নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিভেদ সৃষ্টি কর এবং শাসন কর!

৩০ শে মে, ২০১৯ রাত ১২:৫৯

বিভেদ সৃষ্টি কর এবং শাসন কর!
ভারত শাসনে ইংরেজ শাসকগণ বিভেদ নীতি অনুসরন করেছিলেন। ব্রিটিশদের সেই মায়াজালে ভারতবর্ষের হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের বেশ কিছু মানুষ প্রলুদ্ধ হয়েছিলেন। ভারতভাগের জন্য তারা সকলেই হয়তো খলনায়ক ছিলেন না, কেউ কেউ হয়তো নায়ক ছিলেন। কিন্তু ইংরেজদের দেখানো সেই মায়াজালের কিছু কিছু খণ্ডিৎ কল্যাণের মোহে অথবা কোথাও নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থসিদ্ধির আশায় তারা ইংরেজ শাসকদের বিভেদ নীতিকে সমর্থন করেছিলেন। উল্টো এই বিভেদ নীতির চরম পরিণাম সম্পর্কে তারা মোটেও সজাগ এবং সতর্ক ছিলেন না। এই বিভেদনীতিই যে একদিন বিস্তৃত হয়ে দেশভাগকে বাস্তব করে তুলেবে, সেই বোধ তাদের মধ্যে ছিল না। ফলে ইংরেজদের বিভেদনীতি কার্যকরভাবে সফল হয়েছিল।

১৮২১ সালে ভারত যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্তৃত্বাধীন তখন এক ব্রিটিশ অফিসার ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে বলেছিলেন, ভারতবর্ষে রাজনৈতিক, অসামরিক ও সামরিক প্রশাসনের ক্ষেত্রে ''বিভেদ সৃষ্টি কর এবং শাসন কর'এমন বিভেদনীতি অনুসরন করা উচিত। রোমানদের মত ইংরেজ শাসকদেরও ভারতবর্ষে ভেদনীতি অনুসরন করে রাজ্য শাসন করা প্রয়োজন।

১৮৮৫ সালে থিওজোফিক্যাল সোসাইটির কিছু "অকাল্ট" সদস্য মিলে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। এঁরা হলেন অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম, দাদাভাই নওরোজি, দিনশ এদুলজি ওয়াচা, উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, মনমোহন ঘোষ, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে ও উইলিয়াম ওয়েডারবার্ন প্রমুখ। পরবর্তীকালে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে জাতীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব দান করেছিল। কিন্তু ইংরেজদের বিভেদনীতি ততদিনে ভারতবর্ষে পাকাপাকি হয়ে গিয়েছিল।

১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাব এবং ১৯০৬ সালে লর্ড মিন্টো'র মুসলমানদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তাদের কাছে দেওয়া পৃথক প্রতিনিধিত্বের প্রতিশ্রুতি বঙ্গভঙ্গকে বাস্তবায়ন করতে উসকে দিয়েছিল। যে কারণে ১৯০৬ সালে ইংরেজদের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলিম লীগের জন্ম হয়। পাশাপাশি একই বছরে (১৯০৬ সালে) গঠিত হয় হিন্দু মহাসভা । একদিকে ইংরেজদের সহযোগিতায় নবাব সলিমুল্লাহ'র নেতৃত্বে মুসলিমরা অন্যদিকে সভারকারের নেতৃত্বে হিন্দুরা ভারতবর্ষে দু'ভাগে ভাগ হয়ে পড়ে।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন-সংগ্রামে ইংরেজ শাসকরা যেহেতু উভয় বাংলা থেকে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় আন্দোলনের মুখোমুখি হয়েছিল, তাই তারা বিভেদনীতি অনুসরন করে প্রথমে বাংলাকে ভাগ করার কৌশল নিয়েছিল। আন্দোলনকে দুর্বল করার জন্য বিভেদনীতি খুবই কার্যকর হয়েছিল। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ততদিনে ভারতকে গিলে ফেলেছিল। ইংরেজ শাসকরা এই সুযোগটিকেই পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছিল। যে কারণে এটা প্রমাণিত সত্য যে, দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগের নীল নকশা ইংরেজ শাসকরা দীর্ঘদিন আগে থেকেই লালন করেছিল।

১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্টের আগে বহু বহু বছর ধরে ইংরেজদের এই বিভেদনীতির ভিত্তিতে নাটকের মহড়া চলছিল। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ধীরে ধীরে এর জন্য প্রস্তুতিপর্ব চালিয়েছিল। তাদের বিষের বাঁশির সুরের তালে তালে প্রলয়নাচন নেচেছিল ভারতবর্ষের মানুষ। যে কারণে দেশভাগ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল।

শেক্সপিয়ারের 'মার্চেন্ট অব ভেনিস' নাটকে আমরা সাইলক নামে একজন ইহুদিকে নির্দয় ঘুষখোর রূপে দেখতে পাই। ইংরেজ শাসকরা ভারতবর্ষে তেমনি হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে কয়েক ডজন সাইলককে লালন-পালন করতো। ভারতভাগের নেপথ্যে এসব সাইলকদের কথা ইতিহাস ঘাটলেই চোখে পড়ে।

দেশভাগ পরবর্তী সেই বিষবৃক্ষ এখনো গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় বহমান। বাংলাদেশে এখন যে শাসন চলছে, সেখানেও ব্রিটিশদের শেখানো সেই 'বিভেদ সৃষ্টি কর এবং শাসন কর' নীতিকে পুরোপুরি অনুসরন করা হচ্ছে। একটা জাতিকে বিভেদ করতে পারলেই শাসকদের উদ্দেশ্য সফল হয়। এ বিষয়ে একটি গ্রিক প্রবাদ মনে পড়ছে- ''একটি জাতিকে বিভেদ করতে পারলেই সেই জাতির ধ্বংস অনিবার্য'।

-----------------
৩০ মে ২০১৯






মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মে, ২০১৯ ভোর ৫:১২

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
এটা সব যুগের জন্যই সত্য।

২| ৩০ শে মে, ২০১৯ ভোর ৬:০২

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
তাদের একটি সূত্র ছিল। ডিভাইড এন্ড রুল!

৩| ৩০ শে মে, ২০১৯ সকাল ৭:১৪

দ্যা প্রেসিডেন্ট বলেছেন:

কংগ্রেস ছিল অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের চায়ের আড্ডাস্থলের মাধ্যম।

৪| ৩০ শে মে, ২০১৯ সকাল ৭:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: ভাই কেমন আছেন?
বাংলাদেশের লেখকদের মানসিকতা নিয়ে একটা পোষ্ট দেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.