নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারতের বিশ্বকাপ ক্রিকেট অভিযান !!! তৃতীয় পর্ব !!!

২৭ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:০৪

২০০৭ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের নবম আসর বসেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফ্লোরিডার লাউডারহিল স্টেডিয়ামে একটি ম্যাচ আয়োজনের জন্য আইসিসিকে লবিং করে ব্যর্থ হয়েছিল। আইসিসি বিশ্বকাপের সবগুলো ম্যাচ ক্যারিবিয় দ্বীপপুঞ্জে আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সে বছর মোট ১৬ টি দেশ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছিল। ১০টি টেস্ট প্লেয়িং কান্ট্রি, ওয়ান ডে স্টাটাস পাওয়া কেনিয়া, এবং ২০০৫ সালের আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন থেকে ৫টি দলকে সুযোগ দিয়েছিল। কানাডা, স্কটল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস এবং নবাগত আয়ারল্যান্ড ও বারমুডাকে সে বছর বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ দেয় আইসিসি।
মোট চারটি গ্রুপে ৪টি করে দল গ্রুপ পর্বের খেলা শুরু করে। প্রতি গ্রুপ থেকে শীর্ষ দুটি দল নিয়ে ৮টি দলকে দিয়ে করা হয় সুপার এইট। এ-গ্রুপে ছিল অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্কটল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস। বি-গ্রুপে ছিল ভারত, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ ও বারমুডা। সি-গ্রুপে ছিল ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, কেনিয়া ও কানাডা। ডি-গ্রুপে ছিল পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ড।
এ-গ্রুপ থেকে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা শীর্ষ দুটি দল হিসেবে সুপার এইটে যায়। বি-গ্রুপ থেকে শ্রীলংকা ও বাংলাদেশ সুপার এইটে যায়। কুইন্স পার্ক ওভালে ভারত প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪৯.৩ ওভারে ১৯১ রানে অলআউট হয়। জবাবে বাংলাদেশ ৪৮.৩ ওভারে ৫ উইকেটে ১৯২ রান তুলে ৫ উইকেটে জয়লাভ করে। কুইন্স পার্ক ওভালে ভারত দ্বিতীয় ম্যাচে বারমুডার বিপক্ষে ৫ উইকেটে ৪১৩ রান করে। বিরেন্দর সেবাগ ৮৭ বলে ১১৪, সৌরভ গাঙ্গুলী ১১৪ বলে ৮৯, যুবরাজ সিং ৪৬ বলে ৮৩, সচিন টেন্ডুলকার ২৯ বলে অপরাজিত ৫৭ রান করলে ভারতের রান চারশো অতিক্রম করে। জবাবে বারমুডা ৪৩.১ ওভারে ১৫৬ রানে অলআউট হয়। ভারত ২৫৭ রানে জয়লাভ করে। বিরেন্দর সেবাগ হন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। কুইন্স পার্ক ওভালে ভারত তৃতীয় ম্যাচে শ্রীলংকার মুখোমুখি হয়। শ্রীলংকা প্রথমে ব্যাট করে ৬ উইকেট ২৫৪ রান করে। জবাবে ভারত ৪৩.৩ ওভারে ১৮৫ রানে অলআউট হয়। শ্রীলংকা ৬৯ রানে জয়লাভ করে। ভারত গ্রুপ পর্বে তিনটি ম্যাচের দুইটিতে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয়। বি-গ্রুপ থেকে শ্রীলংকা ও বাংলাদেশ সুপার এইটে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।
সি-গ্রুপ থেকে নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড এবং ডি-গ্রুপ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নবাগত আয়ারল্যান্ড সুপার এইটে যাবার যোগ্যতা অর্জন করে। সি-গ্রুপ থেকে আগেরবারের সেমিফাইনাল খেলা কেনিয়া এবং ডি-গ্রুপ থেকে পাকিস্তান বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়।
সুপার এইট পর্বে ৭ টি খেলার সবগুলো জিতে অস্ট্রেলিয়া গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন, ৫টি খেলায় জিতে ও ২টি হেরে শ্রীলংকা রানারআপ, ৫টি খেলায় জিতে ও ২টি হেরে নিউজিল্যান্ড তৃতীয় এবং ৪টি খেলায় জিতে ও ৩ টিতে হেরে দক্ষিণ আফ্রিকা চতুর্থ দল হিসেবে সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।
সে বছর সুপার এইটের ৭ খেলার মধ্যে বাংলাদেশ কেবলমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬৭ রানে হারিয়েছিল। বাকি ৬টি ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল। সুপার এইটে বাংলাদেশ সপ্তম স্থান অধিকার করেছিল। ইংল্যান্ড পঞ্চম, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ষষ্ঠ এবং আয়ারল্যান্ড অষ্টম স্থান অর্জন করে।
