নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

হরিবোল সিনেমা বানানোর গল্প!! (ধারাবাহিক)

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:১৮

অনেকেই মনে করেন আমি হুট করেই সিনেমা বানাতে এসেছি। কথাটা ডাহা মিথ্যা। আমি মোটেও হুট করেই সিনেমা বানাতে আসি নাই। দীর্ঘ বারো বছর আমার সিনেমার সাথেই বসবাস। সিনেমার সাথেই ওঠাবসা। সিনেমায় খাওয়া, সিনেমায় ঘুম। ২০০৬ সাল পর্যন্ত আমি ছিলাম অন্যদের মত সিনেমার কেবলমাত্র একজন সৌখিন দর্শক। কিন্তু ২০০৬ সাল থেকেই আমি কিন্তু সিনেমা নির্মাণের একজন যোদ্ধা। সিনেমা নির্মাণের একজন খনি শ্রমিক।

শুধু গতর খেটে আমি সিনেমা বানানো শিখিনি। সিনেমা বানানোর প্রতিটি পর্ব আমি চেখে চেখে দেখেছি। নির্মাণের সঙ্গে থেকে থেকেই নিজেকে তৈরি করেছি। হুট করেই গায়েবি আওয়াজ হলো আর আমি সিনেমা বানাতে নেমে পড়েছি, ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। সিনেমা বানাতে গিয়ে যে নেশায় আমাকে পেয়েছে, সেই নেশা থেকেই সিনেমা বানাতে শুরু করেছি। নেশা একবার জমে গেলে নেশায় আর ছাড়ে না। আমি একজন নেশাখোর। পরিবারে আমার নেশার নামে বহুত বদনাম আছে। সেই বদনামের কারণে আমি পরিবার থেকেও এক ধরনের বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করি। কিন্তু খুব স্বাধীন জীবনযাপনই করি। কারো খবরদারি আমি বরদাস্ত করি না। কারণ আমি মনে প্রাণে একজন স্বাধীন মানুষ।

স্বাধীন মানুষ বলেই মনে যখন যা বলে তাই করি। লিখতে ইচ্ছে করলে লিখি। পড়তে ইচ্ছে করলে পড়ি। ঘুমোতে ইচ্ছে করলে ঘুমাই। রাত জাগতে ইচ্ছে করলে রাত জাগি। সিনেমা দেখতে ইচ্ছে করলে সিনেমা দেখি। গান শুনতে ইচ্ছে করলে গান শুনি। আমার জীবনের চালক আমি। কারো পরামর্শ আমার এই জীবন চালনায় আজ পর্যন্ত খুব একটা কাজে লাগেনি। ভবিষ্যতেও লাগবে বলে মনে হয় না। কারণ আমি একজন স্বাধীন মানুষ। স্বাধীনভাবে চিন্তা করি। স্বাধীনভাবে চলি। জীবনে আমি কখনো কোনো ধরনের অপরাধের সাথে জড়াইনি। ভবিষ্যতেও কোনোভাবেই জড়ানোর ইচ্ছে নাই। নিজের মত চলি।

বলছিলাম ২০০৬ সালে আমার সিনেমায় হাতেখড়ি। কীভাবে সেই গল্পটি এখন বলি। তখন ধানমন্ডি নদীর পাড়ে আমরা রোজ আড্ডা মারি। ধানমন্ডি বত্রিশ নাম্বারে বঙ্গবন্ধু'র বাড়ির সামনে আমাদের একটা অস্থায়ী আখড়ার মত হয়ে গেল। বন্ধুরা যে যেখানে থাকুক না কেন, সন্ধ্যায় সবাই ধানমন্ডি নদীর পাড়ে চলে আসতো। ধানমন্ডি নদীর পাড়ে আমাদের নিয়মিত আড্ডার বয়স তখন ছয় বছরে গড়িয়েছে। আমার বন্ধুদের দু'একজন ছাড়া বাকি প্রায় সবাই তখন চাকুরিজীবী। সন্ধ্যা থেকে আমরা রাত দশটা-এগারোটা পর্যন্ত তখন আড্ডা মারি।

