নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প- চিঠি !! (পর্ব-২)

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪২

হ্যা, আমার নাম চিঠি। সবাই আমাকে চিঠি নামেই চেনে। তবে আমি আসলে গৌরী'র লেখা চিঠি। দেবোজিতকে লেখা গৌরী'র চিঠি। ডুমুরিয়ার হাট বসে সোমবার আর শুক্রবার। ডুমুরিয়ার ডাক-হরকরা কদম আলী সাধারণত হাটের দিন সবাইকে চিঠি বিলি করেন। আর রবিবার ও বিষ্যুদবার সবার চিঠি নিয়ে কদম আলী থানা সদরে যান। সবার চিঠি ডাকে ধরিয়ে দেন আর নতুন আসা চিঠি নিয়ে ফেরেন। কেবল রেজিঃস্ট্রি চিঠি, টেলিগ্রাম, আর কোনো পার্সেল থাকলে কদম আলী প্রাপকের বাড়িতে গিয়ে তা হাতেহাতে পৌঁছে দেন। নতুবা সব চিঠি কদম আলী ডুমুরিয়া বাজারে অম্বরেশ বাবু'র দোকানে রাখেন। সবাই ইচ্ছে করলে যাতে অম্বরেশ বাবু'র দোকান থেকে চিঠি সংগ্রহ করতে পারে অথবা চিঠি পোস্ট করতে পারে। গৌরী'র বিধবা মাসীমা'র ছোট ছেলে সৌরভ এখন ক্লাস এইটে পড়ে। সৌরভের মাধ্যমেই গৌরী চিঠি পোস্ট করেছিল। খামের উপর ইংরেজিতে দেবোজিতের ঠিকানা দেখে কৌতুহল নিয়ে সৌরভ খাম খুলে আমাকে একবার পড়েছিল। তাড়াহুড়ায় খাম ঠিকমতো আটকাতেও ভুলে গেছে সৌরভ। সেটা ছিল সোমবার হাটের দিনের ঘটনা। তারপর মঙ্গল ও বুধবার আমি অম্বরেশ বাবু'র দোকানের ক্যাশবাক্সের পাশে অন্যান্য চিঠির সঙ্গে চুপচাপ বসে ছিলুম। বিষ্যুদবার সকালে কদম আলী আমাকে হাতে নিলেন। খাকি রঙের কাপড়ের থলের ভেতর আমাকে ও অন্য সবাইকে পুশ করে কদম আলী থানা সদরের দিকে হাঁটা ধরলেন।

হরিপাগলার বটগাছ পর্যন্ত এসে কদম আলী একটু বসলেন। চারপাশে ফাঁকা। দূরে ধু ধু গ্রাম। হরিপাগলার বটগাছের তলায় কদম আলী একা। কদম আলী'র মনে কি কৌতুহল উদয় হল? বটগাছ তলায় খাকি থলে খুলে একে একে সব চিঠি একবার চেক করলেন। আমার খামের মুখ ঠিকমতো বন্ধ না দেখে আমাকে খুলে একবার পড়লেন। কদম আলী'র ঝোলায় একটা প্লাস্টিকের কৌটা থেকে গাম নিয়ে আমার খামের মুখ বন্ধ করলেন। তারপর অন্যান্য চিঠিপত্রগুলো একটু নেড়েচেড়ে দেখে কদম আলী ঝোলা গুছিয়ে আবার থানা সদরের দিকে হাঁটা ধরলেন।

সাধারণত বিষ্যুদবারের ডাক থানা সদর থেকে জেলা সদরে পৌঁছায়। শুক্র আর শনিবার সরকারি ছুটি। তাই এই দুই দিন জেলা সদরের প্রধান ডাকঘরে সারা জেলা থেকে আসা চিঠি'র সঙ্গে আমাদের ঘুমিয়ে থাকার নিয়ম।

