নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড অন অক্টোবর

২১ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:০১

আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটরিয়ামে বন্ধু ফয়সল আরেফিন দীপনের ৩য় প্রয়াণ দিবস (৩১ অক্টোবর) উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে থাকার সুযোগ হয়েছিল। অনুষ্ঠানে একটু দেরিতে পৌঁছানোর কারণে বাঁধনহারার প্রথম পরিবেশনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'সামান্য ক্ষতি' কবিতা অবলম্বনে নাটকটি মিস করেছি। কিন্তু আলোচনা পর্ব শেষে বাঁধনহারার অনবদ্য পারফরমেন্স 'যশোর রোড' দেখে খুবই মুগ্ধ হলাম।

১৯৭১ সালে কবি অ্যালেন গিনসবার্গ বাংলাদেশ থেকে ভারতে আশ্রয়ের উদ্দেশ্য ছুটে চলা শরণার্থীদের নিয়ে লিখেছিলেন সেই বিখ্যাত কবিতা 'সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড'। পরবর্তী সময়ে এই কবিতা অবলম্বনে খুবই মর্মস্পর্শী গান করেছিলেন মৌসুমী ভৌমিক। নরসিংদীর বাঁধনহারা নাট্যদল অ্যালেন গিনসবার্গের কবিতা ও মৌসুমী ভৌমিকের গানকে অবলম্বন করে নির্মাণ করেছেন এক ধ্রুপদী নাটক 'যশোর রোড'।

সত্যি সত্যিই যেন সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালের যশোর রোডের সেই শরণার্থীদের ভারতসীমান্তমুখী মিছিলের ঘটনাগুলো এক নিমিষে আবারো চোখের সামনে ঘটিয়ে দেখালেন বাঁধনহারার ৫০ জন নাট্যকর্মী। যুদ্ধের ভয়াবহতার বিরুদ্ধে মানুষের বাঁচার যে তীব্র লড়াই, সেই মর্মস্পর্শী ঘটনাগুলোকে একেবারে বাস্তব করে দেখালো বাঁধনহারার একদল তরুণ-কিশোর-শিশু নাট্যকর্মী।

যেখানে অশীতিপর বৃদ্ধা যেমন আছে, আছে অন্তঃসত্ত্বা নারী, আছে বুকের দুধ খাওয়া অবুঝ শিশু, আছে ক্ষুধার তাড়নায় হাঁটতে না পারা ছোট্ট কিশোর-কিশোরী, আছে যুবকের কাঁধে চড়া বয়বৃদ্ধ মা, আছে যুবতী, পঙ্গু যুবক থেকে সমাজের সকল স্তরের মানুষের উদ্বাস্তু জীবনের এক মহাদীর্ঘ সারি। প্রত্যেকেই নিজ নিজ চরিত্রে অসাধারণ দক্ষতায় প্রথম থেকে শেষপর্যন্ত এই শরণার্থী দলের চরিত্রে দারুণ অভিনয় করেছেন।

এর আগে চলচ্চিত্র নির্মাতা মৃণাল সেনের ছবিতে আমি সেই সময়ের বাস্তব ডকুমেন্টাশান দেখেছি। আর আজকে বাঁধনহারার এই অসাধারণ ধ্রুপদী পরিবেশনায় আবারো সেপ্টেম্বরের যশোর রোডের সেই ভয়াবহ দুর্যোগকে প্রত্যক্ষ করলাম।

পরিচালক কামরুজ্জামান তাপু অত্যন্ত পরিশ্রম করে অসাধারণ নৈপুণ্যে প্রতিটি চরিত্রকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথেই নির্মাণ করেছেন। আর নাটকের পুরো সময়জুড়ে নাট্যকর্মীদের সবাই নিজ নিজ চরিত্র অনুযায়ী সেই বেদনাবিধুর মর্মস্পর্শী শরণার্থী মিছিলকে একেবারে জীবন্ত করে তুলেছেন। আমি নাটকটির ৩৬তম পরিবেশনা দেখে অত্যন্ত মুগ্ধ।

আমাদের শিল্পকলা একাডেমির উচিত সারাদেশে এই নাটকটির পরিবেশনার সুযোগ করে দেওয়া। তাহলে নতুন প্রজন্ম ১৯৭১ সালে সংঘটিত সেই পাকিস্তানী বর্বরতার বাস্তব চিত্র এবং যুদ্ধের ভেতরে মানুষের বাঁচার তীব্র লড়াইকে দেখার সুযোগ পাবে। পাশাপাশি বিদেশে যেমন বিভিন্ন নাট্যদলকে বিভিন্ন প্রযোজনা নিয়ে প্রমোট করা হয়, বাঁধনহারার 'যশোর রোড' প্রযোজনাকে সেই সুযোগটি প্রদান করা উচিত বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

মাথার উপরে বোমারু বিমান, পেটে ক্ষুধা, হৃদয়ে জন্মভিটা ছাড়ার কষ্টকে পেছনে ফেলে শুধুমাত্র জীবন বাঁচাতে অসংখ্য নিরন্ন মানুষের এই যে তীব্র মর্মস্পর্শী লড়াই, এটা ১৯৭১ সালে যশোর রোডে শরণার্থীদের মিছিলে এতই তীব্র ছিল যে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানুষ আর কখনো প্রত্যক্ষ করেনি। প্রায় এক কোটি মানুষ তখন সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিল।

ধন্যবাদ কামুরুজ্জামান তাপুকে অসাধারণ একটি নাটক নির্মাণের জন্য। ধন্যবাদ বাঁধনহারা দলকে। শুভেচ্ছা বাঁধনহারার সকল নাট্যকর্মীকে অসাধারণ একটি ধ্রুপদী পরিবেশনার জন্য। জয়তু বাঁধনহারা। জয়তু থিয়েটার।

-----------------------------
২১ অক্টোবর ২০১৮



মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৮ ভোর ৪:২২

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: 'সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড'।
মঞ্চনাটক হিসাবে কবে দেখতে পাব জানাবেন ।

২| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: হরিমল দেখার অপেক্ষায় আছি।

৩| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: হরিবল দেখার অপেক্ষায় আছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.