নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফ্যানটাসি: করোনা ভাইরাস!

০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:৪১

ছোটগল্প: করোনা ভাইরাস
---------------- রেজা ঘটক
আমি চাই তোমরা আমাকে ভয় পাও। আমার নাম শুনলে তোমরা হার্ট ফেল করো। কারণ তোমরা অনেক খারাপ। তোমরা প্রকৃতির অনেক ধ্বংস করেছো। এবার তাই তোমাদের ধ্বংস হবার পালা। এজন্য আমি মনে মনে একটা লিস্ট করেছি। কখনো আমার অসতর্কতায় নিরীহ কেউ যদি মারা যাও, তাহলে ধরে নিবা, নগরে আগুন লাগলে দেবালয়ও রক্ষা পায় না।

তোমরা যারা নদী দখল করো, তোমরা এবার মরার জন্য তৈরি হও। তোমরা যারা ব্যাংক লুটপাট করো, তোমরা এবার মরার জন্য প্রস্তুত হও। তোমরা যারা দুর্নীতি করো, তোমরা এবার ধ্বংস হবার জন্য অপেক্ষা করো। তোমরা যারা খাদ্যে ভেজাল মেশাও, তোমরা এবার চিরতরে ধ্বংস হও। তোমরা যারা মানুষ ঠকাও, তারা এবার কঠিন কষ্ঠভোগ করে মরার জন্য তৈরি হও।

ডক্টর রালফ ব্যারিককে আমি ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। ঘোড়া বাদুরের লালায় আমি অবাধ বিচরণ করতাম। এটা প্রথম ডক্টর রালফ ব্যারিক বুঝতে পারেন। প্রকৃতিতে অবাধ বিচরণের স্বাধীনতা সবার আছে। আমারও ছিল। এখনো আমি প্রকৃতিতে আমার মত বিচরণ করি। আন্দিজ থেকে হিমালয় পর্বতমালা, সুন্দরবন থেকে আটলান্টিক মহাসাগর, জলে-স্থলে-আকাশে সর্বত্র আমি বিচরণ করি।

কিন্তু আমার সেই অবাধ বিচরণের খবর প্রথম তোমাদের নজরে আনলেন ডক্টর রালফ ব্যারিক। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (চ্যাপেল হিল) তিনি একজন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে তিনি 'নেচার মেডিসিন' জার্নালে প্রথম আমাকে নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করলেন।

চীনের ঘোড়া বাদুড়ের লালা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ডক্টর রালফ ব্যারিক আমাকে সক্রিয় করলেন। তখন তিনি আমার একটি বৈজ্ঞানিক নাম দিলেন- এসএইচসি-০১৪। আমার উপর এই গবেষণার কারণ জানিয়ে তখন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফ্রান্সিস কলিন্স বলেছিলেন, অণুজীবের মাধ্যমে জৈব নিরাপত্তা এবং সতর্কতামূলক বিষয়গুলোকে আরও সুদৃঢ় করতেই এ ধরনের গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে তখন অণুজীব বিশেষজ্ঞ রিচার্ড এডব্রাইট সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। কারণ গবেষণাগারে প্রকৌশলবিদ্যা ব্যবহার করে আমার মত ভাইরাসদের সংক্রমণ ক্ষমতার বিচিত্র দিক নিয়ে গবেষণা করার পরিণতি যে কতটা ভয়ংকর এবং মারাত্মক ঝুঁকির, তা রিচার্ড এডব্রাইট আগেই বুঝতে পেরেছিলেন।

২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে 'দ্য সায়েন্টিস্ট'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রিচার্ড এডব্রাইট বলেছিলেন, এ ধরনের বিপজ্জনক গবেষণার ফলে কোনো কারণে ভাইরাসটি গবেষণাগার থেকে পালিয়ে লোকালয়ে চলে আসতে সক্ষম হলে, তা মানব জাতি এবং অন্য অনেক প্রাণিকুলের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। কারণ এটা যখন প্রকৃতিতে অন্য কোনো পোষকদেহে নির্জীব অবস্থায় থাকে, তখন তার সক্রিয় হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। কিন্তু গবেষণাগারে এটাকে সক্রিয় করার পর, একবার যদি মানুষে সংক্রমিত হয়, তাহলে সেটা আর নির্জীব থাকবে না। তখন এটি প্রাণঘাতী ভয়ংকর অস্ত্রের মতোই আঘাত করবে।

