নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৃটেনবাসীর চোখ এখন ৭ মে'র সাধারণ নির্বাচনের দিকে। কে আসবে ক্ষমতায় লেবার পার্টি নাকি ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি!!

০৪ ঠা মে, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৩

আগামী ৭ মে ২০১৫, বৃহস্পতিবার ব্রিটেনের ৫৫তম সাধারণ নির্বাচন। এটি হবে বৃটেনের ৫৫তম জাতীয় নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে গোটা যুক্তরাজ্যে প্রচারাভিযান এখন তুঙ্গে। মিডিয়ার ভাষ্যমতে এবার ব্রিটেনের নির্বাচনে অনেক হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। জনমত জরিপের ফল বলছে, প্রধান দুই দল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের কনসারভেটিভ পাটি এবং এড মিলিব্যান্ডের লেবার পার্টি জনপ্রিয়তার দৌড়ে খুবই কাছাকাছি অবস্থান করছে।

বৃটেনের পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ বা হাউজ অব কমন্সে মোট আসন সংখ্যা ৬৫০ টি। যার মধ্যে ইংল্যান্ডে ৫৩৩টি, স্কটল্যান্ডে ৫৯টি, ওয়েলসে ৪০টি আর উত্তর আয়ারল্যান্ডে ১৮টি আসন। সাধারণত হাউজ অব কমন্সের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলই বৃটেনে সরকার গঠন করে। ২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ডেভিড ক্যামেরনের কনসারভেটিভ পার্টি পেয়েছিল ৩০৬ টি আসন। এবার দলটি উত্তর আয়ারল্যান্ডের দুইটি আর স্পিকারের আসনটি ছাড়া বাকি ৬৪৭টি আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এড মিলিব্যান্ডের নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধীদল লেবার পার্টি বিগত নির্বাচনে মোট ২৫৪টি আস জিতেছিল। এবার তারা গ্রেট বৃটেনের ৬৩২ টি আসনের একমাত্র স্পিকারের আসনটি ছাড়া বাকি ৬৩১টি আসনে লড়াই করছে।

তৃতীয় বৃহত্তর দল নিক ক্লেগের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটস বিগত নির্বাচনে ৫৭টি আসন পেয়েছিল। কনসারভেটিভ পার্টির সঙ্গে কোয়ালিশন সরকারে যোগ দিয়ে সরকার গঠনে সহায়তা করার জন্য মিস্টার নিক ক্লেগ ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার হন। এবারের নির্বাচনে স্পিকারের আসন বাদে দলটি লেবার পার্টির মত ৬৩১ টি আসনে লড়াই করছে।

ইউকে ইনডিপেনডেন্ট পার্টি ২০১০ সালের নির্বাচনে কোনো আসন না পেলেও বৃটেনের চতুর্থ বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০১৪ সালের উপ-নির্বাচনে দলটি দুইটি আসনে বিজয়ী হয়। এবারের নির্বাচনে দলটি ৬২৪ আসনে লড়াই করছে।

এরপর রয়েছে গ্রিন পার্টি। এটি দুইভাগে বিভক্ত। একটির নাম গ্রিন পার্টি অব ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস। অপরটি হল স্কটিশ গ্রিন পার্টি। প্রথমটির নেতৃত্বে আছেন নাতালিয়ে ব্যান্নেত্ত, যিনি আগেরবার পরাজিত হন। আর পরেরটির নেতৃত্বে আছেন ক্যারোলিন লুকাস, যিনি আগেরবার বিজয়ী হন। বৃটেনের সপ্তম বৃহত্তম দল হিসেবে যৌথভাবে এই দুটি দলের অবস্থান। এবারের নির্বাচনে দল দুটি মোট ৫৬৮ আসনে লড়াই করছে।

এরপর রয়েছে নিকোলা স্টারজিয়নের নেতৃত্বাধীন স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি বা এসএনপি। দলটি বিগত নির্বাচনে ৬ আসনে বিজয়ী হয়েছিল। যা ছিল স্কটল্যান্ডে দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বৃটেনে ষষ্ঠ বৃহত্তম দল। এবার দলটি স্কটল্যান্ডের ৫৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

এরপর রয়েছে লিয়ান্নে উডের নেতৃত্বাধীন প্লায়িড চিমরু পার্টি। ওয়েলসে এটি বিগত নির্বাচনে চতুর্থ বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এবার ওয়েলসের ৪০টি আসনেই এই দলটি লড়াই করছে।

