নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

শ্রমিক ছাটাই এবং ইভ্যাকুয়েশন হবে আগামীতে সবচেয়ে বড় সমস্যা

০৭ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:০৭

আজ আমি যে বিষয় নিয়ে কথা বলবো, তা নিয়ে ধীরে ধীরে অনেক বিশেষজ্ঞরা আরো বড় বড় বিবৃতি দেওয়া শুরু করবেন। অনেক দেশ যখন এই পরিস্থিতি ফেস করবে, তখন তাদের এসব কথা আরো জোড়ালোভাবে মনে পরবে। আমি আলোচনার সূত্রপাত করছি, যাতে অন্যরাও এই সূত্র থেকে চিন্তা ও কৌশল বের করার উপায় ভাবতে পারেন।

করোনা মহামারী পরবর্তী বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার পাশাপাশি দুটি বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে। প্রথমটি হলো শ্রমিক ছাটাই আর দ্বিতীয়টি হলো ইভ্যাকুয়েশন। অর্থনীতির চাকা পুরোপুরি সচল হতে অন্তত তিন থেকে পাঁচ বছর লেগে যাবে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে অনেক কলকারখানা থেকে প্রচুর পরিমাণে শ্রমিক ছাটাই হবে। উৎপাদন খরচ উঠানোর জন্য ন্যূনতম যতটুকু শ্রমিক প্রয়োজন, অধিকাংশ বিনিয়োগকারীগণ অর্থনীতির সেই প্রাথিমক স্তরের ভারসাম্য নীতির দিকে ঝুঁকবে।

ফলে সারাবিশ্বে প্রচুর মানুষ বেকার হয়ে পরবে। অনেকেই পেশা বদল করতে বাধ্য হবে। এখন যে গার্মেন্টস শ্রমিক, তাকে হয়তো আবার কৃষি শ্রমে ফিরে যেতে হবে। এখন যে প্রাইভেট কারের ড্রাইভার, তাকে হয়তো রিকশা চালাতে হবে। পাশাপাশি আউটসোর্সের জন্য প্রচুর নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এখন যিনি ২৫ জন কর্মচারি নিয়ে অফিস পরিচালনা করেন, তিনি হয়তো আউটসোর্সের মাধ্যমে পাঁচ জনের থেকে সেই সুবিধা নিতে চাইবেন।

সবচেয়ে বেশি সমস্যা হবে অদক্ষ শ্রমিকদের। অদক্ষ শ্রমিকরা প্রথম ছাটাই হবে। তাদের নতুন করে প্রশিক্ষণ দিয়ে শ্রমবাজারে ফিরে আসতে এই পুরো আপদকালীন সময় পার হয়ে যাবে। তবে দক্ষ শ্রমিকদের এই সময়ে কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি পাবে। তারা ডুয়েল পদ্ধতিতে কাজ করবে। চাকরি করার পাশাপাশি তারা আউটসোর্সিং করে বাড়তি আয় করবে।

প্রচুর কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ করে স্বল্প পুঁজির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো মুখ থুবড়ে পরবে। মধ্যম পুঁজির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রমিক ছাটাই করে টিকে থাকার লড়াই করবে। আর বিশাল পুঁজির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকি এড়ানো নীতি গ্রহণ করবে, ফলে পুঁজি বাজারে একটা কৃত্রিম সংকট এই পুরো আপদকালীন সময় ধরে বিরাজ করবে।

প্রচুর সংখ্যক শ্রমিক ছাটাইয়ের ফলে নতুন যে সমস্যা তৈরি হবে, সেটি আবার ইভ্যাকুয়েশন করতে রাষ্ট্রগুলোকে বাধ্য করবে। মনে করুন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অন্তত ৭০ লাখ বাংলাদেশী নানান পেশায় কাজ করেন। তার যদি অর্ধেক বা অন্তত ২০ লাখ শ্রমিকও ছাটাই হয়, তাহলে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে নতুন করে এই ইভ্যাকুয়েশন সামাল দিতে হবে।

বিদেশে ছাটাই হওয়া শ্রমিকদের দেশে ফিরিয়ে আনা সরকারের দায়িত্ব হবে। এসব বেকার শ্রমিকদের দেশে ফিরিয়ে এনেও খুব তাড়াতাড়ি কোথাও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে না। ফলে এই বিশাল আকারের ইভ্যাকুয়েশন থেকে দেশে বেকার মানুষের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাবে।

প্রতি বছর ডিফেন্স বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীতে যে পরিমাণ নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়, সেই সংখ্যাটি ধীরে ধীরে শূন্যতে নেমে আসতে পারে। কারণ সরকারকে বাধ্য হয়ে প্রতিরক্ষা ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও বাড়বে। এতে আরেকটি জিনিস হবে যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের সংখ্যাও কমে যেতে পারে। বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়ার হারও বাড়বে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে পৃথিবী যে অবস্থায় ছিল, সেরকম কর্মচঞ্চল পৃথিবীতে ফিরে আসতে ২০২৫ সাল অতিক্রম করতে পারে। এই ৫ বছরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। বিশেষ করে শ্রমিক অসন্তোষ ব্যাপারটি সামাল দিতে সরকারগুলো হিমসিম খাবে। অনেক দেশেই সরকার বদল হবে। সামরিক ক্যু বেড়ে যেতে পারে।

করোনা মহামারী থেকে পরবর্তী বিশ্বে শ্রমিক ছাটাই এবং ইভ্যাকুয়েশনের মত এই দুই বড় সমস্যা আরো নানান কিসিমের সমস্যা তৈরি করবে। যা সামাল দিতে সরকারগুলোকে সারা বছর ব্যস্ত সময় কাটাতে হবে। তবে এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার এক নতুন ব্যবস্থা চালু হতে পারে। নিউ কমিউন সিস্টেম। পুঁজি এবং শ্রম মিলে এক নতুন কমিউন সিস্টেম। পুঁজি এবং শ্রমের মধ্যে নতুন ভাগাভাগি করা এক সমাজব্যবস্থার দিকে দেশগুলো আকৃষ্ট হতে পারে।

