![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাটি চালান তখনই দিতে হয়, যখন চোর ধরার বৈজ্ঞানিক সব কৌশল অকেজো হয়ে যায়
শ্রদ্ধেয় গৌতম দাস “ ইরাকঃ আধুনিক রাষ্ট্র লজিকের আর বিপ্লবের আন্তর্জাতিকতার সমস্যা” নামক এক নোট লিখেন তাঁর ওয়ার্ডপ্রেসে। লেখাটি চিন্তার দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তবে তাঁর এনালাইসিস এর সাথে কিছু কিছু জায়গায় দ্বিমত আছে আমার।
গৌতম দাসের লেখার লিঙ্কঃ http://tinyurl.com/mkxvwo9
জনাব দাস লিখেছেন-
“দুই) অন্যদিকে, নিজ বিপ্লবী রাষ্ট্র সুরক্ষা নিরাপদ করতে ইরাকি শিয়াদের তাকে ব্যবহার করতে হবে এই বাসনা যে ইরানের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতৃত্ত্বের ছিল তা আজকে দাঁড়িয়ে পরিস্কার বলা যায়। যদিও এই বাসনা প্রকাশ্য নয়, এর বাইরের দিকটা হল তাঁরা নিপীড়িত ইরাকি শিয়াদের পাশে দাঁড়াতে চাইছে। একথা ঠিক যে সাদ্দামের আমল ইরাকি শিয়াদের অবদমন আর নিপীড়নে কেটেছে। কিন্তু সেই দশার সুযোগে ইরাকি শিয়াদেরকে ইরানী বিপ্লব ও রাষ্ট্র সুরক্ষা করতে ব্যবহার করার কারো আকাঙ্খা ন্যায্য হতে পারেনা। ওদিকে ইরানী বিপ্লবের পর, ১৯৮০-৮৮ এই সময়টা ইরাক-ইরান যুদ্ধে কেটেছে। অথচ আদর্শ হতে পারত সাদ্দামের সাথে ইরানের কোন সমঝোতা চুক্তিতে পৌছানো যাতে ইরাকের মোট পপুলেশনের ৬০-৬৫ ভাগ ইরাকি শিয়ারা ইরাক রাষ্ট্র ক্ষমতায় উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ত্বের বঞ্চনা থেকে মুক্তি পায়, অবদমন আর নিপীড়ন থেকে মুক্তি পায়, বিনিময়ে ইরাকের দিক থেকে ইরানী বিপ্লবও নিরাপত্তা সুরক্ষার নিশ্চয়তা পায়। কিন্তু তা ঘটেনি। ইরাক-ইরানের পরস্পরের প্রতি সন্দেহ অবিশ্বাসই মুখ্য হয়ে উঠে ফলে আট বছর ইরাক-ইরান যুদ্ধ চলে। আজকের পরিস্থিতি দেখে মনে করার কারণ আছে যে স্বাধীন ইরাকি রাষ্ট্র হিসাবে ইরাকি শিয়ারা ইরাকেই টিকে থাক, ইরাক রাষ্ট্র অটুট থাকুক – এটা নয় বরং ইরানী রাষ্ট্র নিরাপত্তা সুরক্ষার কাজে ইরাকি শিয়াদের ব্যবহার করাই ইরানের লক্ষ্য ছিল।”
.একটা বিষয় লক্ষ্যনীয় তা হচ্ছে, ইরাকি শিয়ারা কিভাবে ইরানী বিপ্লবী রাষ্ট্র সুরক্ষার স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে তার কোন দলিল কিংবা উদাহরন তিনি প্রদান করেননি। আর ইরানের আয়াতুল্লাহদের(বিজ্ঞ আলেম) মতই ইরাকের আয়াতুল্লাহরা বিপ্লবের চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন আগে থেকেই। আয়াতুল্লাহ খোমেনী ইরাকে নির্বাসিত থাকা অবস্থায়ই ইরাকের বিপ্লবী আলেম মুহাম্মদ বাকের আল সদর এর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন এবং এই বাকের সদর ইসলামী বিপ্লবের জন্য ইরাকে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের আগে থেকেই কাজ করে আসছিলেন। বাকের সদরকে ১৯৭৭ সালে গ্রেফতার করে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ইরাকের নাজাফে এক ইসলামী আন্দোলন গড়ে তোলার অপরাধে। কিন্তু অপরিমেয় জনপ্রিয়তা ও গণঅসন্তসের মুখে ২ বছর পর তাকে মুক্তি দেয় সাদ্দাম সরকার। কারারুদ্ধ অবস্থায় তাকে প্রচণ্ড শারীরিক নির্যাতন করা হয়। ১৯৮০ সালে ইসলামী বিপ্লবের সমর্থনে তার লেখালেখি ও তা ছড়িয়ে দেওয়ার অপরাধে আবার তাকে গ্রেফতার নির্যাতন করার পাশাপাশি লোহার হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করার মাধ্যমে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বাকের এস সদর যে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের আগে থেকেই ইরাকে বিপ্লবী কার্যক্রম চালাতেন তার জন্য এই লিংক দেখতে পারেনঃ http://tinyurl.com/7r5yvoy
কিন্তু সাদ্দাম ইরাকের বিপ্লবী আলেমদের হত্যা করতে কোন দ্বিধা করত না। ইরানের ইসলামী বিপ্লব সফল হওয়ার আগে থেকেই সাদ্দাম ইরাকের বিপ্লবীদের যারা ইসলামি বিপ্লবের জন্য কাজ করত তাদের কঠোরভাবে দমন করত। এর থেকেও বোঝা যাচ্ছে যে ইরাকে ইসলামী বিপ্লবের কার্যক্রম ইরানের ইসলামী বিপ্লব সফল হওয়ার আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল। তাই এহেন বিপ্লব রাষ্ট্র সুরক্ষার তাগিদে ইরাকি শিয়াদের ব্যবহারের অভিযোগ দাসের বাস্তবটা বর্জিত নিছক কল্পনা ব্যতীত কিছু বলা যায় না।
সাদ্দাম ঐক্যবদ্ধ ইরাক রাষ্ট্রের সুষ্ঠু পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ ছিল। সে তার ক্ষমতার জন্য হুমকি হয়ে ওঠা শিয়া আর কুর্দিদের নির্বিচারে হত্যা করছিল। ফলে তার আমলের ইরাক রাষ্ট্রও দুর্বল ছিল। সাদ্দাম আতংকিত ছিল ইরাকের শীর্ষস্থানীয় আলেম ও তাদের অনুগত জনগন নিয়ে। কারণ এই শীর্ষস্থানীয় আলেমগন ছিল ইরানের ইসলামী বিপ্লবের অনুসারী বা সমর্থক। ১৯৭৯-৮০ সালের দিকে ইরাকের শিয়া অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে স্বৈরতন্ত্রী বাথ পার্টির শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সাদ্দামের সহযোগীরা সন্দেহ করে যে এ বিক্ষোভ ইরানী সরকারের মদদে হচ্ছে। ফলে ইরাক ও ইরান পাল্টাপাল্টি রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের দাবি জানায়। এই ধরনের চলমান পরিস্থিতিতে সাদ্দামের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ ও কণ্টকমুক্ত করতে বাথ পার্টির সরকার ১৯৮০ সালের এপ্রিল মাসে ইরাকের গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ (প্রধান ধর্মীয় নেতা) মোহাম্মাদ বাকের আস-সদর ও তার বোন আমিনা হায়দার (বিন্তে-আল-হুদা) কে হত্যা করে। এছাড়া সাদ্দাম আরও বহু আলেমকে হত্যা করে। এর মধ্যে মুক্তাদা আল সদরের পিতা সাদিক-আস-সদরও রয়েছেন। এতেও সাদ্দাম ঠাণ্ডা হয়নি। ১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর একতরফাভাবে ইরানে হামলা চালায়। কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে সাদ্দাম এই হামলা চালায়।
একঃ ইরানের ইসলামী বিপ্লব ইরাক এমনকি অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়ার আগেই যাতে একে অংকুরেই নির্মুল করে দেওয়া যায়। এটা সাদ্দামের কাছে আমেরিকার প্রত্যক্ষ চাওয়া ছিল।
দুইঃ সাদ্দামের একনায়ক্তান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে শিয়ারা যাতে আর হুমকি হয়ে উঠতে না পারে।
তিনঃ আঞ্চলিকভাবে ইরানকে দুর্বল করে দিয়ে পরাশক্তিগুলোর সাহায্যে সাদ্দামের নেতৃত্বে ইরাকের উত্থান।
