নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'হরিবোল\' বিহাইন্ড দ্য স্টোরি- ৪

০৭ ই জুলাই, ২০১৯ সকাল ৭:২০

৩১ মার্চ ২০১৭ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আমরা শুটিংয়ের ফাইনাল মিটিং করলাম। ১ এপ্রিল সবাই যার যার মত প্রস্তুতি নেবে। ২ এপ্রিল সকাল ৭টার গাড়িতে আমরা পিরোজপুর রওনা হবো। সেদিন মিটিংয়ে আর্টিস্টদের স্ক্রিপ্ট দিয়ে দিলাম। যার যার কস্টিউম ও প্রপস যদি কিছু বাকি থাকে নিজ দায়িত্বে ম্যানেজ করবে। ১ এপ্রিল আমরা প্রোডাকশনের কয়েকজন কিছু সময়ের জন্য চূড়ান্ত একটা মিটিং করবো। তাছাড়া ক্যামেরা হাউজ থেকে জিনিসপত্র কালেক্ট করতে হবে।

দোলা পরিবহণের অভিজিৎ দাকে ফোন করে টিকিট কনফর্ম করলাম। প্রোডাকশানে আমি, সেলিম, প্রণব, জাহিদ, ববি পাঁচজন। আর্টিস্ট হিসেবে ফয়সল, ইকতার, তৃপ্তি এই তিনজন, ক্যামেরা ইউনিটে মোস্তাফিজ, জয়, আবির ও সোহাগ এই চারজন। এবং স্থির চিত্রের জন্য চিন্ময় চক্রবর্তী। মোট ১৩ জনের টিম। আনলাকি থার্টিন।

সকাল ৭টায় আমাদের বাস ছাড়বে সায়েদাবাদ থেকে। ৭টার আগেই সবাইকে বাসস্ট্যান্ড আসতে হবে। সবাইকে কল করে ঠিক মত সময় উঠানোর জন্য সারারাত জাগিয়ে রাখা হলো ববিকে। ভোর ৫টা থেকে ববি সবাইকে ফোন করে উঠিয়ে দেবে। সেলিমের বাসা সায়েদাবাদের কাছে হওয়ায় সেলিম উঠতে চায় ৬টায়। ববিকে বললাম, সবাইকে ফোন করে তারপর আমাকে জানাবি।

আমি নিজে সারারাত ঘুমাইনি। স্ক্রিপ্টে চোখ বুলালাম। গল্পের আগা মাথা কিছুই হয়নি। কিন্তু আমরা শুটিংয়ে যাচ্ছি! মনে মনে নিজেকে প্রবোদ দিলাম, আগে শুরু করি। পরে যা হবার হবে! সাড়ে চারটায় আমি ববিকে ফোন করলাম। ঘুমাইতে পারলি একটুও? ববি বললো, না দাদা! ঘুম হয় নাই। বললাম, গাড়িতে বসে ঘুমাইস। তুই ফ্রেস হয়ে একজন একজন করে সবাইরে উঠানো শুরু কর। আমি ফ্রেস হয়ে রেডি হচ্ছি।

বাংলামটর থেকে প্রণব আর জাহিদ আমাকে তুলে নেবে। আমাদের সাথে আরো যোগ দেবে মোস্তাফিজ। পৌনে ছয়টায় প্রণব ফোন দিয়ে বলল, ভাই বাংলামটর সিগন্যালে খাঁড়ান। আমি সিগন্যালে গিয়ে মোস্তাফিজকে জানালাম। মোস্তাফিজ বললো, ভাই ৫ মিনিট লাগবে। আমি জয়কে ক্যামেরার জিনিসপত্র দিয়ে সিএনজিতে তুলে দিচ্ছি।

