নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
শক্তিমান কথাসাহিত্যিক মাহমুদুল হকের মৃত্যুর দশ বছর পর ''মাহমুদুল হক: দিব্যকান্তি সম্পর্কের কথক'' বিষয়ভিত্তিক বক্তৃতামালায় আজকের আলোচক ছিলেন বন্ধুবর কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল। দীর্ঘদিন পর এরকম একটি মনোজ্ঞ আলোচনা অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে সত্যিই আমি ভাগ্যবান।
মাহমুদুল হকের দুই উপন্যাস 'কালো বরফ' (১৯৭৭) ও 'জীবন আমার বোন' (১৯৭২) নিয়ে কামালের আলোচনার কথা থাকলেও ব্যক্তি মাহমুদুল হক ও তাঁর অন্যান্য লেখা বিশেষ করে তাঁর উপন্যাস 'অনুর পাঠশালা' (১৯৬৭), 'অশরীরী' (১৯৭৯), 'খেলাঘর' ও ছোটগল্পের বই 'প্রতিদিন একটি রুমাল' (১৯৯৪) নিয়েও একটি মনোজ্ঞ আলোচনা হয়েছে।
মাহমুদুল হকের ব্যক্তি জীবনের অনেক অজানা ঘটনা কামালের মুখে শুনতে পেরে নতুন এক দিব্যকান্তিকে আজ আবিস্কার করলাম। নতুন করে আবার মাহমুদুল হককে পাঠ করার আগ্রহ তৈরি হলো। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় মাহমুদুল হকের বাবা সিরাজুল ইসলাম সাহেব পরিবার নিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায় চলে আসেন।
একটি স্থায়ী ঠিকানা না থাকার যে কষ্ট, সেই মনোবেদনা মাহমুদুল হক সারাজীবন যেমন বহন করেছেন, তেমনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী কর্তৃক সংবাদ অফিস পুড়িয়ে দিলে তাঁর শিক্ষক শহীদ সাবেরের সেখানে মৃত্যু'র জন্য তিনি নিজেকে সারাজীবন দায়ী করতেন। কারণ তিনি মনে করতেন, সেদিন যদি তিনি তাঁর শিক্ষককে রাস্তা থেকে তুলে নিজের বাসায় নিয়ে যেতেন, তাহলে তাঁর এমন করুণ মৃত্যু হতো না।
১৯৮২ সালে তাঁর মা মাহমুদা বেগমের মৃত্যুর পর মাহমুদুল হক স্থায়ীভাবে লেখালেখিও ছেড়ে দেন। শেষদিকে তিনি নিজেও ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিলেন। মাহমুদুল হকের মৃত্যু'র পরে তাঁকে কবরস্থ করা নিয়েও এক জটিল ও ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কবি মোহাম্মদ সাদিকের সহযোগিতায় মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্তানে তাঁকে সমাহিত করা হলেও অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা এই মহান কথাসাহিত্যিকের কবরটি সংরক্ষণের প্রয়োজন বোধ করে নাই।
কথা শিল্পী মাহমুদুল হককে নিয়ে এখনো যারা ব্যবসা করছেন, তারা পর্যন্ত কেউ মাত্র সাড়ে চার লাখ টাকা দিয়ে তাঁর কবরটি সংরক্ষণ করতে এগিয়ে আসেননি। বন্ধু কামালের আলোচনায় কোড-আনকোড অনেক কথাই এসেছে। যা থেকে একটা কথা এখন দিবালোকের মত সত্য তা হলো, কথাসাহিত্যিক মাহমুদুল হক মৃত্যু'র পরেও কোনো ঠিকানা পেলেন না। বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেও ঠিকানাহীন এক দিব্যকান্তি হলেন কথাশিল্পী মাহমুদুল হক।
জার্মান লেখক এরিক মারিয়া রেমার্কের বিখ্যাত উপন্যাস 'থ্রি কমরেডস' আর মাহমুদুল হকের উপন্যাস 'জীবন আমার বোন' এর মধ্যে আমি একটা অদ্ভুদ মিল খুঁজে পাই। রেমার্কের "থ্রি কমরেডস'এর আখ্যান প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও তার পরবর্তী জীবনাচার নিয়ে। আর মাহমুদুল হকের উপন্যাস 'জীবন আমার বোন' এর আখ্যান একাত্তরের মার্চ মাসের উত্তাল দিনগুলি নিয়ে, বিশেষ করে অপারেশান সার্চ লাইটের আগের সময়টুকু। দুটি উপন্যাসেই বিশেষ ঘটনার অন্তরালের মুহূর্তকে উপজীব্য করা হয়েছে।
মাহমুদুল হকের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস 'খেলাঘর' নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম ২০০৬ সালে নির্মাণ করেন 'খেলাঘর' চলচ্চিত্র। যেখানে যুদ্ধ ও ভালোবাসার যে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে তা চিরন্তন ভালোবাসার এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
------------------------
৭ ডিসেম্বর ২০১৮
২| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:০৮
রাজীব নুর বলেছেন: মাহমুদুল হক এর লেখা আমার ভালো লাগে। যদিও তার সব বই পড়া হয়নি। তবে পড়ে ফেলব।
৩| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৩
শেরিফ আল সায়ার বলেছেন: বাংলা সাহিত্যের দুজন নিরব সাহিত্যিক আছেন। একজন মাহমুদুল হক। আরেকজন শহীদুল জহির। দুজনের মধ্যে আবার মাহমুদুল হক আরও নিভু নিভু। অথচ দুজনে বাংলাদেশের সাহিত্যের অন্যতম সাহিত্যিক বলে আমি মনে করি।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৫৩
সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: উনার সম্পর্কে পত্রপত্রিকায় আলোচনা দেখেছি। কিন্তু কোনো বই পড়া হয়নি।