রিচার্ড এডব্রাইট আরো বলেছিলেন, ২০০৩-০৪ সালে সার্স ভাইরাসের মারাত্মক রূপ দেখার পর স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে এ ধরনের ভাইরাস নিয়ে অপ্রয়োজনীয় বিশেষায়িত গবেষণার জন্য অর্থ বরাদ্দ স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। অতএব এখন থেকে এ ধরনের বিপজ্জনক গবেষণা আর চলতে পারে না। 'দ্য সায়েন্টিস্ট'কে দেওয়া রিচার্ড এডব্রাইটের ওই বক্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট তখন এই গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ স্থগিত করেছিল।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার 'এডওয়ার্ড মিউরো'। এই পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক হলেন সাদ ওলসোন। তিনি ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে 'এসএইচসি-০১৪' কে বর্তমান সময়ের 'কোভিড-১৯' হিসেবে উল্লেখ করে নিজের ওয়েবসাইটে (দ্য সাদ ওলসোন শো) একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।

সাদ ওলসোন নর্থ ক্যরোলিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ উল্লেখ করে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভয়ংকর বিপজ্জনক গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ প্রত্যাহারের পরেও ডক্টর রালফ ব্যারিক কিন্তু থেমে থাকেননি। তিনি তাঁর গবেষণার নমুনা নিয়ে চীনের উহানে ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে চলে যান আরো গবেষণা করার জন্য। চীনের উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি হলো বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অণুজীব গবেষণাগারের একটি।

সেখানে ডক্টর রালফ ব্যারিক তাঁর গবেষণার পরবর্তী অধ্যায় নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করতে থাকেন। সেই গবেষণারই একটি ভয়ংকর পরিণতি এখন বিশ্ব ভোগ করছে বলে নিজের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন স্বাস্থ্য খাত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা সাংবাদিক সাদ ওলসোন। তিনি আরো স্পষ্ট করেই বলেছেন, 'কোভিড-১৯'-এর জন্ম নর্থ ক্যারোলিনা ইউনিভার্সিটির গবেষণাগারে। কিন্তু পাঁচ বছর পর এটি ছড়িয়েছে চীনের উহান থেকে।

ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, উহানের ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি জীবাণু অস্ত্রের বড় পরীক্ষাগার বলেও বিখ্যাত। জীবাণু অস্ত্রের বিপজ্জনক গবেষণা করতে গিয়েই এক মুহূর্তের অসতর্কতায় করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে গবেষণাগার থেকে লোকালয়ে। ইতোমধ্যে এমন আজব সব তথ্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এসেছে বটে। কিন্তু চীনা কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত সাদ ওলসোনের প্রতিবেদনের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। প্রতিবেদনটি যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক গণমাধ্যমসহ ব্লগ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লেও খোদ যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত এই প্রতিবেদন নিয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি।

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো- আমেরিকা ও চীন জীবাণু অস্ত্রের গবেষণা করতে গিয়ে আমাকে নিয়ে যেভাবে টানাহ্যাচড়া করেছে, এটা আমি মোটেও সহ্য করতে পারিনি। আমাকে তোমরা যে নামেই চেনো না কেন, করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ অথবা এসএইচসি-০১৪, আমি কিন্তু তোমাদের সকলের জন্য মাত্র কয়েক মুহূর্তে মধ্যেই মরণ ডেকে আনতে সক্ষম।

এতদিন ঘোড়া বাদুরের লালায় আমি কেবল নির্জীব হিসেবে ছিলাম। তোমরা মানুষের ক্ষতি করার জন্য আমাকে সজিব করেছো। এখন তোমরা কেন এত হায় হুতোষ করতেছো হে মানব সন্তানেরা? আমি ঠিক করেছি, যেহেতু তোমরা আমার চেয়েও বড় দুশমন, তাই তোমাদের ধ্বংস করার জন্য আমি এখন বিশ্বের এমাথা থেকে ওমাথা চষে বেড়াবো!

গবেষণার জন্য তোমরা এই পৃথিবীর বাতাস ধ্বংস করেছো। এই প্রকৃতির আকাশ ধ্বংস করেছো। এই পৃথিবীর জল-স্থল সর্বত্র তোমরা দূষিত করেছো। সবকিছু ধ্বংস করার পর তোমরা তার নাম দিয়েছো জলবায়ু পরিবর্তন। কিন্তু তোমাদের এই ধ্বংসলীলা এখনো সাঙ্গ হয় নাই। তোমরা দিনদিন আরো ভয়ংকর বিষয় নিয়ে গবেষণা করছো! কিন্তু তোমরা যে বিষয়টি এখনো জানো না, সেটি হলো আমি তোমাদের সব বাহাদুরি মুহূর্তে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম।

এই প্রকৃতি জগতের মাতা। তোমরা ইতরের দল সেই প্রকৃতি ধ্বংস করার হীনখেলায় মেতে উঠেছো। তোমরা এই প্রকৃতির পাহাড় ধ্বংস করেছো, এই পৃথিবীর নদী ধ্বংস করেছো, এই প্রকৃতির সাগর-মহাসাগর জলাশয় ধ্বংস করেছো। তোমরা আগুন নিয়ে খেলা করেছো। তোমরা পানি নিয়ে খেলা করেছো। তোমরা মাটি নিয়ে তামাশা করেছো। আর এখন আমার গুহায় ছোবল দিয়ে তোমরা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে এনেছো।