বামপন্থী সোস্যালিস্ট দলগুলো বিগত নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে ১২৮টি আসনে লড়াই করেছিল। এবারের নির্বাচনে তাদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়ায় তারা জোটবদ্ধ হয়ে মাত্র ৪০টি আসনে লড়াই করছে।

এরপর রয়েছে ব্রিটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি, যেটি বিগত নির্বাচনে ৩৩৮ টি আসনে লড়াই করে ১.৯% ভাগ ভোট পেয়ে পঞ্চম বৃহত্তর দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। দলটির জনপ্রিয়তায় ধ্বস নামায় এবার তারা মাত্র ৮টি আসনে লড়াই করছে। এছাড়া উত্তর আয়ারল্যান্ড ও বৃটেনের অন্যান্য এলাকায় মোট ৭৫৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

জনমত জরিপ:
সর্বশেষ জনমত জরিপে এখনো ক্ষমতাসীন কনসারভেটিভ পাটি লেবার পার্টির চেয়ে কিছুটা এগিয়ে আছে। কিন্তু প্রধান এই দল দুটির মধ্যে ব্যবধান খুব সামান্য। আসনের দিক থেকে মোট ৬৫০টি আসনের মধ্যে কনসারভেটিভরা ২৭৩টি এবং লেবার পাটি ২৬৯টির মতো আসন পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না। সরকার গঠন করতে হলে অন্য দলের সমর্থন লাগবে।

এবারের নির্বাচনের প্রধান ইস্যুগুলো কি? কোন দল কি বলছে?
বৃটেনের এবারের নির্বাচনে প্রধান বিষয়গুলো হল অর্থনীতির সংকট কাটানো, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বা এনএইচএসকে টিকিয়ে রাখা, বাজেট ঘাটতি কমানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অভিবাসন কমানো, ইউরোপের সাথে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক কি হবে ইত্যাদি।

ক্ষমতাসীন কনসারভেটিভ পার্টির বক্তব্য হল, তারা ব্রিটেনের অর্থনীতিকে সংকট থেকে পুনরুদ্ধার করেছে। গত পাঁচ বছরে তারা সরকারের সেবাখাত ও কল্যাণভাতায় বিশাল ব্যয় কাটছাঁট করে বাজেট ঘাটতি কমিয়েছে। অন্তত ২০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। যা ব্রিটেনের অর্থনীতিতে এখন প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, মূদ্রাস্ফীতি কমেছে। যদিও অভিবাসনের ক্ষেত্রে তারা ইউরোপ থেকে ইমিগ্রেশন কমাতে পারে নি, তবে ইউরোপের বাইরে থেকে ইমিগ্রেশন কমাতে পেরেছে। এবারের নির্বাচনে কনসারভেটিভরা দাবি করছে, তাদের গৃহীত পদক্ষেপে সুফল পাওয়া যাচ্ছে। তাই এগুলো অব্যাহত রাখতে এবং ব্রিটেনকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে পুরোপুরি বের করে আনতে হলে তাদেরকেই ভোট দেওয়া উচিত।

অন্যদিকে এড মিলিব্যান্ডের নেতৃত্বে প্রধান বিরোধীদল লেবার পার্টির বক্তব্য হল, কনসারভেটিভ নীতির ফলে ধনী-দারিদ্রের ব্যবধান বেড়েছে, জীবনযাত্রার মান নেমে গেছে। ব্রিটেনে এখন ১০ লাখের বেশি লোক ফুডব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল। ধনীদের ওপর কর কমিয়ে এবং সেবা ও কল্যাণ ভাতা সংকুচিত করে কনজারভেটিভরা সাধারণ মানুষকে আর্থিক সংকটে ফেলে দিয়েছে। কনসারভেটিভরা এবার জিতলে স্বাস্থ্যসেবায় আরো কাটছাঁট ও বেসরকারিকরণ হবে। সামাজিক কল্যাণভাতাও আরো কমানো হবে। তাই এসব খাতগুলোকে রক্ষা করতে এবং সাধারণ মানুয়ের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন করতে হলে লেবার পার্টিকেই ভোট দেওয়া উচিত।

