নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। মহাজোট একত্রে পেয়েছে ২৮৮টি আসন। যার মধ্যে আওয়ামী লীগ এককভাবে পেয়েছে ২৫৭টি আসন। মহাজোটের শরিকদের মধ্যে জাতীয় পার্টি পেয়েছে ২২টি আসন, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩টি, জাসদ ২টি, বিকল্পধারা ২টি, তরিকত ফেডারেশন ও জেপি পেয়েছে ১টি করে আসন।
অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে ৭টি আসন, যার মধ্যে বিএনপি এককভাবে ৫টি ও গণফোরাম পেয়েছে ২টি আসন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছে ৩টি আসন। সারা দেশে ২৯৯টি নির্বাচনী এলাকার ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে গোলযোগ ও অনিয়মের কারণে মোট ২২টি কেন্দ্র স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া গাইবান্ধা-৩ আসনের প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২ আসনের ফল স্থগিত রাখা হয়েছে। যেখানে বিএনপি এগিয়ে রয়েছে।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সব মিলিয়ে ২৬০টি আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। দলটি হেরেছে তিনটি আসনে। আওয়ামী লীগের পরাজিত তিন প্রার্থী হলেন—জিয়াউর রহমান (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২), আবদুল ওদুদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩) ও কাজী জাফর উল্লাহ (ফরিদপুর-৪)। এই তিন আসনে জিতেছেন যথাক্রমে বিএনপির আমিনুল ইসলাম, হারুনুর রশীদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন। নির্বাচন কমিশন বলছে, এবারের নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোট পড়েছে। অনিয়মের কারণে ১৬টি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করা হয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১৮ জন প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। এই নির্বাচনে বিভিন্ন দল থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মোট ৭৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। অন্যদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরাসরি নির্বাচিত নারীর সংখ্যা ২২ জন। এর মধ্যে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাসহ ১৯ জনই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত। এর বাইরে জাতীয় পার্টি থেকে দুজন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ থেকে একজন নারী নির্বাচিত হয়েছেন। এবারের নির্বাচনে নারী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৬৯ জন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৮৬টি আসনে ভোট পড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে ১৩টি আসনের ভোট ৯০ শতাংশেরও ওপরে। অন্যদিকে ৮০ শতাংশের নিচে ভোট পড়েছে ১১২টি আসনে। আর ৫০ শতাংশের নিচে ভোট পড়েছে মাত্র ৩টি আসনে।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার পেছনে যেসব কারণ রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন সেগুলো হল-
১. এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভেতরে দলীয় কোন্দল প্রায় জিরো পর্যায়ে ছিল। প্রত্যেক আসনে দলীয় নৌকা প্রতীকের জন্য দলের সবাই একত্রে কাজ করেছেন।
২. বিগত দশ বছরের ধারাবাহিক উন্নয়ন ও মেগা প্রজেক্টগুলো দৃশ্যমান হওয়ায় ভোটের হাওয়া আওয়ামী লীগ পুরোপুরি ক্যাশ করতে পেরেছে।
৩. সরকারি প্রশাসন পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন যুগিয়েছে।
৪. নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ শেষ সময় পর্যন্ত মাঠে সক্রিয় ছিল। ভোট গ্রহণ ও গণনা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে ছিলেন।
৫. তরুণ ভোটারদের অধিকাংশই নৌকার জোয়ারে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে।
৬. মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কারণে জনগণ আওয়ামী লীগের উপর আস্থা হারায়নি।
৭. দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যম আওয়ামী লীগের পক্ষে সক্রিয় ছিল।
অন্যদিকে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি'র চরম ভরাডুবির পেছনে যেসব কারণ রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন সেগুলো হল-
১. বিএনপি ভোটে গেলেও বিএনপি'র ভেতরে নেতৃত্বহীনতা ছিল চরম পর্যায়ে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে ড. কামাল হোসেন জোটকে নেতৃত্ব দেওয়ায় বিএনপি'র মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তা ভালোভাবে গ্রহণ করেনি।
২. প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত দলীয় কোন্দল মিটিয়ে একক প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দলটি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
৩. জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে আতাঁত করলেও বিএনপি জামায়াতকে ত্যাগ করতে পারেনি, যা সাধারণ ভোটাররা ভালোভাবে গ্রহণ করেনি।
