নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আপনি পড়ুন এবং শেয়ার করুন।। অন্যদের জানার সুযোগ করে দিন!! যারা ত্রাণ দিচ্ছেন তারাও কী করোনা ভাইরাস ছড়াচ্ছেন বা ছড়াতে সহযোগী ভূমিকা পালন করছেন?

১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২২

১. প্রথম সরাসরি জবাব হলো- হ্যা। যদি হ্যা হয়, তাহলে কীভাবে তারা করোনা ছড়াচ্ছেন? প্রথম কারণ হলো- সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য যতটুকু মিনিমাম দূরত্বে ত্রাণ প্রত্যাশী গরীব বা দুঃস্থ মানুষগুলোকে শৃঙ্খলাবন্ধ রাখার কথা, সেই সূত্র কেউই শতভাগ পালন করতে পারছে না। ফলে আপনি ত্রাণ দিতে গিয়ে আরো কয়েকশো মানুষকে বিপদের ঝুঁকিতে ঠেলে দিচ্ছেন।

২. এবার আসুন গরীব মানুষের কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা বলি। ধরুন কুড়িল বস্তির একটি পরিবারে পাঁচ জন মানুষ। তিন জন কাজ করতে সক্ষম আর দুই জন শিশু। ঢাকায় আপনি যে প্রান্তেই ত্রাণ দেবেন, এই পরিবারের ওই সক্ষম তিনজন অন্তত তিন থেকে পাঁচটি স্পটে ত্রাণ পাওয়ার জন্য ছুটবে। ছুটবেই। এদেরকে আপনি ঘরে আটকে রাখতে পারবেন না। এরা এটাকে একটা প্রজেক্ট আকারে নেয়। আপনি যতবার ত্রাণ দেবেন, এই মানুষগুলো ততবার সেখানে ভিড় করবে। ফলে এদের মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে করোনা ভাইরাস ছড়াবে।

৩. রান্না করা খাবার ত্রাণ হিসেবে এখন আর মোটেও টেকসই নয়। কারণ একবেলা খেলেই এই খাবারের আর কোনো বেল নাই। তাহলে প্রশ্ন উঠবে- রান্না করা খাবার কী বিতরণ করা যাবে না? হ্যা যাবে, কিন্তু তা এক দুই দিনের জন্য প্রযোজ্য হলেও দীর্ঘমেয়াদে একেবারেই অপ্রযোজ্য।

৪. এবার প্রশ্ন আসবে তাহলে কী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো ত্রাণ বিতরণ করবে না? হ্যা অবশ্যই করবে কিন্তু তাদেরকে অবশ্যই একটি সিস্টেম অনুসরণ করতে হবে। কারণ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ত্রাণ বিতরণ করাটা যতটা সহজ, করোনা ভাইরাসের মত অদৃশ্য শত্রুকে এড়িয়ে ত্রাণ বিতরণ করাটা একটু কঠিন। যদি সেই কঠিন নিয়মগুলো অনুসরণ করা না হয়, তাহলে ত্রাণ দিতে গিয়ে আপনি বরং করোনা ভাইরাস আরো ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখতে পারেন।

৫. এবার প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে কী সেই সিস্টেম? হ্যা সেই সিস্টেম দাঁড় করানো বাংলাদেশের মত দেশে অনেক কঠিন। তাহলে কী বাংলাদেশে সেই সিস্টেম দাঁড় করানো যাবে না? অবশ্যই যাবে কিন্তু সেজন্য সরকারি সদিচ্ছা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে কীভাবে সেই সিস্টেম অনুসরণ করা যায়?

চলুন এবার একটু সেরকম একটা ধারণা দেবার চেষ্টা করি-

১. প্রথম কথা হলো ত্রাণ পৌঁছাতে হবে ঘরে ঘরে। যারা গরীব বা দুঃস্থ মানুষ, তাদের তালিকা করাটা সবচেয়ে আগে জরুরি। তালিকা কে করবে? তার আগে যে জিনিসটি করতে হবে- তা হলো এলাকা ভিত্তিক কমিটি। প্রত্যোকটি থানাকে আলাদা ক্লাস্টারে ভাগ করে সেই তালিকা করতে হবে। আর ত্রাণ বিতরণের মূল কাজটি দিতে হবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে।

২. প্রত্যেক থানায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে কেন্দ্রীয়ভাবে থানা সদরকে জোনাল হেডকোয়ার্টার করতে হবে। সকল ত্রান সামগ্রীর প‌্যাকেজিংয়ের কাজটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো নিজেদের দায়িত্বে করে, সেগুলো সদরে পৌঁছে দেবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকটি টিমের সাথে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ভলান্টিয়ারগণও থাকতে হবে।

