নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাঠকের মুগ্ধতাই আমার লেখার প্রেরণা, সত্য প্রচার আমার লেখার উদ্দেশ্য আর মিথ্যাকে বিনাশ করে দিকেদিগন্তে সত্যের আলোকচ্ছটার বিচ্ছুরণই আমার লেখার চূড়ান্ত লক্ষ্য।

বিদ্রহীসূত

রাকীব আল হাসান, সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি।

বিদ্রহীসূত › বিস্তারিত পোস্টঃ

সত্য তিতা হলেও এর সুদূরপ্রসারী ফল কিন্তু সুমিষ্ট

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:১৩

আরবিতে একটি কথা আছে, “আল হাক্কু মুররুন” অর্থাৎ হক বা সত্য কথা তিতা। সত্য কথা শ্রোতার কাছে সর্বদা তিতাই হয়, তবে সত্য বলার জ্বালাও কম নয়। তবু সত্য যে বলতেই হবে, প্রকাশ করতেই হবে, কারণ সত্য ছাড়া মুক্তি নাই। সত্য বলার জ্বালাটি কেমন সেটা ব্যক্ত করা দরকার। যতই মানুষকে বোঝানোর চেষ্ট করি যে, ইসলাম এসেছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য, কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলের জন্য আসে নি কিন্তু কাউকে বোঝাতে পারি না। বরং ধর্ম ব্যবসায়ীরা যান চটে, কারণ সত্য বললে তাদের ব্যবসায়ের পুঁজি ধরে টান পড়ে। তারা সাধারণ জনতাকে আমাদের বিরুদ্ধে উষ্কে দেন, আমাদের জ্বালা বাড়ে, সত্য বলার জ্বালা। এখানে শেষ হলেও কথা ছিল, কিন্তু না, এতেও তারা ক্ষান্ত না হয়ে আমাদেরকে মুরতাদ, ধর্মদ্রোহী, খ্রিস্টান ইত্যাদি ফতোয়া দিয়ে ধর্মপ্রাণ সাধারণ জনতাকে আমাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন এই বলে যে, ধর্ম গেল, ধর্ম গেল। আবার অনবরত হুমকি দিতে থাকেন শারীরিক ক্ষয়ক্ষতির এমনকি জীবননাশেরও, শুধু যে নিছক হুমকি তাই নয়, সুযোগ পেলে তাদের তাম্বুলচর্চিত, মরিচাপড়া বিষদাঁত দিয়ে ছোবলও মারেন।

এতো গেল ধর্ম ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত জ্বালা। আরও জ্বালা আছে। আমরা যখন বলি, আকাশের মতো উদার, সমুদ্রের মতো বিশাল, প্রচণ্ড গতিশীল, প্রগতিশীল এই দীনটা এসেছে মানবজাতিকে মুক্তি দিতে, সকল অন্যায়-অবিচার, যুদ্ধ-বিগ্রহ, হিংসা-বিদ্বেষ এক কথায় সর্বরকম অশান্তি দূর কোরে দিয়ে মানুষের মাঝে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে; এটা মসজিদে, হুজরায়, খানকায়, আস্তানায় বসে চোখ বন্ধ করে রিপু জয়ী সাধু সন্ন্যাসী হওয়ার জন্য আসে নাই। ব্যাস, ক্ষিপ্ত হয়ে যান পীর সাহেব, সন্ন্যাসীরা। বাড়ে আমাদের আরেক জ্বালা। তারা তাদের অনুসারী, অনুগতদের ফতোয়া দিয়ে বসেন, এরা ইসলামের শত্রু , এরা কাফের, এদের যেখানে পাবে ইচ্ছামতো ঠেঙ্গানি দিয়ে দেবে। অমনি তাদের অনুসারীরা দুরবীন নিয়ে খোঁজা শুরু করেন আমাদের, বাগে পেলেই বুঝিয়ে দেন সত্য বলার কী জ্বালা। কিন্তু কী কোরব, সত্য যে বোলতেই হয়। আবার যখন বলি, রাজনীতির নামে এই যে প্রতারণা, রাজনীতির নামে বর্তমানে যে ব্যবসা চোলছে এটা উচিত নয়। মানবতার কল্যাণে যারা নেতৃত্ব দিবেন, তাদের নেতৃত্বের প্রতি কোন লোভ থাকার কথা নয়, মানুষই ডেকে এনে তাদেরকে ক্ষমতায় বসাবে, তারা ঐ চেয়ারে বসতে বাধ্য হবেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর তারা ঠিকমতো ঘুমাতে পারবে না, জনগণের জীবন, সম্পদ পাহারা দিবেন। তারা স্রষ্টার দেওয়া বিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, তারা মানুষের সম্পদকে নিজের সম্পদ বলে কুক্ষিগত করবেন না। যারা নিজেদের ঢোল নিজেরা পেটায়, নিজেদের জন্য ভোটভিক্ষা করে এবং সময়মতো পেশিশক্তি খাটিয়ে ক্ষমতা হস্তগত করতে চায় তারা প্রকৃতপক্ষে মানুষ নয়, তারা দ্বিপদ বিশিষ্ট একপ্রকার পশু, তারা সাধারণ জনতাকে নিয়ে ব্যবসায় করে, তারা ব্যবসায়ী আর তাদের পণ্য গণতন্ত্র। এগুলি সত্য যা রাজনীতিকদের কাছে তিক্তস্বাদের। ব্যাস, শুরু হয় আমাদের আরেক জ্বালা। এই অসৎ, অসাধু এক শ্রেণীর রাজনীতিকদের পক্ষ থেকে শুরু হয় হুমকি-ধামকি, তাদের পোষা কিছু ‘প্রাণী’-কে লেলিয়ে দেয় আমাদের পেছনে, শুরু হয় আমাদের আরেক জ্বালা। আবার ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়ে পুলিশ-র‌্যাবকে পাঠায় আমাদেরকে গ্রেফতার করতে, সত্য বলায় আমাদের নামের পাশে যুক্ত হয় নানা মিথ্যা বিশেষণ- যদিও আমরা এ জাতীয় শব্দের ধারেকাছেও নেই। এখন রাজনীতিক যদি ক্ষমতাসীন দলের হন তাহলে কোন কথাই নেই, আমার ঠিকানা হবে লালদালান। জীবনে যেন আমি আলোর মুখ দেখতে না পাই বিভিন্ন প্রকার মিথ্যা মামলা লাগিয়ে দেওয়া হবে। আর সে ক্ষিপ্ত রাজনীতিক যদি ক্ষমাসীন দলের না হন তাহলে থানা-পুলিশ না করে রাস্তায় পেটোয়াবাহিনী লাগিয়ে হাড়-গোড় ভেঙ্গে দেওয়ার বন্দোবস্ত করবেন। জ্বালার ওপর জ্বালা।

