নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
মিসাইলম্যান খ্যাত বিজ্ঞানী ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম আর নেই। আজ সোমবার সন্ধ্যায় ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে আইআইএমের মঞ্চে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় হঠাৎ তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। রাজভবন সূত্রে জানানো হয়, আজ সন্ধ্যায় আইআইএমে ‘লিভেবেল প্ল্যানেট আর্থ’ শীর্ষক আলোচনাসভায় তিনি অংশ নিয়েছিলেন। সেখানেই ভাষণ দেওয়ার সময় হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে বেথেনি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। রাজ্যপাল ভি সন্মুগানথান বেথেনি হাসপাতালেই আছেন। এপিজে আবদুল কালাম ভারতের একাদশতম রাষ্ট্রপতি। ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি ছিলেন।
এপিজে আবদুল কালামের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লন্ডন থেকে শোকবার্তায় তিনি বলেন, “খুব খারাপ খবর। আমার সঙ্গে ওনার গভীর সম্পর্ক ছিল। তিনি ছিলেন ভারতমাতার অন্যতম প্রিয় সন্তান। সাধারণের কাছে তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়।”
শিলংয়ে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের একটি অনুষ্ঠানে ‘বি-স্কুলের’ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দিচ্ছিলেন কালাম। অনুষ্ঠানটি শুরু হয় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে। বক্তৃতার মাঝে হঠাৎ করে পড়ে যান তিনি। পরে তাঁকে স্থানীয় বেতানি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে আইসিইউতে ভর্তি করেন। সেখানেই তিনি মারা যান বলে পিটিআইয়ের খবরে বলা হয়।
আবুল পাকির জয়নুল আবেদিন আবদুল কালাম বা সংক্ষেপে এপিজে আবদুল কালাম ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর ভারতের তামিলনাড়ুর উপকূল সংলগ্ন রামেশ্বারামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম জয়নুল আবেদিন ও মাতার নাম আসিআম্মা। তিনি খুব গরীব পরিবারের সন্তান ছিলেন। যে কারণে খুব অল্প বয়সেই তাঁকে জীবিকার প্রয়োজনে বিভিন্ন পেশায় কাজ করতে হয়েছিল। তাঁর পড়াশুনার বিষয় ছিল এ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং। চল্লিশ বছর যাবত তিনি ভারতের বিভিন্ন বিজ্ঞান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। বিশেষ করে Defence Research and Development Organisation (DRDO) এবং Indian Space Research Organisation (ISRO) কর্তব্যরত অবস্থায় তিনি বেসরকারী মহাকাশ গবেষণা ও সামরিক মিসাইল তৈরীতে প্রচুর অবদান রাখেন। ব্যালেস্টিক মিসাইল ও তার উৎক্ষেপন যান তৈরীতে তার অবদানের জন্য তিনি ‘মিসাইল ম্যান’ হিসাবে স্বীকৃতি পান। ১৯৯৮ সালে ভারতের প্রথম সফল পারমানবিক পরীক্ষা পোখরান-২ এর তিনি ছিলেন মুখ্য অবদানকারী।
প্রাইমারি স্কুল শেষ করে হাইস্কুলে ওঠার পর তিনি সংবাদপত্র ফেরি করতেন। তাঁর সেই বালক বয়সের আয় সংসারে যুক্ত হতো। স্কুল বয়সেই ম্যাথেমেটিক্সের উপর তাঁর ছিল অসম্ভব দখল। রামানাথাপুরাম স্কুয়ার্টজ মেট্রিকুলেশন স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করার পর তিনি ইউনিভার্সিটি অব মাদ্রাজের এফিলিয়েটেড সেন্ট জোসেফ কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি ১৯৫৪ সালে ফিজিক্সে গ্রাজুয়েশান শেষ করেন। এরপর তিনি ১৯৫৫ সালে এ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য মাদ্রাজ গমন করেন।
ডিপার্টমেন্টের ডিন তাঁর গবেষণা কাজের কোনো অগ্রগতি না দেখে তাঁকে তিনদিনের আলটিমেটাম দেন। তিন দিনে প্রজেক্ট শেষ করতে না পারলে তাঁর স্কলারশিপ বাতিল হবে। ওই তিন দিন কালাম পুরো প্রজেক্ট শেষ করে ডিনকে শেষ পর্যন্ত খুশি করেন। চূড়ান্ত মেধা তালিকায় তিনি নবম স্থান অধিকার করেন। অল্পের জন্য তিনি ভারতীয় আইএএফ-এর পাইলট হতে ব্যর্থ হন। কারণ ভারতের আইএএফ পাইলট হবার জন্য মেধাতালিকা থেকে মোট আটজনকে নেওয়া হয়।
১৯৬০ সালে মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে পাস করার পর তিনি ভারতের ডিফেন্স রিসার্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশান (ডিআরডিও)-এ অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এস্টাবলিস্টমেন্ট প্রকল্পে একজন বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য একটি ছোট আকারের হেলিকপ্টার ডিজাইন দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। এই সময় তিনি বিখ্যাত স্পেস সাইনটিস্ট বিক্রম সারাভাই-এর অধীনেও গবেষণা করেছেন। ১৯৬৯ সালে তাঁকে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্স অর্গানাইজেশান (আইএসআরও)-এ বদলি করা হয়।
১৯৮০ সালের জুলাই মাসে ভারত প্রথম স্যাটালাইট লাঞ্চ ভ্যাহিকেল (এসএলভি-৮) উৎক্ষেপণ করতে সমর্থ হয়। যার নাম দেওয়া হয়েছিল রোহিনী। স্যাটালাইট রোহিনী সফলভাবে উৎক্ষেণ করা প্রকল্পে তিনি ছিলেন প্রধান ডিরেক্টর। এরপর তাঁর নেতৃত্বে আন্ত-মহাদেশীয় মিসাইল অগ্নি ও মিসাইল পৃথ্বী সফলভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রধান বৈজ্ঞানিক পরামর্শক ও ডিফেন্স রিসার্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশান (ডিআরডিও)-এর সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন।