৪. বিএনপি নির্বাচনী প্রচারে যতটা মাঠে ছিল, তারচেয়ে অলৌকিক শক্তিতে ভোট বিপ্লব ঘটানোতে বেশি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল, যা শেষ পর্যন্ত দলটির জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
৫. বিএনপি তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
৬. মামলা, হামলার ভয়ে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী এজেন্ট দিতে বিএনপি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
৭. বিএনপি'র প্রার্থীরা পর্যন্ত মাটি কামড়ে নির্বাচনের মাঠে না থেকে নিরাপদ দূরত্বে বসে কেবল কর্মীদের উপর ভরসা করেছে। নেতাদের এই পিঠ বাঁচিয়ে চলার ব্যাপারটি কর্মীদের মধ্যেও উক্তেজনা সৃষ্টি করতে পারেনি। বরং বুমেরাং হয়েছে। তারা সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে ব্যর্থ হয়েছে।
৮. বিএনপি'র কেন্দ্রীয় নেতাদের কিছু ফোনালাপ ফাঁস হওয়ায় তা কর্মীদের চাঙ্গা করার পরিবর্তে ডিফিউজ হতে সহযোগিতা করেছে।
৯. নির্বাচনী মাঠে বিএনপি'র প্রচার ও পোস্টার খুব একটা চোখে পড়েনি। যা নির্বাচনে বিরূপ ফলাফল এনেছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপি এখন ৩০ ডিসেম্বরের ভোট নিয়ে যতই নালিশ বা আপত্তি করুক না কেন, ভোটে সুস্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে তারা পরাজিত হয়েছে। বিএনপি সরকারি দলে থাকলে তাদের কৌশলও অনেকটা আওয়ামী লীগের বর্তমান কৌশলের মতই হতো। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ হয়তো ভোটের মাঠ থেকে বিএনপি'র মত এভাবে পলায়নপর হতো না। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভোটের মাঠে চেষ্টা চালিয়ে যেত। যা করতে বিএনপি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
অনেকেই আওয়ামী লীগের এই নিরঙ্কুশ বিজয়কে ৭০-এর নির্বাচনের সাথে তুলনা করেছেন। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে আওয়ামী লীগের এই বিজয়কে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চের নির্বাচনের সাথে তুলনা করতে চাই। স্বাধীনতার পর দেশের প্রথম সেই জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসনে বিজয়ী হয়েছিল। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৭৩.২০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। অন্যদিকে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৭৫ শতাংশের উপরে ভোট পেয়েছে।
১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে তখন আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সরকারের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ এসেছিল, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ে শেখ হাসিনা সরকারের সামনেও একইরকম অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যার মধ্যে প্রথম এবং শক্তিশালী চ্যালেঞ্জ হলো নিজের দলের নেতাকর্মীদের স্বেচ্ছাচারিতাকে কন্ট্রোল করা। দলীয় আধিপত্যকে কন্ট্রোল করাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। শক্ত প্রতিপক্ষ না থাকায় নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারণ করতে পারে।
এবারের নির্বাচন থেকে একটি সুস্পষ্ট বার্তা বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে। সেটি হল বাংলাদেশে এখন আর প্রধান দুটি দলের তকমার রেওয়াজটি নাই। বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে একেবারেই খাদের কিনারায় চলে গেছে। তবে আওয়ামী বৃত্তের বাইরে একটি উদার গণতান্ত্রিক দলের চাহিদা বাংলাদেশের সমাজে থেকেই যাবে। কিন্তু সেই চাহিদা পূরণ অদূর ভবিষ্যতে গড়ে উঠবে কিনা তা একমাত্র সময়ই বলতে পারে।
বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে এখন সবচেয়ে যেটি বেশি প্রয়োজন সেটি হল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চায় বিশ্বাসী হলে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকবে, যা দেশের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে সেই শুভবোধ যতক্ষণে উদয় না হবে, ততক্ষণ আমরা কেবল দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যাব। নতুবা শত প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।
-----------------------
৩ জানুয়ারি ২০১৮
২| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৬:৩১
নাহিদ০৯ বলেছেন: লিবিয়ার মুয়াম্মার গাদ্দাফি পর পর ৮ বার নির্বাচিত হয়েছিলেন। উনি একা একাই নির্বাচন দিতেন, একা একাই প্রতিপক্ষ দাঁড় করাতেন।
নিরঙ্গকুশ জয় পেতেন, কখনো কখনো কথিত বিরোধী কেও কিছু দিতেন। উনার রাজনৈতিক কৌশল এর ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নাই। বরং উনি দেশের ঊনয়নে যে পরিমাণ অবদান রেখেছিলেন তা গল্প করার মতই।
তারপরেও কি এমন কোন দেশ আছে যারা মুয়াম্মার গাদ্দাফি এর শাসন কামনা করবে?