কিছুক্ষণ পর জাহিদ ফোন করলো, ভাই আপনারা সিগন্যালে দাঁড়ান। আমরা ৮ নাম্বার বাসে। ফার্মগেট ক্রোস করছি। ৩/৪ মিনিট লাগবে। বাংলামটর সিগন্যাল থেকে আমি আর মোস্তফিজ সেই বাসে উঠলাম। বাসে উঠে বসার পর সেলিম ফোন দিল, ভাই আপনারা কদ্দুর। কাউরে তো দেখি না। আমি একা আইসা বইসা আছি। জবাবে বললাম, ববি, ফয়সাল আর ইকতার অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছাবে। তুই তৃপ্তিকে একটা ফোন করে কাউন্টার বলে দে। দোলা'র কিন্তু দুইটা কাউন্টার।

সাড়ে ছয়টার মধ্যে আমরা সবাই সায়েদাবাদ পৌঁছে গেলাম। আমি সেলিমকে বললাম, সবাই নাস্তা খেয়ে গাড়িতে উঠবো। তুই সবাইরে নিয়ে নাস্তা কর। সেলিম আমাকে বললো, ভাই আপনার সাথে একটা কানকথা আছে! আমি কইলাম, তুই আগে সবাইরে নাস্তা করা। পরে শুনবো তোর কথা। সবাই নাস্তা খাচ্ছে কিন্তু ক্যামেরার সোহাগ নাস্তা খাবে না। কাহিনী কী? সোহাগ কইলো, ভাই আমি এত সকালে কিছু খাইতে পারি না। কইলাম, তুমি কিন্তু মাওয়া ঘাট ছাড়া আর কিছু খাওয়ার সুযোগ পাবা না।

সেলিমকে বললাম- কয়েকটা পানির বোতল আর আর কিছু শুকনা খাবার নে। আর পদ্মায় কিন্তু ক্যামেরা ওপেন করবো। সবাইকে বলে দিস। বাসে আমরা যেভাবে বসলাম- ইকতার আর তৃপ্তি একসাথে। ফয়সল আর চিন্ময় একসাথে। সেলিম আর প্রণব একসাথে। জয় আর আবির একসাথে। জাহিদ আর ববি একসাথে। আমি আর মোস্তাফিজ একসাথে। সোহাগ নাস্তা করেনি বলে ওরে সিঙ্গেল বসানো হলো।

মাওয়া থেকে পদ্মায় যাবার পথে আমি কী কী ক্যামেরায় ধরতে চাই, তা মোস্তাফিজের সাথে সারাপথ শেয়ার করলাম। মাঝে মাঝে সেলিমকে আমার সাথে বসিয়ে প্লান করি। সেলিমকে বললাম, তুই জাহিদ, প্রণব আর ববিকে নিয়ে পদ্মায় বসে শর্ট ডিভিশান করে ফিলবি। চিন্ময়কে বললাম, তুমি সকল ব্যাকগ্রাউন্ডের ছবি তুলবা।

মাওয়া ঘাটে গিয়ে আমাদের লঞ্চে পদ্মা পার হতে হবে। আমরা সেই সুযোগটি কাজে লাগাবো। লঞ্চে উঠেই আমরা লঞ্চের পেছনের ছাদের দখল নিলাম। ক্যামেরা অন করলাম। যেভাবে প্লান করেছি সেভাবে শুট শুরু করলাম। অন্যরা সবাই বিভিন্ন ধরনের ছবি তুলছে। কেউ সেলফি তুলছে। সবাই খুব হাসিখুসি। আমি চাই এই হাসিখুশি ভাবটা সবার মধ্যে থাকুক। চিন্ময় সবার সেই খুশি ক্যামেরাবন্দি করলো।

লঞ্চে ওপারে যাবার পর আবার আমরা বাসে উঠলাম। সেলিম বললো, ভাই এবার আপনার পাশে জাহিদ বসবে। জিজ্ঞেস করলাম- কাহিনী কী? সেলিম কইলো, জাহিদকে তো কোনো ক্যারেক্টার দেন নাই। যাইতে যাইতে ওর জন্য একটা ক্যারেক্টার বানান। কইলাম, আইচ্ছা। জাহিদ এসে আমার কাছে বসলো। মোস্তাফিজ গিয়ে ববি'র সাথে বসবে, তার আগেই ববি গিয়ে ফয়সলের সাথে বসেছে। অগত্যা চিন্ময় আর মোস্তাফিজ একসাথে বসলো।

