নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শুণ্যতার নিচে পিয়ানো শুনি...

রাজসোহান

প্রিয় অন্ধকার, আমার পুরোনো বন্ধু তুমি...

রাজসোহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটো গল্পঃ ড্যান্ডিলায়ন ফুল আর কবিতা

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:০৯



শহরের শেষ মাথায় ছোট্ট নদীর তীরে ছোট্ট বাগানটায় গাছপালা আর ফুলের সমাহার যেন শীতকালের আগুন, যেন মরুভূমির মধ্যে শীতল কোনো হাওয়া। সময়ে সময়ে ব্যস্ত শহরবাসীদের অবসর কাটানোর মনোরম নিকুঞ্জ।

শেষ বিকেলের রোদ এখানে ওখানে সেখানে সোনার মতো চিক চিক করছে। কেউ কোথাও নেই, শুধু একটি ছেলে আর একটি মেয়ে হাত ধরাধরি করে বাগানটার মধ্যে ফালি পথ খুঁজে খুঁজে হাঁটছে। ছেলেটির মনে খুশির আমেজ, মুখে চাপা উত্তেজনা। তার মনে হচ্ছিলো এই মুহুর্ত পুরোটাই বর্ণবিচিত্রে আঁকা কোনো ছবি, কোনো কবিতা। এই কবিতার নিস্তরঙ্গ ঢেউয়ে ভেসে সে নিজেও তো আরো কবিতা সৃষ্টি করতে পারে! সে যদি এখন একটি ফুল তুলে মেয়েটির চুলে গুঁজে দেয় তাহলে সেটা কি কবিতা লেখার চেয়ে কোনো অংশে কম হবে!

বাগানে মেয়েটি বাতাসের মতো ভেসে ড্যান্ডিলায়ন ফুলগুলোর কাছে ছুটে গেলো। সাদা সাদা ড্যান্ডিলায়ন, তার সাথে মেয়েটিও যেন ফুলগুলোর স্তবক।

'কী সুন্দর গন্ধ! আঃ – বলতে বলতে মেয়েটি বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো। আবেশে তার চোখ বুঁজে এলো, তার হৃদয় থেকে যেন নিঃসাড়ে বেরিয়ে এলো কবিতা -

'সাদা সাদা মেঘের মতো
ড্যান্ডিলায়ন ফুল,
সুগন্ধে মাতাল আমি ও -
আমার এলোচুল।'

মেয়েটির মাথার উপর তিন চারটে মৌমাছি গুনগুন করে উঠল। ছেলেটির চোখ দুটোতে খুশির ঝলক। সে বলল, 'একটা ফুল ছিঁড়ে তোমার চুলে গুঁজে দিই!' মেয়েটিও ঝলমলে চোখে বলল, 'উহুম দাও!'

দুজনে প্রায় একই সঙ্গে সবচেয়ে বেশি পাপড়ি ছড়ানো একটা ফুলের দিকে হাত তুললো।

মেয়েটি হঠাৎ বলে উঠল, 'না!' তার হাত থেমে গেলো, সে চেয়ে রইলো ফুল ডালের একটা জখম অংশের দিকে, যে অংশে খড় পাকানো দড়ি দিয়ে ব্যান্ডেজের মতো নিপুণভাবে বাঁধা।

ছেলেটি চারিদিকে দেখে নিয়ে বললো, 'কেউ জানবে না।' বলতে বলতে সে স্বচ্ছন্দে ডালটার দিকে আবার হাত বাড়ালো।

হাতটা ধরে ফেলে মেয়েটি বললো, 'না, ফুল ছিঁড়ো না- কী লেখা আছে দ্যাখো!'

ছেলেটি দেখলো একপাশে ছোটো একটা সাদা রঙ মাখানো কাঠের তক্তির উপর কালো অক্ষরে লেখাঃ ‘ফুল ছিঁড়বেন কেন বন্ধু! মনে রাখবেন এই বাগান আপনারই বাড়ি!'

ছেলেটি হেসে উঠলো, 'এই লেখার কথা বলছো? আরে, ওটা তো আমিই লিখেছি।'

বলেই ছেলেটা চট করে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ডাল থেকে একটা ফুল ছিঁড়ে নিলো, তারপর ফুলটা মেয়েটির দিকে বাড়িয়ে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল, 'ফুলের জলসায় প্রিয়তমা, এই ফুল তোমাকেই উপহার দিলেম!'

মেয়েটির মুখের হাসি নিভে গেলো। ফুল নিতে সে হাত বাড়ালো না, নিথরভাবে সে ছেলেটির দিকে চেয়ে রইলো যেন সে ছেলেটিকে আগে কখনো দেখে নি!

সামান্য সময়ের পর আবেগের সঙ্গে বলে উঠল, 'আমি ভাবতে পারি নি যে, তুমি…তুমি…' কথা শেষ না করেই মেয়েটি এলোপাথাড়ি পা ফেলতে ফেলতে প্রায় ছুটে চলে গেলো। পেছনে পেছনে গিয়ে ছেলেটি কতোবার ডাকলো, কিন্তু মেয়েটি একবারো ফিরে তাকালো না।

পরদিন মেয়েটির লেখা একটি চিরকুট এসে পৌঁছালো ছেলেটির কাছে। চিরকুটে উপরের দিকে লেখাঃ 'দুমুখো লোকের উদ্দেশ্যে'-,

'নিজের আজকের ভালোবাসার জন্যে
গোটা একটা ফুলের অস্তিত্ব তুমি মুছে দিতে পারো।
নিজেরই কালকের অস্তিত্বের জন্যে
গোটা বসন্তকালকেও তুমি ঘুচিয়ে দিতে পারো!'

চিরকুটের ভাষাগুলো ধীরে ধীরে ছেলেটার চোখ শুন্য করে দিলো।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: আহারে---- আহারে---

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.