ইরানের বিপ্লবের কারনে ইরাকেও এই বিপ্লব ছড়িয়ে পড়তে পারে এই চিন্তাও সাদ্দামকে ইরান আক্রমনে প্ররোচিত করে। একাজে আমেরিকা আর রাশিয়ার সহায়তা পেয়েছিল সাদ্দাম। এছাড়া আরব রাষ্ট্রগুলো সাদ্দামকে একাজে উৎসাহ প্রদান করে। এমনকি সৌদি সরাসরি অর্থ সহায়তাও প্রদান করে। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান ইরাককে সন্ত্রাসীর তালিকা বাদ দেয় ইরান আক্রমণের কারনে। শুধু তাই নয়, যুদ্ধকালীন ক্ষেপণাস্ত্র নির্মানের জন্য প্রযুক্তি ও কাঁচামাল সরবরাহ করে আমেরিকা। এর মধ্যে রাসায়নিক ও তেজস্ক্রিয় উপাদান ও অস্ত্রও রয়েছে। সাদ্দাম এই রাসায়নিক অস্ত্র ইরানের বেসামরিক জনগণের উপর নিষ্ঠুরভাবে প্রয়োগও করেছে। ফলে ইরানের প্রচুর বেসামরিক মানুষ এই যুদ্ধে নিহত হয়। আর তাই ইরান ইরাক যুদ্ধের দায় সাদ্দামের। সাদ্দাম পরাশক্তিগুলোর আজ্ঞাবহ হয়ে ইরানে হামলা চালায়। ইরানের পক্ষ থেকে এই যুদ্ধ ছিল দেশের জনগন ও ভুখন্ডের আত্মরক্ষা বা প্রতিরক্ষার যুদ্ধ। এখানে ইরান ছিল আগ্রাসী আক্রমণের শিকার যা তার মজলুম অবস্থাকে নির্দেশ করে। সারা বিশ্ব ছিল ইরানের বিরুদ্ধে শুধু সিরিয়া ছাড়া।
জনাব দাস বলছেন " অন্যদিকে, নিজ বিপ্লবী রাষ্ট্র সুরক্ষা নিরাপদ করতে ইরাকি শিয়াদের তাকে ব্যবহার করতে হবে এই বাসনা যে আয়াতুল্লাহদের ছিল তা আজকে দাঁড়িয়ে পরিস্কার বলা যায়। যদিও এই বাসনা প্রকাশ্য নয়, এর বাইরের দিকটা হল নিপীড়িত ইরাকি শিয়াদের পাশে দাঁড়ানো। একথা ঠিক যে সাদ্দামের আমল ইরাকি শিয়াদের অবদমন আর নিপীড়নে কেটেছে। কিন্তু সেই দশার সুযোগে ইরাকি শিয়াদেরকে ইরানী বিপ্লব ও রাষ্ট্র সুরক্ষা করতে ব্যবহারের আকাঙ্খা ন্যায্য হতে পারেনা। " এটা মিথ্যা অভিযোগ। ইরানের বিপ্লবী আয়াতুল্লাহরা ইরাকের বিপ্লবী আয়াতুল্লাহদের বিপ্লবী কাজে সহায়তা দেয়ার বাসনাই ছিল, অন্য কিছু না। সাদ্দামের মত সেকুলার নিপীড়ক শাসক থেকে ইরাকি জনগণকে মুক্ত করার জন্য বাকের সদররা যে রাজনৈতিক লড়াই করে গেছেন তাকে হেল্প করা ইরানের বিপ্লবী দায়িত্ব, সেটা পালন করতে যাতে না পারে সেজন্যই বাকের সদরদের ধরে ধরে ফাঁসি তো দিলই সাদ্দাম সাথে ইরান আক্রমণও করে বসল। আপনি একদিকে বলবেন ইরানের বিপ্লবের গ্লোবাল প্রবণতার কারনেই তা অন্য দেশে চালু করার চেষ্টা তারা করবে আবার বলবেন নিজ বিপ্লবী রাষ্ট্র সুরক্ষা নিরাপদ করতে ইরাকি শিয়াদের ব্যবহার করার বাসনা ছিল তাঁদের - এটাই বরং অন্যায্য কথা।
ইরান বিপ্লবের পর ভয়ে সোভিয়েত রাশিয়া আফগানিস্তান আক্রমণ করে বসল এটা দাস সাহেব বলতে পারেন কিন্তু হাস্যকর হল সাদ্দাম যে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পর ইরাকেও বিপ্লব শুরু হতে পারে এই ভয়ে যে ইরান আক্রমণ করে বসল তা বলতে উনি চরম কুণ্ঠিত হয়েছেন! সাদ্দাম এর মত আগ্রাসী হানাদারকে নিন্দা জানাতে এতো কুণ্ঠা কেন তার? হানাদার সাদ্দামকে দায়ী না করে পরস্পরকে দায়ী করার হীনতা অন্যায্য। এখন ইরানের ইসলামী বিপ্লব যদি গ্লোবাল আইডিওলজি ধারণ করে সে তো চাইবেই অন্য দেশে এই আদর্শ প্রসার হোক যেটা জনাব দাস নিজেই লিখেছেন। ফলে ইরানের বিপ্লবীরা নিপীড়ক একনায়ক সেকুলার সাদ্দাম রেজিম এর বিরুদ্ধে পরিচালিত বাকের সদরদের বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে সমর্থন, উৎসাহ দিবে সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু জনাব দাস বলছেন ইরানের উচিত ছিল অথচ আদর্শ হতে পারত সাদ্দামের সাথে ইরানের কোন সমঝোতা চুক্তিতে পৌছানো!! দাস নিজেই যে স্ববিরোধী কথা বলছেন তা কি তিনি বুঝতে পেরেছেন? এখানে পয়েন্টটা স্পষ্ট। একটা দেশে সাধারণ জনগনের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে যদি কোন স্বৈরশাহী উচ্ছেদ হয়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষিত শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। আর দ্বিতীয় দেশে যদি তার জনগন একইভাবে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে প্রথম দেশের জনগণের স্পিরিটে উদ্বুদ্ধ হয়ে – তবে আপনি কেন এবং কোন মুখে প্রথম দেশের জনতার সরকারকে দ্বিতীয় দেশের স্বাধীনতা প্রিয় জনগন বাদ দিয়ে স্বৈরশাসকের সাথে সমঝোতার কথা বলেন???
তাই এই আজ্ঞাবহ স্বৈরশাসক সাদ্দামের সাথে ইরান সমঝোতা করে নাই কেন- গৌতম দাস আপনার এই দাবি তোলাটা মানবতার চেতনা বিরোধী ও অযৌক্তিক।
জনাব দাস লিখেছেন-
তিন) একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে আমেরিকার সাথে পরমাণু ইস্যুতে ইরানের চরম বিরোধ থাকা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট বুশের ২০০৩ সালের ইরাক হামলা ও দখলে ইরানের সম্মতি ছিল। আমেরিকার ইরাক দখল ইরানের নিরাপত্তার জন্য এক বড় একটা ঘটনা হবার কথা অথচ অবাক বিষয় এঘটনায় আমেরিকার উপস্থিতি ইরান রাষ্ট্রের দিক থেকে সে কোন হুমকি অনুভব করেনি। তাই সম্মতির প্রশ্ন উঠছে। না হলে ইরানী বিপ্লব যে জন্ম থেকেই যেখানে আমেরিকার সাথে একনাগাড়ে সরব বিরোধ চালিয়ে গেছে তা থাকা সত্ত্বেও সেই আমেরিকা ইরাক দখল করে ইরানের ঘাড়ের উপর এসে বসেছে অথচ ইরানের কোন অস্বস্তি নুন্যপক্ষে কোন আপত্তির বিবৃতিও আমরা দেখি নাই কেন? শুধু তাই না ২০০৬ সাল থেকে সেই যে ইরানের পছন্দের নুরে আল মালিকি প্রধানমন্ত্রী হলেন তা এখনও চলছে। আর বুশ তাকে পরিচিত করিয়েছিলেন “আমাদের লোক” হিশাবে। কারণ মালিকি ছিলেন সেই বিন্দু যেখানে আমেরিকা ও ইরানের কমন স্বার্থ এক হয়েছিল। কিন্তু সেটা ইরাকের নিজের রাষ্ট্রস্বার্থে নয়, বরং ইরান মালিকির ইরাকের ভিতর নিজ রাষ্ট্রের সুরক্ষা নিরাপত্তা দেখেছিলেন। সাদ্দামের শিয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধে সমাধান নিশ্চয় এবার শিয়া প্রাধান্যে সুন্নিদের উপর অত্যাচার নয়, অথবা এবার সুন্নিদের অপ্রতিনিধিত্ত্বশীল করে রাখা নয়। তাও আবার পরদেশি ইরানের স্বার্থের এক রাষ্ট্র হয়ে। আসলে “ইরানি স্বার্থের ইরাক রাষ্ট্র” এই বাক্যটাই স্ববিরোধী। ভিন রাষ্ট্রের স্বার্থে কেউ আর নিজের রাষ্ট্র থাকে না, থাকতে পারে না। ওদিকে মুকতাদর আল সদর ও অন্য কয়েকজন ইরাকি আয়াতুল্লাহ (যেমন, সিসতানি) কখনও কখনও শিয়া পরিচয়ের উপরে উঠে ইরাকি হতে চেয়েছেন। কিন্তু বারবার তারা চুপ করে গেছেন। অন্তত তারা যে গলার ও প্রভাব-ক্ষমতার জোরের দিক থেকে সংখ্যালঘু তা প্রমাণ হয়েছে।
জনাব দাস এর মিথ্যা অভিযোগ আর মনগড়া কথার নমুনা, “একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে আমেরিকার সাথে পরমাণু ইস্যুতে ইরানের চরম বিরোধ থাকা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট বুশের ২০০৩ সালের ইরাক হামলা ও দখলে ইরানের সম্মতি ছিল। আমেরিকার ইরাক দখল ইরানের নিরাপত্তার জন্য এক বড় একটা ঘটনা হবার কথা অথচ অবাক বিষয় এঘটনায় আমেরিকার উপস্থিতি ইরান রাষ্ট্রের দিক থেকে সে কোন হুমকি অনুভব করেনি। তাই সম্মতির প্রশ্ন উঠছে। না হলে ইরানী বিপ্লব যে জন্ম থেকেই যেখানে আমেরিকার সাথে একনাগাড়ে সরব বিরোধ চালিয়ে গেছে তা থাকা সত্ত্বেও সেই আমেরিকা ইরাক দখল করে ইরানের ঘাড়ের উপর এসে বসেছে অথচ ইরানের কোন অস্বস্তি নুন্যপক্ষে কোন আপত্তির বিবৃতিও আমরা দেখি নাই কেন?”
ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন ইস্যুতে গৌতম দাস- আপনি যে ইরানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন তার প্রমান দিচ্ছি। ইরান ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ করেছে। ২০০৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রমজান মাসের প্রথম জুমার খুৎবায় ইরানের রাহবার আয়াতুল্লাহ আলী খামেনী ভবিষ্যৎবাণী করে বলেন, “ইরাকে যে বিপর্যয় সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য একদিন অবশ্যই জর্জ বুশ ও তার যুদ্ধবাজ কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযুক্ত করা হবে। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইরাকে হামলার জন্য বদ্ধ সন্ত্রাসী আখ্যা দেন এবং ইরাকের নিরাপত্তাহীনতার জন্য মার্কিনিদের দায়ী করেন।”
তিনি তার খুৎবায় আরও বলেন, “আমেরিকানরা কেন ইরাকে দখলদারি বন্ধ করছে না এবং কেন সন্ত্রাসের বিস্তার ও অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে দিয়ে দেশটির ক্ষতি করছে- তার কোন উত্তর তাদের কাছে নেই। হিটলার, সাদ্দাম ও কিছু ইউরোপীয় শাসকদের মত তারাও একদিন থামতে বাধ্য হবে। বিগত চার বছর অতিক্রান্ত হয়েছে ইরাকে দখলদারি কায়েম রয়েছে এবং এটা সবাই জানে যে আমেরিকা এখানে ব্যর্থ হয়েছে ও পালানোর পথ খুজছে।”
রাহবারের উক্ত বক্তব্য মার্কিন সংবাদ সংস্থা এপি Iran Leader: Bush Will Be Tried (By NASSER KARIMI; The Associated Press; Friday, September 14, 2007; 3:52 PM) শিরোনামে ফলাও করে প্রচার করে। ওয়াশিংটন পোস্ট তা কোড করে। লিংক দিচ্ছি আশা করি সবাই দেখে নিবেন।
http://tinyurl.com/3avtc9
ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের কারনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। এর মধ্যে ইরানের রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে যে প্রতিবাদ জানানো হয় তা উল্লেখ করা হল।
ইরানের সহকারি প্রধান বিচারপ্রতি জাভাদ লারিজানি বলেন, “আমি আপনাদের নিরদিধায় বলতে পারি সাদ্দাম হোসেন ও বাথিস্ট শাসনের প্রতি আমাদের কোন সহানুভুতি নেই। এই রেজিমের অবসান আমাদের জন্য ভাল সংবাদ; তা শুধুমাত্র ইরানের জন্য নয়, এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের জন্যও। কিন্তু আসল বিসয়টা হল এটা কিভাবে করা হবে ও তার ফলাফল কি হবে। আমরা খুবই শংকিত যে আমেরিকান শক্তির উপর নির্ভর করাটা কোন যথপোযুক্ত উপায় নয়।”
ইরানের তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হামিদ রেজা আসেফি বলেন, “ইরাকের ভাগ্য নির্ধারন করবে ইরাকের জনগন, কোন পরাশক্তি নয়। একই সাথে ইরান এই অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পক্ষে অবস্থান নিবে না। কারণ একটি দেশ যখন আরেকটি দেশের সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে তখন তা একটি নিয়মে পরিনত হওয়ার আশংকা থাকে।”
ইরানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট খাতামি এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আগ্রাসন যদি একটি দেশের স্বভাবে পরিনত হয় তবে কোন সরকার কিংবা দেশই টিকবে না। তেহরান মনে করে আমেরিকান সাম্রাজ্য একটি বলদর্পি শক্তি, সে চায় একমেরুকেন্দ্রিক বিশ্ব। তাই আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।...। আমেরিকান হেজেমনির বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ আমাদের ইসলামী বিশ্বাসে প্রোথিত। তাই আমরা মনে করি অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ একটি মূল্যবোধ।”
তিনি আরো বলেন, “কেন আমরা ইরাকের সাথে যুদ্ধের বিরোধী? কেন আমরা সামরিক আগ্রাসনের বিরোধী? আমরা অন্য সবার চেয়ে ইরাকের দারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি সবচেয়ে বেশি। সাদ্দাম তার রাসায়নিক অস্ত্র প্রথম আমাদের সৈন্য ও জনগনের উপর ব্যবহার করে। আমরা সাদ্দামের শাসনামলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি কিন্তু আমরা ইরাকে সামরিক আগ্রাসনের বিরোধীতা করছি। কারন এই ধরনের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের সংকট স্বৈরশাসনের চেয়ে অনেক বেশি বিপজ্জনক।”
ইরাক আগ্রাসনে ইরান সহ যেসমস্ত দেশ প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তা নিচের লিঙ্কে পাবেন। http://tinyurl.com/qfoeos7
প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ যুক্তরাষ্ট্রকে দখলদার আখ্যায়িত করে ইরাক যুদ্ধের সমালোচনা করেন।
দেখুন লিঙ্কঃ http://tinyurl.com/msuq8ny
ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনে ইরানের ভূমিকা নিয়ে আরও জানতে পড়ুন। লিঙ্কঃ http://tinyurl.com/q6cppmm
ইরান হুমকি অনুভব করেনি এটা মিথ্যা কথা। আমেরিকা ইরাক দখল করে ইরানের ঘাড়ের উপর এসে বসেছে বলেই পরবর্তীতে ইরান ইরাকে আমেরিকার প্রতিটা পদক্ষেপের পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট বুশের ২০০৩ সালের ইরাক হামলা ও দখলে ইরানের সম্মতি ছিল এবং 'ইরানের কোন অস্বস্তি নুন্যপক্ষে কোন আপত্তির বিবৃতিও আমরা দেখি নাই কেন? ' এসব ডাহা মিথ্যা কথা বলে জনাব দাস কি হাসিল করতে চান- তা একটি চিন্তার বিষয়।
একটা বিপ্লব পরিপুষ্ট হতে থাকে তার সুনির্দিষ্ট মৌলিক বিশ্বাস চেতনা দ্বারা। এই মৌলিক নীতি ধরা পড়ে বিপ্লবে পরিচালিত তাদের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে। সেই অর্থে ইরানের রাজনীতি ও তাদের বিপ্লবের মূল চেতনা ছিল সম্পূর্নভাবে মার্কিন বিরোধী। এটা ইরানের প্রধান শত্রু মার্কিনীরাও অস্বীকার করেনা। স্মরন করুন, শুরু থেকে ১৯৭৯ সালে যখন আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে তখনো তাদের শ্লোগানগুলো ছিল, ইসরায়েল নিপাত যাক; আমেরিকা নিপাত যাক; Go to hell israel, israel; সেবাদাস শাহ্ নিপাত যাক, নিপাত যাক। এই চেতনা এখনো পাল্টায় নি। এখনো ইরানে ইসরায়েল-মার্কিন বিরোধী বিক্ষোভ হয় সমাবেশ হয়। তাদের নেতারাও মার্কিনীদের বিরুদ্ধে সরব। তাই ইরাকে মার্কিন হস্তক্ষেপে ইরানের সম্মতি ছিল কথাটা সম্পূর্ন মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট।
২০০৭ সালে হিলারি ক্লিনটন প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, আমেরিকার নুরি আল মালিকিকে সরিয়ে দেওয়া উচিত। বারাক অবামা কিছুদিন আগে বলেন, মালিকি শাসনের প্রশ্নে সংখ্যালঘুদের (সুন্নি, কুর্দি ও অন্যান্য) সম্পৃক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। মার্কিনিরা মালিকিকে ইরাকের ক্ষমতায় বসালেও শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত স্বার্থরক্ষাকারী হিসেবে আর থাকেনি। মালিকির প্রতি এই অবিশ্বাস তৈরি হবার সুযোগ পেয়েছে ইরানের কারনেই। আর এটাই ছিল ইরানের সাফল্য। আবার এই ইরানও মালিকিকে চিরস্থায়ী ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দেখতে চায় না। ইরাক যাতে সেক্টারিয়ান সমস্যায় পড়ে ভেঙ্গে না যায় এজন্য তারাও ইরাকে শান্তিপুর্ন সহাবস্থান তৈরি করবে এমন সরকারই দেখতে চায় ইরান।
