নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কে পাচ্ছেন এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার!! পর্ব-৩ !!!

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৩১

রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ এবং সিরিয়া ও ইরাকে আইএস জঙ্গিদের তৎপরতার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ উদ্বাস্তু। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়া দেশগুলোর লেখকদেরও অনেককেই কারাবাস বা উদ্বাস্তু জীবন বেছে নিতে হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা:
সিরিয়ার কবি অ্যাডোনিস বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আধুনিক ও প্রভাবশালী আরব কবি। সিরিয়ায় আইএস উত্থানের কারণে অ্যাডোনিসের বাড়িঘর আইএস কর্তৃক ধ্বংস হয়েছে। ২০১৩ সালে অ্যাডোনিসের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ বই তারা ধ্বংস করেছে। অ্যাডোনিসকে বলা হয় আরব ভাষার টিএস ইলিয়ট। এ বছর সাহিত্যে নোবেল পাবার শর্ট তালিকায় রয়েছেন সিরিয়ার এই কবি অ্যাডোনিস।

১৭ বছর বয়সে অ্যাডোনিস নিজেই তাঁর এই নামটি ধারণ করেন। তাঁর আসল নাম আলী আহমাদ সাঈদ এসবার। প্রকৃত নামে তাঁর লেখা কয়েকটি কবিতা আরব ম্যাগাজিন থেকে রিজেক্ট হবার পর তিনি অ্যাডোনিস নামে লিখতে শুরু করেন। ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি অ্যাডোনিস পশ্চিম সিরিয়ার লাটাকিয়া শহরের কাছে আল-কাস্বাবিন গ্রামের আলাওয়াইট পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৫০ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'দলিলা' প্রকাশিত হয়। দামাস্কাস বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আইন ও দর্শন শাস্ত্রে ভর্তি হন এবং ১৯৫৪ সালে দর্শন শাস্ত্রে স্নাতক পাস করেন। অনেক পরে ১৯৭৩ সালে সেন্ট জোসেফ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরব সাহিত্যে অ্যাডোনিস পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৫৬ সালে অ্যাডোনিস সাহিত্যের একজন একনিষ্ঠ সমালোচক খালিদা সাঈদকে বিয়ে করেন। ১৯৭৫ সাল থেকে তিনি ফ্রান্সের প‌্যারিসে বসবাস করছেন। অ্যাডোনিসের বহুল পঠিত ও আলোচিত কাব্যগ্রন্থগুলো হলো 'পিসাম', 'নট এ স্টার', 'কিং মিহাইয়ার', 'হিজ ভয়েচ', 'অ্যান ইনভাইটেশান টু ডেথ', 'নিউ কভেন্যান্ট', 'দ্য এন্ড অব দ্য স্কাই', ''হি ক্যারিস ইন হিজ আইস', 'ভয়েচ', 'দ্য ওউন্ড' ইত্যাদি।

১৯৫৭ সালে সিরিয়-লেবানিজ কবি ইউসুফ আল-খাল-সম্পাদিত 'মাজ্জাল্লা শে'র'-এ (কবিতা পত্রিকা) অ্যাডোনিসের কবিতা প্রকাশ পেলে তিনি কড়া সমালোচনার মুখোমুখি হোন। তাঁর কবিতায় তখন নতুন ধারার আধ্যাত্মিকতার রেশ পাওয়া যায়। ফলে আধুনিক আরবী কবিতায় 'নিও সুফিজম'-এর কবি হিসেবে অ্যাডোনিস খ্যাতি পান। মরমীবাদ তাঁর কবিতা দর্শনের অন্যতম আকর্ষণ। বর্তমান আরববিশ্বের সবচেয়ে বড় কবি হিসেবে তাঁর নাম উচ্চারিত হয়। মূল আরবীতে তাঁর কবিতার বইয়ের সংখ্যা ২০। এর মধ্যে ১০টি গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ইসলামপূর্ব আরবি ঐতিহ্য তাঁর কবিতায় প্রবলভাবে প্রভাবিত।

