা বা অভিযোগ যারা করে, ঘৃণা ও শত্রুতা তাদের চিরসঙ্গী হয় । আর যারা এরূপ চিন্তা করে না তাদের ঘৃণা ও শত্রুতা দ্রুত উপশম হয় । [যমকবগগোঃ ৩-৪]

৩. হিংসুক বা শত্রুর চেয়েও বিপদগামী চিত্ত মানুষের বেশী ক্ষতি করে । [চিত্তবগগোঃ ৪২]

(মানুষ নিজেই নিজের জন্য ব্যপক ক্ষতির কারণ হতে পারে)

৪. যার চিত্তে পাপ নাই, বাইরের পাপ তাকে স্পর্শ করতে পারে না । [পাপবগগোঃ ১২৪]

(বৌদ্ধ দর্শনে অন্তর্মূখীতা বেশী, অর্থাৎ মানুষের বাইরের জগৎটার চাইতে ভিতরের জগৎটাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। উপরের বাণীতে এটার প্রকাশ রয়েছে।)

৫. সকল মলের নিকৃষ্ট মল হল অবিদ্যা । হে ধ্যানী ! এই মল বর্জন করে নির্মল হও । [মলবগগোঃ ২৪৩]

(অজ্ঞানতা বা মূর্খতাই যে অনেক সমস্যা/দুঃখের কারণ সেই বিষয়টি বোঝানো হচ্ছে)


৬. অবিদ্যার কারণে যারা অসারকে সার আর সারকে অসার মনে করে তারা কখনো সত্যের সন্ধান পায় না । [যমকবগগোঃ ১১]

(অজ্ঞানতা কখনো সত্যের সন্ধান দিতে পারেনা)

৭. সত্য সচেতনতা অসৃতের পথ আর মূর্খতা মৃতপুরীর পথ । সত্য সচেতন ব্যাক্তিরা অমর হন আর মূর্খরা তো মৃত সদৃশ । [ অপপামদবগগোঃ ২১]
(মুর্খতা চরম বিপদ ডেকে আনে)

৮. ভালো কাজ সব সময় কর । বারবার কর । মনকে সব সময় ভালো কাজে নিমগ্ন রাখো । সদাচরণই স্বর্গসুখের পথ । [পাপবগগোঃ ১১৮]

৯. মিথ্যাবাদী, ধর্মলংঘনকারী ও পরলোকে অবিশ্বাসী ব্যাক্তি যে কোন পাপ কাজ করতে পারে । [লোকবগগোঃ ১৭৬]

(ধর্ম আর নৈতিকতা শব্দ দুটি মূলতঃ প্রতিশব্দ। উপরের বাণীতে পরলোকে অবিশ্বাসী অর্থাৎ নাস্তিক ব্যাক্তিগণ যে ভয়াবহ, ইহলৌকিক প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে বা নিমিত্তে যেকারো যে কোন প্রকার ক্ষতিসাধন যে তারা করতে পারে, সেইটিই বলা হয়েছে।)

১০. সৎ কর্মে সদা তৎপর থাকো । পাপ থেকে মনকে নিবৃত্ত কর । ভালো কাজে দীর্ঘসূত্রিতা বা আলস্যের প্রশ্রয় দিলে মন পাপে লিপ্ত হবে । [পাপবগগোঃ ১১৬]

(ভালো কাজ যত দ্রুত সম্ভব করা উচিৎ, আলস্য করলে সেই কাজটি করা নাও হতে পারে)

১১. আলস্যকে প্রশ্রয় দিওনা । ধর্মকে অনুসরণ কর । ইহলোক ও পরলোক – দুই লোকেই সূখে থাকবে । [লোকবগগোঃ ১৬৮]
(আলস্য-কে অধর্ম ও পরিশ্রম-কে ধর্ম বলা হয়েছে। পরিশ্রমীরা ইহলৌকীক জীবন ও পারলৌকিক জীবন দুই জীবনেই সূখী হবেন)

