![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজিকে আমি যেই ঘটনাটি আপনাদিগের সামনে তূলিয়া ধরিতেছি তাহা প্রায় পঁচিশ/তিরিশ বৎসর আগেকার কথা। আমার বয়স তখন ৭/৮ হইবে। আমি আর আমার বড় ভগ্নি "দীপা" আমরা পিঠাপিঠি ভাইবোন। তথাপি সম্পর্ক টাও ছিল সেইরকম "সাপে নেউলে"!
দিনের তাহার বেশীর ভাগ সময় ব্যয় হইত ঠিক কি কি নিত্য নতুন প্রণালী তে তাহার ছোট ভাইটিকে উতক্ত করা যায় এই আবিস্কারে। প্রত্যুতরে তাহার ভাইটিও যে একেবারে ধোয়া তুলসী ছিল তাহা নহে, তবে তাহার ভগ্নির কর্মকাণ্ডের তুলনায় উহা ছিল অতিশয় অপ্রতুল! এবং বেশীরভাগ সময় "আম্মা দেখেন, দীপা না আমারে মারছে!"বলিয়া আমাদের আম্মাজানে কল্যাণে উহার হাত থিকা উদ্ধার পাইতাম।
কখনো ব্যাঙ্গাতক ছড়া কাটিয়া, কখনো বা আমার কর্ণদয় কিরুপ হস্তি কর্ণের সমতুল্য বলিয়া সে অট্ট হাসিতে ভাঙিয়া পরিত। প্রত্যুতরে সে নিজেও যে কি পরিমান "পেত্নিরুপি" তাহা বলিয়া আমি আত্মতুষ্টি পাওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করিতাম।
ঘটনাটি ঘটে কোন এক বুধবারে, প্রায় রাত পনে নয় ঘটিকার দিকে। আমি টিভির সামনে ততকালিন চরম জনপ্রিয় টিভি সিরিজ "ম্যাকগাইভার" দেখিবার অপেক্ষা বসিয়া রহিয়াছি। বিশেষ ভাবে উল্লেখ যে আমি সর্বদা "Early to bed, early to rise, makes a man, healthy, wealthy and wise" থিওরিতে বিশ্বাসী।
তাই টিভির সামনে অতি কষ্টে নিজেকে ধরিয়া রাখিয়া ছিলাম এবং ঘুমে প্রায় ঢলিয়া পরিয়া যাইতে ছিলাম। কিন্তু কোন ক্রমেই আমি বিছানায় যাইতে রাজি ছিলাম না, পাছে যদি "ম্যাকগাইভার" মিস হইয়া যায়!
ঠিক এমন সময় আমার ভগ্নিটি একটি দুষ্টু কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হইল। সে আমার ডান পাশের যুলফি এমন ভাবে চিপটি কাটিয়া ধরিল যে আমার মাথা ঝিমাইয়া পড়িবার সাথে সাথে এমন ব্যাথা অন্তুভুত হইল যে স্বয়ং "ইবলিশ শয়তান" ও বুঝি আমার প্রতি করুনা বোধ করিল! আমার আর্ত চিৎকারে পুরো বাড়ি কাপিয়া উঠিল! আর সে মহা আনন্দে খিল খিল করিয়া অট্ট হাসিতে ফাটিয়া পরিল!
এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে আমি ব্যক্তি হিসেবে বরাবরই শান্তি প্রিয়, কখনো কারো সাতে পাঁচে নাই বরং মহাত্মা গান্ধীর থিওরি মানিয়া কেউ এক গালে চর মারিলে আরেক গাল পাতিয়া দিতাম। কিন্তু সেই দিন আর নিজেকে ধরিয়া রাখিতে পারিলাম না! আমি গান্ধীর শিষ্যত্য ত্যাগ করিয়া "ইনক্রেডিবল হাল্ক" সাহেবের রূপ ধারন করিলাম এবং তাহাকে এই পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় করিবার উদ্দেশে রান্না ঘর হইতে শিল পাটার শিলটি লইয়া পুরা বাড়ি ধাওয়া করিয়া ব্যাড়াইতে লাগিলাম!
এই ভাবে বার কয়েক পুরা বাড়ি চক্কর কাটিয়া সে আমার দাদীর ঘরের দরজা বন্ধ করিয়া নিজের জীবন সে যাত্রা রক্ষা করিল। আর আমিও আমার সর্বশক্তি দিয়া শিল খানা দরজার উপর আঘাত করিয়া গেলাম!
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আজ আমার সেই ভগ্নিটি সুদূর আইয়ারল্যান্ড নাম দ্বিপ দেশের অধিবাসী এবং আপন স্বামী-সন্তান লইয়া ব্যস্ত। আর আমি অংপুরে এক প্রাইভেট ব্যাংকের ঊচঃ পদ্ধস্ত কর্মকর্তা, অন্যের অর্থের হিসাব কষিয়া বেড়াই।
তাহা সর্তেও যখনই তাঁরা সাথে ফোনে কথপকথন হয় তাহার প্রথম সম্বোধন "কিরে ফটিক, তোর কানের কি কোন অগ্রগতি হইল ??"
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:২০
মানবী বলেছেন: চমৎকার, স্নিগ্ধ, সুন্দর একটি লেখা!
ভাইবোনের ভালোবাসা, খুনসুটি আর আত্মিক সম্পর্কের চমৎকার বর্ণনা পড়ে ভালো লেগেছে, ধন্যবাদ russelbd।