নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'হরিবোল\' বিহাইন্ড দ্য স্টোরি- ৬

১৪ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১২:০৩

প্রথম দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমরা শুটিং করলাম। তারপর টিম বলেশ্বরের ঢাকা ইউনিট দলবেধে গেলাম লোকাল ইউনিটের সাথে পরিচিত হতে। বন্ধু সুনীলের দোকানে টিম বলেশ্বর মিলিত হয়ে সবাই সবার সাথে পরিচিত হলো। পরেরদিনের শুটিং প্লান সবাইকে জানিয়ে দিয়ে আমরা বাড়িতে ফিরলাম। ফেরার পথে আমাদের ফাঁকা রাস্তায় চাঁদের আলোয় বসে আমরা একটা এক্সক্লুসিভ মিটিং করলাম।

সেলিম বললো, ভাই আজকে যা শুটিং করলেন, দুইটা সিকোয়েন্স ছাড়া বাকি কিছুতো স্ক্রিপ্টে নাই। কালকে একটু স্ক্রিপ্টের মধ্যে থাকার চেষ্টা করেন। নইলে কিন্তু আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবো না। আমরা সকালের শুটিংয়ের পুরো প্লান করলাম। ভোর পাঁচটায় আমরা ক্যামেরা অন করবো। ইকতার আর তৃপ্তিকে দিয়ে ক্যামেরা অন হবে।

ইকতারকে বললাম, তোর কিন্তু জলে ডুবাতে হবে। রাতেই তোর প্রার্থণা অংশটুকু মুখস্থ করে ফেলিস। ইকতার বললো, দাদা টনশান নিয়েন না। হয়ে যাবে। সেলিম বললো, ভাই এখন তো আমাদের কোনো কাজ নাই। বইসা না থাইকা চলেন আমরা হেরিকেন সিকোয়েন্সটা কইরা ফেলাই। বললাম, এখন কী সবাই আর শুটিং মুডে আছে। থাক, কাল করবো।

ববিকে বললাম, ভোর সাড়ে চারটার মধ্যে ক্যামেরা ইউনিট, সেলিম, জাহিদ, তুই, ইকতার-তৃপ্তি, চিন্ময় আর আমাকে তুলবি। ঠিক পাঁচটায় যাতে সবাই লোকেশানে রেডি থাকে। অন্যরা অবশ্য আরেকটু ঘুমানোর সুযোগ পাবে। সকাল আটটার মধ্যে নাস্তা করে ওরা রেডি থাকলেই হবে।

আমাদের টিম বলেশ্বরের ফুড মিনিস্টারের দায়িত্ব পালন করেছে শিল্পী। শিল্পী এমদাদ ভাইয়ের বউ। আমার সেজো খালার মেয়ে। বয়সে আমার ছোট হওয়ায় এখনো আমি নাম ধরেই ডাকি। শিল্পীকে বললাম, সকালে সবাইকে কী নাস্তা দিবা? শিল্পী বললো, তুমি যা বলবা, তাই দেব। বললাম, ডাল ভাত দিবা। ভাত খাইলে অনেকক্ষণ পর্যন্ত কাজ করতে পারবে। পারলে থানকুনিপাতা ভর্তা দিবা। ডালের সাথে পারলে ডিম দাও। আর সকাল এগারোটার দিকে একটা হালকা নাস্তা দিও। দুইটার দিকে দিবা লাঞ্চ। আর বিকালে একটা নাস্তা দিবা। আর রাতে আমরা বাড়িতে ফিরে খাবো।

এমদাদ ভাইকে বললাম, নাস্তা নেবার জন্য আগেই একটা ভ্যান রেডি রাইখো। আর দুপুরে কিন্তু আমরা বাড়িতে খেতে আসবো না। আমরা যে লোকেশানে থাকবো, খাবার সেখানে নিয়ে যেতে হবে। এজন্য তুমি দুইটা ভ্যান রেডি রাইখো। সিনেমা হোক বা না হোক, খাবার নিয়ে যেন কোনো ধরনের কোনো সমস্যা না হয়। কারণ, এরা সবাই আমাদের বাড়ির গেস্ট। এরা সবাই এই প্রথম আমাদের বাড়িতে এসেছে। বাড়ির উজ্জ্বত যাতে নষ্ট না হয়, এইটা খেয়াল রাইখো। এমদাদ ভাই কইলো, তুই এসব নিয়া চিন্তা করিস না। আমাকে শুধু টাইমটা বলবি। টাইমলি সব পাবি।

চৈত্র মাস। কিন্তু আমাদের বাড়ি ফাঁকা মাঠের ভেতরে হওয়ায়, গ্রামের অন্যান্য বাড়ির তুলনায় আমাদের বাড়িতে বেশ বাতাস আছে। কিন্তু আমাদের যাদের শহুরে ইলেকট্রিক ফ্যানের নিচে ঘুমানোর অভ্যাস, তাদের কী আর এরকম চৈত্র মাসে ঘুম আসে! রাত দুইটার দিকে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি ঘুমাতে আসলাম। কিন্তু একমিনিটও ঘুম হলো না। কিছুক্ষণ পরপর টের পাচ্ছি এমদাদ ভাই দরজা খুলে বাইরে যাচ্ছে।

