নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অমর একুশে বইমেলার ডায়েরি-১৪ ও ১৫

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৩:১৫

শনিবার ও রবিবার ছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলার চতুর্দশ ও পঞ্চাদশ তম দিন। গতকাল বইমেলা থেকে ফিরে আমি একটি গ্রিস ছবি দেখতে বসেছিলাম। 'আইপোগ্রাফি' ছবিটা ফরেন ল্যাংগুয়েজ ক্যাটাগরিতে অস্কার বিজয়ী একটি ছবি। আমি ছবিটা দেখে এতোই মুগ্ধ হই যে, ওটা দ্বিতীয়বার পুনরায় দেখতে বসি। ফলে গতকাল আর বইমেলার ডায়েরি লো হয়নি। তাই আজকের পর্বের সিরিয়াল হবে ১৪ ও ১৫।

বইমেলা প্রাঙ্গনে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত টয়লেটের অবস্থা গুরুচরণ দশা। এটা যে নিয়মিত পরিস্কার করার নিয়ম, তা যেন খোঁজখবর নিতে আয়োজক বাংলা একাডেমি ভুলে গেছে। গতকাল বইমেলার নকশা প্রনয়ণকারী আর্কিটেক্ট এনামুল করিম নির্ঝর অনেকটা আপত্তি করেই দুঃখ করে বলেছিলেন, শিশু চত্বর থেকে বের হলেই যাতে গ্লাস টাওয়ার সবার চোখে পড়ে সেভাবেই বইমেলার ডিজাইন করা হয়েছিল। ধীরে ধীরে সেই ডিজাইনটি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আর শিশু চত্বর থেকে সরাসরি গ্লাস টাওয়ারটা দেখার উপায় নাই। মাঝখানে বসে গেছে অসংখ্য বিজ্ঞাপন ও মিডিয়া হাট। আমরা আসলে সুন্দরকে বেশিক্ষণ দেখতে পারি না! আমরা সৌন্দর্য্যকে লালন করতে শিখিনি।

বইমেলায় আজ 'লেখক বলছি' অনুষ্ঠানে একজন শ্রোতা একটি চমৎকার প্রশ্ন করেছেন বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে। তিনি বইমেলায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা খাবারের দোকান দেখে দুঃখ করে বললেন, এখানে ঢুকলে প্রথমেই মনে হয় ভুল করে কী আমরা খাবারের মেলায় ঢুকে পড়লাম কীনা? পরে একটু এদিকে আসার পর বইয়ের স্টলগুলোর দেখা পেলাম।

এবছর উদ্যানে বইয়ের স্টল বিন্যাস যতটা স্পেস নিয়ে সুন্দর করা হয়েছে, ঠিক তার বিপরীতে খাবারের দোকানগুলো অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠায় এটাকে বাইরে থেকে ঠিক বইমেলা মনে হয় না। মনে হয় খাদ্যমেলা। বইমেলায় প্রবেশের আগেই এই খাদ্যমেলায় বইপ্রেমীদের পকেট কাটছে এসব ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা নব্য ব্যবসায়ীরা। এরা বইপ্রেমীদের পকেট কেটে এমন দশা করছেন যে তাদের হাতে পছন্দের বই কেনার টাকা থাকছে না।

প্রথম প্রশ্ন হলো- বইমেলায় এত খাবারের দোকানের প্রয়োজনটা কেন? বিভিন্ন পয়েন্টে কিছু চায়ের দোকান আর হালকা নাস্তা থাকা দরকার। কিন্তু বইমেলায় আসার নামে উদ্যানে এসে বিড়িয়ানী, পোলাউ, কড়াই গোশত এসব কারা খায়? এরা তো মোটেও বইয়ের ক্রেতা নয়। এদের তো বইমেলায় আসার একদম দরকার নাই। বাংলা একাডেমি কেন প্রতিবছর এধরনের খাবারের দোকান বইমেলায় পারমিট করে? বইমেলা থেকে বাংলা একাডেমির এই ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিটা প্রকাশকদের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে যাচ্ছে। এটা কী বাংলা একাডেমিকে আমাদের প্রকাশক নেতারা অবগত করেছেন? বাংলা একাডেমি আলাদাভাবে খাদ্যমেলার আয়োজক করুক না! বইমেলার সাথে এই আয়োজন করে কেন বইমেলাকে দূষিত করা হচ্ছে।

