নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অমর একুশে বইমেলার সারসংক্ষেপ!

০৩ রা মার্চ, ২০১৯ ভোর ৫:২২

এবছর কাগজে কলমে অমর একুশে বইমেলা ৩০ দিনের হলেও আমি যেতে পেরেছি ২৮ দিন। ২৩ তারিখে শীতলক্ষা নদীতে নৌবিহারে গিয়েছিলাম আনিস ভাই'র নেতৃত্বে। আর ২৭ তারিখ বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় ফেরত এসেছিলাম। ২৮ দিন বইমেলায় ঘুরতে আমার মোটেও খারাপ লাগেনি। বরং বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছে, আড্ডা হয়েছে, নতুন বই নিয়ে কথা হয়েছে। এই স্মৃতিটুকুই সারা বছরের জন্য একটা সোনালী সময় হয়ে থাকলো।

অমর একুশে বইমেলায় যাদের উপস্থিতি খুব মিস করেছি, যেমন প্রকাশক মজিবর রহমান খোকা ভাই, কবি আসাদ মান্নান, কবি জুয়েল মোস্তাফিজ, কবি আহমেদ স্বপন মাহমুদ, কবি অতনু তিয়াস, কবি শতাব্দী কাদের, কবি তারেক মাহমুদ, নাট্যকার আমিনুর রহমান মুকুল, গল্পকার খোকন কায়সার, গল্পকার রোকন রহমান, কবি শামীম রেজা, মিলটন মামু, বন্ধু ইফতেখার ডন, বন্ধু মাসুদ, বন্ধু তুহিন (এক্সএল), বন্ধু জনি, বন্ধু নাহিদ, বন্ধু পুলক, বন্ধু রিয়াজ, বন্ধু বিপ্লব, বন্ধু নয়ন প্রমুখ।

এবারের বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের লেকের পারের মূল অংশটা যেমন সচল ছিল, তেমনি উদ্যানে ঢুকতে প্রথম অংশটা ছিল চূড়ান্ত ফ্লপ। বিশেষ করে এক্সিট গেটের দিকে যেসব স্টল ছিল। বাংলা একাডেমি অংশে বহেড়াতলার লিটল ম্যাগাজিন চত্বরকে চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র হিসেবে সেখানে ছোটকাগজ ছাড়াও বারোয়ারি দোকান দিয়ে রোহিঙ্গা বস্তি বানানো হয়েছিল। যা ছিল ছোটকাগজের প্রতি বাংলা একাডেমির চূড়ান্ত ষড়যন্ত্র ও অবহেলার সামিল।

অমর একুশে বইমেলায় সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তর, ইনস্টিটিউটগুলো'র স্টল বরাদ্দের কাজটি প্রতিবছর খামাখা করা হয়। এসব স্টলে যারা ডিউটি করেন, তারা সঠিকভাবে কোনো তথ্য পর্যন্ত ঠিক মত দিতে পারেন না। সরকারি চাকরি করেন বলেই এদের শরীরে অনেক তেল। পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়েই এরা সময় কাটানোর একটা মোক্ষম সুযোগ পায়। বইমেলায় এসব স্টল বরাদ্দের কোনো অর্থ আজপর্যন্ত আমি খুঁজে পাইনি।

অমর একুশে বইমেলায় নোটবইয়ের দোকান কেন খুলতে দেওয়া হয়, এটা আমার মাথায় আসে না। এরা মূল বইমেলার জন্য সবসময় দূষনীয় বলে মনে হয় আমার কাছে। কিন্তু এদের বিক্রি বাট্টা নতুন ও সিঙ্গেল স্টল পাওয়া প্রকাশকদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এবারও বইমেলার বাইরে টিএসসি থেকে শাহবাগ পর্যন্ত পুরানো বইয়ের দোকান বসতে দেখা গেছে। সেখানে যেটা ধরবেন একশো টাকার চিৎকারও শোনা গেছে।

বাংলা একাডেমিকে অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা করার জন্য এখন নতুন বিভাগ খুলে অভিজ্ঞ লোকবল নিয়োগ দেওয়ার কথা বিবেচনা করতে হবে। কারণ একাডেমি'র কর্মকর্তা কর্মচারীরা বইমেলা'র এই এক মাস তাদের নির্ধারিত কাজটি ফাঁকি দিয়ে বইমেলায় দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু তাদের বইমেলায় দায়িত্ব পালন করার জন্য সরকারি অর্থে নিয়োগ দেওয়া হয় নাই। বাকি এগারো মাস তারা কী করে সেই খবর আমরা জানি। নাকে তেল দিয়ে বাকি এগারো মাস এরা জাবর কাটেন। যা খুবই দুঃখজনক।