১২. আলস্য ও অতিভোজনের দরুন স্হুলকায় নিদ্রালু হয়ে বিছানায় গড়াগড়ি দেয়া স্বভাবে পরিণত হলে সেই মূর্খের জীবনে দুঃখের পুনঃ পুনরাবৃত্তি ঘটবে । [ নাগবগগোঃ ৩২৫]

(আলস্য ও ভোজনবিলাসীতার সমালোচনা করা হয়েছে)

১৩. মূর্খরা আলস্যে নিপতিত হয় । আর প্রাজ্ঞরা সচেতন প্রয়াসে সৎ কর্মে [ইবাদতে] সদা তৎপর থাকেন । [অপপমাদবগগোঃ ২৬]

(আলস্যের সাথে মূর্খতার সম্পর্ক রয়েছে। বস্তুত মূর্খরাই অলস হয়। কর্মঠরা হন প্রাজ্ঞ)

১৪. গন্ধহীন পুষ্পের ন্যায় কর্মবর্জিত সুন্দর বাক্যমালাও নিষ্ফল । [পুপকবগগোঃ ৫১]

(ভালো কাজ না করে কেবলই ভালো ভালো কথা বলা মূল্যহীন)

১৫. অর্থহীন শব্দমালার সহস্র বাক্যের চেয়ে মন প্রশান্তকারী একটি অর্থবহ বাক্য উত্তম । [ সহসসবগগোঃ ১০০]

(অপ্রয়োজনীয় কথা বলা মূল্যহীন। যে কথা মানুষের মনকে শান্তি দেয় তেমন কথাই বলা উচিৎ)

১৬. নিজেকে নিয়ন্ত্রণ কর । তারপর অন্যকে অনুশাসন কর । নিজে নিয়ন্ত্রিত হলে অন্যকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে । নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করাই কঠিন । [অত্তবগগোঃ ১৫৯]
(অন্যকে উপদেশ বা শাসন করার আগে নিজেকে শাসন বা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারা একটি কঠিন কাজ)

১৭. রাগের ন্যায় আগুন নাই , হিংসার ন্যায় গ্রাসকারক নাই, মোহের ন্যায় জাল নাই, আসক্তির ন্যায় খরস্রোতা নাই । [ মলবগগোঃ ২৫১]

(ক্রোধ, হিংসা, মোহ ও আসক্তি-কে ঋণাত্মক বলা হচ্ছে। অর্থাৎ মানুষের মন থেকে এগুলো দূর করতে হবে)

১৮. কাম বা আসক্তি থেকে শোক ও ভয় জন্মে । কাম বা আসক্তি না থাকলে শোক ও ভয় থাকে না । [পিয়বগগোঃ ২১৫-২১৬]
(কাম ও আসক্তি থেকে দুঃখ ও ভয়ের উদ্ভব হয়। কাম বা আসক্তি থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারলে শোক ও ভয় থেকে মুক্তি পাওয়া যায়)

১৯. যারা সদা সচেতন, দিবারাত্র জ্ঞান অনুশীলন করেন , যারা নির্বাণ লাভের প্রয়াসী তাদের সকল আসক্তি বিনষ্ট হয় । [কোধবগগোঃ ২২৬]
(জ্ঞান অনুশীলন-এর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। নির্বান লাভই চূড়ান্ত উদ্দেশ্য। আসক্তি থেকে হয় দুঃখ। জ্ঞান অনুশীলন করলে আসক্তি দূর হয়। জ্ঞান অনুশীলন-এর সাথে নির্বান লাভের সম্পর্ক রয়েছে)

