নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

"গুরবে কুশতন শব-ই আওওল"

স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি, স্বপ্ন দেখাতে চাই।চরমভাবে আমি নব সৃজনে বিশ্বাসীএবং বি:শ্বাস করি মানবতার মুক্তি ।কিছু করতে চেষ্টা করি যাতে মানবকল্যান হয়।

নাসির শ্রাবন

আমাকে সবাই পছন্দ করে কিন্তু গ্রহন করে না।স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন দেখাতে চাই। ইচ্ছে করে জীবনটাকে স্বপ্নের মতই সাজাই।তাই স্বপ্নের পেছনে ছুটি প্রতিনিয়ত..........।

নাসির শ্রাবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

"আমাদের কবিয়াল বিজয় সরকার:একজন কিংবদন্তির আত্মকাহিনী"

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৫:১৯

"একটা চিঠি লিখি তোমার কাছে ব্যাথার কাজলে

আশা করি পরান বন্ধু আছো কুশলে

আগে নিও ভালোবাসা অবলার না বলা ভাষা

আমার যত গোপন আশা ভিজাইয়া দেই নয়ন জলে"



বিজয় সরকার একজন বাউল শিল্পী, সুরকার,চরন কবি এবং বিচ্ছেদ গানের রচয়িতা।



কবিয়াল কি:



লোকগানের একটি ধারার নাম কবিগান, আর এই গানের গায়ককে বলা হয় কবিয়াল।কবিগান মূলত প্রতিযোগিতামূলক গান;আর এর জন্য দরকার হয় ধর্মশাস্ত্র বিষয়ে জ্ঞান, গানের গলা, গান ও ছড়া বাঁধার শক্তি, প্রত্যুত্পন্নমতিত্ব, অভিনয় দক্ষতা, ছন্দে ছন্দে কথা বলার ক্ষমতা এমনকি শারীরিক ভাষাও।এটি সংগীতের সৃজনশীল ধারা।বিজয় সরকার মূলত এই কবিগানের একজন পেশাদার শিল্পী আর এ জন্যই তিনি কবিয়াল বা লোককবি।



জন্ম:



বিজয় সরকার ১৩০৯ বঙ্গাব্দের ৪ই ফাল্গুন, ১৯০৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার পল্লী ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।পিতার নাম নবকৃষ্ণ বৈরাগী এবং মাতা হিমালয় কুমারী বৈরাগী। দশ ভাইবোনের মধ্যে বিজয় সরকার ছিলেন সবার ছোট।

বি:দ্র:-কিছু সূত্র বিজয় সরকারের জন্মতারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি উল্লেখ করেছে।



শিক্ষা জীবন:



বিজয় সরকারের শিক্ষাজীবন শুরু হয় জ্যাঠাতুত ভাই অভয় চন্দ্রের বাড়ীতে। সেখানে কিছুদিন লেখাপড়ার পর তিনি গ্রামের পাঠশালায় ভর্তি হন। পাঠশালায় অধ্যয়ন শেষ করে বিজয় ভর্তি হন হোগলাডাঙ্গা ইউ, পি, স্কুলে এবং পরবর্তীতে বাঁশগ্রাম এম. ই. স্কুলে। এখানে কিছুদিন পড়াশোনার পর তিনি ভর্তি হন সিংগাশোলপুর কে. পি. ইন্সটিটিউশনে ।তখনি বিজয়ের পিতা মারা যায় এবং আর্থিক সংকটে পড়ে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়।



কর্মজীবন:



অন্নের সন্ধানে ছুটে চলা বিজয় সংসারের দুঃখকে জয় করতে কর্মজীবন শুরু করেন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক হিসাবে। এর পর কিছুদিন গোপালপুর কাচারিতে নায়েবের দায়িত্ব পালন করেন।

 ১৯২৫ সালে, তিনি গোপালগঞ্জের কবিয়াল মনোহর সরকার এবং রাজেন্দ্রনাথ সরকারের সংস্পর্ষে আসেন এবং কবিগানকেই নেশা ও জীবিকা হিসাবে গ্রহন করেন।

 দিল্লি,কলকাতা,ঢাকার বাংলা একাডেমি,খুলনা বেতার কেন্দ্র,ঢাকা বেতার কেন্দ্র,বিটিভিসহ বিভিন্ন গুরম্নত্বপূর্ণ আসরে ও মিডিয়ায় সঙ্গীত পরিবেশন করতেন।



সঙ্গীতজীবন :



বাল্যকাল থেকে তিনি ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির। মাধ্যমিক শিক্ষার গন্ডি পেরোতে না পারলেও স্কুলজীবন থেকেই তিনি গান রচনা ও সুর করে নিজে গাইতেন।