রবিবার সকালে যখন আমাদের চিঠি মহলের ঘুম ভাঙলো, তখন জেলা সদরের প্রধান ডাকঘরে ভারী ব্যস্ততা। একটা পাটের বস্তায় গোটা জেলা থেকে আসা চিঠি'র সঙ্গে আমাকেও বস্তাবন্দি করলো তারা। তারপর রাজধানী ঢাকা-গামী একটা লঞ্চে আমাদের তুলে দেওয়া হল। রবিবার সারাদিন, সারারাত সেই লঞ্চে আমরা চুপচাপ ঘুমিয়ে কাটালাম। ঢাকা-গামী লঞ্চে অবশ্য ঘুমটা একটু আরামেই হল। নাসের মুন্সী'র নারকেলের ছোবড়া'র ব্যবসা। ওই লঞ্চের ডেকে সুন্দর ভাবে নাসের মুন্সী নারকেলের ছোবড়া দিয়ে বিশাল সাইজের ভারী উঁচু এক বিছানা বানালেন। সেই বিছানার উপরে একপাশে নাসের মুন্সী ঘুমানোর জন্য রাখলেন। আরেক পাশে আমাদের চিঠির বস্তা রাখা হল। নাসের মুন্সী'র নিজের ঘরে কোনো জাজিম নেই। কিন্তু তার নারকেলের ছোবড়া ঢাকায় পৌঁছানোর পর বড়লোকদের ঘরে তা জাজিম হয়ে পৌঁছে যায়। মাঝখানে লঞ্চ পথের সময়টুকু নাসের মুন্সী সেই প্রাগ-জাজিমের উপর শুয়ে প্রায় সারারাতই আল্লাহ-রাসুলের নামে ভারী গুনকীর্তন করলেন। কখনো কখনো `হায়-মাবুদ' বলে ভারী বড় বড় দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়েন নাসের মুন্সী। নাসের মুন্সী কখনো সুরা-কালাম পড়েন আবার কখনো সুর করে গান করেন। লঞ্চের প্রচণ্ড শব্দে নাসের মুন্সী'র সেই সুরা-কালাম আর গান আলাদা করা যায় না। এভাবে কখনো ঘুম কখনো-বা বিরক্তকর জাগরণের মধ্যে সোমবার সকালে সেই লঞ্চ ঢাকার সদরঘাট পৌছালো।

লঞ্চের যাত্রীরা নেমে যাবার পর আমাদের চিঠির বস্তা এনে রাখা হল সদরঘাটের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার রুমে। সেখানে অন্যান্য লঞ্চে আসা আমাদের মতো আরো অনেক চিঠির বস্তা একে একে জমা হল। বেলা এগারোটার দিকে জিপিও থেকে একটা লাল রঙের গাড়ি এসে আমাদের সেখান থেকে তুলে নিল।

জিপিও। জেনারেল পোস্ট অফিস। রাজধানী ঢাকা'র জিপিও হল দেশের সবচেয়ে বড় পোস্ট অফিস। সারা দেশ থেকে আসা কতো হাজার হাজার চিঠি'র সমাহার সেখানে। আমাদের বস্তা খুলে বাছাই করা হল। আমাকে রাখা হল আন্তর্জাতিক ডাকের কার্টুনে। সেখানে বিশ্বের নানান দেশে যেসব চিঠি যাবে তাদের সঙ্গে আমিও যুক্ত হলাম। সোমবার রাতে তাদের সঙ্গেই সেই কার্টুনে থাকলাম। মঙ্গলবার সকালে আমাকে আবার আলাদা করে কানাডা নামে এক কার্টুনে রাখা হল। সেখানে কানাডায় যে সব চিঠি যাবে তাদের সঙ্গেই আমি সেই কার্টুনে ঢুকলাম। এই কার্টুনের বৈশিষ্ট্য হল, এখানে খামের উপর সবার ঠিকানা ইংরেজিতে লেখা। এমন কি কার্টুনের নামও ইংরেজিতে লেখা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমাদের কার্টুন একটা লাল রঙের গাড়িতে করে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হল। মেশিনের উপর আমাদের কার্টুন ওজন করা হল। তারপর কি সব দাঁত-ভাঙা ইংরেজিতে যত্তোসব কোড লেখা ট্যাগ আমাদের কার্টুনের গায়ে সাঁটা হল। তারপর আরো কতো কতো পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটা বোয়িং ৭৭৭ বিমানের পেটের মধ্যে আমাদের নিয়ে যাওয়া হল।

...........................চলবে..............................

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.