নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অমর একুশে বইমেলার ডায়েরি-১১

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৩:৪৩

বুধবার ছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলার একাদশতম দিন। বইমেলা গতকালও ছিল নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মুখোরিত। ছিল বইপ্রেমীদের কবি-সাহিত্যিকদের জাম্পিস আড্ডা। কিন্তু বইমেলায় গিয়ে বারবার যে জিনিসটি আমার ভেতরে প্রশ্নের ঝড় তোলে সেটি হলো- আমাদের প্রকাশনা ব্যাপারটি কেন প্রকাশনা শিল্প হিসেবে গড়ে উঠছে না?

আমাদের এত হাজার হাজার বই প্রকাশ পায়, আমাদের হাজার হাজার প্রকাশক হচ্ছে, হাজার হাজার লেখক হচ্ছে, তবুও প্রকাশনা কেন এখনো ন্যূনতম শিল্প হিসেবে গড়ে উঠছে না? আমাদের জাতি ও সংস্কৃতি গঠনে এমন ব্যাঙের ছাতার মত হঠাৎ গজিয়ে ওঠা নতুন প্রকাশনা বা নয়া লেখক আসলে জাতির কী কাজে লাগছে?

কিংবা লিখতে না জেনেই, ন্যূনতম লেখার চর্চা না করেই, কেবল শখ করে গাটের টাকায় বই প্রকাশ করে নতুন এসব লেখকরা সমাজে কোন সংস্কৃতি বা রীতি চালু করছে? প্রকাশকরা লেখকের টাকায় বই প্রকাশ করে কী ক্রেডিট নিতে চাচ্ছেন? এটা কী আমাদের সাহিত্যে আদৌ কোনো ভূমিকা পালন করছে? নাকি সৌখিন লেখক আর অদক্ষ মৌসুমী প্রকাশকের প্রকাশনায় বছর বছর কেবল আমরা স্রেফ গার্বেজ বাড়াচ্ছি?

কিংবা ধরুন, আমরা কী আমাদের পাঠকের মন চলমান এই রীতিতে জয় করতে পারছি? পাঠক কী আমাদের লেখায় আদৌ কোনোভাবে সন্তুষ্ট হচ্ছে? অথবা বই বিপণন ও প্রকাশনা—দুই ক্ষেত্রেই আমরা আসলে কী কী ভাবছি? বা পাঠক আসলে কী চান? পাঠকের এই চাওয়া এবং প্রকাশক-বিক্রেতার উপস্থাপনার মধ্যে কী বড় ধরনের কোনো কিছুর ঘাটতি থেকে যাচ্চে? তাহলে এমন বিশৃঙ্খলভাবে প্রকাশনা বৃদ্ধিতে সংস্কৃতির কী আদৌ কোনো মান রক্ষা হচ্ছে? নাকি আমরা কালের স্রোতে গা ভাসিয়ে পরম তৃপ্তি লাভ করছি? আমাদের প্রকাশনা শিল্প নিয়ে আদৌ কোনো উন্নততর মাস্টারপ্লান বা মহা পরিকল্পনা নাই কেন?

বইমেলায় আসলে এমন হাজার হাজার প্রশ্ন আমার মাথার মধ্যে ঝড়ের মত উড়ে বেড়ায়, ঘুরে বেড়ায়। উড়ে উড়ে বেড়ায়। ছুটে ছুটে বেড়ায়। আবার মনের অতলে একসময় হারিয়ে যায়। আমার কয়টা বই বিক্রি হলো, বা আমি কেমন লিখি, বা কী লিখি, বা কেন লিখি, সেই প্রশ্নের আমরা নিজেরাই বা কতটো জবাব খুঁজি? সেই প্রশ্নের জবাবে আমরা আসলে কতটুকু দেখতে পাই? কতটুকু শান্তনা থাকে সেসব প্রশ্নের সত্যি সত্যি জবাবে? সেই জবাবে কী আমরা আদৌ খুশি? খুশি হলে কতটুকু খুশি?

আমি তো মনে করি, বাংলাদেশে তৈরি পোষাকের পর সবচেয়ে বড় রপ্তানি-শিল্প হিসেবে প্রকাশনা শিল্পকেই গড়ে তোলা সম্ভব। আমাদের তেমন লোকবল আছে। আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে সেরকম উদ্যম ও স্বপ্ন আছে। আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে যারা নিবিড়ভাবে লেখা ও প্রকাশকে চর্চা করছে বা নতুন নতুন স্বপ্নে বিভোর নতুন লেখকদের মধ্যে যে স্বপ্নগুলো দানাবেধে মালা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কোনো দীর্ঘমেয়াদী মাস্টারপ্লান নেই বলেই সেসব কিচ্ছু হচ্ছে না। প্রকাশনা শিল্পে আমাদের কী কী ঘাটতি রয়েছে তা আইডেনটিফাই করার দায়িত্ব আসলে কার? আমরা কী সেই কাজটি আদৌ করতে শুরু করেছি?