সাহিত্যে তিনি সর্বপ্রথম সিরিয়া-লেবাননভিত্তিক সেরা কবিতা সম্মাননা 'নাজিম হিকমত পোয়েট্রি অ্যাওয়ার্ড' লাভ করেন। ১৯৮২ সালে প্যারিসের স্তেফানি মালার্মে একাডেমির তিনি সদস্য নির্বাচিত হন। ২৫ মে ২০১১ সালে অ্যাডোনিস জার্মানির 'গ্যাটে পুরস্কার'-এর জন্য তিনি মনোনীত হন। এর আগে ২০০৫ সালেও অ্যাডোনিস সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোয়ন পেয়েছিলেন। জন্মসূত্রে অ্যাডোনিস সিরিয় নাগরিক কিন্তু ১৯৬১ সালের পর থেকে তিনি লেবাননের নাগরিক। ১৯৮০ সালের গৃহযুদ্ধের সময়ে তিনি ফ্রান্স পালিয়ে গেলে অ্যাডোনিস ফ্রান্সের নাগরিকত্ব লাভ করেন। বর্তমানে তিনি প্যারিস শহরে বসবাস করেন। এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন এই সিরিয়ান কবি অ্যাডোনিস।

মিশরের ঔপন্যাসিক বাহা তাহির এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাবার শর্ট তালিকায় রয়েছেন। ১৯৩৫ সালে কায়রো শহরে জন্মগ্রহন করেন বাহা তাহির। কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সাহিত্যে স্নাতক পাস করেন। লেখালেখির জন্য ১৯৭৫ সালে তাঁকে মিশরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তখন তিনি মিশর ছেড়ে ব্যাপক ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আফ্রিকা ও এশিয়ার নানান দেশ ঘুরে বেড়ান এবং অনুবাদকের কাজ করেন। আশি ও নব্বই দশকে তিনি সুইজারল্যান্ডে জাতিসংঘের একজন অনুবাদক হিসেবে কাজ করেন।

বাহা তাহিরের প্রথশ উপন্যাস 'ইস্ট অব দ্য পামস' প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে। একই বছর প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় উপন্যাস 'কালাত দুহা'। ১৯৯১ সালে প্রকাশ পায় 'আন্ট সাফিয়া অ্যান্ড দ্য মোনাসটারি'। 'লাভ ইন এক্সাইল' (১৯৯৫), 'দ্য পয়েন্ট অব লাইট' (১৯৯৯), 'সানসেট ওয়াসিস' (২০০৭) বাহা তাহিরের বিখ্যাত উপন্যাস। এ বছর তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

মরক্কোর বহুল আলোচিত কবি আবদেললতিফ লাবি'র নাম এবার সম্ভাব্য সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীদের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে। লেখালেখির কারণে মরক্কোর সরকার তাঁকে দশ বছরের জন্য কারাবন্দী করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত লাবি মরক্কোর কারাগারে বন্দী ছিলেন। ১৯৮৫ সালে জোরপূর্বক তাঁকে ফ্রান্সে নির্বাসনে পাঠানো হয়। ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহন করা এই মরক্কান কবি বর্তমানে ফ্রান্সে বসবাস করছেন। লাবি'র বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলো হলো 'লা রেগনে দে বারবারি', 'লে সোলেইল সে মেউর্তে', 'দ্য ওয়ার্ল্ড'স এমব্রেস: সিলেক্টেড পোয়েমস', 'ফ্রাগমেন্টস অব ফরগটেন জেনেসিস', 'দ্য রুল অব বারবারিজম', 'দ্য বটম অব দ্য জার' ইত্যাদি।

