নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অচল কথন

কাজী সোহেল রানা

১৯৮৭

কাজী সোহেল রানা › বিস্তারিত পোস্টঃ

অরক্ষিত জরায়ু, সুসজ্জিত রক্ষীবাহিনী

০১ লা আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:০৯

কয়েকদিন আগে মাগুরাতে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি আমরা সকলেই জানি। ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক অন্তসত্বা গুলিবিদ্ধ হন। আশংকাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তাকে বাঁচানোর জন্য গর্ভের বাঁচ্চার মায়া ত্যাগ করে নির্ধারিত সময়ের এক মাস পূর্বেই অপারেশন করে ঐ বাঁচ্চা বের করে আনা হয়। সেখানে দেখা গেল এক নৃশংস দৃশ্য! সদ্য জন্ম নেওয়া বাঁচ্চার শরীরে একাধিক বুলেটের আঘাত। পৃথিবীতে এই বোধহয় প্রথম মানব সন্তান, যে জন্মের আগেই সন্ত্রাসীদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়। আরও আশংকার কথা এটাই, এই সুকাজের জন্য এখনো কাওকে আটক করতে পারেনি আমাদের সুদক্ষ পুলিশ বাহিনী। হয়ত ধরার চেষ্টাই করে নি।
এবার আসুন এদের অতিত নিয়ে একটু ঘেটে দেখি। ১৯৭১ সালের মে মাস। পাক হানাদার বাহিনীর সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ শুরু করেছে মুক্তিকামী বাঙ্গালী বীর সেনানীরা। প্রতিদিন হাজার হাজার যুবকেরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে যাচ্ছে ট্রেনিংয়ের জন্য। জীবনের বিনিময়ে তারা দেশ মাতাকে মুক্ত করতে চায়। সদ্য গঠিত মুজিব নগর সরকার কলকাতা থেকে সকল বিষয় পর্যবেক্ষণ করছেন। সরকার প্রধান তাজউদ্দিন আহমেদ, আর মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানি। তবে সকল মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণা একজন, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এভাবেই চলছিল সব। তবে এ সবকিছুর আড়ালে ঘটে যায় আরেকটি ঘটনা, যা কেউই তখন জানতে বা বুঝতে পারেনি।
মুক্তিযোদ্ধাদের সমান্তরাল আরেকটি বাহিনি গড়ে তোলে ভারত। যেটি গঠিত হয় সেসময়কার ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে। তুলনামুলকভাবে অধিক প্রশিক্ষিত এবং আধুনিক অস্ত্র সজ্জিত এ বাহিনী কার্যক্রম শুরু করে মে মাসে। কিন্তু এ বাহিনী সম্পর্কে তাজউদ্দিন আহমেদকে জানানো হয় নভেম্বরে। এ বাহিনী সম্পর্কে জেনারেল ওসমানী কেও কিছু জানানো হয়নি। এমনকি তার কমান্ড ও মানতো না এরা।
মেজর জেনারেল উবান, যার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হয় মুজিব বাহিনী- এ বাহিনীকে তিনি Brainchild of RAW বলে উল্লেখ করেছেন। মেজর জেনারেল উবান তার বই 'Phantoms of Chittagong' এ একথা বলেন। তিনি তার বইয়ে আশ্চার্যন্বিত হয়ে বলেন, বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার প্রধান তাজউদ্দিন আহমেদকে পর্যন্ত এ বাহিনী সম্পর্কে অবহিত করা হয়নি।এমনকি তদকালীন আওয়ামিলীগ নেতৃত্ব ও এ বাহিনী গঠন নিয়ে প্রশ্ন ও অসন্তোস জানিয়েছে।
মূল নেতৃত্ব হতে বাইরে এরুপ্‌ একটি বাহিনী গঠনের কি প্রয়োজন ছিল? এ সম্পর্কে মেজর জেনারেল উবান বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের এক বিরাট অংশ ই ছিলেন বাম দলের নেতা-কর্মীরা। যাঁদের ভারত কখনোই নিরাপদ ভাবতো না। মূলত বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যেন বামেরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, তাদের দমন করার জন্যই মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী গঠন করার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু আমাকে ঢাকায় ডেকে পাঠান। রক্ষী বাহিনি নামে এ বাহিনি গঠন করা হয়। আমি অবাক হয়ে গেলাম এটা দেখে যে, এ রক্ষী বাহিনী মূলত মুজিব বাহিনীর নতুন সংস্করণ!
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনীর উল্লেখযোগ্য কোন অবদান ই নাই। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সৃষ্ট রক্ষী বাহিনীর কাজের ফিরিস্তি অনেক। হিন্দু সম্পত্তি দখল, বাম আদর্শের মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা সহ সব কাজেই তাদের পদচারণা। এ সম্পর্কে তথ্যবহুল উপস্থাপনা রয়েছে মেজর এম এ জলিল (যিনি একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা এবং একজন সেক্টর কমান্ডার) এর 'অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা' বইয়ে। পুরোপুরি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে এ রক্ষী বাহিনী। তাদের অত্যাচার থেকে স্বাধারণ মানুষ ই নয় মুক্তিযোদ্ধারা পর্যন্ত বাচতে পারেনি।
আজকের এ ছাত্রলীগ ঐ রক্ষী বাহিনীর ই বংশধর। তখনো তারা অস্ত্রবলে সজ্জিত ছিল, এখনো এরা আছে। পার্থক্য শুধু সময়, স্বভাব একই আছে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৩১

নতুন বলেছেন: যে যায় লংকায় সেই হয় রাবন।

২| ০১ লা আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৪৪

কাজী সোহেল রানা বলেছেন: তাই ইতো মনে হচ্ছে @ নতুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.