নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি নাকি চোরাই রুটের যাত্রী পারাপার!

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:০৪

২০১২ সালের ১২ এপ্রিল!
কাঠমান্ডু থেকে ঢাকায় আসার আমার ফ্লাইট ছিল বিকাল ৫টায়। ইউনাইটেড এয়ার লাইন্সের উড়োজাহাজ। বিকাল ৪টা থেকে ইমিগ্রেশান করে ত্রিভূবন বিমানবন্দরে বসে ছিলাম। শোনা গেল, ঢাকা থেকে বিমান আসতে দেরি হচ্ছে। রাত ৭টায় কাঙ্খিত বিমান আসলো। ৮টার মধ্যে আমরা বিমানে উঠলাম। ৩০ মিনিট পর পাইলট ঘোষণা দিলেন, আপনারা সবাই নেমে যান। বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি আছে।

বিমানে আমরা ৩৬৮ জন যাত্রী ও ৮ জন ক্রু। এর মধ্যে ১৬৫ জন মালয়েশিয়া গামী ট্রানজিট যাত্রী। বাকি সবাই ঢাকার যাত্রী। আমরা বিমান থেকে আবার নেমে আসলাম। আমাদের একটি বিশেষ কক্ষে রাখা হলো। কারণ আমরা বিমানবন্দর ত্যাগ করা যাত্রী। আমাদের অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ নাই।

রাত ১১টায় আমরা আবার বিমানে উঠলাম। পাইলট ঘোষণা দিলেন, আমরা ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হচ্ছি। রাত ১১টা ৩০ মিনিটে পাইলট আরেকটি ঘোষণা দিলেন। বললেন, ঢাকা বিমানবন্দর ক্লোজড। মেরামত কাজের জন্য। আমরা চট্টগ্রামে নামার চেষ্টা করছি। চট্টগ্রামে আসার পর বিমানটি আকাশে প্রায় ৪০ মিনিট চক্কর দিল। একবার বঙ্গোপসাগেরর ভেতরে চলে যায়। আবার চট্টগ্রাম বন্দরের উপর পাক খেয়ে বিমানবন্দর ঘুরে আবার সাগরে চলে যায়। কিন্তু ল্যান্ড করে না। আমরা যাত্রীরা সবাই মহাচিন্তায় পড়ে গেলাম।

রাত ১টার দিকে বিমানটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে সফলভাবে অবতরণ করলো। তার আগে একটি ঘোষণা আসলো। ট্রানজিট যাত্রীরা আগে নেমে গেলেন। ১৫ মিনিট পর রাত ১.১৫টায় আমরা মাটিতে ফিরে আসলাম। বিমানবন্দর থেকে আমাদের হাঁটিয়ে দোতলার বিভিন্ন করিডোর ঘুরিয়ে মেইন রাস্তায় নিয়ে আসা হলো। আমাদের কাউকে কোনো ধরনের তল্লাশি করা হয়নি।

রাত আড়াইটায় লোকাল বাসে করে আমাদের চট্টগ্রামের স্টেশান রোডের হোটেল ইন-এ আনা হলো। সারারাত হাউকাউ। সকাল ৯টায় আবার আমাদের বিমানবন্দরে আনা হলো। আমরা সকাল ১০টায় একটা নতুন বিমানে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা রওনা হলাম। তারপর স্বাভাবিক নিয়মে আমরা আন্তর্জাতিক যাত্রী হিসেবে সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাসায় ফিরতে দুপুর সাড়ে বারোটা বাজলো।

কাঠমান্ডু থেকে ঢাকা ১ ঘন্টা ১০ মিনিটের পথ। আগের দিন দুপুর ৩টা থেকে পরদিন দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত পুরো সময়টা একটা বিভীষিকাময় সময় গেছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়ে নয়। আমার প্রশ্ন হলো-

