নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
২৬ ফেব্রুয়ারি আমার ডায়েরি লেখার মত মানসিক অবস্থা ছিল না। অভিজিতের কথা যতবার মনে পড়েছে, ততবারই ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। ভিন্নমতকে যে রাষ্ট্র গ্রহন করতে পারে না, সেই রাষ্ট্র কতটা সভ্য, সকলের মত আমারও সেই একই প্রশ্ন! একুশ শতকের বাংলাদেশে আমরা এ কোন অন্ধকার জগতে বাস করছি? নিজের ছায়াকেও এখন অবিশ্বাস লাগে। মনে হয়, এই বুঝি আতোতায়ী আমার পেছনে পেছনে চাপাতি হাতে ঘুরঘুর করছে। নিজেকে ভারী অসহায় আর অপরাধী মনে হয়। এ কোন নিরাপত্তাহীন রাষ্ট্রে আমরা বসবাস করছি। সভ্যতার আমরা কোন পৃষ্ঠে বাস করছি? কিন্তু যারা অভিজিৎকে বাঁচতে দেয়নি, তাঁরা জানেনা অভিজিতের কণ্ঠটি কখনো মরবে না। আজ বইমেলায় বিকালের আগেই অভিজিতের সবগুলো বইয়ের এডিশান শেষ হয়ে গেছে। অভিজিতের প্রকাশক কবি আহমেদুর রশীদ টুটুলের সঙ্গে আমার আজ কথা হয়েছে। টুটুল ভাই বললেন, নতুন করে আর এডিশান বের করার মত মানসিক অবস্থায় নেই। সবগুলো বই বিক্রি হয়ে গেছে। মানুষ যে অভিজিতকে প্রাণ থেকে ভালোবাসে, এটাই তার প্রমাণ।
আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যা ও তাঁর স্ত্রী বন্যার ওপর বর্বর হামলার প্রতিবাদে ‘প্রতিবাদী ছাত্র-শিক্ষক-নাগরিক’ ব্যানারে সর্বস্তরের মানুষের এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠনও অনুরূপ সমাবেশ বা মানববন্ধন করে এই বর্বর হামলার আজ আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানায়। বক্তারা সবাবেশে অভিজিৎ হত্যার বিচার ও অপরাধীদের দৃষ্ষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। পাশাপাশি তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এভাবে হামলাকারীরা মুক্তচিন্তার পথকে কোনোদিন রুদ্ধ করতে পারবে না। আজকের বইমেলায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি এবং বইমেলা থেকে অভিজিতের সকল বই বিক্রি হয়ে যাওয়ার উদাহরণ তা আবারো প্রমাণ করল। পারিবারিকভাবে জানানো হয়েছে অভিজিতের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে মেডিকেল স্টুডেন্টদের গবেষণার জন্য দান করা হবে।
গতকাল বইমেলায় বাংলা একাডেমির মূল মঞ্চে আলোচনার বিষয় ছিল 'গতবছরে বাংলাদেশের কবিতা'। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন রফিকউল্লাহ খান। অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন মুহম্মদ নূরুল হুদা, অনীক মাহমুদ ও রেজাউদ্দিন স্টালিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি আসাদ চৌধুরী। আর আজ একাডেমির মূল মঞ্চে আলোচনার বিষয় ছিল 'সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্ত'। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ। অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন সাংবাদিক আবেদ খান, মুনীরুজ্জামান ও হাসান হাফিজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাখাওয়াত আলী খান। আজ সকালে ছিল শিশু প্রহর। শিশু প্রহরে অতিথি ছিলেন প্রবাসী শিল্পী শাহাবুদ্দীন আহমদ। আর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ। গতকাল ও আজ যথারীতি সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