মালিকি তো ভোটেই জয়ি হয়েছে তো সেই মালিকিকে কেন এখন আর আমেরিকা চায় না? কেন মালিকিকে সরাতে এখন আমেরিকা তৎপর? “ সাদ্দামের শিয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধে সমাধান শিয়া প্রাধান্যে সুন্নিদের উপর অত্যাচার নয়, অথবা এবার সুন্নিদের অপ্রতিনিধিত্ত্বশীল করে রাখা নয়।“ অবশ্যই নয়, সবার অংশগ্রহণে একটা শক্তিশালী ইরাক রাষ্ট্রই কাম্য। ইরাকে প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট ও প্রধান বিচারপতি নির্বাচিত হন শিয়া, সুন্নি ও কুর্দি এই তিনটি সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় থেকে। মালিকির আমলেও তাই ছিল। এমনকি ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক আল হাসেমী ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাবারি একজন কুর্দি সুন্নি। সমস্যাটা সেখানে নয়। সৌদি মদদে তারেক আল হাসেমির মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত বাথ পার্টির তৎপরতায় কয়েকবার মালিকি সরকারকে উৎখাতের চক্রান্তে লিপ্ত হয়। ফলে মালিকি প্রশাসনে থাকা এইসব সউদিপন্থি কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেন। সৌদির ক্ষোভ এই জায়গায় যে মালিকি সৌদিকে নয় ইরানকে ফেবার করে বেশি। আর ইসরায়েল-মার্কিনিদের এখানে ভূমিকা হল ইরান বিরোধীদের প্রোমট করা। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে জেতা মালিকি সুন্নিদের ক্ষমতা দুর্বল করেছেন, এটা সত্য। এটাও সত্য যে তিনি তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করা শিয়াদেরকেও ছাড় দেননি। এর জন্য মালিকিকে নিন্দা, কিন্তু সাদ্দামের শিয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধে সমাধান তো আবার শিয়াদের কাফির ঘোষণা দিয়ে হত্যাকারী আইসিসও নয়। আবার মালিকির বিকল্পও শিয়া নিধনে বদ্ধ পরিকর আইসিস নয়। এই আইসিস সুন্নিদেরও যথার্থ প্রতিনিধি হিসেবে নিজের প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। আইসিস এর হাতে বায়াত না নেওয়ায় প্রায় ৩০০ ইরাকি সুন্নি আলেমকে হত্যা করা হয়। দেখুন সংবাদসহ ভিডিও লিঙ্কঃ http://tinyurl.com/lh9vnra
এছাড়া অন্য এক ইরাকি সুন্নি আলেম শেখ আহমদ আল কুবাইসি সরাসরি আইসিস এর কর্মকান্ডের বিরোধিতা করেছেন। তিনি টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আইএসআইএল-এর মাধ্যমে ইরাকের মসুলে ধর্মীয় নানা প্রতিষ্ঠান ও জিয়ারতকেন্দ্র ধ্বংস করার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেখাতে গিয়ে বলেছেন, কথিত বাগদাদি ইয়াজিদের চেয়েও নিকৃষ্ট, সে স্রেফ ইহুদিদের অনুচর ... আল্লাহর কসম আইএসআইএল ও এই জাতীয় গ্রুপগুলো এবং ওয়াহাবি ফের্কার প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওয়াহাব—এরা সবাই ইহুদিদের ১০০ শতাংশ সেবাদাস।
মালিকিকে ক্ষমতায় বসিয়েছে আমেরিকা। কিন্তু ইরান কেন মালিকি সরকারের সাথে সমপর্ক উন্নয়ন করল?
ইরানের সাথে ইরাকের সম্পর্কের সুত্র ঐতিহাসিক। ইরাকের সাথে ধর্মীয়, রাজনৈতিক, ভৌগলিক, ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে মিল রয়েছে ইরানের। সাদ্দাম পরবর্তি ইরাকের সাথে ইরানের সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটে ইরাকি কর্মকর্তাদের ইরান সফরের মধ্য দিয়ে। এরপর প্রধামন্ত্রি নুরি আল মালিকি ও প্রেসিডেন্ট জালাল তালাবানি কয়েকবার ইরান সফর করেন ইরান ও ইরাকের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার জন্য। ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রিও ইরাক সফর করে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রতি তার সমর্থন দেন।
রাজনৈতিক কারনঃ
শুরু থেকেই পশ্চিমারা ইরানের শান্তিপুর্ণ পরমানু কার্যক্রমের ঘোরবিরোধী। মূলত ইউরোপীয় ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা চায়না মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে টেক্কা দিয়ে কোন দেশ সামরিক ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাক। এই কারনে তারা অস্ত্র নির্মানের ধুঁয়া তুলে ইরানের চিকিৎসা ও বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের জন্য এগিয়ে নেওয়া পরমানু সমৃদ্ধকরণের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়। ২০০৬ সালে এক বিবৃতিতে ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন ও গবেষণার ক্ষেত্রে শান্তিপুর্ন পরমানু শক্তির ব্যবহারের অধিকার ইসলামিক ইরানসহ যেকন দেশেরই রয়েছে। যদিও ইরানের অস্ত্র নির্মানের বিষয়টি কোন প্রমাণিত বিষয় নয়। এছাড়া ২০০৮ সালে ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন জাবারি উপসাগরীয় দেশগুলোর সংগঠন (জিসিসি), মিসর, জর্ডান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে এক বৈঠকে ইরানের পক্ষ থেকে তাদের আশ্বস্ত করেন যে ইরান পরমানু অস্ত্র নির্মান করছে না এবং ইসলামিক রিপাবলিকের আন্তর্জাতিক পরমানু সংস্থার সাথে পুর্ন সহযোগিতার ভিত্তিতে পরমানু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি মেনে চলার বিষয়টি তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন।
ইরাকের এই রাজনৈতিক সমর্থন মার্কিনিদের বিরুদ্ধে ইরানের সাফল্য হিসেবেই বিবেচিত হতে থাকে। ফলে মার্কিনিদের মনে মালিকি সম্পর্কে অবিশ্বাস জন্ম নিতে থাকে। এজন্যই ২০০৭ সালে হিলারি ক্লিনটন সরাসরি মালিকির বিরুদ্ধে সরাসরি স্টেটমেন্ট দেয়।
২০১০ সালে ইরানের বিরুদ্ধে তৃতীয় দফা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা চলছে পরমাণু ইস্যুতে। এহেন পরিস্থিতিতে ইরান পরমাণু অস্ত্রনিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন ডাকে। উক্ত সম্মেলনে ইরাক, সিরিয়া, লেবানন ইরানের শান্তিপুর্ন পরমাণু কার্যক্রমে পুর্ন সমর্থন দেয়। ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হসাইন যেবারি বলেন, ইরানের শান্তিপুর্ন পরমাণু কার্যক্রমে তার দেশ পুর্ন সমর্থন দেবে।
দেখুন লিঙ্কঃ http://tinyurl.com/ot4kheu
পরিস্কার মাথায় চিন্তা করুন, নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আমেরিকা। কিন্তু এখানে মালিকি সরকারের পলিসি মার্কিন নিসেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে। তাহলে মিঃ দাস আপনি কিভাবে বলেন মালিকি সরকারে ইরান আমেরিকার সার্থ এক বিন্দুতে মিলেছে।
অর্থনৈতিক কারনঃ
