নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রঙ্গিন চশমা

রঙ্গিন চশমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বি সি এস স্মৃতিকথা

১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৩৩

২০১২ সাল । ইন্টার্র্নি চলছে । হাসপাতালে সহকর্মিদের বি সি এস পড়া শুনাতে অন্ত নেই । আমিও যে পড়ছি না ব্যাপারটা এরকম নয় । তবে খুব বেশি চিন্তা অনুভব করছিলাম না । কারন ছোট বেলা থেকেই আমি মোটামুটি অংকে ভাল । তাই অংকের ২০ মার্ক আমি পাব এতটুকু আত্মবিশ্বাস ছিল । (নিজের ঢোল একটু পিটিয়ে নিলাম আর কি , কাহিনি শেষে আবার বইলেন না যে এই রকম গাধা ক্যামনে চান্স পাইল ) বরাবরের মতই পরীক্ষার আগে মনে হল , পরীক্ষা যদি ১ সপ্তাহ পিছিয়ে যেত তবে সেইরাম প্রস্তুতি থাকত । এইবারের মত যাক , ৩৪ তম থেকে দেখাই দিব , আমি কি জিনিস ?

এরই মধ্যে কি সব রিট হল পরীক্ষা ১ সপ্তাহ পিছিয়ে গেল । পরীক্ষা উপলক্ষে অভিজ্ঞতা এইটুকু হল এই দেশে যদি মনের মত কিছু না হয় তাহলে একটা রিট করাও । এই রিটের উছিলায় প্রস্তুতি কিছুটা গুছিয়ে নাও ।



পরীক্ষার সিট পড়েছে ইডেন কলেজে । আহারে আবেগে কাইন্দা ফেলাইলাম । আমার জীবনের সব গুরুত্তপুর্ন পরীক্ষার সিট গার্লস স্কুল আর মহিলা কলেজে হয় ক্যারে ? আহারে ছোট বেলাই (?) কত কসরত করছি গার্লস স্কুল এ ঢোকার জন্য । আর এখন দেখি না চাইতেই শিলা বৃষ্টি ।



পরীক্ষার দিন সকালে রউনা হলাম । ও আল্লাহ কোন রিকশা দেখি যাইতে চাই না । রিকশাওয়ালা দের দেখি কোন আবেগ নাই ।ইডেন কলেজ এর কথা বললে তো বিনা ভাড়ায় নিয়ে যাবার কথা , সেখানে টাকা দিয়েউ যাইতে পারতেছি না । এরপর আইলো বৃষ্টি । বন্ধু মেহেদি কে বললাম , দোস্ত ইডেনে যাউয়ার চেয়ে চল হাইকোর্ট যাই । একটা রিট করি যদি পরীক্ষা পিছায় আর কি! অবশেষে দিগুন ভাড়াতে বৃষ্টির মাঝে ইডেন কলেজে পৌছুলাম ।



পরীক্ষার হলে সিট দেখে ত অবস্থা খারাপ । একেবারে টিচার দের টেবিলের সামনে । বুঝলাম ৩৪ ই ভরসা ।এই যাত্রায় শুধু অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ করতে হবে । আমার পাশের সিট তখনও খালি ।

ঢাকা কলেজের একজন আসল ।

প্রস্তুতির যে অবস্থা তাতে পরিচয় দিতে ভয় হল । হাজার হলেউ মেডিকেল কলেজের ত মান সম্মান ডুবান যায় না ।

-কেমন আছেন ? আমি রাশেদ রাব্বি (হাত টা এগিয়ে দিলাম )

বুঝলাম না লোকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল...।

_ হ্যাঁ । আমি ...............।

- কোথায় পড়েন ?

- ঢাকা কলেজ ।

- কোন সাবজেক্ট?

- ইকোনমিক্স । আপনি?

- এই স্থানিয় একটা কলেজে পড়ি আর কি ।

- কোন সাবজেক্ট?