 পাঠশালার শিক্ষক নেপাল বিশ্বাস এর উৎসাহ ও প্রশিক্ষণেই বিজয় সরকারের সংগীত জীবনের ভিত্তি রচিত হয়।

 শিশুকাল থেকে তার তার পতিভায় তৎকালীন সময়ে বিখ্যাত লোককবি মনোহর সরকার মুগ্ধ হন। ১৯৩৩ সালে বিজয় সরকার ফরিদপুরের দুর্গাপুর গ্রামের মানোহর সরকারের বাড়ীতে কবিগানের দীক্ষাগ্রহণের জন্য যান এবং সেখানে দীর্ঘ দুই বছর শিক্ষালাভ করেন।

 পরবর্তীতে রাজেন সরকারের নিকটও বছর খানেক কবি গানের শিক্ষালাভ করেন।

এছাড়া ও কিশোর বিজয় সংগীত চর্চার পাশাপাশি গ্রামে মঞ্চস্থ বিভিন্ন যাত্রায়ও অংশগ্রহণ করতেন।



সৃষ্টি ও সান্নিধ্য:



“জানিতে চাই দয়াল তোমার আসল নামটা কি

আমরা বহুনামে ধরাধামে কত রকমে ডাকি

কেউ তোমায় বলে ভগবান আর গড কেউ করে আহ্বান

কেউ খোদা কেউ জিহুদা কেউ কয় পাপীয়ান

গাইলাম জনম ভরে মুখস্থ গান মুখ বুলা টিয়াপাখী

সর্বশাস্ত্রে শুনিতে যে পাই তোমার নাকি পিতামাতা নাই

তবে তোমার নামকরন কে করলে সাঁই বসে ভাবি তাই

তুমি নামি কি অনামি হে সাঁই আমরা তার বুঝি বা কি

কেহ পিতা কেহ পুত্র কয় আবার বন্ধু বলে কেউ দেয় পরিচয়

তুমি সকলেরই সকল আবার কারো কেহ নয়

তোমার যে আসল পরিচয় কে জানে তা কি না কি

বিজয় বলে মনের কথা কই আমি খাঁটি ভাবের পাগল নই

আমার গোল বেঁধেছে মনের মাঝে কাজেই পাগল হই

আমার বুকে যা নাই মুখে তা কই কাঁটা কান চুলে ঢাকি।”



জাতি ধর্ম বর্ণের উর্দ্ধে থেকে এই চারণ কবি প্রায় দুই হাজার বিজয়গীতি রচনা করেন। যার মধ্যে রয়েছে বিচ্ছেদিগান, শোকগীতি, আধ্যাতিক গান, দেশের গান, কীর্তন, ধর্মভক্তি, মরমী গান।

এর মধ্যে প্রায় ৪০০ সখি সংবাদ এবং ধুয়া গান রচনা করেন। এর মধ্যে কিছু কাজ বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত হয়

বাংলাদেশ ও ভারতে তিনি আনুমানিক ৪০০০ আসরে কবিগান পারিবেশন করেন। এছাড়া তিনি রামায়ণ গানও পরিবেশন করতেন।এই যশস্বী শিল্পীর দরাজ কণ্ঠের কবি গান শুনে অনেক গুণীজন মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি একাধিকবার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, ডক্টর মোঃ শহিদুল্লাহ, দার্শনিক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, বিশ্ব নন্দিত চারম্ন শিল্পী এস.এম, সুলতানসহ অসংখ্য গুণীজনের সান্নিধ্য লাভ করেন।



১৯৩৫ সালে কলকাতার এ্যালবার্ট হলে কবি গানের এক আসর বসে। ওই আসরে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসিম উদ্দিন, কবি গোলাম মোস্তফা, কন্ঠ শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহম্মেদ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বিজয় সরকারের গান শুনে মুদ্ধ হয় এবং আর্শীবাদ করেন।



১৯৩৭ সালে কলকাতার বিধান স্ট্রীটের রামকৃষ্ণ বাগচী লেনের এক দ্বিতল বাড়ীতে কবি গোলাম মোস্তফা, কবি জসীম উদ্দিন ও গায়ক আব্বাস উদ্দীনের সাক্ষাৎ লাভ করেন। বিজয় সরকার এই স্মরণীয় মুহুর্তে এই বিচ্ছেদ গানটি পরিবেশন করে তাঁদেরকে অভিভূত করে দিয়েছিলেন। গানটির কিছু অংশ :



“সজনী ছুঁসনে আমারে

গৌররূপে নয়ন দিয়ে আমার জাত গিয়েছে

আমাকে স্পর্শ করিসনে যার কুল মানের ডর আছে”