ইরাকের আহবানে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইরাকের পুনর্গঠনে ইরান গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা রাখে। ২০০৭ সালে ইরান নন-অয়েল রপ্তানি করে ইরাকে যার বাজারমুল্য প্রায় ১.৮ বিলিয়ন ডলার। ২০০৮ সালে তা বেড়ে দাড়ায় ২.৩ বিলিয়ন ডলারে। ইরাকে নাজাফ, কারবালার মত অনেক পবিত্র স্থান রয়েছে যেখানে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক ইরানী ভ্রমন করে। প্রতি মাসে প্রায় ৪০,০০০ হাজারের বেশি ইরানী ইরাকের এইসব পবিত্র জায়গাগুলোতে ভ্রমন করে। সাদ্দামের শাসনের সময়কালে এসব পবিত্র স্থানগুলোতে শিয়াদের একত্রিত হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। কারণ ভয় ছিল এরা তার শাসনের বিরুদ্ধে এখান থেকে আন্দোলন করার। মার্কিন আগ্রাসনের কারনে দর্শনার্থীদের এই ভ্রমন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে যুদ্ধ পরবর্তি অবস্থায় ইরান ইরাকের এই প্রস্তাব সাদরে গ্রহন করে। এখানে ইরাকের স্বার্থ ছিল এসব দর্শনার্থিরা বিপুল পরিমানে ধর্মীয় সুভেন্যির ক্রয় করে ও ট্যুরিজম খাতকে এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে ইরাকের অর্থনীতিকে সাপোর্ট দেওয়া। এছাড়া ইরাকে গাড়ি, নির্মান সামগ্রী, ঔষধ, ফল, মস্লা, মাছ, কার্পেটসহ অন্যান্য অনেক পণ্যের চাহিদা থাকায় তা আমদানির জন্য ইরানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রয়োজন পড়ে। ফলে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে দুই দেশ প্রায় ১০০ এর বেশি অর্থনৈতিক সহযোগিতামূলক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ইরান ও ইরাকের মধ্যে প্রধানত বানিজ্য হয় নির্মান, খাদ্য ও শিল্প ক্ষেত্রে। ২০১৩ সালে এই বানিজ্যিক লেনদেন গিয়ে ১২ বিলিয়ন ডলারে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে স্বাভাবিক বানিজ্যিক লেন্দেনের স্বার্থে ইরান ইরাকের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। যেখানে সাদ্দাম এই ব্যাপার গুলোতে কখনই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেনি। কারণ সাদ্দাম ইরানী ও নিজ দেশের জনগণকে বিশ্বাস করত না। তার ক্ষমতার উৎস ছিল ইরাকের সামরিক বাহিনী ও পরাশক্তিগুলো।
দেখুন লিঙ্কঃ http://tinyurl.com/lrx6mr3
কূটনৈতিক কারনঃ
তেহ্রান ইরাকের সাথে দুই দিক দিয়ে সুসম্পর্ক বজায় রাখার পলিসি গ্রহন করেছে। এই পলিসি বুঝতে না পেরে কিংবা পশ্চিমা মিডিয়ার ক্ষপ্পরে পরে অনেকেই ইরান সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। ইরান ইরাকি সরকারের সাথে সম্পর্ক ভাল রাখার পাশাপাশি ইরাকি শিয়া মিলিশিয়া বাহিনীকে সহযোগিতা করে আসছে যারা মার্কিন ও তাদের যৌথ বাহিনীকে শক্তভাবে প্রতিরোধ করেছে। ইরানের চুড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে ইরাক থেকে মার্কিন ও পশ্চিমা প্রভাবকে সমূলে উচ্ছেদ করা এবং ন্যায়বিচার ভিত্তিক একটি শাসন কাঠামো দাড় করানো। মধ্যপ্রাচ্যে ইরাক থেকে সিরিয়া হয়ে লেবাননকে নিয়ে একটি জোট গড়ে তোলা। যাতে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক সমস্যাগুলোর সমাধান নিজেরাই করা যায়। সাম্রাজ্যবাদী ও আগ্রাসী দেশগুলো যাতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অযাচিত হস্তক্ষেপ না করতে পারে তার জন্য শক্তিশালী অ্যালায়েন্স তৈরি করাও উদ্দেশ্য ছিল। ফলে ইরাকের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন জরুরি ছিল। এছাড়া ফিলিস্তিন সংকটের সমাধানে এই জোট যাতে কার্যকরি ভূমিকা রাখতে পারে তার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতার স্বার্থে ইরাকের অংশগ্রহণ প্রয়োজন ছিল। এছাড়া ইরাকের মধ্যকার যে আন্তঃ সেক্টারিয়ান সংকটবিদ্যমান- তার সুরাহা করাও এর লক্ষ্য ছিল। ইরান এজন্য কুর্দিস্থানের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল্গুলোর সাথে দফায় দফায় আলাপ-আলোচনায় বসে। মালিকি সরকার চিন্তা করেছিল যদি ইরাকের শিয়া, সুন্নি, কুর্দি ও অন্যান্য সাম্প্রদায়িক সংকটের সমাধান হয় তবে তার সরকারের জন্য এটি স্বস্তিদায়ক হবে। ফলে ইরাকও সম্পর্ক উন্নয়নে সায় দেয়। ইরাক ছিল গালফ কোওপারেশন কাউঞ্ছিলের অন্যতম সদস্য। ফলে ইরাকের মাধ্যমে এই জোটের কর্মকান্ডের বার্তা উপসাগরীয় দেশগুলোর সম্মেলনে উপস্থাপন করার সুযোগ তৈরি হয়। এছাড়া ইরাকের মাধ্যমে অন্যান্য আরব দেশগুলোকে একই কাতারে আনাও লক্ষ্য ছিল। অর্থাৎ ইরান চেয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে আগ্রাসী ও বলদর্পি শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে। যেখানে ইরাকের ভূমিকা গ্রহন দরকারি ছিল।
২০০৯ সালে গ্লোবাল টেররোরিজমের এক রিপোর্টে যুক্তরাস্ট্রের স্টেট ডিপার্ট্মেন্টের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ইরান ইরাকি বিদ্রোহী গ্রুপগুলোকে অত্যাধুনিক রকেট, স্নাইপার রাইফেল, সয়ংক্রিয় অস্ত্র ও মর্টার দিয়ে সহায়তা করছে- যা কিনা মার্কিন নেতৃত্তাধীন বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা এরকম তিনটি মিলিশিয়া গ্রুপের তালিকা করেছে যাদেরকে ইরান সহায়তা করে আসছে। তারা হচ্ছে, Day Brigade, Ahl al-Haq and Kataib Hezbollah। রিপোর্টে মিলিশিয়াদের ন্যাটো সামরিক যানবাহন বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ায় ইরাঙ্কে অভিযুক্ত করা হয়। রিপোর্টি সম্পর্কে আরো জানতে ওয়াশিংটন পোস্টের এই লিঙ্ক দেখতে পারেন। http://tinyurl.com/3talyzv
The Revolutionary Guards' Quds Force plays a role in Iraq today that is similar to the destabilizing role it has played in Lebanon for many years. In Iraq, it provides Iranian arms, training, intelligence, and logistical support to anti-American Iraqi forces. Most of this support goes to Shiite groups such as the Mahdi Army and SCIRI's Badr militia, but the Quds Force also cooperates with the Kurdish polit¬ical parties. Recently, Iranian arms were discovered at a safe house controlled by Sunni insurgents.[4]”
Link: http://tinyurl.com/895cmum
এই সমস্ত কারনে আমেরিকা মালিকির উপর সন্তুষ্ট নয়। ফলে তারা ইরাকের ক্ষমতার জন্য নতুন এমন একজঙ্কে খুঁজছে যে হবে শতভাগ মার্কিন ক্রিড়ানক- আবার একইসাথে ইরান বিরোধী। ওবামার সাম্প্রতিক বক্তব্যে তারই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। ওবামা বলেছেন, শাসন ক্ষমতার প্রশ্নে মালিকি সংখ্যালঘুদের সম্পৃক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
কিন্তু দাসের বিশ্লেষণে এই তথ্যগুলো উপেক্ষিতই থেকে গেছে। তিনি ইরাকে ইরান আমেরিকার সার্থ মালিকিতে এসে এক হয়ে গেছে বলে যে যা বলেছেন এই তথ্যগুলো তার বিবাদভঞ্জন করবে বলে আশা রাখি।
জনাব গৌতম দাস লিখেছেন,
(চার) গত কয়েক মাসে ISIL বলে যে বিদ্রোহীদের আমরা দেখছি এটা মূলত আলকায়েদা ঝোকের অংশ সাথে পুরানা বাথিষ্ট (সাদ্দামের দলের নাম) আর সুন্নি গোত্র প্রধানদের সমন্বয়ের এক সুন্নি জোট। যেখানে আলকায়েদা অংশের সাথে বাকি অংশের এলায়েন্সের কমন ভিত্তি হল দুটো –বাগদাদ দখল ও ইরাকি রাষ্ট্রকে ইরানি প্রভাব মুক্ত করা। এছাড়া কোন আদর্শগত বড় মিল এখানে নাই বরং অমিল বেশি। এই জোট উত্তর-পশ্চিমের মসুল দখল করে যখন বাগদাদের দিকে ধাবমান তখন মালিকির ইরাকি সেনাবাহিনী প্রতিরোধ না করে আগেই ময়দান ফেলে বাগদাদে পালিয়ে আসে। অবস্থা দেখে অনেকেই প্রথমে একে বাগদাদের সেনাবাহিনীর মনোবলের ঘাটতি মনে করেছিল। কিন্তু একদিন পরে ইরাকের আকাশে দেখা গেল সিরিয়ান এয়ারফো্র্সের বোমা বর্ষণ। অর্থাত সিরিয়ান এয়ারফো্র্সকে ISIL এর উপর বোমাবর্ষনের সুবিধা করে দেবার জন্য মালিকি নিজ সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। কিন্তু এই বোমাবর্ষনের উদ্দেশ্য আরও ভয়ঙ্কর। এর মাধ্যমে ইঙ্গিত দেয়া হয়েও গেছে যে আমেরিকা-ইরান (সাথে বগলদাবা সিরিয়া)[এই অর্থে সিরিয়া থেকে ইরান এই শিয়া জোট] একজোট হয়ে ISIL বা সুন্নি ও আলকায়েদার বিরুদ্ধে লড়াই করা – এটা ঘটানো সম্ভব। এর প্রবল সম্ভাবনা একটা আছে। আর এতে ইরানের প্রবল আগ্রহ আছে। তার মানে সুন্নি জোটের বিরুদ্ধে এটা আমেরিকা-ইরানের কোন কূটনৈতিক ভাবালাপ নয় একেবারে জয়েন্ট মিলিটারি অপারেশন – এমন ভাবনা কল্পনা করা ইরানের জন্য ডালভাত। এই ইঙ্গিত ভয়ঙ্কর। এটা ইরান রাষ্ট্রের জন্ম থেকে আমেরিকান রাষ্ট্রনীতির বিরোধীতাকে অর্থহীন প্রমাণ করেছে। ইরান নিজ সংকীর্ণ রাষ্ট্রস্বার্থে আমেরিকার সাথে সামরিক জোট করে আগানোর নিজ ইচ্ছা প্রকাশ করার মধ্যে কোন অস্বস্তি দেখে নাই। এভাবে ইরাক নামের কোন রাষ্ট্র জাহান্নামে যাক, ইরান [আর সেই সুত্রে আসাদের সিরিয়া রাষ্ট্রও] রাষ্ট্রের স্বার্থ সুপ্রীম।