অথবা সেই আইডেনটিফাই গুলো সনাক্ত করে মহাপরিকল্পনা নিয়ে কেন আমরা এখনো মাঠে নামছি না? তাহলে আমাদের প্রকাশনা শিল্প নিয়ে কী আদৌ আমাদের জাতীয়ভাবেই কোনো পরিকল্পনা কাজ করে না? নাকি প্রকাশনা শিল্প হিসেবে গড়ে উঠুক সেটি সরকার বা শাসক গোষ্ঠী আসলে চায় না? তাহলে এমন নিস্ফলা সাহিত্যগিরি দিয়ে আমাদের সাহিত্যের কী লাভ হচ্ছে? বা আমাদের প্রকাশনার বা কী উন্নতি হচ্ছে?

আমাদের বাংলা সাহিত্য বিশ্ব বাজারে নানা ভাষায় ছড়িয়ে দিয়ে বিশ্বপাঠক নেটওয়ার্কে যুক্ত করার জন্য এবং আমাদের মাতৃভাষায় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা পাঠকদের কাছে আমাদের প্রকাশিত মাতৃভাষার বই পৌঁছে দেবার জন্য আমাদের কোনো নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠেনি কেন? রাষ্ট্রীয়ভাবে সেরকম কোনো উদ্যোগও আমার চোখে পড়ে না। এই উদ্যোগ এখন বেসরকারিভাবেই গ্রহণ করতে হবে। এজন্য প্রকাশক-লেখকরা আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসলেই একটা উপায় নিশ্চয়ই বের হবে।

সোভিয়েত জামানায় খোদ মস্কো থেকে প্রকাশিত প্রগতি'র বাংলা ভাষার বই বা পত্রিকা যখন আমি সেই সুদূর গ্রামে বসেই ডাকযোগে পেতাম, তেমন নেটওয়ার্ক কেন আমরা নিজেরাই সারাবিশ্বের জন্য এখনো তৈরি করতে পারলাম না? মস্কো'র সেই উদ্যোগকে আমার খুব ভালো লাগতো। আমাদের প্রকাশনা শিল্পকে সেভাবে ঢেলে সাজানোর বিষয় নিয়ে এখনই আমাদের ভাবতে হবে। প্রকাশনাকে শিল্পে উন্নীত করতে না পারলে আমাদের সাহিত্য চর্চা যতই বৃদ্ধি পাক না কেন, তা দিয়ে এ জাতির সংস্কৃতির কোনো মান রক্ষা হবে না। কালের বিচারে কোনো সাহিত্যও হবে না।

বইমেলায় রোজ আড্ডা দিতে ভালো লাগে। সারা বছর এই আড্ডার জন্য আমরা মুখিয়ে থাকি। কিন্তু সেই তাসের ঘরের মত ক্ষণস্থায়ী আড্ডায় এসব সিরিয়াস বিষয় আলাপের সুযোগ কোথায়? তাই আমি নানান কিসিমের হরেকরকম প্রশ্ন মাথায় নিয়েই গোটা বইমেলা চষে বেড়াই।

বন্ধুরা আমাদের প্রকাশনাকে কীভাবে সত্যিকার অর্থেই প্রকাশনা শিল্পে রূপ দেওয়া যায়, তা নিয়ে সবাই ভাবুন। একটা মাস্টারপ্লান তৈরি করুন। সেই মাস্টারপ্লান বাস্তবায়নের জন্য সেভাবে প্রয়োজনে ছোট ছোট কমিউনে ভাগ হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ শিল্প দাঁড় করানোর কথা ভাবুন। নইলে হাজার হাজার বই প্রকাশ পেলেও আমাদের মার্কেট তৈরি হবে না। আমাদের সাহিত্য মানও উন্নীত হবে না। একটি পূর্ণাঙ্গ শৃঙ্খলা লাগবে। সেই দায়িত্বটি শেষ পর্যন্ত কে নেবে? সরকার না প্রকাশক না লেখক? সবাইকে একুশের শুভেচ্ছা।

---------------------
বইমেলা থেকে ফিরে
রেজা ঘটক
কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:১১

রাজীব নুর বলেছেন: বাংলা একাডেমিকে আরো শক্তিশালী হতে হবে।
শুধু বছরে কয়েকটা বই বের করলেই একাডেমির কাজ শেষ হয়ে যায় না।
যোগ্য ও দক্ষ লোক নিয়োগ করতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.