তোমরা চেরনোবিল দুর্ঘটনা ভুলে গেছো। তোমরা ভুপাল দুর্ঘটনা ভুলে গেছো। তোমরা হিরোসিমা ভুলে গেছো। তোমরা নাগাসাকি ভুলে গেছো। তোমরা ইরাকের আগ্রাসন ভুলে গেছো। তোমরা আফগানিস্তান আগ্রাসন ভুলে গেছো। তোমরা সিরিয়ার বিপর্যয় ভুলে গেছো। তোমরা ইয়েমেনে আগ্রাসন ভুলে গেছো। তোমরা আরব বসন্ত ভুলে গেছো। তোমরা সবাই এক একটা বেহায়ার দল!

এবার আমি তোমাদের এমন শিক্ষা দেব, যা তোমরা জীবনে আর কোনদিন ভুলতে পারবা না। তোমরা সার্স থেকে শিক্ষা নাওনি। তোমরা প্লেগ থেকে শিক্ষা নাওনি। তোমরা কেবল দখল আর নৈরাজ্য নিয়ে মেতে উঠেছো। এবার তোমাদের উচিত শিক্ষা দেবার সময়। তোমাদের দাপটকে আমি এক মুহূর্তে চূর্ণ করে দিতে সক্ষম।

ওরে আজব ভিখারী, তোরা এবার মানুষ হ। তবে আমি সবচেয়ে খুশি হবো যদি বেছে বেছে এই পৃথিবী থেকে তোদের মত সকল কীট ধ্বংস করে দিতে পারি। তোরা যারা এই পৃথিবীকে বসবাসের অযোগ্য করতে চাস! প্রাণি আর উদ্ভিদের যে চিরায়ত সংমিশ্রণে এই প্রকৃতি, সেই প্রকৃতিকে তোরা নানান ভাবে ধ্বংস করেছিস। এবার তাই তোদের নিজেদেরই ধ্বংস হবার পালা।

আমার নাম করোনা। আমি যে কী কী করি না, তা ভাবতে গেলেই তোর সকল লীলা সাঙ্গ হবে! ওহে পাঙ্গপালের দল, এবার তোরা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হ। কংস কেশী জরাসিন্ধু রাজা দুর্যোধন। এই দেহেতে পাণ্ডব নয়, পত্নী রাখে পন...

--------------
৪ মার্চ ২০২০
ঢাকা

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:৫০

খেয়া ঘাট বলেছেন: চমৎকার হয়েছে।

২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অসাধারণ লেখা।

৩| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১২

চাঁদগাজী বলেছেন:


এটাকে ছোটখাট বাইওলোজিক্যাল অস্ত্র সম্পর্কিত ফ্যানটাসী বলা যেতে পারে; আপনি ইহাকে 'ছোট গল্প' বলছেন কেন?

৪| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪০

ঢাবিয়ান বলেছেন: পত্রিকায় পড়লাম যে আমেরিকান এক লেখক নাকি এই বায়োলজিকাল উইপেন নিয়ে বহু বছর আগেই একটি বই লিখেছেন। উহানের গবেশনাগারের কথাও উল্লেখ আছে সেই বইতে। আপনি কি সেই বই এর আংশিক অনুবাদ করলেন?

৫| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ রাত ৯:০৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: তবুও কি ফিরবে হুশ.. নাম ধারী যতসব মানুষ....

প্রকৃতির প্রতিশোধ সব সময়ই ভয়ংকর হয়। কারণ প্রকৃতি প্রচন্ড ধৈর্য আর ক্ষা নিয়ে মানুষকে সুযোগ দেয়
ফিরে আসার! কিন্তু ক্ষমাকে দুর্বলতা ভেবে মানুষ আরো অহংকারী আরো ধ্বংসাত্বক হয়ে ওঠে!

তাই এগিয়ে চলো করোনা..
কাউকে করোনা ক্ষমা ..

৬| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ রাত ১০:৩৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
লেখাটি চমৎকার হয়েছে। বাস্তবতার সাথে
কল্পনার মিলন হলেই তা হয় ভয়ংকর সুন্দর।
তবে এটাকে গল্প বলার সুযোগ কম।

৭| ০৫ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৮:৩৮

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: চমৎকার লেখা।

৮| ০৫ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: বাহ!

৯| ০৬ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:২১

নিভৃতা বলেছেন: ছোটগল্পের আড়ালে কী সুন্দর করে তথ্য বহুল একটা পোস্ট দিলেন! কত কিছু জানা হলো। ভালো লাগলো খুব।

১০| ০৬ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:১৮

দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: সময় উপযোগী পোষ্ট , থাঙ্কস এ লট ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.