নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

১৩ আগস্ট বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একটি শোকের দিন!

১৩ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:০১

১৩ আগস্ট বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে একটি শোকের দিন। ৯ বছর আগে ২০১১ সালের আজকের দিনে মানিকগঞ্জে ‘কাগজের ফুল’ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের লোকেশন নির্বাচন শেষে ঢাকায় ফেরার পথে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই ৫ জন নিহত হয়েছিলেন। হতভাগ্য এই ৫ জন ছিলেন- ‘কাগজের ফুল’ চলচ্চিত্রের নির্মাতা তারেক মাসুদ, চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীর, তারেক মাসুদের সহকারী ওয়াসিম, জামাল ও মাইক্রোবাসের চালক মোস্তাফিজ।

মাইক্রোবাসে মোট ৯ জন যাত্রী ছিলেন। দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যান ৪ জন। তারা হলেন- ক্যাথরিন মাসুদ, চিত্রশিল্পী ঢালী আল-মামুন ও তাঁর স্ত্রী চিত্রশিল্পী দিলারা বেগম জলি ও তারেক মাসুদের একজন সহকারী মনীশ রফিক। তারেক ও মিশুককে বহনকারী মাইক্রোবাসটির সঙ্গে চুয়াডাঙ্গাগামী একটি বাসের (চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স) সংঘর্ষে ওই দুর্ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছিল।
ওই ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মানিকগঞ্জে মোটরযান অর্ডিন্যান্সে ১২৮ ধারায় বাস মালিক, চালক ও ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে দুটি মামলা করেন।

পরে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে জনস্বার্থে হাইকোর্টে বদলির নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করলে মামলা দুটি হাইকোর্টের চলে আসে। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাস মালিক, চালক ও সংশ্লিষ্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে নির্দেশ দেন বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

রায়ের কপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। এরমধ্যে বাসের (চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স) তিন মালিক দেবেন ৪ কোটি ৩০ লাখ ৮৫ হাজার ৪শ ৫২ টাকা, বাস চালক জমির উদ্দিন দেবেন ৩০ লাখ টাকা এবং রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্স কোম্পানি দেবেন ৮০ হাজার টাকা। তিন মালিক সমান হারে টাকা দেবেন। এ টাকা ক্যাথরিন মাসুদ, নিহতের ছেলে নিষাদ মাসুদ ও বৃদ্ধা মা নুরুন নাহার পাবেন বলে রায়ে বলা হয়।

এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করায় মামলাটি এখন আপিলে চুড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। অন্যদিকে, মিশুক মুনীরের মামলাটি হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।

ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত সেই বাস চালক জামির হোসেন কারাগারে মারা গেছে। গত ১ আগস্ট ২০২০ ঈদের দিন সকালে কাশিমপুর কারাগার থেকে জামির হোসেনকে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিলে সেখানে তিনি মারা যান।

চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে ২০১৭ সালে হাইকোর্ট আদেশ দিলেও সেটি এখন আপিল বিভাগে বিচারাধীন। অন্যদিকে মিশুক মুনীরের পরিবারের ক্ষতিপূরণ মামলাটি এখনও হাইকোর্টে পড়ে আছে।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের এত বড় একটি ক্ষতি'র বিচারের রায়ের যদি এই দশা হয়, তাহলে নিশ্চয়ই সবাই বুঝতে পারেন- এদেশে চলচ্চিত্র কতটা অবহেলিত! প্রতিবছর ১৩ আগস্ট আসে, আর আমরা কিছু শোকগাঁথা লিখি, কিন্তু সরকারের এতে কিছুই যায় আসে না। তারেক মাসুদ- মিশুক মুনীরদের জন্য এই রাষ্ট্র যথাযথ সম্মান দেখায়নি!

বিএফডিসি'র বাইরে যারা বিকল্পধারায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, তাদের প্রতি সরকারের এই ঔদাসীন্যতা একদম মেনে নেওয়া যায় না। বিএফডিসি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এখন কেবল একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান। যেখানে কিছু সিন্ডিকেটের ব্যানারে চলে বস্তাপচা সিনেমার হাঁকডাক, যা দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্র ডুবতে ডুবতে এখন ডুবেই আছে।

অথচ ভিন্নধারায় যারা চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, তাদের প্রতি সরকারের একচক্ষু নীতি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারের দিকেই নিয়ে যাচ্ছে। কাগুজে কিছু নিয়ম-কানুন আর সিন্ডিকেটের দৌরাত্মে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র আটকে আছে সেই আতুর ঘরেই! আমি নিজেও একটি সিনেমা বানিয়েছি 'হরিবোল' নামে। ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর সেন্সর বোর্ডে 'হরিবোল' চলচ্চিত্রটি জমা দিয়েছিলাম। বিএফডিসি'র কথিত ছাড়পত্রের দোহাই দিয়ে আমার সিনেমাটিও আটকে আছে এই লালফিতার জাতাকলে!

সবচেয়ে অবাক করার বিষয়- আমার 'হরিবোল' চলচ্চিত্রটি কেন সেন্সর দিচ্ছে না, তা নিয়ে বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোও আজ পর্যন্ত কোনো তৎপরতা দেখায়নি। বিএফডিসি'র বার্ষিক বনভোজন-এ নিমন্ত্রণ মিস হবার ভয়ে মিডিয়া বিএফডিসি কিংবা সেন্সর বোর্ডের বিপক্ষে কিছু লেখে না। এইটাই হলো বাস্তবতা! এই হলো বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের বর্তমান চিত্র।

আরো দুঃখের বিষয় হলো- সেন্সর বোর্ড কেন আমার সিনেমাটি আটকে রেখেছে, তা নিয়ে সিনেমার সাথে জড়িত আমার বন্ধুরা থেকে শুরু করে ভবিষ্যতে যারা চলচ্চিত্র বানাবে, তাদের কারো থেকেও কোনো ধরনের প্রতিবাদ আমার নজরে পড়েনি। দেখা হলে সবাই ভীষণ প্রগতিশীল, প্রতিবাদী কিন্তু তলে তলে সবাই বিএফডিসি'র সিন্ডিকেটের সাথে হাত মিলিয়ে নিজেদের কাজটি করে নিচ্ছেন। বাংলাদেশে যারা সিনেমা বানাবেন, তারা এসব বিষয়গুলো দয়া করে জেনেশুনে তারপর মাঠে নামবেন। কারণ চলচ্চিত্র বানাতে এসে এখানে আমি নিজেই একজন ভিক্টিম! তারেক ভাই ও মিশুক ভাই'র আত্মার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য!

-------------------------------
রেজা ঘটক
কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা
চলচ্চিত্র: হরিবোল (১০ ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে সেন্সর বোর্ডে ঝুলে আছে)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৫৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: হরিবোল ছবিটা সেন্সর বোর্ডে ঝুলে আছে কেন। ছাড়াতে টাকা লাগে নাকি?

২| ১৩ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:২৭

অন্তরা রহমান বলেছেন: চলচ্চিত্র ইস্যু না, ইস্যু হচ্ছে সড়ক দূর্ঘটনার মামলা যার রায় বছর পার হয়ে গেলেও হয় না!

৩| ১৩ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:১১

রাজীব নুর বলেছেন: সড়ক দূর্ঘটণা আমাদের অনেক ক্ষতি করে দিলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.