নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

এসো নিজে করি নয়, এসো সবাই করি

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৫৯

মনে রাখতে হবে- আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা যেমন নাই, তেমনি আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। আবার আমাদের রাজনৈতিক দক্ষতা তথৈবচ! অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং রাজনীতি এই তিন দুর্বল কাঠামো নিয়ে আমাদের করোনা দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন, এখন পর্যন্ত সেই আয়োজন খুব একটা নজরে পরে না।

খেয়াল করুন- আমাদের ডাক্তারদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি সমন্বিত স্বাস্থ্য বিধি পেশ করা যেত। যেটি সরকার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারতো। আমাদের ডাক্তারদের একাধিক সংগঠন আছে। কিন্তু সেসব সংগঠন থেকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর কোনো সমন্বিত পরামর্শ বা বিধি সুপারিশ করা হয়নি। এখন পর্যন্ত যা করা হয়েছে, তা বিচ্ছিন্ন এবং একটার সাথে অন্যটার কোনো সমন্বয় নাই।

বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবরেটরিগুলোতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেবার মত উদ্যোগ এখনো নাই। অথচ এই জরুরি দুর্যোগের সময় বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবগুলোর এই সেবা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা উচিত। সারা বছর যারা গণহারে ব্যবসা করতে পারে, তারা কেন এখন করোনা ইউনিট চালু করতে পারবে না?

বেসরকারি ল্যাবগুলোতে কেন করোনা ভাইরাসের টেস্ট চালু করা যাচ্ছে না? কঠিন কঠিন রোগের যারা সারা বছর টেস্ট করতে পারে, তারা নিশ্চয়ই করোনা টেস্ট করতেও সক্ষম। তাহলে এসব বেসরকারি ল্যাবগুলোতে কেন এখনো টেস্ট করার সুযোগ তৈরি করা যাচ্ছে না? জরুরি ভিত্তিতে এসব বেসরকারি ল্যাবে টেস্ট করার ব্যবস্থা করতে হবে।

আরেকটা জিনিস খেয়াল করুন- যেসব সরকারি হাসপাতালে করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা চলছে, সেখানের দুরাবস্থার কথা ইতোমধ্যে সবাই জানেন। ঢাল নাই তলোয়াড় নাই নিধি রাম সর্দার অবস্থা। ইতোমধ্যে অনেক ডাক্তার-নার্স করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। এমনকি তাদের জন্য এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটা কার্যকর রোস্টার তৈরি করতে পারেনি। চুরিচামারি, অদক্ষতা আর ভেজাল নিয়ে তারা বড় বড় কথা বলছে।

করোনা দুর্যোগকে মোকাবেলা করতে গোটা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেই কাজে লাগাতে হবে। শুধু সরকারি সেবা পাওয়ার আশায় বসে থাকলে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সরকারি হাসপাতালগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যাবে। বিপদে পরবে অন্যান্য সাধারণ রোগীরা। ইতোমধ্যে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা প্রায় ধ্বসে গেছে। এজন্য ডাক্তার সমাজের ভূমিকা কী হবে, তার সমন্বিত উদ্যোগ চোখে পড়ে না। কিন্তু তাদের বিভিন্ন সংগঠন সারা বছর নানান কিসিমের কার্যক্রম করে। কিন্তু করোনা যুদ্ধে সরাসরি সামনের সারির যোদ্ধা হিসেবে তাদের কৌশলগুলো লিখিতভাবে প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

এবার আসুন শিক্ষক সমাজের দিকে। করোনা যুদ্ধে দেশের অর্থনৈতিক কৌশল কী হবে? সেরকম কোনো কৌশলপত্র এখন পর্যন্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ একত্রিত হয়ে গঠন করেননি। এই সময়ে শিক্ষক সমাজের উচিত ছিল জরুরি দুর্যোগ মোকাবেলায় দেশের জন্য একটি সমন্বিত জরুরি অর্থনৈতিক কৌশলপত্র তৈরি করে, সেটি প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো। নইলে তারা কীসের শিক্ষক? দেশের দুর্যোগ মুহূর্তে যদি তারা জরুরি সেবা দিতে না পারে, তাহলে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের সারা বছর কী পড়ান?