২০. মার্গ বা পথের মধ্যে আর্য অস্টাঙ্গ শ্রেষ্ঠ, সত্যের মধ্যে চতুরার্য সত্য শ্রেষ্ঠ, গুনের মধ্যে নিরাসক্তই শ্রেষ্ঠ, আর মানুষের মধ্যে প্রাজ্ঞই শ্রেষ্ঠ । [মগগবগগোঃ ২৭৩]
(বুদ্ধের এই বাণিটি অল্প কথায় ব্যাখ্যা করা যাবেনা। এর বিশাল ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ প্রয়োজন)

২১. যিনি অস্হির চিত্ত, যিনি সত্যধর্ম অবগত নন, যার মানসিক প্রসন্নতা নেই, তিনি কখনো প্রাজ্ঞ হতে পারেন না । [ চিত্তবগগোঃ ৩৮]

(উপরের বাণীতে বলা হয়েছে প্রাজ্ঞ ব্যাক্তিই সর্বশ্রেষ্ঠ। আর এই বাণীতে প্রাজ্ঞ ব্যাক্তি কে তা সামান্য বলা হয়েছে। অস্হির চিত্ত, সত্যধর্ম সম্পর্কে অবগত নন ও মানসিক প্রসন্নতাহীন ব্যাক্তি প্রাজ্ঞ হতে পারে না)

২২. উচ্ছৃংখল ও মূর্খ ব্যাক্তির শত বছরের জীবনের চেয়ে প্রাজ্ঞ ও ধ্যানীর একদিনের জীবন উত্তম । [সহসসবগগোঃ ১১১]
(উচ্ছৃংখল ও মূর্খ ব্যাক্তির দীর্ঘ জীবন যে অর্থহীন তাই বলা হচ্ছে। ধ্যানের সাথে প্রজ্ঞার সম্পর্ক উল্লেখ করা হচ্ছে। ধ্যান ছাড়া প্রজ্ঞা অর্জন করা সম্ভব না)

২৩. প্রাজ্ঞ ব্যাক্তি কখনো নিন্দা বা প্রশংসায় প্রভাবিত হন না [পন্ডিতবগগোঃ ৮১]
(মুর্খরা মুর্খতা বশত প্রাজ্ঞ ব্যাক্তির নিন্দা করতে পারে। আবার কেউ প্রাজ্ঞ ব্যাক্তিকে মিছে খুশী করার জন্য প্রশংসাও করতে পারে। এর দ্বারা প্রভাবিত না হওয়াই ভালো, এবং প্রাজ্ঞ ব্যাক্তি এর দ্বারা প্রভাবিত হননা)

২৪. ওঠার সময় যে ওঠেনা, যৌবনের শক্তি থাকতেও আলস্যপরায়ণ, সংকল্প ও চিন্তায় আবসাদগ্রস্ত- এমন অলস ও দুর্বলচিত্ত প্রজ্ঞার সন্ধান পায় না ।
(যৌবন একটি উল্লেখযোগ্য সময়। এই সময় মানুষের দৈহিক শক্তি সামর্থ্য থাকে অনেক, সুতরাং এই সময়ে কাজ করার সুযোগ থাকে অনেক বেশি। কিন্তু যে তার যৌবনের এই শক্তিকে কাজে লাগায় না, অলস্য ও দুর্বলতায় কাটায় সে প্রাজ্ঞ হতে পারেনা)

২৫. শত্রুতা দ্বারা কখনো শত্রুতা বিনাশ করা যায় না । মিত্রতা দ্বারাই শত্রুতার নিরসন হয় । [ যমকবগগোঃ ৫]

(শত্রুতা কেবল শত্রুতাই বৃদ্ধি করে। শত্রুতার অবসান করাই উত্তম, আর সেটা সম্ভব কেবল মিত্রতার দ্বারাই। উল্লেখ্য: আমাদের দেশের বর্তমানে অনেকেই এই বিষয়টি বুঝতে পারেনা, তারা মনে করে শত্রু চিরকালের জন্যই শত্রু, তার সাথে মিত্রতা স্থাপন করার চিন্তা করাটাই ঠিক না)

