নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
এই মুহূর্তে বিশ্বের এক নম্বর ত্রাস কে? অবশ্যই করোনা ভাইরাস। যার সাংকেতিক নাম কোভিড-১৯। ২৬ মার্চ ২০২০ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে সারা বিশ্বে আক্রান্ত হয়েছে ৫ লাখ ৩১ হাজার ৬৯৭ জন। এরমধ্যে মারা গেছে ২৪ হাজার ৭০ জন। আক্রান্ত থেকে সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ২৩ হাজার ৯২৮ জন। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৮ হাজার ২১৫ জন মারা গেছে ইতালিতে। স্পেনে মারা গেছে ৪ হাজার ৩৬৫ জন। চীনে ৩ হাজার ২৯২ জন। ইরানে ২ হাজার ২৩৫ জন। ফ্রান্সে ১ হাজার ৬৯৬ জন। যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার ২৯৩ জন।
ইতোমধ্যে চীনের চেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা অতিক্রম করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা গতকাল পর্যন্ত ৮৫ হাজার ২৮০ জন। যেখানে চীনে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৩৪০ জন। চীনে যেখানে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ৫ জন, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ হাজারের বেশি। সাধারণত গ্রিনিচ মিন টাইম শূন্য আওয়ারে করোনা ভাইরাসের প্রতিদিনের তথ্য আপডেট করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস বিশ্বের প্রায় ১৯৯টি দেশের মানুষকে আক্রান্ত করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম একসাথে এতগুলো দেশ সরাসরি করোনা যুদ্ধ মোকাবেলা করছে। করোনা ভাইরাস নিয়ে তাই দেশে-বিদেশে নানান কিসিমের কেচ্ছা-কাহিনী-গুজব রটেছে। করোনা ভাইরাস কী প্রকৃতি থেকেই অটোমেটিক ছড়িয়েছে নাকি কোনো গবেষণাগার থেকে এটি ছড়িয়েছে, এটা নিয়েই চলছে গোটাবিশ্বে তর্ক-বিতর্ক।
ইতোমধ্যে চীন দাবি করেছে করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আবার যুক্তরাষ্ট্রের দাবি এটি চীন ছড়িয়েছে। স্পষ্টত দুই দেশ পরস্পরকে দায়ী করছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য কেউ স্বীকার করছে না। তৃতীয় যে পক্ষ তারা মনে করছে এটা প্রকৃতি থেকেই অটোমেটিক ছড়িয়েছে। প্রকৃত সত্য যাই হোক না কেন, সেই সত্য উদঘাটন হতে আরো সময় লাগবে। হয়তো এই সত্য কোনোদিনই আর আবিস্কার হবে না। কিন্তু এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় সত্য হলো করোনা ভাইরাসে মানুষ ভীত-সন্ত্রষ্ট-লকডাউন। গোটা পৃথিবীর মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ।
তর্কে নামার আগে চলুন করোনা ভাইরাস নিয়ে কয়েকটি প্রাসঙ্গিক বিষয়ের দিকে একটু আলোকপাত করি। বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার কী? পৃথিবীতে কারা প্রথম বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার প্রাকটিস করেছে? বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার কী আদৌ বন্ধ হয়েছে? কিংবা বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার নিয়ে গবেষণা কী বন্ধ হয়েছে? এককথায় এর জবাব হলো- হয়নি।
এবার চলুন করোনা ভাইরাস নিয়ে মার্কিন পক্ষের কিছু বক্তব্যের দিকে নজর ঘুরাই। ‘জিওপলিটিক্স অ্যান্ড এমপায়ার’-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন অধ্যাপক ফ্রান্সিস বয়েলের অত্যন্ত বিস্ফোরক দাবি, করোনা আসলে চীন নির্মিত একটি জীবাণু অস্ত্র এবং যা তৈরি হয়েছে বায়োসেফটি লেভেল ফোর ল্যাবরেটরিতে। তিনি দাবি করেছেন চীনের এই জীবাণু অস্ত্র নির্মাণের খবর খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও জানে। খেয়াল করুন, মিস্টার বয়েল দাবি করেছেন চীনের এই ‘বায়োলজিক্যাল উয়েপন’ তৈরির খবর খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানে।
প্রশ্ন হলো- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই খবর যদি আগে থেকেই জানতো, তাহলে চীন করোনা ভাইরাস ছড়ানোর আগে এমন একটি বিস্ফোরক খবর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কেন বিশ্ববাসীকে দিল না? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কী হঠাৎ চীনের পক্ষে অনেককিছু গোপন করার মিশন হাতে নিয়েছে?
