![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পদ্মা সেতু...
পদ্মা নদীর মাধ্যমে বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা বাংলাদেশের মূল ভূ-ভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন। নদীতে সেতু নির্মাণের ফলে জন ও পণ্য চলাচল দ্রুততর হয় এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রসারের মাধ্যমে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটে। এ বাস্তবতাকে উপলব্ধি করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় সরকারই পদ্মা সেতু নির্মাণে উদ্যোগী হয়।
পদ্মা সেতু প্রকল্পটি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকাকালীন এডিবি প্রধান ঋণদাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ায় জনৈক উপদেষ্টা প্রভাব খাটিয়ে বিশ্বব্যাংককে প্রধান ঋণদাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ করান এবং বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগেই ওই উপদেষ্টাকে এ সেতুর সততা উপদেষ্টা (ইন্টিগ্রিটি এডভাইজার) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এ উপদেষ্টা প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কোর কমিটির সভাপতির দায়িত্বও পালন করে আসছিলেন। প্রকল্পটিতে বিশ্বব্যাংক অথবা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোন ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়ে থাকলে তা দেখার দায়িত্ব ছিল এ সততা উপদেষ্টার। তিনি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে থাকলে কেন আজ বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করল? এর জবাব কি তিনি দিয়েছেন? আর না দিয়ে থাকলে এর দায়ভার কি তিনি এড়াতে পারেন?
অভিযুক্ত আবুল হোসেন...
পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে বড় অভিযোগ হচ্ছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের কাছে ১০ শতাংশ অর্থ কমিশন চেয়েছিল সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনাল। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ দুইজন কর্মকর্তাও তাদের নিজ নিজ প্রতিনিধির মাধ্যমে ঘুষ চেয়েছিলেন লাভালিনের কাছে। অবৈধ লেনদেনের জন্য গ্রেফতার হওয়া এসএনসি-লাভালিনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়েরে দুহাইমের কাছ থেকে এ তথ্য পেয়েছিল কানাডা পুলিশ। আর বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে এ তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রতিবেদনে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের সম্পৃক্ততার তথ্যও রয়েছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।
বিশ্বব্যাংক সরকারের কাছে একটি চিঠি দিয়ে পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করার আহ্বান জানায়। এরপর দুদক নতুন করে তদন্ত শুরু করে। এ নিয়ে দুদক তথ্য চাইলে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন দেয়া হয় সরকারকে। ওই প্রতিবেদন থেকেই দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানতে পারে দুদক। প্রতিবেদনে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, তার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনালের সংশ্লিষ্টতা এবং সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঞা ও প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলামের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য রয়েছে ।
পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে মূল্যায়ন কমিটি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নাম সুপারিশ করেছিল। প্রতিষ্ঠানগুলো হল এসএনসি-লাভালিন, যুক্তরাজ্যের হালক্রো গ্রুপ, নিউজিল্যান্ডের একম এন্ড এজেডএল, জাপানের ওরিয়েন্টাল কন্সালট্যান্ট কোম্পানি লিমিটেড এবং যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডের যৌথ বিনিয়োগের প্রতিষ্ঠান হাইপয়েন্ট রেন্ডাল। এর মধ্যে এসএনসি-লাভালিনকে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে অনুমোদনের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এর পরই এ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবং বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার সহায়তা স্থগিত করে দেয়। আর তদন্তে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাংক এসএনসি-লাভালিনকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদন অনুযায়ী সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী তার আত্মীয় জিয়াউল হককে নিয়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের সঙ্গে সেতু ভবনে পদ্মা সেতু সম্পর্কিত এক বৈঠকে অংশ নেন। তার ওই আত্মীয় হচ্ছেন বাংলাদেশে কানাডিয়ান এসএনসি-লাভালিনের স্থানীয় একজন প্রতিনিধি। তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ঠিকানাও দেয়া রয়েছে প্রতিবেদনে। লালমাটিয়ার এ ব্লকের ৭/৪ নম্বর বাড়ি। প্রতিষ্ঠানের নাম ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড প্ল্যানিং কন্সালট্যান্ট কোম্পানি লিমিটেড। এছাড়া জাতীয় সংসদের হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনের ভাই নিক্সন চৌধুরীর সঙ্গে এসএনসি-লাভালিনের বাংলাদেশী কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেনের ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।
সংকটের শুরু গত বছরের সেপ্টেম্বরে। ঐ সময় অর্থমন্ত্রী ওয়াশিংটনে যান বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় যোগ দিতে। ২১সেপ্টেম্বর,২০১১ তে পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে করা একটি তদন্ত প্রতিবেদন ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রীকে দেওয়া হয়। বিশ্বব্যাংকের ভাষায়, অত্যন্ত গোপনীয় এ প্রতিবেদন দেন বিশ্বব্যাংকের ইন্টেগ্রিটি ভাইস প্রেসিডেন্ট লিওনার্ড এফ ম্যাকার্থি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেতুর মূল অংশের প্রাক-যোগ্যতা চুক্তির প্রক্রিয়ায় দুর্নীতিসংক্রান্ত অসংখ্য অভিযোগ পেয়েছে বিশ্বব্যাংক। অভিযোগগুলো মূলত তখনকার যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও তাঁর মালিকানাধীন কোম্পানি সাকোর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, যোগাযোগমন্ত্রী ও সাকোর কর্মকর্তারা মিলে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেন, যাতে মনে হচ্ছে, সাকো হলো পদ্মা সেতু নির্মাণের যেকোনো কাজ পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে একধরনের নীরব প্রতিনিধি (সাইলেন্ট এজেন্ট)। কোনো কাজ পেতে হলে বা প্রাক-যোগ্যতায় টিকতে হলে সাকোকে অর্থ দিতে হবে। সাকোর পক্ষ থেকে ঠিকাদারদের ভয়ভীতি দেখানোর কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাকোরই একজন প্রতিনিধি বিশ্বব্যাংককে জানান, পদ্মা সেতুর মূল অংশের জন্য যে চুক্তিমূল্য হবে, তার একটি নির্দিষ্ট অংশ সাকোর জন্য রাখার ব্যাপারে সৈয়দ আবুল হোসেনেরই নির্দেশনা ছিল। বলা হয়, সাকোকে নির্দিষ্ট কমিশন দেওয়া হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করবেন সৈয়দ আবুল হোসেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আরেকটি সূত্র থেকে বিশ্বব্যাংক যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির আরও অভিযোগের কথা জানতে পারে। সেটি হলো, সাকোর পাশাপাশি অন্য একটি কোম্পানিকেও সাকোর হয়ে কমিশন এজেন্ট হিসেবে কাজ করার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন আবুল হোসেন। কোম্পানিটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের ভয়ভীতিও দেখান মন্ত্রী। সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাকোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির আরও যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ বিশ্বব্যাংক পেয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর সেতু বিভাগের সচিব ও প্রকল্প পরিচালককে সরিয়ে দেওয়া হয়। আর সৈয়দ আবুল হোসেনকে সরিয়ে করা হয় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিমন্ত্রী। কিন্তু দাতা সংস্থাটি সাফ জানিয়ে দেয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নিলে তারা এ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে না। একপর্যায়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের পরামর্শে সৈয়দ আবুল হোসেন আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকেও পদত্যাগ করেছেন।
কানাডায় বিচার...
অর্থের অবৈধ লেনদেনের অভিযোগে পদ্মা সেতুর পরামর্শক হতে আগ্রহী কানাডাভিত্তিক প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়েরে দুহাইমকে গ্রেপ্তার করে সে দেশের পুলিশ। আর গত ফেব্রুয়ারিতে গ্রেপ্তার করা হয় প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্মকর্তা রমেশ সাহা ও মোহাম্মদ ইসমাইলকে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঘুষ দেওয়ার পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। বিচারও শুরু হয়েছে তাঁদের। এতে পদ্মা সেতুর বিষয়টি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোচনায় চলে যায়। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদেরা।
সাকো’র এমডি পুরস্কৃত...
পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঘুষ কেলেঙ্করির দায়ে মহাজোট মন্ত্রিসভায় শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রিপরিষদে নতুন যুক্ত হওয়া মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদসহ সাকোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ব্যাংক একাউন্ট ও পাসপোর্ট জব্দ করার জন্য বলেছিল বিশ্বব্যাংক। কিন্তু অনুসন্ধান পর্যায়ে সার্চ এন্ড সিজারের ক্ষমতা নেই অজুহাতে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে তাদের ব্যাংক একাউন্ট ও পাসপোর্ট জব্দ করা হয়নি; বরং নতুন করে মন্ত্রিসভায় স্থান করে দেয়া হয়েছে সাকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটর সভাপতি মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদকে। দুদকের ওই বক্তব্য বিশ্বব্যাংকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। তারা তখন অভিযোগের অনুসন্ধান কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের বেতনভুক্ত একটি ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এন্ড প্রসিকিউটর প্যানেল’ দেয়ার প্রস্তাব করে। কিন্তু আইনের কথা তুলে দুদক তাতে অসম্মতি জানায়।
বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ বিবৃতি...
গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংক সর্বশেষ বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতি না বলে একে 'বোমা' বলাই ভালো! পুরো বিবৃতিটির বঙ্গানুবাদ এইরকম -
গণমাধ্যমে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের অবস্থান সম্পর্কে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ভ্রান্ত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হয়েছে। বিষয়টি পরিষ্কার করতে আমরা নিম্নলিখিত ব্যাখ্যা প্রদান করা জরুরি মনে করছি:
বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়নের ক্ষেত্রে উর্দ্ধতন সরকারী ব্যক্তিবর্গ ও কর্মকর্তাদের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণ সরকারকে একাধিকবার প্রদান করেছে। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে যথাযথ সাড়া না পাওয়ার কারণে বিশ্বব্যাংক ১.২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ বাতিল করে।
গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে সরকার নিম্নোক্ত বিষয়গুলোতে সম্মত হয় যে:
● তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্পে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন সকল সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যক্তিবর্গকে সরকারী দায়িত্ব পালন থেকে ছুটি প্রদান;
● এই অভিযোগ তদন্তের জন্য বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি বিশেষ তদন্ত ও আইনি দল গঠন;
● আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি এক্সটারনাল প্যানেলের কাছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সকল তথ্যের পূর্ণ ও পর্যাপ্ত প্রবেশাধিকার প্রদান যাতে এই প্যানেল তদন্তের ব্যাপকতা ও সুষ্ঠুতার ব্যাপারে উনড়বয়ন সহযোগীদের পরামর্শ দিতে পারে।
এরপর সরকার পদ্মা সেতুর অর্থায়নের বিষয়টি আবারো বিবেচনা করার জন্য বিশ্ব ব্যাংককে অনুরোধ জানায়।
বিশ্ব ব্যাংক সার্বিকভাবে বাংলাদেশের এবং বিশেষ করে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। এ কারণেই, আমরা সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছি যে, প্রকল্পে নতুন করে যুক্ত হওয়ার জন্য নতুন বাস্তবায়ন ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে যা বিশ্বব্যাংক ও সহযোগী দাতাদের প্রকল্পের ক্রয় কর্মকান্ড আরো নিবিঢ়ভাবে পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেবে।
শুধুমাত্র এই সকল পদক্ষেপসমূহের সন্তোষজনক বাস্তবায়ন এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞদের এক্সটারনাল প্যানেল থেকে ইতিবাচক প্রতিবেদন পাওয়ার ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পের অর্থায়নে অগ্রসর হবে। একটি দুর্নীতিমুক্ত সেতু পাওয়ার অধিকার বাংলাদেশের জনগণের রয়েছে। পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে এগোনোর জন্য আমাদের নিশ্চিত হতে হবে যে অবাধ ও সুষ্ঠু তদন্ত চলছে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও পর্যবেক্ষণ জোরদার করা হয়েছে।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরির নাটক...