জাহিদকে বললাম, তুই একটা পাগলের চরিত্র করতে পারবি? জাহিদ বললো, ভাই আপনি একটু ধারণা দেন। কইলাম- তুই কোনো পাগলকে কখনো ফলো করছিস? জাহিদ কইলো, আমাদের বাড়ির পাশে একজন পাগল ছিল। তার অনেক কীর্তিকাণ্ড দেখছি। কইলাম, কেমন সেই কীর্তিকাণ্ড বল? জাহিদ কইলো, ভাই আপনার যেমন লাগবে, তাই বলেন। আমি ট্রাই করুম।

জাহিদকে বললাম, এখন থেকে তুই ঝড়ু পাগলা। তোর বয়স বাড়ছে। কিন্তু তোর বুদ্ধি বাড়ে নাই। তুই এখনো বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করোস। বাচ্চারা সবাই তোর বন্ধু। ওদের নিয়েই তোর কারবার। তুই যে চোখ মারতে পারোস, এইটা একটু প্রাকটিস কইরা আমারে দেখা। জাহিদ কইলো- ভাই সময় মত কইরা দেখামুনে। এখন ঘুম আসতেছে!

সেলিম এসে জাহিদকে উঠিয়ে দিয়ে কইলো, তুই প্রণবের সাথে বয়। বসের সাথে আমার কথা আছে। জাহিদ গিয়ে প্রণবের সাথে বসলো। সেলিম আমার পাশে বসলো। সেলিম কইলো, ভাই ইকতার তো সিট ছাইড়া একদম নড়ে না। তৃপ্তিকে পাইয়া ও তো আমাগো কথা একদম ভুইলা গেছে। আমি কইলাম, এইটা আমি শিখিয়ে দিছি। ওদের ইনটেমিসিটা খুব দরকার। নইলে শুটিংয়ের সময় ওদের সম্পর্কটা ঠিক ধরা পড়বে না। তুই ইকতারকে কোনো ধরনের ডিসটার্ব করবি না। সেলিম কইলো, ঠিক আছে বস। আপনি আর ববি তো ঘুমান নাই। এবার একটু ঘুমাই নেন।

কইলাম, আমরা তো প্রায় কাছাকাছি এসে গেছি। এখন ফোন করে জানতে হবে বাসস্ট্যান্ড কে কে আসছে। তুই তোর সিটে যা। প্রণবকে আমার কাছে পাঠিয়ে দে। আমি এমদাদ ভাইকে ফোন করলাম। আমরা মধুমতি সেতু ক্রোস করতেছি। তুমি কোই? এমদাদ ভাই জানালো, তারা বাসস্ট্যান্ড বসে আছে। জিগাইলাম ভ্যান কয়টা আনছো? আমরা কিন্তু ১৩ জন। দুইটা ভ্যান লাগবে শুটিংয়ের জন্য। আর লাগেজের জন্য লাগবে চারটা। এমদাদ ভাই কইলো, ভ্যান ৮টা আছে। লাগলি আরো নেওয়া যাবে। সমস্যা নাই।

নতুনবাজার পৌঁছে আমরা সবাই বাস থেকে নামলাম। এমদাদ ভাই'র সাথে এসেছে মনোজ কাকু, বিধানদা, উৎস (এমদাদ ভাই'র ছেলে), শুভ (মেজআপা'র ছেলে)। বাস থেকে আমাদের লাগেজ নামানো হলো। সবকিছু ভ্যানে উঠানোর পর সবার সাথে পরিচয়পর্ব হয়ে গেল। ভাঙা ব্রিজ পর্যন্ত আমরা হেঁটেই গেলাম।

ভাঙ্গা ব্রিজ ক্রোস করে দুইটা ভ্যান শুটিংয়ের জন্য রেখে গোটা টিম এমদাদ ভাইকে নিয়ে বাড়ি চলে যেতে বললাম। শুধু ক্যামেরার চারজন, আমি আর চিন্ময় থাকলাম। সাইকেল টিমকে থাকতে বলেছিলাম ভাঙা ব্রিজের সামনে। এমদাদ ভাই কইলো, সবাই এখন স্কুলে। তারা বিকালে আসবে।