৩. গরীব ও দুঃস্থ মানুষগুলোর তালিকা করা হয়ে গেলে, সেই তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেক পরিবারকে অন্তত এক সপ্তা্হের খাবারের প‌্যাকেট একবারেই দিতে হবে। এক্ষেত্রে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই প‌্যাকেট দিতে হবে। রাস্তাঘাটে দিলে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটবে না। একদিনে একই থানার যতটুকু এলাকা কভার করা যায়, পরদিন সেখান থেকে শুরু করতে হবে। যে এলাকায় সাত দিনের খাবারের প‌্যাকেট দেওয়া হয়ে গেলে, সেই এলাকায় সাত দিন আবার আবার সাত দিনের প‌্যাকেট দিতে হবে। এভাবে সাত দিন করে মিনিমাম তিন দফা এটা চালু রাখতে হবে। যদি লকডাউনের মেয়াদ বাড়ে তাহলে ত্রাণ বিতরণের এই সিস্টেমে পরবর্তী সাত দিন করে প‌্যাকেট বিতরণ অব্যাহত রাখতে হবে।

৪. বিচ্ছিন্নভাবে ত্রাণ বিতরণ করলে আপনি একই পরিবারকে হয়তো তিনবার দিলেন, অন্যদিকে আরেকটি পরিবার হয়তো পুরোটা সময় অভুক্ত থাকার ব্যাপার ঘটবে। যে কারণে তালিকা অনুসরণ করাটা খুবই জরুরি। আর এ কারণেই যে কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকেই সরকারি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা টিমের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। নতুবা আপনি বিচ্ছিন্নভাবে ত্রাণ দিয়ে এসব গরীব মানুষের লাইন কখনোই বন্ধ করতে পারবেন না।

৫. পুরো থানা এলাকায় একই দিনে কভার করতে না পারলে ন্যূনতম তিন দিনের মধ্যে কভার করতে হবে। সেজন্য কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় না করলে পুরো থানা এলাকা কভার করা কঠিন হবে। সেজন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যত বেশি ভলান্টিয়ার দিতে পারবে তত বেশি এটা সম্ভব হবে। মনে রাখতে হবে রাস্তাঘাটে ত্রাণ দিয়ে আপনি সিস্টেম ভাঙলে কোনদিন কিন্তু সিস্টেম দাঁড় করানো সম্ভব হবে না।

৬. প্রথম কথা হলো ত্রাণ পৌঁছাতে হবে ঘরে ঘরে। রাস্তায় একজন গরীব মানুষ দেখলেন আর ত্রাণ দিলেন, তার দেখাদেখি আরো লোক জড়ো হলো, তাদেরও দিলেন। এটা কোনো সিস্টেমের মধ্যে পড়ে না। আপনি অতি দয়া দাক্ষিণ্য দেখাতে গিয়ে সিস্টেমের বারোটা বাজাতে পারেন না। যে কারণেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা থানা ওয়ারি টিম গঠন গুরুত্বপূর্ণ।

৭. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে এভাবে সিস্টেম দাঁড় না করালে, এই রাষ্ট্রে আপনি কয়েক ট্রাক ত্রাণ বিতরণ করে হাঁপিয়ে উঠবেন। কারণ গরীব মানুষের লাইন কখনো শেষ হবে না। এজন্য আপনার তালিকা অনুসরণ করেই সিস্টেম অনুযায়ী ত্রাণ দিতে হবে।

৮. এখন প্রশ্ন উঠতে পারে এতদিন তো সিস্টেমের বাইরে সব দেওয়া হলো। এখন কেন সিস্টেম লাগবে? হ্যা লাগবে। কারণ করোনা একটি সংক্রমণ ভাইরাস। আপনাকে সামাজিক দূরত্ব মেনেই সব কাজ করতে হবে। আপনি সামাজিক দায়িত্ব বা মানবিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনা ভাইরাস যাতে আরো বেশি না ছড়ান, সেই জন্যই আপনাকে এই সিস্টেমের আওতায় আসতে হবে।

৯. সবচেয়ে বড় কথা আপনি রাস্তায় বা এলাকায় মানুষ জড়ো করে ত্রাণ বিতরণ করতে পারবেন না। ত্রাণ আপনাকে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। আর মানুষগুলোকে বলতে হবে এই খাবারে সাত দিন চলতে হবে। সাত দিন পর আবারো আমরা খাবার দিয়ে যাবো। গরীব মানুষগুলো না খেয়ে মরবে না, এই আশ্বাসটুকু তাদের আস্থায় আনতে হবে।

