নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেমন ছিল বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচন!!!

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৩:০৩

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন বা প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। ৩০০ আসনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ১৪টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। মোট প্রার্থী ছিলেন ১০৭৮ জন। এদের মধ্যে দলীয় প্রার্থী ছিলেন ৯৫৮ জন এবং নির্দলীয় বা স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ১২০ জন।

নির্বাচনের আগেই ১১টি আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১১ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হন। ৭ মার্চের নির্বাচনের দিনে অবশিষ্ট ২৮৯টি আসনের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২৮২টি আসনে বিজয়ী হয়। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) একটি আসনে, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ একটি আসনে ও ৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী ৫টি আসনে বিজয়ী হয়।

মোট ভোটের শতকরা ৫৪.৯ ভাগ ভোট কাস্ট হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পায় ১৩,৭৯৮,৭১৭ ভোট, যা কাস্টিং ভোটের শতকরা ৭৩.২ ভাগ। আসন সংখ্যা ২৯৩টি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দি দল ছিল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মোজাফ্ফর)। ন্যাপ (মোজাফ্ফর) মোট ভোট পেয়েছিল ১,৫৫৯,২৯৯টি। যা মোট কাস্টিং ভোটের ৮.৩ ভাগ। কিন্তু ন্যাপ (মোজাফ্ফর) কোনো আসনে বিজয়ী হতে পারেনি।

তৃতীয় বিজয়ী দল ছিল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। জাসদের প্রাপ্ত ভোট ছিল ১,২২৯,১১০ ভোট, যা মোট কাস্টিং ভোটের শতকরা ৬.৫ ভাগ। বিজয়ী আসন ১টি। চতুর্থ দল ছিল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী)। ন্যাপ (ভাসানী) মোট ভোট পেয়েছিল ১,০০২,৭৭১টি। যা মোট কাস্টিং ভোটের শতকরা ৫.৩ ভাগ। ন্যাপ (ভাসানী) কোনো আসনে বিজয়ী হতে পারেনি।

পঞ্চম বৃহত্তম দল ছিল বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশান। তাদের প্রাপ্ত ভোট ছিল ১৯৯,৬৭৩টি। যা মোট কাস্টিং ভোটের শতকরা ১.১ ভাগ। এই দলটিও কোনো আসনে বিজয়ী হতে পারেনি। ষষ্ঠ বৃহত্তম দল ছিল বাংলাদেশ জাতীয় লীগ। জাতীয় লীগের মোট প্রাপ্ত ভোট ছিল ৬২,৩৫৪টি। যা মোট ভোটের শতকরা ০.৩ ভাগ। সংসদে দলটি একটি আসনে বিজয়ী হয়।

১২০ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোট ভোট পেয়েছিলেন ৯৮৯,৮৮৪টি। যা মোট কাস্টিং ভোটের ৫.৩ ভাগ। এদের মধ্যে ৫ জন বিজয়ী হয়। বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলা ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ জাতীয় কংগ্রেস, বাংলা জাতীয় লীগ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (লেনিনবাদী), জাতীয় গণতান্ত্রিক দল ও শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও তাদের প্রাপ্ত ভোটের কোনো পরিসংখ্যান ইতিহাসে নাই।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলকে সংরক্ষণ করেনি। আমরা এমন একটি দেশে বসবাস করি যেখানে ইতিহাস সংরক্ষণ করা হয় না। দেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল আমাদের নির্বাচন কমিশনের ওয়েব সাইটে নাই। হয়তো কমিশন থেকেও সেসব ইতিহাস মুছে ফেলা হয়েছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম জাতীয় নির্বাচনের তথ্য ঘাটতে গিয়ে একটি মজার তথ্যও চোখে পড়ল। সেটি হল নির্বাচনে মোট ইনভেলিড/ব্ল্যাংক বা বাতিল ভোটের সংখ্যা। এই সংখ্যাটি দেখলে আপনি আতকে উঠবেন। প্রথম নির্বাচনে বাতিল ভোটের সংখ্যা ৪৭৭,৮৭৫টি।

বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাস যেহেতু মোটেও স্বচ্ছ নয়, তাই ধারণা করা যায় যে, দেশের প্রথম নির্বাচনও অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়নি। আর অবৈধ বা বাতিল ভোটের বিপুল সংখ্যা দেখে যে ধারণাটি প্রবল হয় সেটি হল নিকটতম প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটকে বাতিল দেখাতে পারলেই তো প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীকে অনায়াসে বিজয়ী করা সম্ভব। বাস্তবে হয়তো সেরকম একটি ইলেকশান ইঞ্জিনিয়ারিং হয়েছিল।

স্বাধীনতার পর যেহেতু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সর্ববৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। তার আগে বৃহত্তম দল হিসেবে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে সরকার গঠনের মত অবস্থায় ছিল। তাই স্বাধীনতার পর দেশের প্রথম নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কেউ টু শব্দটি করতে পারেনি। বাস্তবে দেশের প্রথম নির্বাচনও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ছিল না। ভোট কারচুপি, জাল ভোট প্রদান এবং কেন্দ্র দখলের ইতিহাস তখনো ছিল।

১৯৭৩ সালের ৭ মার্চের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে মোট ভোট কাস্ট হয়েছিল ৩৫,২০৫,৬৪২টি। যা মোট ভোটারের ৫৪.৯ শতাংশ।

৩০০ আসনের জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২৯৩টি আসনে বিজয়ী হয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে সরকার গঠন করে। সংসদের সংরক্ষিত ১৫টি আসনের সবগুলোই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পায়। যে কারণে ৩১৫ আসনের মধ্যে জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০৮টি। ১৯৭৩ সালের মে মাসে পাঁচটি আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উপনির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দুইটি আসনে পরাজিত হয়।

আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৬ মার্চ ১৯৭৩ সালে সরকার গঠন করেন। বাংলাদেশে এটা ছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তৃতীয় কেবিনেট। প্রথম কেবিনেট ছিল অস্থায়ী সরকার, দ্বিতীয় কেবিনেট ছিল গণপরিষদের সদস্যদের নিয়ে আর তৃতীয় কেবিনেট গঠিত হয় দেশের প্রথম নির্বাচিত সাংসদদের নিয়ে। বঙ্গবন্ধু'র তৃতীয় কেবিনেট গঠিত হয়েছিল মোট ২৮ জন মন্ত্রী নিয়ে। এর আগে দ্বিতীয় কেবিনেট গঠিত হয়েছিল ২৫ জন মন্ত্রী দিয়ে। আর অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়েছিল ৮ জন নিয়ে।

বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কেন দেশের ইতিহাসে প্রথম জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল সংরক্ষণ করেনি, এটা আমার কাছে খুব অবাক লেগেছে। আমাদের নির্বাচন কমিশন যদি ইতিহাসের এসব তথ্য সংরক্ষণ না করে, তাহলে প্রশ্ন হল- দেশের কোন প্রতিষ্ঠান এটি সংরক্ষণ করবে!

-----------------------------
২৫ অক্টোবর ২০১৮


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৩:১৭

চাঁদগাজী বলেছেন:

ভালো বিষয়ে লিখেছেন। দেশের ১ম ভোটেই কারচুপি হওয়ার পর, শেখ সাহবে এই নিয়ে কথা বললে ভালো হতো, তিনি কিছু বলেছেন বলে মনে হয় না।

২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৮:০২

রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম।

৩| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:১৬

ফেনা বলেছেন: সব অসম্ভবের দেশ বাংলাদেশ।

৪| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১:১৬

চৌধুরী জাফর উল্লাহ শরাফত বলেছেন: চমৎকার বিষয় নির্বাচন। আপনার দেয়া তথ্যগুলোর সুত্র জানাবেন প্লিজ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.