আমি দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ থেকে এরকম কোনো অর্থনৈতিক কৌশলপত্র তৈরির কোনো উদ্যোগ দেখিনি। সবকিছুই সরকার করে দেবে, আর সেজন্য সবাই হাতগুটিয়ে কোয়ারেন্টাইন পালন করলে হবে? সরকারের ব্যবস্থাপত্রে ইতোমধ্যে নানান কিসিমের ভুলভাল দৃশ্যমান। তারা একটা জিনিস শিখেছে- সবাইকে ঋণ প্রদান করবে, আবার সেটার কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নাই। স্রেফ ঘোষণা দেওয়ার জন্য ঘোষণা। বক্তৃতার মাঠে অনেকটা ক্লাপ পাওয়ার মত।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্থনীতি ছাড়াও অনুজীব বিজ্ঞান, দুর্যোগ ব্যবস্থপনার মত বিষয় পড়ানো হয়। শিক্ষকদের সেই জ্ঞানকে কেন এখনো কাজে লাগানোর উদ্যোগ নাই? এমনিতে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের নির্বাচিত দল আছে। সেসব সাদা-নীল শিক্ষক নেতৃবৃন্দ এখন কী করছেন? সরকারের জন্য একটি জরুরি ব্যবস্থাপত্র বা কৌশলপত্র কী তারা প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠাতে পারে না? শিক্ষক সমাজের উচিত এখন একটি জরুরি অর্থনৈতিক কৌশলপত্র প্রধানমন্ত্রী বরাবর দ্রুত পেশ করা।

প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে নির্বাচিত এমপিদের পরিবর্তে জেলার দায়িত্ব সচিবদের উপর ন্যস্ত করেছেন। কারণ চাল চোরদের পক্ষে এমপিদের অদৃশ্য সাফাই গাওয়া, এমনকি আদালতে পর্যন্ত চাল চোরের পক্ষে এমপির উপস্থিতির কারণে এমপিদের উপর তিনি অনেকটাই আস্থা হারিয়েছেন। সচিবরা হয়তো অধস্তনদের দিয়ে একটা শৃঙ্খলা ধরে রাখতে পারবে, এই আশায় এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু সেখানে এমপিরা যে প্রভাব খাটাবে না, তা কেউ বলতে পারে না। আমাদের এমপিরা কেন এখন অদৃশ্যমান? কেন তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছেন?

কারণ ব্যবসায়ী এমপি দিয়ে সংসদ চালানো যত সোজা, দুর্যোগের সময় মানুষের সেবা করানো তত কঠিন। তিন মাস সময় পাবার পরেও এসব এমপি-মন্ত্রীরা মিডিয়ায় বড় বড় আজগুবি বুলি ছুড়েছেন। এখন সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন। কারণ তাদের উপর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আস্থা হারিয়েছেন। যে কারণে তিনি সচিবদের উপর নির্ভর করেছেন। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব দেওয়া উচিত সেনাবাহিনীকে। ত্রাণ বিতরণ থেকে শুরু করে তারা কার্যকর কোয়াারেন্টাইন ও লকডাউন পালন করতে অন্যদের থেকে এগিয়ে।

দেশে হাজার হাজার এনজিও, নাগরিক সমাজের নামে হাজার হাজার বুদ্ধিজীবী। তারা এখন কোথায়? এনজিওগুলোর পক্ষ থেকে কী প্রধানমন্ত্রী বরাবর কোনো সমন্বিত কৌশলপত্র জমা দেওয়া হয়েছে? করোনা দুর্যোগের সময় সরকারি প্রশাসনের পাশাপাশি তারা কীভাবে ভলান্টিয়ার সেবা দেবে, কীভাবে ত্রাণ সহায়তা দেবে, সেই কৌশল কী দেওয়া হয়েছে? তাদের নেতারা দেখি বিচ্ছিন্নভাবে টেলিভিশনে টকশো মারাতে আসেন। তাদের পক্ষ থেকে সমন্বিতভাবে কী কৌশল নেওয়া হয়েছে?

মোদ্দা কথা হলো- একা সরকারের পক্ষে করোনা দুর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব না। সবাইকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসতে হবে। সরকার যেহেতু তিন মাস অবহেলা করে এখন বুঝতে পেরেছে যে, ভিআইপি হাসপাতাল বানিয়েও শেষ রক্ষা হবে না। তাই সকল রাজনৈতিক দল, সকল ডাক্তার সমাজ, শিক্ষক সমাজ, বিভিন্ন পেশাজীবী শ্রেণি, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, সবাইকে একই ছাতার নিচে এসে এই করোনা দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে। নইলে আগামী দুই সপ্তাহ পরে সেই সুযোগও আর থাকবে না।
-------------------
২৩ এপ্রিল ২০২০

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:১১

রাজীব নুর বলেছেন: Freedom is not given, it is taken.
Netaji Subhas Chandra Bose.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.