বাংলা একাডেমিতে সারা বছরের জন্য বইমেলা পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন, বই যাচাই বাছাই, প্রকাশকদের সমস্যা ও তার সমাধানের জন্য এখন অবশ্যই আলাদা বিভাগ চালু করা সময়ের দাবি। সেই কাজটি না করে এবং নিজনিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করে তারা বইমেলাকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যের গবেষণা ও প্রকৃত উৎকর্ষ সাধনের জন্য যেসব কাজ করার কথা, সেখানে শতভাগ ফাঁকিঝুকি করে সময় নষ্ট করার একটা রেওয়াজ পরিলক্ষিত হচ্ছে।

বাংলা একাডেমি থেকে যে কয়েকটি পত্রিকা প্রকাশ করা হয়, সেগুলো'র মান এখন বাজারের ছোটকাগজের চেয়েও অধঃপতনসম বলে প্রতীয়মান। সেদিকে একাডেমি'র কোনো নজর নাই। আমাদের বঙ্গভবন ও গণভবন এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনে যেমন একটা তালিকা রয়েছে, কোনো অনুষ্ঠানে সেই তালিকা ধরে নিমন্ত্রণ করা হয়, বাংলা একাডেমিতেও সেরকম একটি আত্মীকরণ তালিকা রয়েছে কবি-লেখকদের। সেই স্বজনপ্রীতির তালিকা অনুসারে অখাদ্য লেখা নিয়ে একাডেমির পত্রিকাগুলোর পাতা ভরতি করাটা একটা রেওয়াজে পরিনত হয়েছে। সেখানে নতুন লেখক, নতুন গবেষণা, নতুন আলো ছড়ায় এমন লেখার দেখা পাওয়া যায় না। যা খুবই দুঃখজনক।

অমর একুশে বইমেলা'র সময় একাডেমি'র মূল মঞ্চে বিশাল বাজেটের আড়ালে যে আলোচনা অনুষ্ঠান করা হয়, সেটিতে কোনো কবি-লেখক, সাহিত্যপ্রেমিদের কখনোই দর্শক সারিতে দেখা যায় না। চূড়ান্ত ফ্লপ সেই অনুষ্ঠানটি প্রতিবছর করার পেছনে একাডেমি'র এত আগ্রহের কারণ অনুসন্ধান করা জরুরি।

অমর একুশে বইমেলা থেকে একাডেমি কত টাকা আয় করলো, কত টাকা ব্যয় করলো, তার কোনো হিসাব বা শ্বেতপত্র কখনো প্রকাশ করা হয় না। দেশের সকল সরকারি দপ্তর যেখানে চূড়ান্ত দুর্নীতিতে ভরপুর, সেখানে বাংলা একাডেমি যে মোটেও ফেরেশতা নয়, সেটি অনুমান করতে গবেষণা করতে হয় না। নতুবা এগারো মাস ঘোড়ার ঘাস কাঁটার পর কেবলমাত্র বইমেলা আয়োজনে একাডেমি'র কেন এত আগ্রহ? দুর্নীতি দমন কমিশনের উচিত বাংলা একাডেমি'র বইমেলার আয়ব্যয়ের হিসাবের একটা জবাবদিহিতা চাওয়া।

আগামীতে ছোটকাগজ বা লিটল ম্যাগাজিনের স্টল বরাদ্দ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেওয়া হোক। উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশের বেকার অংশটিকে লিটল ম্যাগাজিন চত্বর করা যেতে পারে। অমর একুশে বইমেলা উদ্যানের লেককে ঘিরে পুরো মাঠকে কাজে লাগাতে হবে। একাডেমি থেকে উদ্যানে ঢোকার মুখের চূড়ান্ত ফ্লপ অংশকে (এক্সিট গেট সংলগ্ন) স্টলগুলোকে লেকসাইডে অ্যাকোমোডেট করার ব্যবস্থা করতে হবে।

বাংলা একাডেমি'র উচিত প্রকাশকদের বছর জুড়ে বইপ্রকাশে বাধ্য করা। কারণ শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারি মাসে বই প্রকাশ করার কারণে গুণগত মানসম্পন্ন বই ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। আর বইমেলা পুরো ফেব্রুয়ারি মাস না করে ফেব্রুয়ারি'র দ্বিতীয় সপ্তাহে শুরু করে (১০ বা ১১ ফেব্রুয়ারি) ২১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলা শেষ করা উচিত। তাহলে একুশের চেতনার সাথে বইমেলা'র সৌন্দর্য রক্ষা পাবে। মাসব্যাপী বইমেলা'র কারণে ফেব্রুয়ারি'র চতুর্থ সপ্তাহে প্রতি বছর ঝড়বৃষ্টির হামলা মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