১. কাঠমান্ডু থেকে বিমানটি ঢাকা না এসে চট্টগ্রাম গেল। ধরলাম ঢাকা বিমানবন্দর সত্যি সত্যি বন্ধ ছিল। কিন্তু একটি আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীরা বিনা তল্লাশিতে কীভাবে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে হোটেল ইন-এ আসলো?
২. যাদের মালয়েশিয়াগামী ট্রানজিট যাত্রী বলা হল, তারা কী সত্যি সত্যি মালয়েশিয়ার যাত্রী ছিল? নাকি তারাও চোরাইপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল? আর তাদের প্রবেশকে নিশ্ছিদ্র করতেই ওই নাটক করা হয়েছিল?
৩. চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে কী একটি চোরাই যাত্রী বহন করার রুট হিসেবে ব্যবহার করা হয়?
৪. পরদিন ১৩ এপ্রিল ২০১২, আমরা হোটেল ইন থেকে বিনা তল্লাশিতে আবার চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে থাকা উড়োজাহাজে ঢাকার উদ্দেশ্যে চড়েছিলাম। আমাদের ভেতরে কেউ যদি ছিনতাইকারী থাকতো, তাহলে কত ভয়ংকর ঘটনা ঘটতে পারতো?
৫. আমি সেই রাতে চট্টগ্রামের সাংবাদিক বন্ধুদের ঘটনাটি জানিয়েছিলাম। এবং সকাল নয়টায় তারা বিমানবন্দরে খোঁজখবর নিয়েছিল। কিন্তু তাদের আপডেট কোনো তথ্য আমার চোখে পড়েনি।
৬. বিমানে এধরনের বিশেষ ঘটনার ক্ষেত্রে বিমানবন্দরেই যাত্রীদের রাখার ব্যবস্থা থাকার কথা। কিন্তু সেটি না করে কোনো ধরনের পাসপোট বা টিকিট না দেখিয়ে, কোনো ধরনের তল্লাশি না করে আমাদের কীভাবে চট্টগ্রামের স্টেশান রোডের হোটেল ইন-এ আনা হলো? নাকি এর আড়ালে বড় ধরনের চোরাই ব্যাপার স্যাপার থাকে?
৭. কাঠমান্ডু টু ঢাকা না হয়ে বিমানটির কাঠমান্ডু টু চট্টগ্রাম করার পেছনে যত যুক্তি থাকুক, কিন্তু বিমান থেকে আমরা কোনো ধরনের তল্লাশিছাড়া হোটেল ইন-এ এসেছিলাম। একইভাবে যদি কোনো জঙ্গী কাঠমান্ডু থেকে চট্টগ্রাম হয়ে বাংলাদেশে বিনা তল্লাশিতে প্রবেশ করে থাকে, সেই দায় কার?

পরবর্তীতে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সে আমি আর কোনোদিন চড়ার সাহস পাইনি। আমার মনে হয়েছে, কাঠমান্ডু থেকে একই পদ্ধতিতে বাংলাদেশে যদি কোনো সন্ত্রাসী বা জঙ্গী প্রবেশ করতে চায়, তাহলে তাদের জন্য বিমান মাধ্যম ব্যবহার করে এধরনের সুযোগ করে দেবার জন্য আমাদের বিমান কর্তৃপক্ষই যথেষ্ঠ!

সেদিনের সেই বিমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী'র সাতটি পরিবার আমার সাথে ছিলেন। একজন কর্নেলের সাথে আমার স্মোক করতে গিয়ে কাঠমান্ডুতে থাকাকালীন পরিচয় হয়েছিল। নেপালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী'র একটি টিম নেপালি সেনাবাহিণীর সাথে একটি বিশেষ প্রশিক্ষণে ছিলেন। তাদের কয়েকজনের পরিবার ছুটি কাটাতে নেপালে গিয়েছিলেন। তারা সেদিন আমাদের সাথে ঢাকায় ফিরছিলেন।

আমি একই প্রশ্ন সেনাবাহিনীর সেই কর্নেল সাহেবকে করেছিলাম। তিনিও আমার মত এসব বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি। আমাকে বলেছিলেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা যে ল্যান্ড করতে পেরেছি, এজন্য মহান আল্লাহ'র কাছে শুকরিয়া করেন।

কিন্তু বিমান কর্তৃপক্ষের এধরনের ঘটনায় কোনো ধরনের জবাবদিহিতা করার নজির আমার চোখে পড়েনি। আপনাদের নজরে পড়লে বলুন।
--------------------
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯



মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৬:২০

সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন: রেজা ঘটক ভাই,


না ভাই, এই সম্পর্কে বিমান কর্তৃপক্ষকে কোন প্রকার জবাবদিহিতা করতে দেখিনি। যাদের থেকে এরা জবাবদিহিতার মুখোমুখি হবে তারাই তো জবাবদিহিতা থেকে হাজারো দূরে। আমাদের সাংবাদিকেরা এই সব দুর্নীতিকারীদেরকে যেখানে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করার কথা সেখানে এরা দুর্নীতিবাজদের কাজের প্রশংসা কপি করে পোস্ট করার দায়িত্ব নেয়।

জবাবদিহিতা একটি গণতান্ত্রিক দেশের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য যতটুকু জরুরি, আমাদের দেশে এই জবাবদিহিতা সেই পরিমাণে অনুপস্থিত।


যদি, সরকার মহল এই জবাবদিহিতার প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়, তাহলে এসকল অপকর্ম খুব দ্রুতই দূর হয়ে যাবে আশাকরি।


ধন্যবাদ রেজা ঘটক ভাই।

২| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: দরিদ্র দেশ গুলোতে এরকম হয়।

৩| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:৪৪

ডাব্বা বলেছেন: আজকে প্রথম শুনলাম। এটাতো একটা মেজর ইস্যু হওয়ার ক্থা।

৪| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৩৯

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: এতো ভয়াবহ ঘটনা!! B:-)

৫| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৬:০০

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
বড়ই চিন্তাযুক্ত হলাম পড়ে।
এমনটি হলে আমরা কি সভ্য জাতি হতে পারবো?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.