করোনা মহামারী পরবর্তী নীতি বা কৌশল কী হবে, তা যারা যত আগে ঠিক করতে সক্ষম হবে, তারা তত দক্ষতা দেখাতে পারবে। যারা এই কৌশল নির্ধারণে হাবাগোবিন্দ ভাব দেখাবে, তাদের পতন হবে। পরিবারতন্ত্র ভেঙে সেখানে ছোট ছোট গ্রামতন্ত্র গঠিত হবে। গ্রামের কয়েক পরিবার মিলে এক বৃহৎ পরিবার নতুন ব্যবস্থায় উৎপাদনের দিকে যাবে। হয়তো একশো বা দুইশো বা পাঁচশো পরিবার মিলে সমবায় সমিতির মত নতুন উৎপাদন ব্যবস্থার দিকে যাবে।

সেখানে পুঁজি আর শ্রমের ভাগাভাগি হবে। যার পুঁজি নাই সে হয়তো শ্রম দিয়ে ভাগ বসাবে। যার পুঁজি এবং শ্রম দুটোই আছে, সে হয়তো সমবায় সমিতিতে বেশি ভাগ পাবে। অনেকটা শেয়ারের মত। একশো শেয়ার হয়তো ৭০/৮০ জনের মধ্যে ভাগাভাগি হবে। যা উৎপাদন হবে, তা এই শেয়ার অনুসারে ভাগাভাগি হবে। করোনা মহামারী পরবর্তী সময়ে শ্রমিক ছাটাই এবং ইভ্যাকুয়েশন ব্যাপার দুটো যে ঘঠবেই, এটা আমি প্রায় শতভাগ নিশ্চিত। এ বিষয়ে আপনার মতামতও এখানে যুক্ত করতে পারেন। ভাবুন এবং ভাবা প্রাকটিস করুন।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: আল্লাহ যা কপালে লিখে রেখেছেন তাই হবে।

২| ০৭ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৯

জাফরুল মবীন বলেছেন: আপনার ভাবনার সাথে পূর্ণ সহমত পোষণ করছি।কিন্তু যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন তারা তাদের নিজ বুদ্ধিতে চলবে বলে মনে হয়।আর সেখানে সেই লেভেলের দক্ষ ও দূরদর্শীতাসম্পন্ন লোকজন আছে বলে মনে হয় না।আমার ধারনা ভুলও হতে পারে।

৩| ০৭ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


কোন কোন দেশে সামরিক ক্যু হতে পারে?

৪| ০৭ ই মে, ২০২০ রাত ৯:৩০

ঢাবিয়ান বলেছেন: প্রচন্ড খারাপের দিকে যাচ্ছে আমাদের দেশের পরিস্থিতি। কোন আশার আলো দেখছি না।

৫| ০৮ ই মে, ২০২০ রাত ৮:০৩

মেটালক্সাইড বলেছেন: নেচারাল এনার্জি রিসোর্সগুলোর ডি-ভেল্যুয়শন মারাত্নক সমস্যা হিসেবে করোনা পরবর্তীকালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
প্রশ্ন ওয়ার্ল্ডের বিগ প্লেয়াররা কি স্ট্র্যটেজি গ্রহণ করবে? আপনার প্রিডিকশানগুলো অনেকাংশে সঠিক। ইনফ্যাক্ট এর কনসিকোয়েন্স অলরেডি দেখা যাচ্ছে সাম্প্রতিক জাতীয় দৈনিকগুলোই মধ্যপ্রাচ্য থেকে এমবেসিগুলোকে শ্রমিক ফেরত নেওয়ার প্রেসারে।
নিউ কমিউন সিস্টেম যেভাবে বলেছেন একটু বিস্তৃত করলে ধারণা করা যায়, করোনা পরবর্তী ভার্চ্যুয়াল ইকো প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে, যার কমিউন হিসেবে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ধারণা ডেভেলাপ করবে।
করোনা পরবর্তী সাউথ এশিয়ার ইকোজোন অতটা নেগেটিভ ইম্প্যাকট নাও হতে পারে। এর কারণ চীন বেইজ যে প্রোডাকটিভিটি অর্থনীতি সেটা পরিবর্তিত হতে পারে। কয়েকদিন আগে ভারতের উওরপ্রদেশে আমেরিকা ও ইউরোপের ইনভেস্টররা তাদের বিজনেস সীফট করার প্রোপোজাল নিয়ে আলাপ করেছেন। পাকিস্তানও চাইছে এই সুযোগটা গ্রহণ করতে।
লেম্যান সিচুয়েসন সম্পর্কে এখনো বুঝা যাচ্ছে না, কারণ উৎপাদন ব্যবস্থার অল্টারনেটিভ কিছুই নেই।
আর বাংলাদেশ হাওয়া যেদিকে সেদিকে হেলে যাবে। আমদের অর্থনীতির ডিফেন্ডেবল কোন কিছুই নেই। টুনকো কিছু উৎপাদন
শিল্প দিয়ে আমাদের অর্থনীতি চলছে।
তবে হ্যা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক জনগোষ্টির জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
এই বিশাল জনসমষ্টির চাহিদা খুব স্বল্প বিধায় অর্থনৈতিকভাবে ভাল কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে পরিস্থিতি বদলে যাতে পারে।
এনালাইসিস চমৎকার হয়েছে।
প্রিয়তে নিলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.