মোস্তাফিজ বললো, ভাই সাইকেলের চাকার কিছু শট নিয়া রাখি। ভাঙা ব্রিজের সামনে একজন সাইকেল ম্যান পাওয়া গেল। তারে সামনে রেখে আমরা সাইকেলের চাকার কিছু শট নিতে থাকলাম। দুপুর একটা নাগাদ আমরা বাড়িতে পৌঁছালাম। এমদাদ ভাইকে বললাম, আমি সবাইকে নিয়ে বাগানে যাচ্ছি। সবাই এখন ইচ্ছামত ডাব খাবে। তুমি কাউরে নারকেল গাছে উঠাও!

সবাই ইচ্ছামত ডাব খাইলো। আমার বড় ভাই (দাদা) এসে সবার সাথে পরিচিত হলো। বললাম, ১২ জনের থাকার ব্যবস্থা আগে ফাইনাল করো। তারপর আমরা গোছল করে খাবো। ক্যামেরা্ ইউনিটের চারজন মোস্তাফিজের নেতৃত্বে থাকবে বড় আপার ঘরে। তৃপ্তি থাকবে মৌরীর (বড় ভাই'র ছোট মেয়ে) সাথে মৌরীর রুমে। দাদা একটা ঘর ছেড়ে দিছে। এখানে যে রুমে খাট আছে সেখানে থাকবে ফয়সল, ইকতার, চিন্ময় আর ববি। অন্যরুমে ফ্লোরিং করবে সেলিম, প্রণব আর জাহিদ। আর আমি থাকবো পুরান বাড়িতে বাবা-মা'র খাটে।

আমি বাড়িতে গেলে সবসময় বাবা-মা'র খাটে ঘুমাই। সবাইকে থাকার জায়গা দেখিয়ে দিয়ে সেলিমকে বললাম, গোসল, দুপুরের খাওয়া রেস্ট সবমিলিয়ে ৪টা পর্যন্ত সবার ছুটি। ঠিক চারটায় আমি ক্যামেরা অন করবো। শুটিংয়ের গোল্ডেন টাইমটা আমরা কিছুতেই নষ্ট করবো না। এর মধ্যে তুই সবাইকে রেডি করবি। তোরা এখন গোসল-খাওয়া রেস্ট এসব করে নে, যা।

চিন্ময়-ফয়সল-ইকতার আর ববিকে নিয়ে আমি বাগানে থেকে গেলাম। আমাদের একটা জরুরি কাজে প্লান করার জন্য। মোস্তাফিজকে বললাম, ঠিক চারটায় কিন্তু ক্যামেরা ওপেন করবো। তুমি পারলে একটা ঘুম দিও। এমদাদ ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম- দুপুরে সবাই কী খাবে? এমদাদ ভাই বললো, অনেক মাছ ধরে রাখছি। মাছের আইটেম আছে দুই তিনটা। ডিম আছে। শাক আছে। ডাল আছে। খাবার নিয়ে তোর কোনো টেনশন করা লাগবে না। ওটা আমি দেখতিছি। কইলাম, ঠিক আছে, তুমি এখন যাও। আমাদের একটা মিটিং আছে। আর উৎসকে আগে খাওয়াই দিয়ে সাইকেল টিমকে আনতে পাঠাও।

ততক্ষণে গ্রামে খবর হয়ে গেছে। হরিবোল টিম শুটিং করতে এসেছে। মানুষের ঢল আসা শুরু হয়েছে আমাদের বাড়িতে।

-------------------চলবে--------------------
৭ জুলাই ২০১৯

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জুলাই, ২০১৯ সকাল ৭:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: পাগলের অভিনয় আমিও পারি। একবার চলন্ত ট্রেনে ঢাকা আসার পথে লোকজনের সাথে পাগলের অভিনিয় করেছিলাম। কেউ বুঝতেই পারেনি আমি যে পাগল না।

২| ০৭ ই জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০১

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: ভালো লাগলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.