সাবিনা পার্কে প্রথম সেমিফাইনালে শ্রীলংকা প্রথমে ব্যাট করে ৫ উইকেটে করে ২৮৯ রান। ৪১.৪ ওভারে ২০৮ রানে অলআউট হয়। শ্রীলংকা ৮১ রানে জিতে ফাইনালে যায়। সেন্ট লুসিয়ায় অপর সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৩.৫ ওভারে ১৪৯ রানে অলআউট হয়। জবাবে অস্ট্রেলিয়া ৩১.৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৫৩ রান করে ৭ উইকেটে জয়লাভ করে ফাইনালে পৌঁছায়।
ব্রিজটাইনের কিংস্টন ওভালে ফাইনালের বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচ ৩৮ ওভারে সেটেলড হয়। অস্ট্রেলিয়া টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৪ উইকেটে ২৮১ রান করে। এডাম গিলক্রিস্ট করেন ১০৪ বলে ১৪৯ রান। জবাবে শ্রীলংকা ২৪.৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৪৯ রান তোলার পর আবার ম্যাচে বৃষ্টি বাগড়া দেয়। তখন ডাকওয়ার্থস-লুইস পদ্ধতিতে নতুন করে শ্রীলংকার জয়ের লক্ষ্য নির্ধারন করা হয় ৩৬ ওভারে ২৬৯ রান। বৃষ্টি কমলে শ্রীলংকা পুনরায় ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৬ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২১৫ রান তুলতে সক্ষম হয়। ডাকওয়ার্থস-লুইস পদ্ধতিতে অস্ট্রেলিয়াকে সেই ম্যাচে ৫৩ রানে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। টানা তৃতীয়বার এবং সবমিলিয়ে চতুর্থবারের মত অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ জয় করে। অস্ট্রেলিয়ার এডাম গিলক্রিস্ট হন ফাইনালের ম্যান অব দ্য ম্যাচ আর ম্যান অব দ্য সিরিজ হন অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাকগ্রা।
২০১১ সালের দশম বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার প্রধান আয়োজক ছিল পাকিস্তান। এছাড়া ভারত, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশ সে বছর বিশ্বকাপের আয়োজক হয়। ফাইনাল, একটি সেমিফাইনাল সহ মোট ১৪টি ম্যাচ হবার কথা ছিল পাকিস্তানে। একটি সেমিফাইনাল সহ ৮ টি ম্যাচ হবার কথা ছিল ভারতে, চারটি ম্যাচ শ্রীলংকায় এবং দুইটি ম্যাচ বাংলাদেশে হবার কথা ছিল। বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটি হবার কথা ছিল পাকিস্তানের লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে। কিন্তু বিশ্বকাপের মাঝখানে আইসিসি এক নতুন তকমা নিয়ে হাজির হল। ২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলংকার জাতীয় দলের উপর টেররিস্ট হামলার অযুহাত দেখিয়ে ফাইনাল ম্যাচটি লাহোর থেকে ভারতের মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে নিয়ে যায়। এভাবে ২০১১ সালের বিশ্বকাপ শুরু থেকেই ভারত আইসিসির কৃপা পেতে শুরু করে।
বিশ্বকাপের ওপেনিং সিরিমনি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। এছাড়া বাংলাদেশে দুইটি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। একটি বাংলাদেশ বনাম ভারতের খেলা এবং দুইটি কোয়ার্টার ফাইনাল তিনটি খেলাই ঢাকার মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।
মোট ১৪টি দেশ দশম বিশ্বকাপে ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পায়। ১০টি টেস্ট প্লেয়িং কান্ট্রি এবং ৪টি আইসিসির এসোসিয়েট মেম্বার কান্ট্রি। ২০০৯ সালে আইসিসি বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইয়িং যোগ্যতা অর্জন কারী সেই ৪টি দেশ হল কানাডা, আয়ারল্যান্ড, কেনিয়া ও নেদারল্যান্ডস। ৭টি দল নিয়ে দুই গ্রুপে ১৪টি দলকে ভাগ করা হয়। এ-গ্রুপে ছিল পাকিস্তান, শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, কানাডা ও কেনিয়া। বি-গ্রুপে ছিল ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস।
গ্রুপ পর্বের ৬টি খেলার মধ্যে ভারত ৪টিতে জয় পায়। বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ভারত জয় পায়। একটি ম্যাচে ভারত দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে পরাজিত হয়। এছাড়া ভারত ও ইংল্যান্ডের ৩৩৮ রানের ম্যাচটি টাই হয়। যদিও সেই ম্যাচে ভারত প্রথমে ৪৯.৫ ওভারে ৩৩৮ রানে অলআউট হয়। পরে ইংল্যান্ড ৮ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে করেছিল ৩৩৮ রান। এই ম্যাচটি নিয়ে ক্রিকেট মহলে আজও রহস্য রয়ে গেল। ইংল্যান্ড জেতা ম্যাচটি কেন টাই করেছিল?