২৬. যে ব্যাক্তি অন্যকে দুঃখ দিয়ে নিজে সুখ পেতে চায়, সে ঘৃণার আবর্ত থেকে মুক্ত হতে পারে না [পকিন্নকবগগোঃ ২৯১]
(অন্যকে দুঃখ দিয়ে নিজে সুখ পেতে চায় এমন মানুষ জগতে অনেক। তারা হয়তো তাৎক্ষণিক ফলাফলটির দিকে তাকায়। কিন্তু সুদুরপ্রসারী ফলাফলের দিকে তাকালে দেখা যায়, যাকে বা যাদেরকে সে দুঃখ দিলো তাদের কাছ থেকে সে কেবল ঘৃণাই অর্জন করে এর অন্তিম ফলাফল খারাপই হয়ে থাকে)

২৭. সবাই জীবন ভালোবাসে । সবাইকে নিজের মতো ভাবো । কাউকে কখনো আঘাত বা কষ্ট দেবে না । [দন্ডবগগোঃ ১৩০]
(আমি যেমন আমার জীবন ও আমাকে ভালোবাসি, তেমনি অন্য ব্যাক্তিও নিজেকে ভালোবাসে, আমার মত তারও সুখ-দুঃখ বোধ আছে। কোন ক্রমেই অন্যকে আঘাত দেয়া যাবেনা। আঘাতে আমার যেমন কষ্ট হয়, অন্যেরও তেমনি কষ্ট হয়)

২৮. কাউকে কটু কথা বলবে না । কারণ সে-ও কটু প্রতুত্তর দিতে পারে । উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় তোমার জন্যও কষ্টদায়ক হবে । দন্ডের প্রতিদন্ড তোমাকেও স্পর্শ করবে । [দন্ডবগগোঃ ১৩৩]

(কাউকে আঘাত করলে প্রতিঘাত পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কাউকে আঘাত দেয়ার আগে বিষয়টা ভেবে দেখা উচিৎ)

২৯. রণক্ষেত্রের সহস্রযোদ্ধার ওপর বিজয়ীর চেয়ে রাগ-ক্রোধ বিজয়ী বা আত্নজয়ী বীরই বীরশ্রেষ্ঠ । [সহসসবগগোঃ ১০৩]
(বৌদ্ধ ধর্মের অন্তর্মূখীতা প্রকাশ পাচ্ছে। বাইরের জগতে বিশাল সৈন্যবাহিনীর সাথে জয়ী হওয়ার চাইতে নিজের রিপুকে জয় করা অনেক কঠিন)

৩০. কোন পাপকেই ক্ষুদ্র মনে কর না । ক্ষ্রুদ্র ক্ষ্রুদ্র পাপ-ই জমা হতে হতে মূর্খের পাপের ভান্ড পূর্ণ করে ফেলে । [পাপবগগোঃ ১২১]
(পাপ পাপই তার ছোট-বড় দেখে লাভ নাই। কারণ ছোট পাপ ভেবে ক্রমাগত পাপ করে যেতে থাকলে সেগুলো জমা হয়ে হয়ে একসময় পরিমানে অনেক হবে)

৩১. পাপী ইহলোক ও পরলোক – উভয়লোকে মনস্তাপে দগ্ধ হয় । অপরদিকে পূণ্যবান উভয়লোকেই পরমমানন্দ লাভ করেন । [যমকবগগোঃ ১৭-১৮]

৩২. পাপের প্রতিফল না পাওয়া পর্যন্ত মূর্খরা পাপকেই অমৃত বলে মনে করে । মনস্তাপ শুরু হয় পাপের ফল পাওয়ার পর । [ বালবগগোঃ ৬৯]