১৯৮৩ সালে কলকাতা থেকে বিজয় সরকার রচিত ২৭০টি গান নিয়ে বিজয় সরকারের গানের সংকলন প্রকাশিত হয়।বিখ্যাত চিত্র শিল্পী এস এম সুলতান বিজয় সরকারের একান্ত প্রিয় বন্ধু। সুলতান প্রায় ছুটে যেতেন কবিয়াল এর বাড়িতে।বিজয় সরকারের ভাবধারা ও সংগীত প্রসঙ্গে পল্লী কবি জসিম উদ্দিন বলেছেন," মাঝে মাঝে দেশীয় গ্রাম্য গায়কদের মুখে বিজয়ের রচিত বিচ্ছেদ গান শুনিয়া পাগল হই। এমন সুন্দর সুর বুঝি কেহই রচনা করিতে পারে না।"



বি:দ্র:-ফকির লালন শাহ্ এর "বাড়ির কাছে আরশি নগর" এবং জসীমউদ্দিনের "নকশী কাঁথার মাঠ" নিয়ে ও তিনি গান লিখেছেন।

"নকশী কাঁথার মাঠেরে-

সাজুর ব্যাথায় আজও বাজে রূপাই মিয়ার বাশের বাঁশি

তাদের ভেঙ্গে গেছে আশার বাসা

তবু যায়নি ভালো বাসাবাসি।।"



সম্মাননা:



 ১৯৩৭ সালে ১ অক্টোবর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ ভবনে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে কবিয়াল বিজয় সরকার কবি গান পরিবেশন করে খ্যাতিমান ছয় জন বরেণ্য পন্ডিতের যুক্ত সনদ লাভ করেন।

 ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী কলকাতার "ভারতীয় ভাষা পরিষদ" তাকে সংবর্ধিত করে। এ অনুষ্ঠানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ডক্টর আশুতোষ ভট্টাচার্য, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর দেবীপদ ভট্রাচার্য উপস্থিত ছিলেন।

 বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ধারা কবি গানের উৎকর্ষ সাধনে বিজয় সরকারের অবদান অসামান্য।তাই এই অবদানের সন্মান সরুপ ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মরনোত্তর একুশে পদক প্রদান করে।



পদবী:



বিজয় সরকার-এর পারিবারিক উপাধি ছিল বৈরাগী। তিনি নিজে বৈরাগী উপাধি ত্যাগ করে অধিকারী উপাধি গ্রহণ করেন। কবিয়াল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করার পর তিনি বিজয় সরকার নামে পরিচিত হন।



পরোলোক গমন :



"এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনি ঠিক রবে

সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে"

শেষ জীবনে তিনি অন্ধ ছিলেন। ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর বুধবার কবিয়াল চলে যান না ফেরার দেশে।

" প্রাণ পাখী উড়ে যাবে পিঞ্জর ছেড়ে

ধরাধামে সবই রবে তুমি যাবে চলে"

কবিয়াল আমাদের মাঝে বেঁছে আছেন, থাকবেন অনন্তকাল ।



কবিয়াল বিজয়ের কয়েকটি অসম্ভব জনপ্রিয় গান হলো:

১.পোষাপাখি উড়ে যাবে সজনী একদিন ভাবি নাই মনে

২এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে

৩.কালার প্রেমে এতো জ্বালা হারে আমি আগে জানি নাই

৪.আলস্নাহ রসুল বল মোমিন আলস্নাহ রসুল বল

৪.নকশি কাঁথার মাঠেরে আজও কাঁদে রূপাই মিয়ার বাঁশের বাঁশি

৫.শুধু পাষাণ নয় এই তাজমহলের পাথর

৬.আমি কৃঞ্চ বলিয়া ত্যাজিব পরাণ যমুনার তীরে

৭.আমায় পাগল পাগল করেছে কালার বাঁশিতে



তথ্য সূত্র:



 বাংলাপিডিয়ায় কবিয়াল বিজয় সরকার

 উইকিপিডিয়া

 কবিয়াল বিজয় সরকারের বিচ্ছেদীগান ও কবিগান( )- ----মহসিন হোসাইন

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৩

এস.কে.ফয়সাল আলম বলেছেন: এবারের বিজয় সরকার মেলাতেও নড়াইল ছিলাম। রাজ জেগে উপভোগ করেছিলাম তার রেখে যাওয়া গান।

তাকে নিয়ে লেখার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

২| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৫

নাসির শ্রাবন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ও পড়ার জন্য।

৩| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৩

কাফের বলেছেন: চমাৎকার
বিজয় সরকার সমন্ধে কিছু কিছু জানতাম

বিজয় সরকারের গানের কথা ও সুরে মাঝে মাঝে ভেসে যাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.