চৈতন্য থেকে মেলায় এসেছে প্রবাসী কবি ফেরদৌস নাহারের কবিতার বই 'নাভি ও নন্দন'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী নির্ঝর নৈঃশব্দ্য। বইটির দাম রাখা হয়েছে একশো টাকা। বইটি পাওয়া যাবে বাংলা একাডেমির লিটল ম্যাগ চত্বরের বহেড়াতলার চৈতন্য স্টলে।
নন্দিতা প্রকাশ থেকে প্রকাশ পেয়েছে তরুণ গল্পকার ম্যারিনা নাসরিনের গল্পের বই 'দ'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী ধ্রুব এষ। বইটির মূল্য ১৮০ টাকা। বইটি পাওয়া যাবে অমর একুশে বইমেলার নন্দিতা প্রকাশ স্টলে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্টল নং ৩০-৩১)।
গতকাল ও আজ যাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, জাম্পিস আড্ডা হয়েছে, তারা হলেন- কবি আহমেদ স্বপন মাহমুদ, কবি সেঁজুতি বড়ুয়া, শিল্পী শেইখ শাহেদ, কবি শাফি সমুদ্র, কবি কাজী টিটো, লেখক ঋষি এস্তেবান, শিল্পী চারু পিন্টু, কবি সরসিজ আলীম, কবি নীলসাধু ও তুলা ভাবী দম্পতি, কবি কুমার চক্রবর্তী ও লেখক মণিকা চক্রবর্তী দম্পতি, কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার, কবি কবির হুমায়ুন, কবি জুয়েল মোস্তাফিজ, কবি চঞ্চল আশরাফ, কবি জুয়েল মাজহার, কবি তানিম কবির, কবি কামুরজ্জামান কামু, কবি ও প্রকাশক আলী আফজাল খান, কবি শেলী নাজ, কথাসাহিত্যিক পারভেজ হোসেন, কথাসাহিত্যিক রাখাল রাহা, লেখক ও গবেষক তপন বড়ুয়া, কবি আলোড়ন খিসা, কবি মামুন খান, কবি ঈয়ন, কবি বিদ্রোহী কৃষক, কবি ও প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল, শিশু সাহিত্যিক লুৎফর রহমান রিটন, প্রাবন্ধিক আহমাদ মাযহার, কবি দিলদার হোসেন, কবি বদরুল হায়দার, কবি শহীদুল্লাহ সিরাজী, গল্পকার ম্যারিনা নাসরিন, কথাসাহিত্যিক কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, লেখক ও গবেষক মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, লেখক রাজু আলাউদ্দীন, কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, লেখক ফারুক মাঈনুদ্দীন, কবি ও শিল্পী মঈন চৌধুরী, কবি আলফ্রেড খোকন প্রমুখ।
আগামীকাল অমর একুশে বইমেলার পর্দা নামবে। বইমেলায় এখন বাজছে শোক আর বেদনার সুর। আগামীকাল বইমেলা শুরু হবে সকাল দশটায়। আর মাসব্যাপী এই প্রাণের মেলা ভাঙাবে রাত নয়টায়।
২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি লেখক ডক্টর হুমায়ুন আজাদের উপর সন্ত্রাসীদের নিঃসংশ হামলা হয়েছিল। আজ অমর একুশে বইমেলায় দিনটি হুমায়ুন আজাদ দিবস হিসেবে পালিত হয়। আর গতকাল ২৬ ফেব্রুয়ারি একই কায়দায় একই স্থানে আবারো সেই সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে লেখক অভিজিৎ রায়ের উপর। এভাবে হামলা করে মুক্তমনাদের কণ্ঠ রোধ করা যাবে না। বাংলাদেশের ঘরে ঘরে হাজার হাজার হুমায়ুন আজাদ, লাখ লাখ অভিজিৎ রায়ের কণ্ঠ প্রতিদিন ধ্বনিত হবে। আমরা মুক্তচিন্তার উপর সন্ত্রীসের এই বর্বর হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। পাশাপাশি সরকারের কাছে দাবি জানাই, এই হামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেওয়া হোক। তলোয়াড়ের চেয়ে কলম চিরকালই শক্তিশালী। এই কথাটি আমরা যেন ভুলে না যাই। সবাই ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। নিরাপদে থাকবেন এই কামনা করছি। জয়তু অমর একুশে বইমেলা। জয়তু মুক্তচিন্তা।
.....................................
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
ঢাকা
©somewhere in net ltd.