রাজনৈতিক ভাবে কৌশলি তো কিম জন, শক্তি ও মেধায় কোন একনায়ক ই কম ছিলেন না। তারপরেও স্বপ্নেও এদের কে কেউ কামনা করে না।
৩| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:০৫
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর বিশ্লেষন করেছেন।
৪| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:৩৪
খাঁজা বাবা বলেছেন: ইহা কে যে নির্বাচন বলে বা সমর্থন করে সে গাধা অথবা স্বাধিনতা বিরোধী ভারতীয় দালাল।
একদম সোজা কথা, কোন প্যাচ নাই।
৫| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:৫১
মা.হাসান বলেছেন: I fully agree, we should not compare this election to the election of 1970, this is more like the election of 1973.
৬| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:২৮
কানিজ রিনা বলেছেন: ডাঃ মাহাথীর মোহাঃ এর সাথে তুলনা করে
প্রতিধ্বনি দেওয়া উচিৎ তাই নয় কি?
কিন্তু কেন যেন প্রতিধ্বনি বিজয় ধ্বনি দেওয়া
নিষেধ।
৭| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:৫৫
বাংলার মেলা বলেছেন: অনেক বিশ্লেষণ দিলেন। কিন্তু আমি জাতীয় পার্টির ব্যাপারে বিশেষভাবে ইন্টারেস্টেড। নৌকা ছিলনা, কিন্তু লাঙ্গল ছিল - এরকম ২৬ আসনের ২০ আসনেই জাপা জিতেছে। হেরেছে কেবল ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া - ৪,৬,৭, সিলেট- ২ এবং মৌলভীবাজার - ২ আসনে। এর বাইরে আরও ১৪৬ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল জাতীয় পার্টি, যেগুলোতে নৌকাও ছিল। আমি জানি একটি আসনেও লাঙ্গলের কাছে নৌকা হারেনি। কিন্তু সে আসনগুলোতে কেমন ভোট পেয়েছে এবং কততম হয়েছে, তার একটা পরিসংখ্যান পেলে বুঝা যাবে জাতীয় পার্টির অবস্থান কেমন।
৮| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:০৩
দুরমুশ বলেছেন: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ যে নির্বা্চন সকাল ৮টায় শুরু হ্ওয়ার কথা ছিল, তা শুরু হয় ২৯ ডিসেম্বর রাতে অর্থাৎ আ.লীগ, যুবলীগ, পুলিশ লীগ ২৯ ডিসেম্বর রাতেই ব্যালটে নৌকার সীল মেরে ব্যালট বাক্স ভরা শুরু করে। চরম ভোট ডাকাতির মাধ্যমে অবৈধ দখলদার সরকার আবারও ক্ষমতা দখল করলো।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৫:৫৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
মেগা প্রজেক্ট করেছে আওয়ামী লীগ? কাজ কর্ম করেন বলে তো মনে হয় না; একটা কাজ শুরু করেন, বিয়ে করেন।