আওয়ামীলীগের পুরোনো কৌশল যখনই নিজেদের কোন কাজ ও অপরাধের জন্য ফেসে যাওয়া ও বেকায়দায় পড়ার যোগাড় হয় তখনই ৭১কে বর্ম বানিয়ে সেখান হতে পরিত্রাণ পেতে চাওয়া। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ, বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ বাতিল - এসব ঘটনা সরকারকে রাজনৈতিকভাবে বড় ধরণের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। সামাল দিতে সরকার নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে, যদিও সেটা কতটা বাস্তবসম্মত তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাদের এই বিষয় গুলো যে নেহায়েতই আবেগ ও বাস্তবতা বিবর্জিত তা মির্জা আজিজ, দেবপ্রিয় সহ নিরপেক্ষ অর্থনীতিবিদগণ বার বার বলে আসছে। গ্যাস, কুইক রেন্টাল ও শেয়ার বাজার নিয়ে দেশের অর্থনীতি নাজুক অবস্থায়। কি রাষ্ট্রীয় কি বেসরকারী কেউই ব্যাবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে চাহিদার অর্ধেকও ঋণ দিতে পারছে না তখন ১৫-১৮ হাজার কোটি টাকার সমমানের বৈদেশিক মুদ্রা মরার উপর খড়গের মত। পরে দেখা গেল যে সরকার পুনরায় বিশ্বব্যাংকের কাছেই দ্বারস্থ হতে চায়। এত তর্জন-গর্জন ও ৭১এর অহংকার দেখিয়েও শেষমেশ আবুলকে মন্ত্রীসভা হতে সরে যেতেই হল।
বাগাড়ম্বরের প্রদর্শনী : একপলকে
● নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি হবে : প্রধানমন্ত্রী
● দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ কখনো সম্ভব নয় : অর্থমন্ত্রী
● ১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি হাত দিয়ে পদ্মা সেতু তৈরি করব : সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত
● মোবাইল কলে ২৫ পয়সা সারচার্জে দিয়ে পদ্মা সেতু হবে : স্পীকার
● প্রয়োজনে এক বেলা বাজার না করে পদ্মা সেতু করা হবে : সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী
অপ্রকাশ্য...
নিন্দুকেরা বলছে যে, প্রধানমন্ত্রী কিছুতেই বিশ্বব্যাংকের যৌথ তত্ত্বাবধানে পদ্মা সেতু দুর্নীতির তদন্ত মেনে নিতে পারছেন না। এখানে উল্লেখ্য, নিক্সন চৌধুরী নামের যে ব্যক্তিকে দুদক ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে শোনা যায়, তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আপন ফুপাতো ভাইয়ের ছেলে। বিশ্বব্যাংক তদন্ত করলে এই তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে যে, নিক্সন চৌধুরী কি ঘুষের অর্থ নিজে নিচ্ছিলেন নাকি তিনি সরকারের আরও শীর্ষ পর্যায়ের কারও এজেন্ট হিসেবে কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের সঙ্গে লেনদেন করেছেন? স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁসের এমন ভয়ঙ্কর ঝুঁকি নেয়া সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সম্ভব নয়।
আবুল কি বলির পাঠা?: গত বছর ২০১১র সেপ্টেম্বরেই যদি আবুল হোসেনকে মন্ত্রী সভা হতে বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে দুদককে দিয়ে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ তদন্ত করাত তাহলে আবুল নির্ঘাত দোষী সাব্যস্ত হত। সেক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক ঋণ ছাড় করলে এতদিনে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েও যেত। কিন্তু দুদক উল্টা বলল যে কানাডার ঘুষ চাওয়া আর বাংলাদেশের র্দূনীতি নাকি এক বিষয়ই না। ফলে আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে কোন অনিয়ম পেলনা দুদক। ধারনা করা হয় আবুলের খুটির জোর হল প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে পুতুলের স্বামী মাসরুর। আবুল যত না ঘুষ পেয়েছে তার বড় অংশ গেছে পুতুলের স্বামীর কাছে। এর জন্যই হাসিনার এত ইদুর-বিড়াল খেলা। বিভিন্ন উপায়ে ইচ্ছাকৃত ভাবেই সেতু তৈরির কাজ পেছানো হচ্ছে। এর সম্ভাব্য কারণ হচ্ছে মঞ্চের আড়ালে বিশ্বব্যাংকের সাথে সমঝোতা করা, যাতে আবুলের বিরুদ্ধে সব দোষ চাপিয়ে পুতুলের স্বামীকে বাচানো যায়। এখন ভবিষ্যতই বলে দিবে এই সময় ক্ষেপন করে মাসরুর কে বাচিয়ে স্রেফ আবুল কে বলির পাঠা বানানো যায় কিনা!