আরব সাহিত্যে মিথ নিয়ে সবচেয়ে বেশি কাজ করেন লিবিয়ার ঔপন্যাসিক ইব্রাহিম আল-কোনি। এ বছর কোনি'র নামও সাহিত্যে সম্ভাব্য নোবেল বিজয়ীদের তালিকায় উচ্চারিত হচ্ছে। কোনি'র উপন্যাসের সংখ্যা ৬০টিরও বেশি। বিশ্বের ৩৫টি ভাষায় তাঁর উপন্যাস অনুদিত হয়েছে। তুলনামূলক সাহিত্যে তিনি রাশিয়ার ম্যাক্সিম গোর্কি লিটারেচার ইনস্টিটিউট থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। এরপর মস্কো ও ওয়ারশতে সাংবাদিকতা করেন। গত বছর তিনি ম্যান বুকার পুরস্কারের শর্ট লিস্টে ছিলেন। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসগুলো হলো 'আনুবিস: এ ডেসার্ট নোবেল', 'গোল্ড ডাস্ট', 'দ্য অ্যানিমিস্টস', 'দ্য ব্লেডিং অব দ্য স্টোন', 'দ্য পাপেট', 'দ্য সেভেন ভেইলস অব সেথ'। আল-কোনি'র উপন্যাসে ম্যাজিক রিয়ালিজনম, সুফিজম এবং পোয়েটিক ভাব বর্তমান। এ বছর কোনি সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী হলে অবাক হবার কিছু নেই।

লেবাননের বিচারবিভাগের সমালোচনা করে লেখা 'ইয়ালো' বইটি প্রকাশ পাবার পরেই ইলিয়াস খৌরি প্রথম আলোচিত হন। লেবাননের এই ঔপন্যাসিক সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হন। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস 'লিটল মাউন্টেইন' লেবাননের গৃহযুদ্ধ নিয়ে। এ বছর সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীদের সম্ভাব্য তালিকায় ইলিয়াস খৌরির নাম বেশ জোরেসোরে উচ্চারিত হচ্ছে।

যদি ইসরাইলের কোনো লেখক সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হন, সেই নামটি হবে আমোস ওজ। ইসরাইল ও ফিলিস্তিন সমস্যা নিয়ে অ্যাডভোকেসি করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে তাঁর লেখা খুব আলোচিত। বিশ্বের ৪২টি ভাষায় তাঁর লেখা অনুদিত হয়েছে। নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি লেখেন তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস 'এ টেল অব লাভ অ্যান্ড ডার্কনেস'। হিব্রু ভাষার প্রথম কোনো বই হিসেবে এটি চিনের টেক্সবই হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। ওজ-এর লেখার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তিনি বাস্তবতাকে খুব নিখুদভাবে ফুটিয়ে তোলেন। এ বছর সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী সম্ভাব্যদের তালিকায় আমোস ওজ খুব আলোচিত নাম।

ইরানের কবি হুসাং এবতেহাজ এবার সাহিত্যে সম্ভাব্য নোবেল বিজয়ীদের শর্ট লিস্টে রয়েছেন। তিনি এইচ.ই. সায়েহ নামে লেখালেখি করেন। বিংশ শতাব্দিতে তিনি ইরানের সবচেয়ে আলোচিত কবি হিসেবে স্বীকৃত। ইরানে বিপ্লবের পর রাজনৈতিক কারণে তিনি দীর্ঘদিন কারবাস করেন। ১৯২৮ সালে জন্মগ্রহণ করা এই কবি পরবর্তী সময়ে ১৯৮৭ সালে ইরান ত্যাগ করে জার্মানিতে চলে যান। বর্তমানে তিনি জার্মানিতে বসবাস করছেন। প্রবীন এই ইরানি কবিকে বলা হয় ইরানের সবচেয়ে লিরিক্যাল ফরমেটের কবি। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলো হলো 'দ্য ফার্স্ট সংস' (১৯৪৬), 'মিরেজ' (১৯৫১), 'আর্থ' (১৯৫৫), 'পেজেস ফ্রম দ্য লংগেস্ট নাইট' (১৯৬৫)ও 'ব্লিক ট্রাভেলস' সিরিজ। সায়েহ কবিতা লেখার পাশাপাশি গজল লেখার জন্য খুব বিখ্যাত। এ বছর তিনি সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী হলে অবাক হওয়ার কিছু নাই।

..............................চলবে............................

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.