- এই বায়োলজি রিলেটেড ।

- তাহলে বিজ্ঞান ত ভালই পারবেন ।

- না আসলে ইন্টারের পর তো আর পড়া হই নি । আপনার কি প্রথমবার?

- না । ৩য় । আপনার ?

- এইবার প্রথম আর কি ? দেখতে এলাম বিসি এস পরীক্ষা কেমন হই ।

ভুল টা এখানেই করলাম । প্রথমবার শুনে লোকটি আমার প্রতি তার সমস্ত আগ্রহ হারিয়ে ফেলল । আমি পুরাই হতাশ । এটা কি করলাম । একজন অভিজ্ঞ লোক কে হারালাম ।



এরপর পরিক্ষক রা ঢুকলেন । ও মোর খোদা । স্লিভলেস ব্লাউজ , লাল রঙের শাড়ি , ফর্সা অল্প বয়স্কা এই মাডাম সামনে থাকলে আমি ক্যামনে পরীক্ষা দিব ?

চোখ বন্ধ করে আল্লাহ কে ডাকলাম , “আল্লাহ , হযরত ইউসুফ (আ) এর মত পরীক্ষা আমারে নিয় না । প্রশ্ন সহজ কর , যাতে আমি এই মাডামের রূপে বিমহিত না হয়ে প্রশ্নের জাদুতে বিভোর থাকি ।

এই ধরনের লেডি টিচার দের পরীক্ষার হলে না পাঠানই পরিক্ষার্থিদের জন্য মঙ্গল । আশা করি কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টা খেয়াল রাখবে ।



এরপর পরীক্ষা শুরু । পরিক্ষক তার হাতের সমস্ত প্রশ্ন আমার হাতে দিয়ে বললেন , একটা নিয়ে পিছনে দিয়ে দাও ।

পিছন থেকে এক মেয়ে বলে উঠল, ভাইয়া কোন সেট রাখলেন ? আমি খ সেট শুনে সে বলল , আমি ও খ সেট রাখলাম ।

বায়ে তাকিয়ে দেখি , এক ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে । মাথা নাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলাম , কি?

সে দুটো আঙুল তুলে v সাইন দেখাল । আমিও পালটা জবাব দিলাম । এরপর সে ok sign দেখাল । আমিও তাকে আশ্বস্ত করলাম । শেষে এমন অবস্থা হল যে আমি সহ আমার আশে পাশে সবার সেট একই । শুধু ঢাকা কলেজের অই ভাই ছাড়া । কারন সে আমার প্রতি হতাশ ছিল । যাই হোক । পিছনের মেয়েটা আর আমি “ দশে মিলে করি কাজ , হারি জিতি নাহি লাজ” ছোট বেলার এই ভাবসম্প্রসারনের পরিপুর্ন ব্যবহার আমাদের বাস্তব জিবনে করলাম ।

পরীক্ষার সময় ক্যামনে শেষ হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না । পরীক্ষা শেষ হতেই বুঝলাম চান্স হয়ে যাবে। এখন আর কেউ আটকাতে পারবে না ।

হল থেকে বের হয়ে মিস্টি না পেয়ে ঝাল মুড়ি খাইতে খাইতে মেসে চলে এলাম ।



..............................................................................................................................

লিখিত পরীক্ষা । হলে পৌছুলাম । প্রথমে অই মেয়েটার সাথে কথা বললাম । অর বাচ্চা আর সংসারের খোজ খবর নেবার পরে বললাম , পরীক্ষার প্রস্তুতির খবর কি? বলল , ভাইয়া অংক তেমন পারি না । একটু হেল্প করেন । ঠিক আছে , দেখা যাক । আমার পাশে তখন ঢাকা ভার্সিটির applied physics এর এক ভাই বসেছে । খুব মিশুক ধরনের । ছাত্রলীগের হল কমিটিতে আছে । যাই হোক । পরীক্ষা শুরু হল । আলহামদুলিল্লাহ ৫৫ মিনিটে পরীক্ষা শেষ । এই বার অন্যদের সাহায্য করার দরকার । আশে পাশের সবাই মিলে সেইরকম পরীক্ষা দিলাম । সবারই মানসিক দক্ষতা দেখি একই রকম ।

আন্তর্জাতিক যা লিখলাম । নিজেকে ত জাতিসংঘের মহাসচিব মনে হচ্ছিল । ইরান , কোরিয়া , থাইল্যান্ডের বিপ্লব সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান !!