অমর একুশে বইমেলা শুধু রাজধানী ঢাকায় আয়োজন না করে সারা দেশের বিভাগীয় প্রধান শহরে কিংবা সম্ভব হলে জেলা সদরে আয়োজন করতে হবে। অমর একুশে বইমেলাকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে না পারলে সবকিছু'র ঢাকামুখী যে প্রবনতা, সেই জগাখিচুরি নীতির কারণে বইমেলায় ছুটির দিনে কোনো স্টলে বই দেখার সুযোগ থাকে না। বইমেলা জেলায় জেলায় ছড়িয়ে দিতে পারলে সারা দেশের মানুষকে আর কষ্ট করে ঢাকায় আসতে হবে না।

বাংলা একাডেমিতে আলাদা বইমেলা বিভাগ চালু হলে সেই বিভাগ সারা দেশে বইমেলা আয়োজনের ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে পারবে। সারা দেশে যাতে স্থানীয়ভাবে প্রকাশনা শিল্প বিকাশলাভ করতে পারে সেদিকে নজরদারি করা ও উৎসাহ দেওয়ার কাজটি বাংলা একাডেমিকে করতে হবে। প্রকাশকরা বিভিন্ন জেলায় তাদের নতুন নতুন শাখা চালু করে প্রকাশিত বই সেখানে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবে।

বইমেলা নিয়ে প্রকাশকদের সাথে বাংলা একাডেমি'র সারা বছর নিয়মিত বৈঠক ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য আলাদা বইমেলা বিভাগ খুলতে হবে। এর কোনো বিকল্প নাই। আমাদের বড় বড় প্রকাশকগণ জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি'র প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত কলকাতা বইমেলায় অংশ নেন। ফলে ওই সময় প্রথম দুই সপ্তাহ অমর একুশে বইমেলা চূড়ান্ত ফ্লপ থাকে। এসব বিষয় একাডেমিকে বুদ্ধিমত্তার সাথে বিবেচনা করতে হবে।

যে কারণে অমর একুশে বইমেলা'র সময় ১০ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি এই ১২ দিনই যথেষ্ঠ। যদি আমরা সারা দেশে অমর একুশে বইমেলা ছড়িয়ে দিতে চাই এবং ঢাকার জটলা কমাতে চাই, চূড়ান্তভাবে ভালো মানসম্মত বইয়ের প্রকাশনা চাই, তাহলে ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী বইমেলা বন্ধ করে সারা বছর বই প্রকাশ ও সারা দেশে বইমেলা ছড়িয়ে দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নাই।

অমর একুশে বইমেলা নিয়ে বাংলা একাডেমি'র কোনো চূড়ান্ত মাস্টার প্লান নাই। প্রায় চার দশক ধরে একটি বইমেলা হচ্ছে অথচ এটি নিয়ে একাডেমি'র আলাদা কোনো ভাবনা নাই, যা সত্যি সত্যিই খুব দুঃখজনক। মাস্টার প্লান ছাড়া জগাখিচুরি মার্কা বইমেলা করে খামাখা কাগজ নষ্ট করার কোনো মানে নাই।

এবছর অমর একুশে বইমেলায় মোট ৪ হাজার ৮৩৪টি নতুন বই প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু গুণগত ও মানসম্প্ন্ন বই দুইশোটি হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। তাহলে এত অখাদ্য কুখাদ্য প্রকাশের সুযোগ দিয়ে সাহিত্যের কী লাভ হচ্ছে শুনি? আর কত গালাগালি করলে বাংলা একাডেমি'র ঘুম ভাঙবে শুনি? বাংলা একাডেমি আমাদের চূড়ান্ত আশ্রয়স্থল। এই প্রতিষ্ঠানটিকে এভাবে দিনে দিনে ধ্বংস হতে দেওয়া যায় না।

--------------
৩ মার্চ ২০১৯

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ ভোর ৫:২৯

নাহিদ০৯ বলেছেন: আপনি বইমেলার কথা লিখতে গিয়ে বাংলা একাডেমী এর শ্বেতপত্র তুলে ধরেছেন প্রায়।

২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ সকাল ৭:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: আমার কথা তো লিখলেন না? এই ছোট ভাইকে মিস করেন নাই?
উত্তারাধিকার এর খবর কি বাংলা একাডেমির?
বাংলা একাডেমি অবশ্যই দূর্নীতি করে।

৩| ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ সকাল ৯:২৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


মেলা নিয়ে আপনার ভাবনা ঠিক আছে। বিয়ে করেছেন নাকি?

৪| ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২৯

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: খুব ভালো লাগলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.