জনাব দাসের এই এনালাইসিস যে ভুল বিশেষ করে “আমেরিকা-ইরানের কোন কূটনৈতিক ভাবালাপ নয় একেবারে জয়েন্ট মিলিটারি অপারেশন – এমন ভাবনা কল্পনা করা ইরানের জন্য ডালভাত। এই ইঙ্গিত ভয়ঙ্কর। এটা ইরান রাষ্ট্রের জন্ম থেকে আমেরিকান রাষ্ট্রনীতির বিরোধীতাকে অর্থহীন প্রমাণ করেছে। ইরান নিজ সংকীর্ণ রাষ্ট্রস্বার্থে আমেরিকার সাথে সামরিক জোট করে আগানোর নিজ ইচ্ছা প্রকাশ করার মধ্যে কোন অস্বস্তি দেখে নাই“। এসব কথা বলে দাস সরাসরি ইরান-ইরাক বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। আমেরিকার সাথে জয়েন্ট মিলিটারি অপারেশনের তো প্রশ্নই আসে না, ইরানের রাহবার আলী খামেনি উল্টা ৩০০ মার্কিন সামরিক ফোর্স পাঠানোর তীব্র বিরোধিতা করেছেন।
রাহবার এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আমরা মার্কিন ও অন্যান্য দেশগুলোর ইরাকে হস্তক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করছি। আমরা এটা সমর্থন করি না। কারন আমরা ইরাকি সরকার, জাতি ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের উপর পুর্ন আস্থা রাখি যে তারা বিদ্রোহের শান্তিপূর্ন সমাধান করতে পারবেন। এবং আল্লাহ চাহেতো তারা অবশ্যই পারবেন।”
আলী খামেনীর প্রতিক্রিয়াঃ ১. http://tinyurl.com/kweupyg
রয়টার্সের সংবাদের লিঙ্কেঃ ২. http://tinyurl.com/ppzdb68
এছাড়া আলী খামেনী ও ইসলামী বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর সিনিয়র কমান্ডাররা ঘোষণা দিয়ে বলেন, ইরাকে প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ষ্টেট যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা তৈরি। দেখুন লিঙ্কঃ http://tinyurl.com/p8w6nxc
৯/১১ এর পর ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসন মধ্যপ্রাচ্যের ফল্ট-লাইঙ্কে আরও জোরালো করে। এই আগ্রাসন সিরিয়া ইরানকে সংঘবদ্ধ করে । মিসর, সৌদি ও উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলো পশ্চিমা মিত্র হিসেবে তথাকথিত মোডারেট ক্যাম্পে যুক্ত হয়। অন্যদিকে সিরিয়া ইরান প্রতিরোধের বিপরীত মেরু তৈরি করে। এই আল্যায়েন্স আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে পশ্চিমা হেজেমনির বিরুদ্ধে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে ভূমিকা নেয়। সিরিয়া ইরানের এই ঐক্যের সুনির্দিষ্ট কিছু জায়গা আছে।
ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী দলগুলোকে সমর্থন: উভয় দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের হামাস ও ইসলামিক জিহাদ দলকে সামরিক ও রাজনৈতিক সহায়তা করে।
হিজবুল্লাহকে সমর্থনঃ হিজবুল্লাহকে সামরিক ও বেসামরিক সবধরনের সহায়তা করতে সিরিয়া ইরানকে সাহায্য করে। সিরিয়া মনে করে, লেবাননে হিজবুল্লাহর অবস্থান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সিরিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় একটি শক্তি।
ইরাকঃ ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের পর থেকেই সিরিয়া ও ইরান যৌথভাবে কাজ করছে বাগদাদের উপর থেকে মার্কিন প্রভাব দূর করতে। উল্লেখ্য যে , সৌদি আরবের বিরুদ্ধে গিয়ে ইরাকি সরকার ইরানের পরামর্শে সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
সিরিয়ান যুদ্ধবিমান ইরাকের আইসিল অবস্থানের উপর বোমাবর্সন করলেও আমেরিকার সাথে তাদের জোটবদ্ধতার চিন্তা বাতুলতা বৈ কিছু নয়। গত জুনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সিরিয়াকে সতর্ক করে দিয়েছে আইসিস দখলকৃত কায়িম শহরে হামলার জন্য। লিঙ্কে দেখুনঃ- http://tinyurl.com/p4a8yj7
কিন্তু দাসের বক্তব্যঃ- “অর্থাত সিরিয়ান এয়ারফো্র্সকে ISIL এর উপর বোমাবর্ষনের সুবিধা করে দেবার জন্য মালিকি নিজ সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। কিন্তু এই বোমাবর্ষনের উদ্দেশ্য আরও ভয়ঙ্কর। এর মাধ্যমে ইঙ্গিত দেয়া হয়েও গেছে যে আমেরিকা-ইরান (সাথে বগলদাবা সিরিয়া)[এই অর্থে সিরিয়া থেকে ইরান এই শিয়া জোট] একজোট হয়ে ISIL বা সুন্নি ও আলকায়েদার বিরুদ্ধে লড়াই করা – এটা ঘটানো সম্ভব। এর প্রবল সম্ভাবনা একটা আছে।”
সুতরাং জনাব দাস আপনি ভয় পাবেন না। কারণ সিরিয়া-ইরানের সাথে আমেরিকার জোট হবে না। এর সপক্ষে আরও কিছু হাই অফিসিয়ালের বক্তব্য তুলে ধরছিঃ
ইরান যদি ইরাকে মার্কিন বিরোধী তৎপরতা অব্যাহত রাখে তবে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপগুলো নিবে তা জানতে এই প্রবন্ধটি পড়তে পারেন। লিঙ্কঃ http://tinyurl.com/895cmum
আইসিল প্রস্নে ইরান আমেরিকার সাথে কাজ করবে কিনা এমন জবাবে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ মেজর জেনারেল হাসান ফিরুজাবাদি বলেছেন, "ইরাকে ইরানি সেনা উপস্থিতির কোনো প্রয়োজন নেই এবং প্রতিবেশী এই আরব দেশের বিষয়ে তেহরান-ওয়াশিংটন সহযোগিতার ধারণা অর্থহীন; তা কখনো ঘটবে না।" দেখুন লিঙ্কঃ ১. http://tinyurl.com/pq2w8dw ২. http://tinyurl.com/k7kva2g
এছাড়া মার্কিন ডিফেন্স সেক্রেটারি চাক হেগেল বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ইস্লামী চরম্পন্থিদের বিরুদ্ধে ইরাকি সেনাবাহিনীকে রাশিয়া ও ইরানের দেওয়া সাহায্যের ব্যাপারে সচেতন আছে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এব্যাপারে রাশিয়া কিংবা ইরানের সাথে কোন সহযোগিতায় যাবে না।” দেখুন লিঙ্কঃ http://tinyurl.com/l4k4col
আরো চমকপ্রদ সংবাদ দিয়েছেন মার্কিন সাংবাদিক মার্ক গ্লেন। তিনি বলেন, “ সিরিয়া এবং ইরাকে যারা গৃহযুদ্ধ চালাচ্ছে তারা মার্কিনীদের সৃষ্টি, মার্কিনীরা এদের ট্রেনিং দিয়েছে, অস্ত্র দিয়েছে এবং সার্বিক সহায়তা ও সমর্থন দিচ্ছে শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলকে অপ্রতিদ্বন্দ্বি পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক শক্তি হিসেবেই নয়, ইসরাইলকে একটি অন্যতম বিশ্বশক্তি হিসেবে দাঁড় করানোর পাশাপাশি জায়নবাদীদের কথিত গ্রেটার ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখে সিরিয়া এবং ইরাকে মার্কিনী ও ইসরাইলিদের মদদপুষ্ট গৃহযুদ্ধের পাশাপাশি গাজায় ইসরাইলি বাহিনী এথনিক ক্লিনজিং বা গণহত্যা চালাচ্ছে। কথিত বিদ্রোহীরাও সিরিয়া ও ইরাকে নির্বিচার গণহত্যা চালাচ্ছে এবং বড় বড় তেলক্ষেত্র ও গ্যাসফিল্ডগুলোতে নাশকতা চালাচ্ছে এবং কোটি কোটি ডলার মূল্যের রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করে দিচ্ছে।”
