![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দাবা খেলি। বোর্ডের একপাশে আমার অস্তিত্ব নিয়ে বসে আছি। প্রতিটা সিদ্ধান্তই এক একটা চাল। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত খেলাটা উপভোগ করতে চাই!
ইরার এক চোখে অশ্রু অন্য চোখে নির্লিপ্ততা।বেলায়েত হোসেন কফির মগে চুমুক দিয়ে নড়েচড়ে বসলেন।একটা সিগারেট ধরাতে ইচ্ছে করছে কিন্তু রোগী দেখার সময় তিনি ধূমপান করেন না।মাঝে মাঝে নিজের সৃষ্ট নিয়মের কাছে নিজেকেই শৃঙ্খলিত মনে হয়।দর্শন নিয়ে এ মুহূর্তে তিনি চিন্তা করতে চাচ্ছেন না।কিন্তু তার অবচেতন মন তাকে ইরা নামক মেয়েটির মুখোমুখি হতে দিচ্ছে না।একজন সফল মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বেলায়েত হোসেন নিজেই নিজের কাছে পরাজিত হচ্ছেন।ডাক্তার এবং রোগীর সম্পর্কের সীমারেখা তিনি জানেন।সেই সীমারেখা কখনও তিনি অতিক্রম করেননি। কিংবা বলা যায় অতিক্রম করার প্রয়োজন হয়নি।কিন্তু ইরার ব্যাপারটি সেরকম নয়। ইরার সমস্যাটি বুঝতে হলে ইরার মনোজগতের আনাচে কানাচে তাকে ভ্রমন করতে হবে।শুধু ভ্রমন করলেই চলবে না,মনের কোন এক অন্ধকার কোনে লুকিয়ে থাকা বিশ্বাসটিকে সমূলে উপড়ে ফেলতে হবে।কিন্তু তিনি যতই গভীরে যাচ্ছেন ততই ইরার মনোজাগতিক জগতে হারিয়ে যাচ্ছেন।ইরার সমস্যাটিকে ঠিক প্রথাগত পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করা যায় না। বেলায়েত হোসেনের যুক্তির সিঁড়ি বারবার তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে যাচ্ছে।
ইরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।শৈশবে কথা বলতে শেখার আগেই ইরা আঁকতে শিখেছিল।স্কুলে ইরার কোন বন্ধু ছিল না। তাকে প্রশ্ন করা হলে সে খাতায় এঁকে সেই প্রশ্নের জবাব দিত।স্বাভাবিক ভাবেই অন্যান্য ছেলে মেয়েরা তাকে ভয়ে এড়িয়ে চলত।কিন্তু এছাড়া ইরার মধ্যে অন্য কোন অস্বাভাবিকতা ছিল না।তাই ইরার বাবা মা ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তিত ছিল না। সমস্যার শুরু হয় ইরার আঠারতম জন্মদিনের আগের দিন।তার একটি পোষা বিড়াল ছিল।বিড়ালটিকে কখনও চোখের আড়াল হতে দিত না সে।বিড়ালটির নাম সে দিয়েছিল গ্রীক উপকথার রুপবান যুবক নার্সিসাসের নামে।নার্সিসাস জলে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজেই নিজের প্রেমে পরেছিল। প্রতিবিম্বের মধ্যে নিজেকে খুঁজে ফিরেই জীবন কাটে নার্সিসাসের। নার্সিসাসের সাথে ইরার জীবনের কোথায় যেন একটা মিল আছে।জন্মদিনের আগের দিন ইরা একটি ছবি আঁকে। ছবি আঁকা শেষ হলে সে বিস্ময় নিয়ে ছবিটির দিকে তাকিয়ে থাকে।অবিশ্বাস্য মনে হয় তার নিজের সৃষ্টকর্মকে।ক্যানভাসে আঁকা ছবিটিতে দেখা যায় একটি বিড়াল গলাকাটা অবস্থায় মরে পড়ে আছে।বিড়ালটি দেখতে হুবুহু নার্সিসাসের মত। প্রচণ্ড আতঙ্ক নিয়ে ইরা তার ক্যানভাসে রং মিশাতে থাকে। নার্সিসাস তার পায়ের নিচেই বসে ছিল। ইরা তাকে নিজের কোলে তুলে নেয় এবং নার্সিসাসকে বুকে জড়িয়ে বসে থাকে।এক সময় ইরা ঘুমিয়ে পড়ে। তার ঘুম ভাঙ্গে মায়ের চিৎকারে।ঘুম ভেঙ্গে সে দেখে নার্সিসাস তার কোলে নেই।বারান্দা থেকে পরিচিত কিন্তু আতংকিত গলার স্বর ভেসে আসছে।অজানা ভয়ে কেঁপে উঠে ইরা।দৌড়ে যায় সে বারান্দার দিকে।তারপর দেখে ক্যানভাসে আঁকা ছবির মত পড়ে আছে নার্সিসাসের গলাকাটা মৃতদেহ। স্বাভাবিক হতে মাসখানিক সময় লেগেছিল ইরার।ক্যানভাসে আঁকা ছবির কথা সে কাউকে বলেনি।যদিও নার্সিসাসের পরিনতির জন্য নিজেকেই দায়ী করে ইরা।বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম দিনগুলো ভালোই কাটছিল তার।খুব দ্রুত ভুলে গেল সে নার্সিসাসের কথা।
নির্ঝরের ডায়েরী থেকে
আমার আমিত্ব এভাবে ইরার অদেখা ভুবনে হারিয়ে যাবে তা কখনও ভাবিনি।ইরার চোখে চোখ রেখে খুঁজে ফিরি বেঁচে থাকার তীব্র আনন্দ।কিন্তু নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি, আমি কি আসলে বেঁচে আছি?