ধানমন্ডি নদীর পাড়ের আড্ডারুদের নাম না বললে পাপ হবে। তার আগে বলে রাখি, আড্ডাকে যদি তিনভাগে ভাগ করি তাহলে সকালে একটা গ্রুপের সাথে আমার আড্ডা হতো, দুপুরে একটা গ্রুপের সাথে আমার আড্ডা হতো আর সন্ধ্যায় অন্য আরেকটা গ্রুপের সাথে আমার আড্ডা জমতো। সকালের আড্ডায় থাকতেন শিল্পী মাসুক হেলাল, লেখক-সাংবাদিক রুদ্রাক্ষ রহমান, আলোকচিত্রী পাভেল রহমান, গল্পকার শেখর ইমতিয়াজ, কথাসাহিত্যিক ইমতিয়ার শামীম, কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব (উন্মাদ শাহীন), শিল্পী রাজীব রায়, সাংবাদিক জসীম উদ্দিন, গায়ক রিপন পাগলা, পুটু মামা, দুলালদাসহ অনেকে।

দুপুরের আড্ডা ছিল সাপ্তাহিক বিচিত্রা অফিসে। ওটা ছিল অনেকটা অনিয়মিত আড্ডা। আমি যদি লাঞ্চটাইমে যেতাম, তাহলে বিচিত্রা অফিসেই দুপুরের লাঞ্চ করতাম মাসুক ভাইদের সাথে। আর যদি লাঞ্চের পর যেতাম মাসুক ভাই আলাদা ডেকে নিয়ে লাঞ্চের টাকা দিয়ে বলতেন, যাও শুক্রাবাদ গিয়ে লাঞ্চ করে আসো। তখন মাঝে মাঝে বন্ধু কবি টোকন ঠাকুরের সাথে আমার ক্রোস কানেক্টিং হতো। কখনো বন্ধু রেজাউল কবির মাহমুদ নাসিমের সাথে। কখনো বন্ধু রিয়াজ হকের সাথে। কখনো বন্ধু পুলক বিশ্বাসের সাথে। কখনো বন্ধু জায়েদউদ্দীনের সাথে। কখনো বন্ধু নাসরুল্লাহ নাহিদের সাথে। কখনো বন্ধু রাজীব নূরের সাথে। কখনো বন্ধু রোকন রহমানের সাথে। কখনো বন্ধু সুদত্ত চক্রবর্তী পবনের সাথে। কখনো বন্ধু অজয় দাসের সাথে। কখনোবা মহাত্মা গোলাম রসুলের সাথে। বন্ধুদের সাথে আমার দেখা হলে আমাদের লাঞ্চের পরিবর্তে টাঞ্চ করার নিয়ম ছিল। আমাদের সাধারণত কলা-পাউরুটিতে লাঞ্চ হয়ে যেত। কিন্তু টাঞ্চ করতে আমরা মোটেও ভুল করতাম না।

সন্ধ্যার আড্ডায় নিয়মিত-অনিয়মিতভাবে যোগ দিতেন কবি জাফর আহমদ রাশেদ, ভোকা শামীম আহমেদ, রিয়াজ হক, মঈনুল বিপ্লব, নাসরুল্লাহ নাহিদ, পুলক বিশ্বাস, সুদত্ত চক্রবর্তী পবন, অজয় দাস, সুমন শামস, কবি টোকন ঠাকুর, জায়েদউদ্দীন, হুমায়ুন কবীর, কবি ফিরোজ এহতেশাম, শিল্পী মোবাশ্বির আলম মজুমদার, শিল্পী শাহীনুর রহমান, ডাক্তার কল্লোল চৌধুরী, মহাত্মা গোলাম রসুল, রাজীব নূর, সত্যজিৎ পোদ্দার বিপু, খোকন কায়সার, রোকন রহমান, অলক চক্রবর্তী, দীপংকর দাস, কমল, জাহাঙ্গীর আলম রাজা, আমিনুর রহমান মুকুল, অরূপ রাহী, কামরুজ্জামান কামু, সুমন, নজরুল খুলু প্রমুখ।