২০১৪ সালের মে মাসে জার্মান পত্রিকা দার স্ফাইজেল এক প্রতিবেদনে বলেছে, কথিত ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্যা লিভ্যান্ট বা আইএসআইএল সন্ত্রাসীদের জর্দানের একটি গোপন ঘাঁটিতে প্রশিক্ষণ দিয়েছে আমেরিকা। এ সম্পর্কে তথ্য রয়েছে জর্দানের এমন কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, ২০১২ সালে মার্কিন প্রশিক্ষকরা আইএসআইএল চরমপন্থিদেরকে প্রশিক্ষণ দেন। সিরিয়ার সরকারের পতনের জন্য মার্কিন সরকার জর্দানে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
সিরিয়াতে আমেরিকা এবং আইসিস বাশারের বিরুদ্ধে, আবার ইরাকে ইরান এবং আমেরিকা (এখন বিমান হামলা করছে আইসিস এর উপর) উভয়ে আইসিস এর বিরুদ্ধে, ফলে শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু এসব পুরানা বিষয় এখন চলে না।
আফগানিস্তানে তৎকালীন সোভিয়েত বাহিনীকে পরাজিত করতে যুক্তরাষ্ট্র আল-কায়েদা বাহিনী সৃষ্টি করেছে বলে স্বীকার করেছেন সাবেক মার্কিন পররাস্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। আল-কায়েদা যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি বলে স্বীকার করলেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। সম্প্রতি ফক্স টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই গোপন বার্তা ফাঁস করলেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৯৪ সালের এই সময়ের মধ্যে আফগানিস্তানে একটি সশস্ত্র বাহিনী তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৫৩ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিল। দেখুন ভিডিও লিঙ্কঃ http://tinyurl.com/7824dme । মার্কিন বাহিনী এখন আফগানিস্তানে, লিবিয়া, সোমালিয়া, নাইজেরিয়ায়(প্রক্সি), সিরিয়া(প্রক্সি) লড়াই করছে আলকায়েদা ও তার শাখাগুলোর বিরুদ্ধে। সুতরাং ইরান মার্কিনীদের ঐ ভণ্ড যুদ্ধে জয়েন্ট হতে যাবে কোন দুঃখে। খেয়াল করুন, ইরানের ও যুক্তরাষ্ট্রের আইসিস বিরোধী অবস্থান সম্পুর্ন ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ইয়াজিদি সম্প্রদায়কে গণহত্যা থেকে রক্ষা করতে এই হামলা (যদিও এটা আসল কথা নয়)। আবার ইরান বলছে, আইসিস ইরাককে বিভক্ত করে ইসরায়েলের স্বার্থ রক্ষা করতে চায় ও তারা ইসরায়েলের সৃষ্টি।
খেয়াল করুন, আইসিস যখন ইরাকে প্রবেশ করে তখন স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি নেতারা স্বাধীনতার জন্য পায়তারা করছিল। এধরনের সংবাদও প্রকাশ হয়ে যায়। ঠিক তখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন, “ইরাক রাষ্ট্রের ধ্বংসের মাধ্যমেই একমাত্র স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। কুর্দিদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতি আমাদের সমর্থন করা উচিত।” লিঙ্কঃ http://tinyurl.com/q6ecte5
এখন প্রশ্ন, ফিলিস্তিনিরাও তো স্বাধীনতার আকংখা পোষণ করে। তবে নেতানিয়াহু কি ফিলিস্তিনিদের পক্ষে এমন বলবেন? আপনাকে বুঝতে হবে, কুর্দিস্থানে ইসরায়েলের স্বার্থ আছে। কিছু আগে (আইসিস তখনো কুর্দিস্থানে প্রবেশ করে নাই) সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল যে ইরাকের এই সংকটাবস্থায়ও কুর্দিস্থানের তেল তুরস্ক হয়ে ইসরায়েলে গেছে। এছাড়া আমেরিকান ইন্টারেস্ট ডট কমের এই প্রবন্ধটা দেখতে পারেন। লিঙ্কঃ http://tinyurl.com/kg3jhfg । (বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ প্রবন্ধে ১৯৬০ সালে ইসরায়েল, ইরান ও কুর্দিদের মিত্রতা দেখানো হয়েছে। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে এই মিত্রতা চরম শত্রুতায় পরিনত হয়ে বর্তমানেও বহাল আছে)। বর্তমানে ইসরায়েল-তুর্কি ও কুর্দিদের মধ্যে রয়েছে ত্রিমুখী অ্যালায়েন্স। এই অ্যালায়েন্সের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় ইসরায়েল। বিনিময়ে ইসরায়েল কুর্দিদের স্বাধীনতার দাবীতে সমর্থন দেয়। ৬০ এর দশকে এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কুর্দিদের স্বাধীনতার দাবীকে প্রকাশ্যেই সমর্থন দিয়েছিল। সুতরাং ইরাক ভাঙ্গার ইচ্ছা ইসরায়েল ও মার্কিন উভয়ের রয়েছে। সেটা আইসিস কিংবা কুর্দি যেভাবেই হোক। কুর্দিস্থান আবার আইসিসের দখলে চলে যাক এটা ইসরায়েল কখনই চায় না। যুক্তরাষ্ট্রও চায় না। তাই আইসিস যদি সুন্নি অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতো ও ইসলামিক রাষ্ট্র করে থেমে যেত তবে আমেরিকা কিছুই বলত না। কারণ ইরাকের একটা অংশে ইরান বিরোধী আরেকটা রাষ্ট্রের জন্মে আমেরিকারই বরং লাভ। এছাড়া আইসিস শিয়া, সুন্নি, ইয়াজিদি, খ্রিস্টান কোন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধেই তাদের নষ্ট জিঘাংসা চরিতার্থ করতে বাদ রাখেনি। ফলে আন্তর্জাতিকভাবে আইসিসের প্রতি সমর্থনও গড়ে ওঠেনি(কোন স্বাধীন রাষ্ট্রই সরকারিভাবে আইসিসের ইসলামিক স্টেটকে স্বীকৃতি দেয় নি)। এই অবস্থায় আইসিসের উপর হামলা করলে কেউ অসন্তুষ্ট হবে না। বরং মার্কিনীদের উপর থেকে এই দায়ভার ঘুচার সুযোগ হবে যে আইসিস মার্কিন মদদে তৈরি হয় নি। যুক্তরাষ্ট্র যেরকম খেলা আল-কায়েদার সাথে খেলেছে একই খেলা আইসিসের সাথেও খেলছে। খেলা চলাকালীন তারা এগুলো স্বীকার করে না। করে অনেক পরে যখন স্বার্থ লঙ্ঘিত হবার কোন সম্ভাবনা না থাকে। যেমন, সিআইএ ১৯৫৩ সালে ইরানের গণতান্ত্রিক মোসাদ্দেখ সরকারকে উৎখাত করতে সবরকম ষড়যন্ত্র করেছিল ও সফল হয়েছিল। তো এই ব্যাপারে মার্কিনিদের দায়ী করলেও কোনদিন তারা স্বীকার করে নি। স্বীকার করে বিস্তারিত নথি প্রকাশ করেছে এই তো কয়েক বছর আগে। সিআইএ’র স্বীকার করে প্রকাশকৃত রিপোর্ট দেখুন লিঙ্কেঃ http://tinyurl.com/mbo3o2z । তো এই হল আমেরিকা যাদের চরম দ্বিমুখী আর শয়তানী কর্মকান্ড বুঝতে হয় ইন্সাইট দ্বারা।
ইরান বিপ্লব সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “ইসলামও নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক ইডিওলজি। যারা খলিফা ধারণার রাজনীতি ধারণ করেন সেটা আরো ঘোরতর আন্তর্জাতিক বা প্যান ধারণা। ইরানী বিপ্লব যদিও যতটা না আন্তর্জাতিক তার চেয়ে বেশি জাতীয় বৈশিষ্টের। তবু এটা সুনির্দিষ্ট এক ইডিওলজিক্যাল বিপ্লব। আবার তা পশ্চিমের মত অর্থে একটা আধুনিক রাষ্ট্র না হলেও নতুন ধরণের তবুও মোটা দাগে তা মর্ডান রাষ্ট্র বৈশিষ্টেরই।”