কিন্তু জ্বালা যতই হোক সত্যপ্রকাশ না করে বাঁচবো কি করে? যারা মিথ্যার ব্যাপারী, সত্যের আমদানী দেখে তাদের গা-জ্বালা করবেই, এটা প্রাকৃতিক নিয়ম। সেই মিথ্যার ব্যাপারীদের উদ্দেশ্যে একটা গল্প শোনাই। ছোটবেলায় দেখতাম, কোন কোন চর্মরোগের জ্বালাপোড়ায় যখন দিনরাত অস্থির থাকতাম তখন দাদীমা এক ধরনের গাছের পাতার (যেমন নিম পাতা) রস দিয়ে গোসল করাতেন। যখনই ঐ রস একটুখানি মুখে যেত তখনই দাদীমাকে বকাবকি শুরু করতাম। বুঝতাম না যে এই প্রচণ্ড তিতা রসটিই আমার রোগটি সারিয়ে তুলবে আর দাদীমা কষ্ট কোরে এই পাতা বেটে আমাকে গোসল করাচ্ছেন নিঃস্বার্থভাবে আমাকে শুধু ভালবেসে, আমি যেন ঠিকমত ঘুমাতে পারি। আবার ঐ পাতা দিয়ে বড়ি বানিয়ে ভাতের মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে খাওয়াতেন, যখনই বুঝতাম ভাতের মধ্যে প্রচণ্ড তিতা রয়েছে তখনই দাদীমার বিরুদ্ধে যেতাম ক্ষেপে। কিন্তু দাদীমাও নাছোড়বান্দা। শত বকাবকি আর নাতীর অত্যাচারেও তিনি ক্ষান্ত হতেন না, বিভিন্ন কলা-কৌশলে আমাদের ঐ তিতা ঔষধ খাইয়েই ছাড়তেন। ঔষধ খাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যেতাম এবং তখন সারা রাত আরামে ঘুমোতে পারতাম। পরে অনুশোচনায় চোখে পানি চলে আসত আর মনে মনে ভাবতাম যে, আমি দাদীমার সাথে কী খারাপ ব্যবহারই না করেছি। অথচ তিনি শত বাকাবকি আর অত্যাচার সহ্য করেও শুধু আমার প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসার জন্য নিঃস্বার্থভাবে আমার ভালোর জন্য চেষ্টা করে গেছেন। এখন দাদীমা নেই, তবু আজও মনে মনে তার কাছে ক্ষমা চাই। তার কথা স্বরণ করে আজও চোখে পানি আসে।

আজ আমরা যে সত্য তুলে ধরেছি তা অনেকের কাছে হয়তো ঐ নিমরসের মতই তিতা। এটা রোগীদের ক্ষেত্রে প্রথমে একটু বিস্বাদই লাগবে। গালাগালি দেবেন? দেন। আমরা কিন্তু নিঃস্বার্থভাবে মানবতার কল্যাণের জন্য সত্য প্রকাশ করছি, বিশ্বাস করুন এর বিনিময়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া আর কোন স্বার্থ আমাদের নেই। শুধু আপনাদের ভালোর জন্য, যে অশান্তির অনলে আজীবন দগ্ধ হোচ্ছেন, সেই অশান্তি থেকে মুক্তির ওষুধ প্রাথমিকভাবে তিতা মনে হোলেও এর ফল সুমিষ্ট। দয়া কোরে আমাদের এই মহৌষধটি খান, কথা দিচ্ছি, আপনি এবং আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরামে ঘুমোতে পারবেন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩৯

পাঠক১৯৭১ বলেছেন: "আরবিতে একটি কথা আছে, “আল হাক্কু মুররুন” অর্থাৎ হক বা সত্য কথা তিতা। "

@লেখক, নীচের শব্দটির আরবী প্রতিশব্দ লিখুন ---------- ৫ পয়েন্ট

বালছাল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.