৩৩. ক্রোধকে ক্ষমা দ্বারা, অন্যায়কে ন্যায় দ্বারা , কৃপণকে দান দ্বারা, মিথ্যাকে সত্য দ্বারা জয় কর । [কোধবগগোঃ ২২৩]
(ক্ষমা মহৎ গুন, ক্রোধ নতুন ক্রোধেরই কেবল জন্ম দেয় আর ক্ষমা ক্রোধের অবসান ঘটায়। একইভাবে ন্যায় অন্যায়কে, দান কার্পণ্যকে ও সত্য মিথ্যাকে জয় করে)

৩৪. ভালো বা সমমনা সঙ্গী না পেলে একাকী ভ্রমণ উত্তম । মূর্খ সংসর্গ সবসময় বর্জনীয় [বালবগগোঃ ৬১]
(অসমমনা ব্যাক্তি সাধারণত সঙ্গী হয়না, মন ও মতের মিল না হলে বন্ধুত্ব হয় না। তদুপরী অসমমনা ব্যাক্তির সঙ্গ পেলে ভ্রমন সুখকর হয়না)

৩৫. মূর্খরা ‘আমার পুত্র, আমার অর্থ, আমার ধন’ এই চিন্তা করে যন্ত্রণা ভোগ করে । যখন সে নিজেই নিজের না তখন পৃত্র বা ধন তার হয় কিভাবে ? [বালবগগোঃ ৬২]
(সুগভীর একটি বাণী। এই বাণীর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণও অল্পকথায় করা সম্ভব নয়। আমি নিজেই নিজের না এটা আধুনিক বিজ্ঞান পড়লে কিছুটা বোঝা যায়। আমার দেহের বেশীরভাগই আমার নিয়ন্ত্রণে নাই। যেমন, রক্ত-চলাচল, হৃদস্পন্দন, হজম, কোষ থেকে কোষান্তরে তথ্য থেকে শুরু করে নানা কিছুর বহন ও রেচন। এমনকি একটি দেহকোষের যাবতীয় কার্যকলাপও আমার নিয়ন্ত্রণে নাই)


৩৬. বর্ষাকালে এখানে , শীত-গ্রীষ্মে ওখানে বাস করবো- মূর্খরা এভাবেই চিন্তা করে । শুধু জানে না জীবন কখন কোথায় শেষ হয়ে যাবে । [মগগবগগোঃ ২৮৬]
(আমরা অনিয়শ্চয়তার জগতে বসবাস করি। ভবিষ্যৎ পুরোটাই অনিশ্চিত)

৩৭. লোভ হচ্ছে কঠিনতম রোগ, সংস্কার চরম দুঃখ, সুস্বাস্হ্য পরম লাভ , সন্তুষ্টি পরম ধন, বিশ্বাসই পরম বন্ধু, নির্বাণ পরম সুখ । [সুখবগগোঃ ২০৩-২০৪]

(কিছুদিন আগে একজন পেশাজীবি ব্যাক্তির সাথে আলাপ করছিলাম। তিনি তার পেশাগত প্রতিষ্ঠানে নানাবিধ পশ্চাদপদতার কথা বললেন। আমি বললাম, "আপনারা সংষ্কার করছেন না কেন?" তিনি উত্তরে বললেন, "রিফর্ম ইজ ভেরীমাচ পেইনফুল।" সন্তষ্টিই সুখের মূল।)

৩৮. ধর্মশিক্ষা দান সর্বোত্তম দান, ধর্মের আলো সর্বোত্তম আলো, ধর্ম পালন সর্বোত্তম আনন্দ, আসক্তির বিনাশ সর্বদুঃখে বিজয় । [তনহাবগগোঃ ৩৫৪]

৩৯. খারাপ ও নিজের জন্যে ক্ষতিকর কাজ করা সহজ । নিজের জন্য কল্যাণকর কাজ করা সব সময়ই কঠিন । [অত্তবগগোঃ ১৬৩]
(খারাপ কাজ করা সহজ, ভালো কাজ করা কঠিন)