একটা বিপ্লব সম্পর্কে বলতে গেলে সেই বিপ্লবের প্রাণপুরুষ, বিপ্লবী তাত্ত্বিক, চিন্তাবিদ যারা কিনা মানুষকে এহেন মহান চিন্তায়, কাজে উদ্বুদ্ধ করেছেন – তাদের চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে মোটাদাগে বিশ্লেষণ করাটা জরুরি। তানাহলে উক্ত বিপ্লব সম্পর্কে বিশ্লেষণ অসম্পুর্ন, ভ্রান্ত রূপ ধারণ করতে বাধ্য। কিন্তু শ্রদ্ধ্যেয় গৌতম দাস তার আশ্রয় না নিয়েই ইরানের মহান ইসলামী বিপ্লবকে স্রেফ ইরান বিপ্লব নাম দিয়ে তাকে জাতীয়তাবাদী আখ্যা দিয়েছেন। এর আন্তর্জাতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কোন চিন্তার আন্তর্জাতিকতা হচ্ছে সমগ্র বিশ্বের মানুষকে এর আওতাবদ্ধ করা। ইসলামে যেটাকে উম্মাহ ধারনায় ব্যাক্ত করা হয়। কোন দলিল প্রমান ছাড়া ইরানের ইসলামী বিপ্লবের আন্তর্জাতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা কতটুকু তা পাঠকরাই বিচার করবেন। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতা ও বিপ্লবী তাত্ত্বিকদের চিন্তা, কথা ও কাজ থেকে আমরা সহজেই বুঝতে পারবো যে- ইরানের ইসলামী বিপ্লবকে ইরান বিপ্লব কিংবা জাতীয়তাবাদী আখ্যা দেওয়াটা চাপিয়ে দেওয়া অপবাদ বৈ কিছু নয়। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি ১৯৮২ সালে এক ভাসনে ইসরায়েলের ফিলিস্তিনে আগ্রাসন নিয়ে মুসলিম উম্মাহকে শক্তিশালী সম্পর্ক জোরদারে আহবান জানান। তিনি বলেন, “ইসরায়েল গোলান উপত্যকা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে না ''। এ ধরনের বিপর্যয়ের শেকড়কে আপনারা নিজেদের একতার মাধ্যমে মূলোৎপাটিত করুন। যদি একে (ইসরায়েল) ধ্বংস না করেন তাহলে এই ক্যান্সারপিন্ড অন্যত্রও ছড়িয়ে পড়বে, কেবল গোলান উপত্যকা নিয়েই তুষ্ট থাকবে না। ওদের ধারণা হচ্ছে ইসরায়েল সমস্ত মানব গোষ্ঠীর সেরা এবং ফরাত থেকে নিল পর্যন্ত ওদের যায়গা। আর এ সমস্ত স্থান ইসরায়েলের সাথে সংযুক্ত হতে হবে। .........। ইরান তাদের সকল প্রতিষ্ঠান নিয়ে ফরিয়াদ করে বলছে যে, আমরা আপনাদের কোন জাতি সরকারের প্রতিই বিরুপ দৃষ্টিতে তাকাই না। আমরা শুধু চাই আমরা এক হই, এলাকা থেকে ঐ বিপর্যয়কে (ইসরায়েলকে) দূর করি। আপনারা কিনা সেই ইরানের সাথে দুশমনি করছেন! কেন এরুপ হচ্ছে?? উম্মতের নেতাদের চিন্তা করা উচিত, চিন্তাবিদ্দের ভেবে দেখা উচিত, আলেমদের ভেবে দেখা উচিত। তাদের ভেবে দেখা উচিত যে, দুস্মন আসলে কে, বন্ধু আসলে কে? দুষমনকে উচ্ছেদ করতে হবে। বন্ধুদের সাথে একতার হাত মিলাতে হবে। মুসলমানদের হাতেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। যতদিন মুসলমানরা একতাবদ্ধ না হবে তদ্দিন এ সমস্যা থাকবেই। ইমামের ভাষণ; ২৪/১/১৯৮২। ছহিফা, ষোড়শ খণ্ড, পৃঃ ২১।
এই নেতা আরও বলেছেন, “লা শিয়া লা সুন্নি আনাল মুস্লিমিন” শিয়াও নয় সুন্নিও নয়, আমরা মুসলমান।
বিপ্লবের প্রধান নেতার এই চিন্তা তার জাতীয়তাবাদী কিংবা সংকীর্ন ধারণাকে বহন করে না। বরং মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধতার আন্তর্জাতিক প্রয়াসকেই ব্যক্ত করে। তিনি তার অসংখ্য ভাষণে মুসলিম রাষ্ট্র ও তার জনগণের দুর্দশার সমস্যার সমাধানে মুসলিম উম্মাহকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করতেন। তিনি ফিলিস্তিন সংকটকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বের মুসলিমদের একমত পোষণের আহবান জানাতেন। তার নেতৃত্বে ইরান মুসলমানদের প্রথম কেবলা বাইতুল মুকাদ্দাস্কে যায়নবাদিদের হাত থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে রমজান মাসের শেষ শুক্রবার বিশ্বব্যাপী আল-কুদস দিবস চালু করেন। সারা বিশ্বের মুসলমানদের তা পালনের আহবান জানান। তিনি ইসলামে বিভিন্ন মাজহাবের মধ্যে ঐক্যের সূত্র স্থাপনে ১২ রবিউল আউয়াল থেকে পরবর্তি ১ সপ্তাহ ইসলামী ঐক্য সপ্তাহ চালু করেন। যাতে করে সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তিগুলো মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও তা থেকে সুযোগ লাভ করতে ব্যর্থ হয়। ইরানের বর্তমান যে রাহবার(প্রধান ধর্মীয় নেতা) আয়াতুল্লাহ আলী খামেনী আরব বসন্তের সময় বলেছিলেন, বর্তমানে বিশ্বে যে কোন ইসলামী আন্দোলনের মানদণ্ড হবে ফিলিস্তিন ইস্যুতে তারা কি ধারণা পোষণ করে। অর্থাৎ ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রধান নেতারা শিয়া ইরান রাষ্ট্র স্বার্থের পরিবর্তে সবসময় মুসলিম, উম্মাহর সমস্যাগুলোকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন ও তার সমাধানে সবার আগে এগিয়ে এসেছেন। বিশ্বে আর কোন মুসলিম রাষ্ট্রকে মুসলিম উম্মাহর সমস্যা সমাধানে এতটা ততপর হতে দেখা যায় না।
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের আরেক তাত্ত্বিক রূপকার আয়াতুল্লাহ মোতাহারী তার ‘ইসলাম ও ইরানের পারস্পরিক অবদান’ বইয়ের জাতীয়তাবাদ চ্যাপ্টারে বলেন, “কোন বিষয় এক জাতি থেকে উদ্ভূত হলেই তা তাদের নিজস্ব হয়ে যায়না যেমনি তার সীমাবহির্ভুত অঞ্চল হতে কিছু প্রবেশ করলেই বিজাতীয় বলা যায় না। অর্থাৎ জাতীয় ও বিজাতীয় হওয়ার মানদণ্ড এটি নয়। ...। যেমন আমাদের ইরানে অন্যান্য অনেক দেশের মতই আড়াই হাজার বছর ধরে স্বৈরতান্ত্রিক সরকার কার্যকর ছিল যা অর্ধ শতাব্দী কালের কিছু বেশি সময় হল সাংবিধানিক সরকারে পরিনত হয়েছে। কিন্তু এ সাংবিধানিক বা শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমরা নিজেরা উদ্ভাবন করিনি; বরং অন্যরা উদ্ভাবন করেছে ও আমরা তা গ্রহন করেছি ও এটি অর্জনের জন্য অনেক আত্মবিসর্জন দিয়েছি।......। এখন কি আমরা শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে জাতীয় সরকার বলে মেনে নেব না? নাকি অন্য জাতির নিকট হতে গ্রহন করেছি বলে এ অজুহাতে দাবি তুলব আমাদের জাতীয় সরকার হল স্বৈরতান্ত্রিক (তাই উচিত হল একে গ্রহন করা) এবং শাসনতান্ত্রিক সরকার বিজাতীয় সরকার (তাই উচিত তা বর্জন করা)।”
“উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বোঝা গেল জাতীয় অনুভুতি ও আবেগের চেতনার দৃষ্টিতে যা কিছু ঐ দেশে উদ্ভাবিত হয় তা-ই জাতীয় হতে পারে না। আবার যা কিছুই দেশের সীমার বাইরে থেকে আসে তা বিজাতীয় বলে পরিগনিত হয় না; বরং মানদণ্ড হল প্রথমে জানতে হবে ঐ বিষয়টি কোন জাতির বিশেষ রং ধারণ করেছে কি? নাকি তা রংহীন সর্বব্যাপী ও বিশ্বজনীন? দ্বিতীয়ত, ঐ জাতি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে তা গ্রহন করেছে নাকি চাপে বাধ্য হয়ে?”
এবং তিনি ‘ইসলামী আন্তর্জাতিকতাবাদ’ চ্যাপ্টারে বলেন, “’’জাতীয়তাবাদ জাতীয় আবেগ ও অনুভুতির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত; কোন যুক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তিতে নয়।...। এ বিষয়ে সুনিশ্চিত, ইসলাম ধর্মে প্রচলিত জাতিয়তার কোন মুল্য নাই বরং ইসলাম সকল জাতি, গোত্র ও বর্নকে সমদৃষ্টিতে দেখে। আবির্ভাবের প্রথমেও এ ধর্মের দাওয়াত বিশেষ কোন জাতির প্রতি ছিল না। তাই প্রথম থেকেই এ ধর্ম প্রচেষ্টা চালিয়েছে বিভিন্ন উপায়ে গোত্রীয় ও জাতীয় গর্ব ও অহংকারের ভিত্তি উপড়ে ফেলার।”
এ থেকে একটা বিষয় সুস্পষ্ট যে, ইরান ইসলামকে বিশ্বজনীন ও আন্তর্জাতিক ধর্ম হিসেবেই দেখে। তাদের বিপ্লব ইরানি সীমায় গণ্ডীবদ্ধ- এ ধারনায় নয়। বরং তা ইসলামী বিপ্লব ও এর একটি আন্তর্জাতিক রূপ রয়েছে- এ বার্তাই প্রদান করে। তারা ইসলামী আন্তর্জাতিকতাবাদে বিশ্বাসী। তাই তাদের ইসলামী আন্তর্জাতিকতাবাদি চিন্তাকে বাদ দিয়ে একে ইরান বিপ্লব নামে জাতীয়তাবাদী আখ্যা দেওয়াটা একটি মহান ইসলাম বিপ্লবকে গুরুত্বহীন করার অপচেষ্টা বৈ কিছু নয়।
©somewhere in net ltd.