‘বায়োওয়ারফেয়ার অ্যান্ড টেররিজম’ (২০০৫), ‘দ্য তামিল জেনোসাইড বাই শ্রীলঙ্কা’ (২০০৯), ‘ডেস্ট্রয়িং লিবিয়া অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড অর্ডার’ (২০১৩)-এর মত একাধিক বেস্ট সেলার বইয়ের লেখক এই মার্কিন অধ্যাপক ফ্রান্সিস বয়েল। তিনি ওই সাক্ষাৎকারে আরো দাবি করেছেন যে, চীন এই মারাত্মক এবং আক্রামণাত্মক জীবাণু অস্ত্র দ্বৈত ব্যবহারের জন্যই তৈরি করেছে। যে কারণে করোনা ভাইরাসের বিষয়টি চীন গোপন করেছে। পাশাপাশি কমিউনিস্ট দেশগুলো থেকে পর্যাপ্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
মিস্টার বয়েল দাবি করেন, চীনের উহানের সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর যে খবরটি গোটা বিশ্বের মিডিয়ায় দেওয়া হয়েছে, সেটি সত্য নয়। কোনও বাজার থেকে কিংবা কোনো পশুপাখির থেকেও নাকি করোনা ভাইরাস ছড়ায়নি! যে কারণে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে তাঁর আরো প্রশ্ন রয়েছে। খেয়াল করুন একই ইন্টারভিউতে মিস্টার বয়েল দুই রকম কথা বলেছেন। চীন বিষয়টি গোপন করেছে, এটি কমিউনিস্ট দেশগুলোর একটি সম্মিলিত প্রয়াস এবং এটি ঘোড়া বাদুর বা পেঙ্গোলিন থেকে ছড়ায়নি। এমনকি এটা চীনের উহানের সিফুড মার্কেট থেকেও ছড়ায়নি।
মিস্টার ফ্রান্সিস বয়েল স্পষ্ট করেই বলত চান যে, এটি আসলে চীনের উহানের একটি বায়োটেকনোলজি ল্যাব থেকে চীন ইচ্ছা করেই ছড়িয়েছে। প্রফেসর ফ্যান্সিস বয়েলের এই দাবির পক্ষে সহমত জানিয়েছেন আরেক লেখক জেআর নিকোয়েস্ট। ‘অরিজিনস অব দ্য ফোর্থ ওয়ার্ল্ড ওয়ার’, ‘দ্য ফুল অ্যান্ড হিজ এনিমি’, ‘দ্য নিউ ট্যাকটিস অব গ্লোবাল ওয়ার’-এর মতো বেস্ট সেলার বইয়ের লেখক মিস্টার নিকোয়েস্ট দাবি করেছেন, চমকে দেবার মত আরেকটি খবর।
তিনি দাবি করেছেন, কানাডা থেকে করোনা ভাইরাস চুরি করে চীন এটাকে মারণাস্ত্রে পরিণত করেছে! এই প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক একটি লেখায় মিস্টার নিকোয়েস্ট দাবি করেন যে, কানাডায় উইনিপেগের যে ল্যাবে করোনা ভাইরাস নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছিল, সেখানে নাকি চীনের কিছু এজেন্ট ছিলেন। চীনের এজেন্টরা কানাডার ওই ল্যাব থেকে এই ভাইরাস পাচার করেছে চীনে। ওই চীনা এজেন্ট মানে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ক্যাডারদের কথোপকথনের কথাও নাকি উনি জানেন!
মিস্টার নিকোয়েস্ট চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি ইপোচ টাইমস পত্রিকায় লেখেন, চীন করোনা ভাইরাস দিয়ে স্পষ্টভাবেই আমেরিকাকে ধ্বংস করতে চায়। এটা নাকি চীনের ২০০৩ সালের একটি মাস্টার প্লানের অংশ। তখন চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেনারেল চি হাওতিয়ান নাকি চীনের রেনেসাঁ নামে ওই মাস্টার প্লানের কথা তাঁর ক্যাডারদের ব্যাখ্যা করেছেন। ওই মাস্টার প্লানের প্রধান উদ্দেশ্য দুইটি।
প্রথমত চীনের জনসংখ্যা ওভার পপুলেটেড হওয়ার কারণে চীনের ভূখণ্ড বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত সেকেন্ড চায়না বানানোর জন্য কলোনিয়াল পদ্ধতিতে বিশ্বে চীন ভূ-খণ্ড দখল করবে। আর এই মাস্টার প্লান বাস্তবায়নের জন্য চীন নাকি আমেরিকাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। চীনের কমিউনিস্ট ক্যাডারদের উৎসাহ দিতে জেনারেল চি নাকি বলেছেন, “We must not forget that the history of our civilization repeatedly has taught us that one mountain does not allow two tigers to live together.”