৪০. জন্মসুত্রে কেউ ব্রাক্ষণ হয় না । যিনি অহিংস, আসক্তিরহিত, পাপমুক্ত, ভীতিশূন্য, কপটতা বর্জিত , কাম-ক্রোধমুক্ত, বিশুদ্ধচিত্ত, ক্ষমাশীল, প্রজ্ঞাবাণ, সত্য ও ধর্মানুরাগী, সদালাপী ও সদাচারী , তিনিই ব্রাক্ষণ অভিধাযোগ্য । [ব্রাক্ষণবগগোঃ ৩৯৬-৪০৮]
(বৈদিক ধর্মে মানুষের সামাজিক অবস্থান, মান-মর্যাদা নির্ধারিত হয় জন্মসূত্রে। কিন্তু বৌদ্ধ দর্শন হেটেরোডক্স (অবৈদিক), এই দর্শনে মানুষের মান-মর্যাদা নির্ধারিত হয় কর্মসূত্রে)


৪১. প্রজ্ঞা ছাড়া ধ্যান নাই । ধ্যান ছাড়া প্রজ্ঞা সৃষ্টি হয় না । যার ধ্যান ও প্রজ্ঞার সমন্বয় হয়েছে তিনিই নির্বাণ স্তরে পৌছেছেন । [ভিকখুবগগোঃ ৩৭২]

(প্রজ্ঞা ও ধ্যানের গভীর সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে। এই পৃথিবীর খ্যাতিমান সকল প্রজ্ঞাবান ব্যাক্তিই জীবনের কোন একটা সময় ধ্যান করেছেন। নির্বান লাভের শর্ত হিসাবে ধ্যান ও প্রজ্ঞার সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে।)

৪২. যিনি সত্য, ধর্ম, ন্যায়, অহিংসা, সংযমের প্রতীক; যিনি পাপমুক্ত, নির্মল ও প্রাজ্ঞ তিনিই স্হবির । [ধম্মটঠবগগোঃ ২৬১]
(স্হবিরতা বিষয়টি নিয়েও অল্প কথায় কিছু বলা সম্ভব না। দীর্ঘ আলোচনা প্রয়োজন)

৪৩. যিনি পূর্ব নিবাস স্মৃতিজ্ঞ, যিনি স্বর্গ-নরক প্রত্যক্ষ করেছেন, যার অভিজ্ঞতা ও ধর্মজ্ঞান পরিপূর্ণতা লাভ করেছে এবং সর্বকর্ম সম্পাদন করেছেন, তিনিই আলোকপ্রাপ্ত । তি্নিই নির্বাণ লাভ করেন, তার তৃপ্ত জীবন লীন হয় অনন্ত প্রশান্তিলোকে । [ব্রাক্ষণবগগোঃ ৪২৩]

(উপরের বাণীটিও অত্যন্ত গভীর। অল্প কথায় এর আলোচনা সম্ভব নয়।)

৪৪। যিনি অন্ধবিশ্বাসহীন (অশ্রদ্ধ), যিনি অকৃতজ্ঞ (নির্বানজ্ঞ), যাহার বন্ধনছিন্ন (পুনর্জন্মের) অকাশ নষ্ট এবং কামনা নিবৃত্ত হইয়াছে – তিনিই পুরুষোত্তম। ৯৭

(অককোধেন জিনে কোধং অসাধুং সাধুনা জিনে, জিনে কদরিয়ং দানেন সচচেন অলিকবাদিনং। ২২৩)

৪৫। মৈত্রীর দ্বারা ক্রোধ জয় করিবে; সাধুতা দ্বারা অসাধুকে জয় করিবে; ত্যাগের দ্বারা কৃপণকে জয় করিবে ও সত্যের দ্বারা মিথ্যাবাদীকে জয় করিবে।


The Dhammapada and some verses
----------------------------------- Dr. Ramit Azad

তথ্যসূত্রঃ

১। https://bn.wikipedia.org
২। Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.