ঘটনা হলো, ইকতার, ফয়সল, ববি, চিন্ময়দের হৈ হল্লায় কেউ ঘুমাতে পারছে না। আমি এমদাদ ভাইকে ডেকে বললাম, তুমি ঘুমাও। সকালে তোমার কিন্তু অনেক লোড আছে। আমি ওদেরকে বলে আসি ঘুমানোর জন্য। আমাদের দুই বাড়ির মাঝখানে এসে আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে ফয়সলদের গল্পের বিষয় শোনার চেষ্টা করছি। শুধু হাসাহাসি বোঝা যায়। আর কিছু বোঝা যায় না। পেছনে থেকে সেলিমকে ডাকলাম।

সেলিম বললো, ভাই ওদের জন্য একফোঁটাও ঘুমাইতে পারি নাই। আপনি ওদের একটু ঘুমানোর কথা বইলা যান। আমি আবার ফয়সলদের ঘুমানোর অনুরোধ করে ফিরে আসলাম। আধাঘণ্টা পর আবারো পুরোদমে হৈ হল্লা। ববিকে ফোন দিয়ে বললাম, তোরা ঘুমাবি কখন? ওঠার সময় তো প্রায় হয়ে গেছে। ববি বললো, দাদা আমার কথা কেউ শোনে না। আপনি টেনশান নিয়েন না। এরা আজ কেউ ঘুমাবে না।

ববিকে বললাম, সকালে ক্যামেরার সামনে কারো চেহারা কী ঠিক থাকবে? ববি বললো, দাদা বইলা কোনো লাভ নাই। পারলে আপনি একটু ঘুমান। আমি ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু ঘুম হলো না। একঘণ্টা মেডিটেশান করলাম। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমরা কী কী কীভাবে কীভাবে করবো, তার একটা স্ন্যাপশট কয়েকবার মনে মনে দেখার চেষ্টা করলাম। নিজের সাথে একটা বোঝাপড়া হয়ে যাবার পর আমি ফ্রেস হয়ে রেডি হলাম। ওইবাড়ি তখন সবাই ঘুমিয়ে গেছে। আমি এসে সেলিমকে ডেকে বললাম, তুই সবার আগে রেডি হ। ববি তো এখন ঘুমাচ্ছে। অন্যদের ডাকবে কে?

সেলিম বললো, ভাই আপনি ববিকে তোলেন। সারারাত আমাদের ঘুমাইতে দেয় নাই। এখন সবাই ঘুমাইতেছে। বললাম, গরমে কেমনে ঘুমাবে ক? আরেকটু ঘুমাক। তুই রেডি হ। আর চিন্ময়ের ক্যামেরাটা দে। আমি লোকেশানে চলে যাচ্ছি। তুই ববিকে উঠিয়ে দিয়ে লোকেশানে আয়।

দীর্ঘদিন পর গ্রামের ভোর দেখছি। একটা অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। ধীরে ধীরে চারপাশ ফর্সা হচ্ছে। আমি লোকেশানের বেশকিছু স্টিল ছবি তুললাম। আমার সাথে ইতোমধ্যে যোগ দিয়েছে দুই ভাতিজা উৎস আর অমিত। কিছুক্ষণ পর যোগ দিল এমদাদ ভাই। পরপর সেলিম আর ববি লোকেশানে আসলো। ক্যামেরা ইউনিটের সবাই ততক্ষণে এসে গেছে। আর্টিস্ট ইকতার আর তৃপ্তিও এসে গেছে। ইকতারকে আমরা জলে নামিয়ে দিয়ে ক্যামেরা অন করলাম। একপাশে জাহিদ আর প্রণব ক্যামেরা নিয়ে ব্যাকআপ শটের জন্য। আর অন্যপাশে মোস্তাফিজের সাথে মেইন ক্যামেরায় আমি।

সূর্য ওঠার মুহূর্তে আমরা রিয়েল টাইম শুট করার জন্য ইকতার আর তৃপ্তিকে দিয়ে তার আগে কয়েকবার রিহার্সাল করালাম। কিন্তু চৈত্র মাসের জল যে এত ঠাণ্ডা, এটা পুরোপুরি টের পেল ইকতার। শেষের দিকে ইকতারের রীতিমত কাঁপুনি লেগে গেছে। আমরা কাঁপুনি দিয়ে দিনের প্রথম সিকোয়েন্স শেষ করলাম!

----------------------চলবে---------------------
১৩ জুলাই ২০১৯

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১২:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: একটা মুভি বানাতে কত কষ্ট করতে হয়।
অথচ আমরা দর্শক হুট করে বলে ফেলি- মুভিটা ভালো হয় নি। বা মোটামোটি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.