আহা সাধু সাধু। এবার আপনি বেশ নড়েচড়ে বসেছেন, তাই না? মার্কিন পক্ষে দারুণ সব যুক্তি। আহা। সাধু সাধু। এবার বলুন তো মিস্টার ফ্রান্সিস বয়েল এবং মিস্টার জেআর নিকোয়েস্ট এই দুই ভদ্রলোকের বাড়ি কোথায়? তার আগে বলুন তো ওনারা কি সত্যি সত্যি লেখক নাকি সিআইএ-র পেইড লেখক? ওনারা চীনের একেবারে পলিটব্যুরোর গোপন মিটিংয়ের এসব মাস্টার প্লান কোথায় বসে জানলেন? তিয়েন-আনমেন স্কয়ারে দাঁড়িয়ে নাকি পেন্টাগনের অফিসে বসে?
এবার কিছু ছোট ছোট প্রশ্ন একটু ভাবুন। আপনি কী জানেন পৃথিবীতে কারা প্রথম বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার শুরু করেছে? অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৯২০ সালে জাপানের মাইক্রোবায়োলজিস্ট শিরো ইসি যখন জৈব অস্ত্রের গবেষণা শুরু করেন, তখন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যামিকাল ওয়ারফেয়ার সার্ভিস (সিডব্লিউএস)-এর প্রধান অ্যামোস ফিস দাবি করেছিলেন, জৈব অস্ত্র অনেক ব্যয়বহুল। আর এটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তেমন ব্যবসা আনবে না।
কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে ১৯৪১ সালে যুক্তরাষ্ট্র জীবাণু অস্ত্রের পুরোপুরি গবেষণা শুরু করে। ১৯৪২ সালের নভেম্বর মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাংকলিন রুজভেল্ট জীবাণু অস্ত্র বানানোর অনুমোদন প্রদান করেন। তখন যুক্তরাষ্ট্র ৪০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে জীবাণু অস্ত্রের গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য। এরপর প্রেসিডেন্ট জনএফ কেনেডি ও প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনের সেক্রেটারি অব স্টেটস মিস্টার রবার্ট এস ম্যাকনামারা এই জীবাণু অস্ত্র বানানোর চূড়ান্ত উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকা প্রথম এই জীবাণু অস্ত্রের ব্যবহার করতে চেয়েছিল।
আপনি কী জানেন ১৯৮১ সালে ক্যুবায় ডেঙ্গু ভাইরাসে প্রায় এগারোশো মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। যার মধ্যে প্রায় ১৫৮ জন মারা গিয়েছিল। যাদের মধ্যে অন্তত ১০১ জন শিশু, যাদের বয়স ১৫ বছরের কম। আর ক্যুবায় এই ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়িয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তার আগে যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭১ সালে ক্যুবায় পিগ ভাইরাস ছড়িয়েছিল। ১৯৭৬ সালে সোয়াইন ফ্লু কে ছড়িয়েছিল? প্রতিবারই একটি নাম আসে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর তার সাথে কারা জড়িত? মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ।
এবার বলুন তো- করোনা ভাইরাস কে ছড়াতে পারে? চীন না আমেরিকা? ভাবুন। ভাবা প্রকটিস করুন। আর জীবাণু অস্ত্র নিয়ে এ পর্যন্ত আমেরিকার কুকর্মগুলো নিয়ে একটু পড়াশুনা করুন।
২| ২৭ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৪৪
নেওয়াজ আলি বলেছেন:
আগে বাঁচি তারপর কুকর্ম পড়ব।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:৪৭
রাজীব নুর বলেছেন: আজ আরও ৪ জনের করোনা সনাক্ত। যার মধ্যে ২ জন ডাক্তারও রয়েছেন ☹
ডাক্তাররা এত সতর্ক থাকার পরও আক্রান্ত হচ্ছেন তাহলে আমারা কতটা ঝুঁকিতে!
দয়া করে সবাই ঘরে থাকুন।