লেখালেখিতে এক মাসেরও অভিজ্ঞতা নাই অথচ এমন লেখকদের ছোটকাগজের সম্পাদক হিসেবে লিটলম্যাগ কর্নারে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমি এমনিতে ছোটকাগজকে সবসময় তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের চোখে দেখেন। তাই বলে লিখতে না জানা, ছোটকাগজ করার চর্চা না করা, লেখার চর্চা না করা এমন সম্পাদকদের কী করে স্টল বরাদ্দ করা হয়? আগে তো মিনিমাম ছোটকাগজের তিনটি সংখ্যা না হলে কোনো কাগজকে স্টল বরাদ্দ করা হতো না। সেখানে কবে কোন আইনে কোন নীতিমালার অযুহাত দেখিয়ে বাংলা একাডেমি এরকম অখাদ্য ছোটকাগজকে লিটলম্যাগ কর্নারকে দূষিত করার জন্য স্টল দেয়? নাকি বাংলা একাডেমি সরাসরি বলতে চায় দেশে ছোটকাগজের প্রয়োজনীয়তা নাই আর? তাহলে দেশে তুর্কী লেখক তৈরি হবে কীভাবে? বাংলা একাডেমি কী তাহলে সরকারের মদিনাসনদের সোনার বাংলা বাস্তবায়নের জন্য তওবা করেছে?

এসব আলোচনা করতে আর ভালো লাগে না। এবার চলুন বই নিয়ে কথা বলি। সবাই জানেন ধ্রুব এষ একজন ঋষিতুল্য ধ্যানী শিল্পী। কিন্তু তিনি অলরেডি গোয়েন্দা ও রহস্য উপন্যাস লিখে সবধরনের পাঠকের হৃদয় জয় করেছেন। বাংলাদেশের অ্যাডগার অ্যালেন পোু বলা যায় ধ্রুব এষকে। এবছর বিদ্যাপ্রকাশ প্রকাশ করেছে শিল্পী ধ্রুব এষ-এর নতুন উপন্যাস 'সরোজিনীর ড্রয়িং'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী সাব্যসাচী হাজরা। বইটির দাম একশ' পঞ্চাশ টাকা। দ্যু প্রকাশন প্রকাশ করেছে কথাশিল্পী প্রমা ইসরাতের ছোটগল্প 'এক ঠোঙা তারা'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী মোস্তাফিজ কারিগর। বইটির দাম একশ' পঞ্চাশ টাকা।

ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ প্রকাশ করেছে বিখ্যাত ব্রাজিলিয়ান লেখক পাওলো কোয়েলও'র ইন্টারন্যাশনাল বেস্টসেলার বই ‘ইলেভেন মিনিটস’। মূল পর্তুগিজ ভাষায় বইটির নাম ‘ওনযে মিনুতোস’। বইটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন সোহরাব সুমন। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী আদিত্য অন্তর। স্বরচিহ্ন প্রকাশনী প্রকাশ করেছে কথাশিল্পী লুৎফর রহমান পাশা'র দ্বিতীয় উপন্যাস 'কবির পকেটে লকেট ঘড়ি'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী আবু সাইদ আহমেদ।

পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনকারী বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম-এর অবদান ও উদ্যোগকে স্মরণ করে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি স্মরণগ্রন্থ প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য। বইটি সম্পাদনা করেছেন কবি শাহেদ কায়েস। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী এআর নাইম। বইটির দাম এক হাজার দুইশো টাকা। এছাড়া ঐতিহ্য থেকে প্রকাশ পেয়েছে কবি শাহেদ কায়েসের 'নির্বাচিত কবিতা'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী রাজীব দত্ত।

বন্ধুরা বইমেলায় আসুন। বাছাই করে ভালো বই কিনুন। আমাদেরকে ভালো বইয়ের সন্ধান দিন। বই হোক আপনার নিত্যসঙ্গী। একটি ভালো বই আপনার সবসময়ের বন্ধু। সবাইকে একুশের শুভেচ্ছা।

----------------------
বইমেলা থেকে ফিরে
রেজা ঘটক

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:২১

রাজীব নুর বলেছেন: বই মেলার প্রতিটা সমস্যা নিয়ে বাংলা একাডেমিকে জবাব্দিহি করতে হবে। এই নিয়ম থাকলে মানশূহের ভোগান্তি কমবে।

২| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৪৬

অজ্ঞ বালক বলেছেন: ধ্রুব এষ বাংলার এডগার এলান পো!?!?!?
দ্যু-র বইয়ের দাম দেখে বুকে গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথা উঠে। অথচ কিসব বই বের করেছে। রাশিয়ান বইগুলার রিপ্রিন্টগুলা হার্ডকাভারে করলেও এই একই দাম আসতো। হতাশাজনক।
মাকসুদুল আলমের উপর করা বইটা দেখতে হবে। এতটা ক্ষণজন্মা অথচ কতটা প্রতিভাবান মানুষ ছিলেন ভাবা যায় না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.