শেষ কথা..
পদ্মা সেতুর বহুল আলোচিত দুর্নীতির তদন্ত মূল্যায়নে ঢাকায় এসেছে বিশ্বব্যাংক গঠিত তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দল। জানা গেছে, প্রতিনিধি দল এ দফায় ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান এবং দুদকের সঙ্গে বৈঠক করে পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে অনিয়ম খতিয়ে দেখার দায়িত্বে নিয়োজিত অনুসন্ধান দলের সঙ্গে আলোচনা করবে। প্রতিনিধি দলের কাছে সব তথ্য পাওয়া মাত্র সঠিকভাবে উপস্থাপন করার জন্য আগেভাগেই দুদক প্রস্তুতি নিয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ বিবেচনায় নিলে প্রতীয়মান হয় এর সঙ্গে মুষ্টিমেয় লোক জড়িত। তাই আজ দেশবাসীর প্রশ্ন, মুষ্টিমেয় লোকের দুর্নীতির জন্য কেন দেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে এবং কেন এর দায়ভার দেশের ১৬ কোটি মানুষকে বহন করতে হবে? দেশবাসীর প্রত্যাশা, হয়তো শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রতিশ্রুত অর্থ দেবে, সেতু নির্মাণের কাজও চলবে। কিন্তু দুর্নীতি, জাল-জালিয়াতি নিয়ে এ নাগাদ যে নাটক হয়ে গেল তাতে আন্তর্জাতিক মহলে দেশের ভাবমূর্তিতে যে কালিমা লেপন হলো তা কী কোনো প্রাপ্তি দিয়ে মোচন সম্ভব?
অথচ সরকার অনায়াসে এই বৃহত্ প্রকল্প থেকে সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজদের সরিয়ে দিতে পারতো। তা না করে যারা ঋণদান করে সহায়তা দেবে তাদেরকেই উল্টো অপবাদ দেয়ার রাস্তা ধরে অগ্রসর হলো। এখন বিশ্বব্যাংক এসে চোর যাচাই করার দায়িত্ব পালন করছে আর দুর্নীতি দমন কমিশন তথা সরকার দায় থেকে রেহাই পেতে অনেকটা আসামির মতো আচরণ করছে। স্বাধীন দেশের ‘স্বাধীন’ দুর্নীতি দমন কমিশন দান পেতে এবং মান বাঁচাতে নিরূপায় করণিকের মতো ফাইলপত্র নিয়ে ঘুরছে বিশ্বব্যাংকের পিছনে। এই যদি হয় পরিণতি তাহলে আগে এত বাগাড়ম্বর করা হলো কেন? অবশেষে কথাটা দাঁড়ালো এরকম, সেই তো নথ খসালি তবে কেন লোক হাসালি।
বিঃদ্রঃ
লেখাটি তৈরী করতে সামুতে প্রকাশিত বিভিন্ন ব্লগ এবং পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে। লেখার বিষয়বস্তু বহুল আলোচিত তাই এই লেখাটির বিভিন্ন তথ্যের সত্যতা যাচাই করা খুব কঠিন হবে না। ব্লগে যেহেতু আমি নতুন তাই সবার সহযোগিতা কামনা করছি। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.