সন্ধ্যার আড্ডা শেষ হতো রাত দশটা-এগারোটায়। বছরের এমন কোনো দিন নাই, শীত-গ্রীস্ম, বর্ষা-ঝঞ্জ্বা, শরৎ-হেমন্ত, বসন্ত যেদিন আমরা ধানমন্ডিতে আ্ড্ডা মারি নাই। নিয়মিত-অনিয়মিত সব বন্ধুরা তখন জানতো ওদের ধানমন্ডি নদীর পাড়ে গেলেই পাওয়া যাবে। তাই সবাই চোখ বন্ধ করে ধানমন্ডি বত্রিশ নাম্বারে চলে আসতো। রিসার্সের কাজে ঢাকার বাইরে না গেলে ধানমন্ডি বত্রিশ নাম্বারের আড্ডায় আমি ছিলাম সবচেয়ে নিয়মিত সদস্য। অন্য কেউ না থাকুক আমাকে পাওয়া যেতো।

আমি তখন ধানমন্ডি সাতাশ নাম্বারের (শংকরের মুখে) একেবারে কর্নারের বাড়িটায় নগর গবেষণা কেন্দ্রে (সিইউএস) প্রফেসর নজরুল ইসলামের সঙ্গে গবেষণা করি। অফিসে আমার কাজ না থাকলেই আমি ধানমন্ডি বত্রিশ নাম্বারে চলে আসি। স্যার ফোন করলে অফিসে যাই। কাজ শেষে আবার ধানমন্ডি বত্রিশে ফিরি। এখন যেখানে ছায়ানট ভবন ঠিক তার পেছনে ছিল বন্ধু আমিনুর রহমান মুকুলের অফিস। দুপুরে প্রায়ই আমরা একসাথে লাঞ্চ বা টাঞ্চ করতাম। আমার অফিসে কাজ না থাকলেই ফুরুত করেই ধানমন্ডি বত্রিশে চলে আসতাম।

২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখ। বিকালে আমি অফিসের কম্পিউটারে বসে বসে তাস খেলছিলাম। হঠাৎ টোকন ঠাকুরের ফোন। রেজা কোই আছেন। কইলাম-অফিসে। ঠাকুর বললেন, এইমাত্র আমি ঝিনেদা থেকে বত্রিশ নাম্বারে এসে ল্যান্ড করলাম। চইলে আসেন। জবাবে বললাম- মোস্তাফিজ আমাদের বেতনের খাম রেডি করতেছে। বেতনটা নিয়েই বের হই। ততক্ষণে নজরুল স্যার মোস্তাফিজকে নাস্তা আনতে বাইরে পাঠালেন। বেতনের খাম পেলাম নাস্তা খাওয়ার পর। বেতনের খামটা পকেটে ঢুকিয়ে সেই যে নজরুল স্যারের অফিস থেকে বের হলাম, সেই বের হওয়ার পর থেকেই সিনেমা বানানোর শুরু।

----------------------
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮
ঢাকা
--------------------------চলবে-----------------------

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:৩০

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



সুস্থ বিনোদনের বড়ই অভাব এখন; সিনেমা বানাব, সমাজটা পরিবর্তনে সহযোগী হোন ৷

২| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:১০

রাকু হাসান বলেছেন: শুভকামনা থাকলো

৩| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: এত আড্ডা দেন বলেই তো আপনাকে ব্লগে পাই না।
আমি মনে প্রানে চাই আপনি সিনেমা বানান । অনেক সিনেমা বানান।
আপনার জন্য সব সময় শুভ কামনা ভাই।

৪| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৪:২১

মো: হাসানূর রহমান রিজভী বলেছেন: পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম....

৫| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৪

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার সিনেমায় কেউ টাকা ঢালতে চাইলে সে কীভাবে তা করবে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.