এ-গ্রুপ থেকে পাকিস্তান, শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড কোয়ার্টার ফাইনালের নকআউট পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। অপরদিকে বি-গ্রুপ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।
ঢাকার মিরপুরে প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৩.৩ ওভারে ১১২ রানে অলআউট হয়। জবাবে পাকিস্তান ২০.৫ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ১১৩ রান করে ১০ উইকেটের জয় নিয়ে সেমিফাইনালে যায়। ভারতের আহমেদাবাদে দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হয়। অস্ট্রেলিয়া ৬ উইকেটে ২৬০ রান করে। জবাবে ৪৭.৪ ওভারে ভারত ৫ উইকেট হারিয়ে ২৬১ রান তুলে ৫ উইকেটে জয়ী হয়ে সেমিফাইনালে যায়। ঢাকার মিরপুরে তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড মুখোমুখি হয়। প্রথমে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেট হারিয়ে ২২১ রান করে। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৩.২ ওভারে ১৭২ রানে অলআউট হয়। নিউজিল্যান্ড ৪৯ রানে জয় নিয়ে সেমিফাইনালে যায়। শ্রীলংকার কলম্বোতে চতুর্থ কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড ও শ্রীলংকা মুখোমুখি হয়। প্রথমে ব্যাট করে ইংল্যান্ড ৬ উইকেট হারিয়ে ২২৯ রান করে। জবাবে ৩৯.৩ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে শ্রীলংকা ২৩১ করে ১০ উইকেটে জয়ী হয়ে সেমিফাইনালে যায়।
কলম্বোতে প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ড শ্রীলংকার মুখোমুখি হয়। প্রথমে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ড ৪৮.৫ ওভারে ২১৭ রানে অলআউট হয়। জবাবে শ্রীলংকা ৪৭.৫ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২২০ রান তুলে ৫ উইকেটে জিতে ফাইনালে পৌঁছায়। ভারতের মোহালিতে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে পাকিস্তান ও ভারত মুখোমুখি হয়। প্রথমে ব্যাট করে ভারত ৯ উইকেট হারিয়ে ২৬০ রান করে। জবাবে ৪৯.৫ ওভারে পাকিস্তান ২৩১ রানে অলআউট হয়। ভারত ২৯ রানের জয় নিয়ে ফাইনালে পৌঁছায়।
মুম্বাইয়ে ফাইনালে শ্রীলংকা টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৭৪ রান করে। মহেলা জয়বর্ধনা করেন ৮৮ বলে অপরাজিত ১০৩ রান। জবাবে ভারত ৪৮.২ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ২৭৭ রান করে। ভারত ৬ উইকেটের জয় নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপ জয় করে। গৌতম গাম্ভীর ৯৭, অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি ৭৯ বলে অপরাজিত ৯১ এবং যুবরাজ সিং ২৪ বলে অপরাজিত ২১ রান করেন। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং ম্যান অব দ্য সিরিজ হন যুবরাজ সিং।

.....................................
ঢাকা
২৭ মার্চ ২০১৫



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.