১০. সরকার বাহাদুর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে যদি এখনো এই সিস্টেমের কথা না ভাবে, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো থেকে এই দাবী এবং যৌক্তিত কারণগুলো তাদের বোঝাতে হবে। সরকার এই সিস্টেমে আসতে বাধ্য। কারণ সরকার চাইবে না গোটা দেশ সারা বছর এভাবে লকডাউন থাকুক। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সব এভাবে অচল থাকুক। তাই সরকার এই সিস্টেমে আসতে বাধ্য।

চীনে করোনা ছড়ানোর পর সরকার এসব তালিকা করা, থানা ওয়ারি কমিটি গঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে এসব কমিটির মধ্যে নেবার অনেক সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু সেই সময়টা তারা অবহেলা করে কাটিয়েছে। কিন্তু্ এখন আর সেই অবহেলা করার সুযোগ নাই। সুযোগ নাই মানে একেবারেই নাই। টেস্ট বাড়ানোর পাশাপাশি দুর্যোগে মানুষকে খাবার সরবরাহ করার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।

আর যদি সরকার এখনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মত থানার সামনে বা রাস্তায় গরীব মানুষগুলোকে জড়ো করে সহজে ত্রাণ বিতরণের কর্মসূচি নেয়, তাহলে বুঝতে হবে আমাদের জন্য আরো বড় ধরনের বিপদ অপেক্ষা করছে। যা সামাল দেবার সামর্থ্য আমাদের নাই। কথা হলো টেস্ট টেস্ট টেস্ট এবং টেস্টের পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণেও একটি সিস্টেম অনুসরণ করতে হবে।

যে সকল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো বিচ্ছিন্নভাবে ত্রাণ বিতরণ করছে, তারা আসলে দীঘমেয়াদে আরো বড় জটিলতা তৈরি করছে। সবাইকে একই ছাতার নিচে এসে ত্রাণ বিতরণ করতে হবে। নইলে আপনি আর সামাল দিতে পারবেন না। একসময় ভলান্টিয়ারগণ করোনায় সংক্রামিত হবে। সবকিছু ভেঙে পরবে। সবকিছু ভেঙে পরার আগেই সরকারিভাবে এই সিস্টেম দাঁড় করাতে হবে।

যারা আমার পয়েন্টগুলো ভুল বুঝবেন বা নিজেদের অতিরিক্ত মানবিক ভেবে এড়িয়ে যাবেন, তারাও মনে রাখেন, আরো কয়েকদিন গেলেই এই সিস্টেম আপনাদের মাথায়ও কাজ করবে। মনে রাখতে হবে এটা ঘূর্ণিঝড় বা বন্যার মত দুর্যোগ নয় যে, যে কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাদের ইচ্ছামত মত ত্রাণ দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব সারলেন। এটা একটা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। ফলে এটাকে অবশ্যই সিস্টেমের মধ্যেই করতে হবে।

আমার এই ভাবনার সাথে আপনিও আপনার মতামত যুক্ত করতে পারেন।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৭

খালিদ লামি বলেছেন: একদম মনের কথাগুলো বলেছেন, আমি আপনার মত গুছিয়ে লিখতে পারিনা।

২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৮

জামমু ও কাশ্মীর বলেছেন: করোন ভাইরাস জ্যামু ও কাশ্মিরেও ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে Jammu news

৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৪

ক্ষুদ্র খাদেম বলেছেন: খুবই গুছিয়ে কিছু অপ্রিয় সত্যি কথা বলেছেন :((

আমাদের এখনো হয়ত সময় আছে, কিন্তু যেভাবে ছড়ানো ছিটানো উপায়ে এখন আমরা চলছি, তাতে সুযোগ আর কতদিন থাকবে সেটাই চিন্তা /:)

৪| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এত সহজ একটা জিনিষ কেন তারা বোঝেনা ভেবে অবাক হই।

মন্ত্রনালয় থেকে এলাকা ভিত্তিক, ভোটার আইডি কার্ড নাম্বার ধরে ধরে কত সহজেই কাজটি করা যায়।
এবং মন্ত্রনালয় স্রেফ দেখভালের কাজটা করবে যেন একই এলাকায় রিপিটেশন না হয়.. সরকারী এবং এনজিওর মাঝে
সুষ্ঠু সমন্বয় করার মাধ্যমেই তা করা উচিত।

পোস্টে ++++

৫| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:১২

বিজন রয় বলেছেন: +++++

কিন্তু বাহাদুরগণ এসব বুঝবে না।

৬| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন:

৭| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৩৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: Right

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.