এবারের নির্বাচনে অভিবাসন বা ইমিগ্রেশন কত বড় ইস্যু?
এবারের নির্বাচনে ইমিগ্রেশন যথেষ্ট বড় ইস্যু। কারণ বড় সব দলই এবার এটা নিয়ে কথা বলছে। কনসারভেটিভ পার্টি এর আগের নির্বাচনের ইমিগ্রেশন লাখের কোঠা থেকে হাজারের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে আগের তুলনায় ইমিগ্রেশন বেড়েছে। তবে এবার কনসারভেটিভ পাটি বলছে, তারা ইউরোপ থেকে ইমিগ্রেশন কমাতে না পারলেও ইউরোপের বাইরে থেকে ইমিগ্রেশন কমিয়েছে। এবার নির্বাচিত হলে তারা ইউরোপের সাথে থাকা না থাকা নিয়ে একটি গণভোট করবে।

অন্যদিকে প্রধান বিরোধীদল লেবার পার্টি বলছে, তারাও ব্রিটেনে ইমিগ্রেশন কমাবে এবং ইমিগ্র্যান্টরা যেন ব্রিটেনে ঢুকে প্রথম দু'বছর সামজিক কল্যাণভাতা নিতে না পারে এবং তাদের সস্তা শ্রমের জন্য যেন ব্রিটিশ নাগরিকদের কাজ থেকে বঞ্চিক হতে না হয়, ক্ষমতায় গেলে তার জন্য কড়া আইন করবে।

তবে ইউকে ইনডিপেনডেন্স পার্টি বা ইউকিপ সম্পূর্ণ ইমিগ্রেশনবিরোধী দক্ষিণপন্থী দল। তারা বলছে, ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের মধ্যে অবাধ চলাচল বহাল রেখে এমন সব পদক্ষেপে কোন কাজ হবে না। ইমিগ্রেশন বন্ধ করতে হলে ইইউ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং সেটাই তাদের প্রধান এজেন্ডা। লেবার পার্টি অবশ্য ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে আসার বিরোধী। কারণ তারা বলছে এতে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে বিরাট বিপর্যয় নেমে আসবে।

স্কটল্যান্ড ও এসএনপি ইস্যু:
এবারের নির্বাচনে স্কটল্যান্ডের ইস্যুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি যদি নিরর্বাচনে ৫৬টির মতো আসন পায়, তাহলে বড় দলগুলো তাদের সাথে কোয়ালিশন করতে পারে। এর ফলে তারা জাতীয় রাজনীতিতে কিংমেকার হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকবে।

অন্যদিকে এসএনপি স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা চায়। তবে এ দাবির ওপর গণভোটে হেরে যাবার পর আপাতত তারা স্বাধীনতার কথা আর বলছে না।
কিন্তু নির্বাচনের পর এসএনপি কোন কোয়ালিশনে ঢুকলে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, কোয়ালিশনের রাজনীতিতে এসএনপি ক্ষমতাশালী হয়ে উঠলে তারা কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর ছড়ি ঘোরাবে এবং ভবিষ্যতে আবারো স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার জন্য নতুন গণভোটের দাবি তুলতে পারে দলটি।

ওদিকে কনসারভেটিভ পার্টি তাদের নির্বাচনী প্রচারে বারবার দাবি করছে, ক্ষমতায় যাবার জন্য লেবার পার্টিই এসএনপির সাথে কোয়ালিশন করতে পারে। যদিও লেবার নেতা এড মিলিব্যান্ড এসএনপির সাথে কোন চুক্তি বা কোয়ালিশনের কথা বার বার অস্বীকার করছেন। কনসারভেটিভ পার্টির সুস্পষ্ট বক্তব্য হল, এসএনপি যুক্তরাজ্য ভাঙতে চায়, তাই তার সাথে কোয়ালিশন করাটা বিপজ্জনক হবে।

এসব কারণে এসএনপির নেত্রী নিকোলা স্টারজিওন এখন ব্রিটেনের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত নারী নেত্রীতে পরিণত হয়েছেন। যুক্তরাজ্যের এবারের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মোট ১১ জন প্রার্থী এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় করছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন কনজারভেটিভ দলের মিনা রহমান, লেবার দল থেকে সাতজন এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাটস দল থেকে তিনজন। এদের মধ্যে লেবার পার্টির প্রার্থী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রূপা হক বেশ আলোচিত নেত্রী।

আগামী বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে এখন একক কোনো দলকে কি ব্রিটিশ ভোটাররা সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেবেন? নাকি শেষ পর্যন্ত ঝুলন্ত পার্লামেন্টের সম্ভাবনাই সত্যি হবে? এ প্রশ্নের জবাব মিলবে আগামী ৭ মে বৃহস্পতিবার নির্বাচনের পরপরই।

.......................................
৪ মে ২০১৫
ঢাকা

তথ্যসূত্র: বিভিন্ন পত্রিকা, ব্লগ, টেলিভিশন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.