ক্যানভাসে আঁকা ছবির মত অপার্থিব মনে হয় ইরাকে।আমার পার্থিব জগৎ থেকে অপার্থিব ইরাকে মনে হয় দূর থেকে ভেসে আসা মূর্ছনার মত।যার আওয়াজ আমাকে মোহিত করে কিন্তু যার উৎস আমি খুঁজে পাইনা।
আমরা ভালবেসেছিলাম,আমরা হারিয়ে গিয়েছিলাম একের ভেতর অপর।ইরার ঠোঁটের স্পর্শে সেদিন যা খুঁজে পেয়েছিলাম তার জন্ম এই ভুবনে না,অন্য কোথাও। মুহূর্তের মোহনায় আমরা আঁকড়ে ধরেছিলাম একে অপরের অস্তিত্বকে।ইরা আমার জীবন্ত ক্যানভাসে এঁকেছিল তৃপ্তির অতৃপ্ত চুম্বন।
আমি মনে হয় পাগল হয়ে যাচ্ছি।ইরাকে হারিয়ে ফেলার ভয় আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলছে।ইরার নেশায় আসক্ত আমি।মৃত্যু ছাড়া এ নেশা থেকে আমার কোন মুক্তি নেই।ইরাকে বলেছিলাম আমায় তুমি মেরে ফেল।সে বলেছিল তোমায় আমি ক্যানভাসে জন্ম দিব।তারপর তুমি মুক্তি পাবে।
কাল ইরার জন্মদিন।জন্মদিনে আমি তাকে কোন উপহার দিতে পারব না।আমাদের মধ্যে এটাই নিয়ম।তার জন্মদিনে প্রথমবারের মত ইরা ক্যানভাসে আমার ছবি এঁকেছে।সে কখনই আমার ছবি আঁকতে চাইত না।ইরার আঁকা ছবিতে আমি উড়ছি।আমার দুপাশে দুটি পাখির ডানা।ইরার কাছে জানতে চাইলাম উড়ে আমি কোথায় যাচ্ছি!ইরা হাসিমুখে বলেছিল তোমার মুক্তির পথে,যদিও তার দুচোখে আমি কান্না দেখেছিলাম।
বেলায়েত হোসেনের নোটবুক থেকে
নির্ঝরের ডায়েরী পরে মনে হল তার অবসেসিভ ডিসঅর্ডারের সমস্যা ছিল।ইরার সাথে তার সম্পর্কটি কোন ভাবেই স্বাভাবিক ছিল না।ইরাকে সে মানবী নয় বরং দেবী ভেবে তার কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছিল।ইরাকে নিয়ে তার মধ্যে এমন একটি মোহ তৈরি হয়েছিল যা তাকে বাস্তব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল।ইরা চেয়েছিল সে উড়ুক।তাই সে ইরার জন্মদিনে দশ তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল।নির্ঝরের মধ্যে অনেকগুলো সমান্তরাল সত্ত্বা ছিল। তার একটি সত্ত্বা চাইছিল ইরাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে।অপর স্বত্বাটি মুক্তির পথ খুঁজছিল।
ইরার ধারনা ক্যানভাসে ছবি এঁকে মানুষকে প্রভাবিত করার ভয়ংকর ক্ষমতা তার আছে। প্রভাবিত করার ক্ষমতা সব আর্টিস্টদেরই থাকে। কিন্তু ইরার ধারনা সে ছবি এঁকে মানুষ খুন করতে পারে।তার কথার সত্যতা যাচাই করার জন্য আমার কাছে দুটি উদাহরন রয়েছে।নির্ঝর এবং ইরার পোষা বিড়াল।কিন্তু এ দুটি ক্ষেত্রে ইরাকে খুনি বলা যাবেনা।বিড়ালটি কে মেরেছিল সেটি একটি অমীমাংসিত রহস্য।
সেদিন ইরাকে চুমু খেতে ইচ্ছে করছিল।নিজের কাছেই নিজের চিন্তাকে অবাঞ্ছিত মনে হয়।ইরাকে পাওয়ার মনস্তাত্ত্বিক বলয়ে আমি ঢুকতে চাচ্ছি না।কিন্তু তাকে নিয়ে অযৌক্তিক চিন্তাকে আমার মনোজগত থেকে উচ্ছেদও করতে পারছি না।এমন অবস্থায় কারো চিকিৎসা করা যায় না।ইরাকে অন্য কারো কাছে রেফার করব ভাবছি।
ইরার ক্যানভাস থেকে
দেয়ালের এক কোনে একটি টিকটিকি আলোর দিকে ধাবমান পোকাগুলোকে তাড়িয়ে বেরাচ্ছে । তার নিচে ছোপ ছোপ রক্তের ফোটা।সেই রক্তের দিকে বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন বেলায়েত হোসেন।তার এক হাতে ক্যানভাস এবং অন্য হাতে রঙতুলি। তার পাশেই পড়ে আছে ইরার নিথর দেহ যার এক চোখে অশ্রু এবং অন্য চোখে নির্লিপ্ততা।
কাল ইরা একুশতম বছরে পা ফেলবে।
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:২১
জেন রসি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার সাবলীল মন্তব্য পেয়ে অনুপ্রেননা পেলাম।
দ্য পেইন্টার গল্পটি পড়লাম।চমৎকার গল্প।
প্যারা সাইকোলজি নিয়ে আগ্রহ থেকেই এই গল্প লেখার প্রয়াস।
ভালো লাগল জেনে আনন্দিত হলাম।
শুভ কামনা।
ভালো থাকবেন।
২| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:২৩
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: দ্যা পেইন্টার পড়িনি এখোনো| তবে আপনি অনেক জমিয়ে লিখেছেন| ভাল লাগল
৩| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:২৩
জেন রসি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো লাগল জেনে আনন্দিত হলাম।
শুভ কামনা।
ভালো থাকবেন।
৪| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৫১
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: গল্প চমৎকার। উপভোগ করলাম ।
আর,
ইরার ক্যানভাস থেকে
বেরাচ্ছে।তার নিচে ছোপ ছোপ রক্তের ফোটা
এখানে 'বেরাচ্ছে' এর আগের অংশ বাদ পড়ে গেছে কি? দেখবেন।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:০৬
জেন রসি বলেছেন: ভুলটি ধরিয়ে দেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
দেয়ালের এক কোনে একটি টিকটিকি আলোর দিকে ধাবমান পোকাগুলোকে তাড়িয়ে বেরাচ্ছে । তার নিচে ছোপ ছোপ রক্তের ফোটা।সেই রক্তের দিকে বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন বেলায়েত হোসেন।তার এক হাতে ক্যানভাস এবং অন্য হাতে রঙতুলি। তার পাশেই পড়ে আছে ইরার নিথর দেহ যার এক চোখে অশ্রু এবং অন্য চোখে নির্লিপ্ততা।
উপভোগ করলেন জেনে অনুপ্রানিত হলাম।
শুভ কামনা।
৫| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৫১
হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:২৮
জেন রসি বলেছেন: ধন্যবাদ।
শুভ কামনা।
৬| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৩০
মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: গল্প শেষ করে মাথা চুলকানোর ইমু হবে। প্রথমে একরকম ভেবেছিলাম পরে শেষের অংশে "ইরার ক্যানভাস থেকে" পড়ে আবার মত পাল্টাতে হলো। চমৎকার লেখা। ভালো লাগলো।
এমন চমৎকার গল্প আরও চাই
বসন্তের শুভেচ্ছা রইল
১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৪
জেন রসি বলেছেন: মজা পাইলাম
আমিও আপনার চমৎকার গল্পের অপেক্ষায় আছি।
বসন্তের শুভেচ্ছা রইল
৭| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৩
সোহানী বলেছেন: অনেক অনেক ভালোলাগা....+++++
১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৯
জেন রসি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
বসন্তের শুভেচ্ছা রইল
৮| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:১৪
প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:০৮
জেন রসি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভেচ্ছা রইল
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৬:২৬
বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: কিছু দিন আগে সহব্লগার নাজিম-উদ-দৌলা আপনার এই গল্পের মতোই একটা পটভূমির উপর দ্য পেইন্টার নামে একটা সাইফাই গল্প দুই পর্বে পোস্ট দিয়েছিলেন।
তবে দু'জনের গল্পের মধ্যেই কাহিনীর ভিন্নতা আছে। আছে রচনাশৈলীর ভিন্নতা। আপনার লেখার হাত খুব ভালো। এই ধরণের গল্পের বিশ্লেষণ করা অনেক সময় বেশ কঠিন হয়ে যায়, বিশেষ করে যারা এই ধরণের বিষয়বস্তু নিয়ে খুব একটা নাড়াচাড়া করেন না। তবে গল্পে বেলায়েত হোসেনের নোটবুক থেকে যে অংশের অবতারণা করেছেন, সেখানে আপনি নিজেই কিছুটা ব্যাখ্যা দিয়ে দিয়েছেন।
দ্য পেইন্টার গল্পটা পড়লে বুঝতে পারবেন কোথায় আপনার দু'জনের মধ্যে সাদৃশ্য আছে। দুটো গল্পে দুই ধরণের স্বাদ পেয়েছি এটা আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি।
চমৎকার সাবলীল গল্পের বয়ান। অনেক ভালো লাগলো জেন রেসি। নিরন্তর শুভ কামনা রইলো।