২০০২ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। তাঁর প্রাপ্ত ইলেকটোরাল ভোট সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ২২ হাজার ৮৮৪টি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লক্ষী সাহগাল পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭ হাজার ৩৬৬টি ইলেকটোরাল ভোট। ২০০২ সালের ২৫ জুলাই থেকে ২০০৭ সালের ২৫ জুলাই পর্যন্ত তিনি ভারতের একাদশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে তিনি আবার শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। ভারতের প্রায় সবগুলো বড় বড় অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে তিনি অনারারি ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট শিলংয়ের তিনি ভিজিং প্রফেসর ছিলেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি অনেক পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা লাভ করেন।
পুরস্কার পদক ও সম্মাননা:
২০১৪ সালে এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব সায়েন্স
২০১২ সালে সিমন ফ্রেজার ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব লজ
২০১১ সালে আইইইই এ অনারারি মেম্বারশিপ
২০১০ সালে ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ইঞ্জিনিয়ারিং
২০০৯ সালে ওকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনারারি ডক্টরেট
২০০৯ সালে আমেরিকার এএসএমই ফাইন্ডেশান থেকে হুভার মেডেল
১৯৯৭ সালে ভারতরত্ন, ১৯৯৪ সালে ডিসটিংগুইসড ফেলো, ১৯৯০ সালে পদ্ম বিভূষণ, ১৯৮১ সালে পদ্ম ভূষণ সহ অনেক পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা লাভ করেন।
এপিজে আবদুল কালাম বেশ কিছু বই লিখেছেন। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত বইগুলো হল:
১. Developments in Fluid Mechanics and Space Technology by A P J Abdul Kalam and Roddam Narasimha; Indian Academy of Sciences, 1988
২. India 2020: A Vision for the New Millennium by A P J Abdul Kalam, Y S Rajan; New York, 1998.
৩. Wings of Fire: An Autobiography by A P J Abdul Kalam, Arun Tiwari; Universities Press, 1999.
৪. Ignited Minds: Unleashing the Power Within India by A P J Abdul Kalam; Viking, 2002.
৫. The Luminous Sparks by A P J Abdul Kalam, by; Punya Publishing Pvt Ltd, 2004.
৬. Mission India by A P J Abdul Kalam, Paintings by Manav Gupta; Penguin Books, 2005
৭. Inspiring Thoughts by A P J Abdul Kalam; Rajpal & Sons, 2007
৮. Indomitable Spirit by A P J Abdul Kalam; Rajpal and Sons Publishing
৯. Envisioning an Empowered Nation by A P J Abdul Kalam with A Sivathanu Pillai; Tata McGraw-Hill, New Delhi
১০. You Are Born To Blossom: Take My Journey Beyond by A P J Abdul Kalam and Arun Tiwari; Ocean Books, 2011.
১১. Turning Points: A journey through challenges by A P J Abdul Kalam; Harper Collins India, 2012.
১২. Target 3 Billion" by A P J Abdul Kalam and Srijan Pal Singh; December 2011 | Publisher Penguin Books.
১৩. My Journey: Transforming Dreams into Actions by A P J Abdul Kalam; August 2013 by the Rupa Publication.
১৪. A Manifesto for Change: A Sequel to India 2020 by A P J Abdul Kalam and V Ponraj; July 2014 by Harper Collins
১৫. Transcendence My Spiritual Experiences with Pramukh Swamiji by A P J Abdul Kalam; June 2015 by Harper Collins India Publication
এখন পর্যন্ত এপিজে আবদুল কালামের উপর বেশকিছু জীবনীগ্রন্থ রচিত হয়েছে। সেগুলো হল:
১. Eternal Quest: Life and Times of Dr Kalam by S Chandra; Pentagon Publishers, 2002
২. President A P J Abdul Kalam by R K Pruthi; Anmol Publications, 2002
৩. A P J Abdul Kalam: The Visionary of India by K Bhushan, G Katyal; A P H Pub Corp, 2002
৪. A Little Dream (documentary film) by P. Dhanapal; Minveli Media Works Private Limited, 2008
৫. The Kalam Effect: My Years with the President by P M Nair; Harper Collins, 2008
৬. My Days With Mahatma Abdul Kalam by Fr A K George; Novel Corporation, 2009
মৃত্যু:
২৮ জুলাই ২০১৫ সালে ভারতীয় স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শিলংয়ে আইআইএমের মঞ্চে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পরে বেথেনি হাসপাতালে তিনি সন্ধ্যা ৭.৪৫ মিনিটে তিনি বেথেনি হাসপাতালের আইসিইউতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
২৮ জুলাই ২০১৫
ঢাকা
সূত্র: বিভিন্ন পত্রিকা ও তাঁর উপর পঠিত বই
২| ২৮ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:২২
কোলড বলেছেন: He is a scholar and devout hindu with muslim name.
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:১৭
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: লিখার জন্য ধন্যবাদ। স্যারের প্রতি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলী রইল।