সবচেয়ে মজা হল এক পরিক্ষায় TT এর elaboration লিখতে যেয়ে । আমি লিখলাম tetanus toxoid . পাশের ভাইয়া লিখল table tennis আর মেয়েটার মাধ্যমে পিছন থেকে খবর এল taka transfer .একটু পর T-twenty . কোনটা কি? মাথা তো আউলায় যাবে । যিনি প্রশ্ন করেছেন সেউ এত গুলা জানে কিনা সন্দেহ।

১০ টা দর্শনিয় স্থানের নাম । ৮ টা এক নিঃশ্বাসে লিখলাম । বাকি দুইটা । কি করি ? এবার শুরু হল , কার বাড়ি কোথাই । সামনের বেঞ্চের ভাইয়ার বাড়ি গোপালগঞ্জ । তার কাছ থেকে জেনে লিখলাম টুঙ্গিপাড়া । পিছনের মেয়েটার বাড়ি নাটোর । লিখলাম চলন বিল ।

ইংরেজি পরীক্ষাই খুব কড়া গার্ড দিল । মাথা একটু ঘুরাতে দেয় নাই । এর ফলে লাভ হল আমাদের । ইচ্ছা মত লিখলাম । কি লিখলাম জানি না । তবে অই পরীক্ষায় আমরা ৩ জনই ২ টা করে অতিরিক্ত কাগজ নিছি । হাজার হলেউ স্টুডেন্ট তো খারাপ না !

তবে খুব আশ্চার্য হয়েছি , applied physics এর ভাইয়া যখন আমার কাছে 3G এর অর্থ জিজ্ঞাসা করল । আমি কনফিউজ হয়ে গিয়েছিলাম । কিছুতেই মিলাতে পারি নি , dhaka university , applied physics ,facebook এর সাথে 3G !!!

আর মেডিকেল এর পরীক্ষা ত আরও মজা করে দিলাম । আমরা আমরাই ত ।

যাই হোক লিখিত পরীক্ষা উপলক্ষে medical , non medical এবং বিভিন্ন মেডিকেলের বন্ধুদের সাথে দেখা হল । বলতে গেলে get together এর অনুভুতি ।



..............................................................................................................................

ভাইভার দিন পি এস সি র ভাব সাব দেখেই ত ভই পেয়ে গেলাম । কঠিন প্রস্তুতি । দুই তিন বার রিহার্সেল করে গেলাম । কোন প্রশ্নের উত্তর কেমন দিব? যাই হোক ভাইভার জন্য রুমের বাইরে যখন দাঁড়িয়ে রইলাম তখন একেকজন বের হচ্ছে আর তাদের হাসিমুখ দেখে কেন যেন ভয় বেশি হচ্ছিল । আজকে এইখানে আমিই কি সেই ব্যাক্তি যে খালি হাতে ফিরবে । তবে বের হয়ে আসা দের মুখ থেকে ই এন টি র প্রশ্ন শুনে ভাল লাগল যে যাক আমার বিষয়ের কেউ আছে হইত ।

অবশেষে ঢুকলাম।

আমি বসার সাথে সাথে ডান পাশের স্যার বলে উঠলেন

- এই ছেলে তুমি এইভাবে চুল কেটেছ কেন?

(বলে রাখা ভাল আমি ১ দিন আগে মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে বলে হাল্কার

উপর ঝাপসা কাট দিইয়ে ছিলাম )

-স্যার আসলে মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে ত । তাই............

-এইভাবে চুল কাটলে চুল পড়া কমে , এটা শিখেছ? বইতে এটা পড়েছ ?



-ঠিক টা নই স্যার । আসলে এটা আমার বাবার বিশ্বাস । সে চুল বড় রাখত ত সেই জন্য তার মাথাই নাকি চুল নেই , তাই আমি সবসময় এই ভাবে কাটাই যাতে আমার মাথাই কিছু টিকে থাকে । তবে mechanical effect এর বিষয় ত কিছু আছে স্যার ।

(বুঝলাম না । আমার এই উত্তর শুনে সে খুব খুশি হল ।)

এই স্যার ছিলেন cardiologist .

মোটামুটি প্রায় সব প্রশ্ন পারলাম ।

এরপর বামে তাকিয়ে দেখি আব্দুল্লাহ স্যার । আমার ই এন টি র স্যার । এখন দাড়ি রেখেছে । স্যার এর প্রশ্ন ছিল খুব মজার

- কোন মেডিকেল?

- স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ

- প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর নাম কি ?

- স্যার এখন আছেন দিলিপ কুমার ধর । তবে আমাদের সময় আমরা দুইজন স্যার কে পেয়েছিলাম আজহার স্যার আর আপনাকে স্যার ।

উত্তর শুনে স্যার পি এস সি র সদস্যের দিকে তাকিয়ে একটা লাজুক হাসি দিলেন ।

-ক্যারিয়ার কিসে করবা ?

- স্যার ই এন টি তে ইচ্ছা আছে ।

এরপর স্যার আর আমি , আমি আর স্যার । কিছু একাডেমিক , কিছু কলেজের গল্প আবার কিছু প্রশ্ন।

উঠে আসার সময় দেখলাম স্যার লিখলেন ১৪০ । সালাম দিয়ে বের হয়ে এলাম ।

এই প্রথম সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ কে নিয়ে মন থেকে গর্ব হল । এখান থেকে অনেক না পাউয়ার বেদনা ছিল । ছিল অনেক হতাশা । ছিল কত রকমের অভিমান ।অভিযোগের অন্ত ছিল না । সব অভিযোগ যেন এক নিমেষেই শেষ হয়ে গেল ।

আমার জিবনের অনেক বড় বড় প্রাপ্তির নিয়ামক হয়ে থাকল যে এটি ।

LOVE YOU... SIR SALIMULLAH MEDICAL COLLEGE…..

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:০৭

নেবুলাস_স্কাই বলেছেন: বিসিএস পরীক্ষায় পাশের প্রার্থীর একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে সবাই কম বেশি চিন্তিত থাকে,বিশেষ করে প্রিপারেশন একটু খারাপ হলে...নিজের স্বার্থ বিবেচনা করে ইচ্ছেমত প্রতিষ্ঠানের নাম বলে...কেউ বাড়িয়ে বলে,কেউ কমিয়ে বলে....

আপনার জন্য শুভ কামনা....পোস্টিং যেখানেই হোক,সাধারণ জনগনের সেবায় সচেষ্ট থাকবেন,এই প্রত্যাশা।

১১ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:০৬

রঙ্গিন চশমা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

১১ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:০৬

রঙ্গিন চশমা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

১১ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:০৬

রঙ্গিন চশমা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

২| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৪৭

বটবৃক্ষ~ বলেছেন:




টিটি আর মহাসচিব হওয়ার ঘটোনা পরে হাসতে হাসতে পরেই যাচ্ছিলাম!! =p~ =p~ =p~ =p~ =p~

ভেরিফিকেশন কি হয়েছে??
নেক্সট পোস্টে তাহলে মিষ্টি পাবো??! :P

১১ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:১৩

রঙ্গিন চশমা বলেছেন: েরিফিকেশন শেষ । ভাবছিলাম ওগুলো জুড়ে দিব । কিন্তু বিষয়টা বেশ নোংরা । তাই আর লিখলাম না ।


অপেক্ষা করবেন কেন? এখনি গুগল মামা কে বলেন । দেখেন কত মিষ্টি এনে দেয় । পছন্দ মত খেয়ে নিন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.