নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রসঙ্গ অমর একুশে বইমেলা ২০২১!

১৮ ই নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:০৬

ক. করোনা মহামারী যদি শীতের মধ্যে সেকেন্ড ওয়েব হিশেবে আরো নাজুক পর্যায়ে চলে যায়, তখন সরকার বাধ্য হয়ে আবার লকডাউন দেবে! তখন বইমেলা করার ঝুঁকি অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে অমর একুশে বইমেলা এবার অনলাইনে করতে হতে পারে! পরিস্থিতি সেদিকে গেলে 'অনলাইন বুক ফেয়ার' করার জন্য প্রকাশকদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। যাতে বইমেলায় নতুন প্রকাশিত বইয়ের তালিকাটি তারা সঠিক সময়ে এই কমিটির কাছে প্রদান করবে। বইয়ের নাম, লেখকের নাম, বইয়ের ধরন, প্রকাশনার নাম, বইয়ের মূল্য- এই পাঁচটি তথ্য প্রতিটি বইয়ের জন্য প্রদান করা বাধ্যতামূলক। বইটি একজন ক্রেতা কীভাবে ক্রয় করতে পারবে, তার উপায়ও সেখানে বলে দিতে হবে! অর্থ্যাৎ প্রত্যেক প্রকাশকের বিকাশ/ব্যাংক অ্যাকাউন্ট/বিকল্প পদ্ধতি উল্লেখ করতে হবে।
করোনা মহামারী যদি বাস্তবিক অর্থেই সেরকম ঝুঁকির দিকে যায়, তখন অনলাইনে অমর একুশে বইমেলা করার ব্যাপারটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকল্পনায় রাখতে হবে।

খ. যদি করোনা পরিস্থিতি বর্তমান পরিস্থিতির মত থাকে, সেক্ষেত্রে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই অমর একুশে বইমেলা ২০২১ আয়োজন করা যাবে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কিছু নতুন শর্ত যুক্ত করতে হবে। যেমন-
১. অতিরিক্ত ভিড় এড়াতে বইমেলায় টিকিট সিস্টেম চালু করা। প্রতিদিন প্রতিবার বইমেলায় প্রবেশের জন্য ন্যূনতম ১০০ টাকা হবে টিকিটের মূল্য। শিশুরা টিকিটের বাইরে থাকবে। স্টুডেন্টদের জন্য আইডি কার্ড দেখালে টিকিট মূল্য হবে ৫০ টাকা। এই টাকায় বইমেলায় আগতদের ফ্রি মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, প্রবেশপথে স্প্রে- এ ধরনের সার্ভিস চালু করা যাবে। এতে খামাখা যারা প্রতিবছর বই না কিনে বইমেলায় ভিড় করে, তাদের সংখ্যা কমবে। আবার প্রকৃত বইপ্রেমীদের জন্য ভিড় এড়িয়ে বই কিনতে সুবিধা হবে।
২. প্রকাশক ও লেখকদের ক্ষেত্রে পুরো ফেব্রুয়ারি মাসের বইমেলায় প্রবেশের জন্য একটি পাশ প্রদান করা। ছবি সম্মলিত সেই পাশ/আইডি কার্ড দেখিয়ে তারা টিকিট ছাড়াই বইমেলায় প্রবেশ করতে পারবে।
৩. বইমেলার স্টল বিন্যাসে অন্য বছরের তুলনায় এবছর কিছুটা ভিন্ন চিত্র আনতে হবে। স্বাধীনতা স্তম্ভকে কেন্দ্র করে কাঁচের টাওয়ারের তিনপাশকে (লেকপার ঘিরে) এবার বইমেলার আওতায় আনতে হবে। সেক্ষেত্রে জায়গা পাওয়া যাবে বেশি। স্টল বিন্যাসে গুচ্ছ গুচ্ছ ক্লাস্টার করতে হবে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ'র নামে সাতটি আলাদা চত্বর রাখা যেতে পারে। এছাড়া বাংলাসাহিত্যের প্রথিতযশা কবি-সাহিত্যিকদের নামে আলাদা আলাদা চত্বর করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ছোট-মাঝারি-বড় এবং প‌্যাভেলিয়নগুলোকে সমানভাবে বিন্যাস করতে হবে। প্রত্যেকটি চত্বরে যাবার জন্য সরাসরি লিংক ওয়ে রাখতে হবে।
৪. স্টল বিন্যাসের পরিমাপটি হবে লেকপাড় থেকে সমান দূরত্ব নিয়ে তিনপাশে পরিমাণমত স্টল বরাদ্দ করা। উদ্যানের ভেতরে যে পাকা রাস্তা রয়েছে সেই রাস্তার বাহির পাশে কোনো স্টল না দেওয়া। কেবলমাত্র লিটলম্যাগ চত্বরকে উন্মুক্ত মঞ্চের পাশে রাখা।
৫. নতুন বইয়ের প্রকাশনা উৎসবটি উন্মুক্ত মঞ্চের ভেতরে নিয়ে গেলে সবচেয়ে ভালো হয়। সেক্ষেত্রে গ্যালারিতে সবাই জায়গা রেখে আরামেই বসতে পারবেন। সন্ধ্যা ৬টা বা সাড়ে ৬টার পর উন্মুক্ত মঞ্চটি নাটকের জন্য ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থ্যাৎ নতুন বইয়ের প্রকাশনা উৎসবটি সুনির্দিষ্ট টাইমফ্রেমে বেধে দেওয়া।
৬. 'লেখক বলছি' মঞ্চটি গতবছরের মত পামট্রির পাশে রাখাই ভালো। সেক্ষেত্রে সামনের চত্বরে আরো বেশি চেয়ার বা বসার ব্যবস্থা করতে হবে। ইনফ্যাক্ট পুরো বইমেলা প্রাঙ্গন জুড়েই আলাদা আলাদা চত্বর অনুযায়ী বসার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৭. খাবারের স্টলগুলো রমনা কালীমন্দিরের দিকে রাখতে পারলেই ভালো। বইমেলার প্রবেশ পথে কোনো খাবারের দোকান রাখা যাবে না।
৮. বইমেলায় প্রবেশপথ এবং নির্গমনপথ রাখতে হবে অনেকগুলো। প্রতিবছরের মত বাংলা একাডেমির উল্টোপাশের গেট, টিএসসি গেট, রমনা কালীমন্দির গেট ছাড়াও এবার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের দিকের গেট, ছবিরহাটের গেট চালু করতে হবে। সেক্ষেত্রে বইমেলায় প্রবেশ এবং নির্গমনের জন্য ন্যূনতম পাঁচটি গেট রাখতে হবে। এতে ভিড় এড়িয়ে প্রবেশ ও নির্গমন সহজ হবে।
৯. বইমেলা চলাকালীন সময়ে শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বইমেলার শুরুতে এই নিয়মটি মেনে চললেও বইমেলা জমে উঠলেই রাস্তাগুলো খুলে দেয়। যা মানুষের স্বাভাবিক চলাচলের জন্য চরম ভোগান্তির সৃষ্টি করে। প্রয়োজনে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের গেট থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশুপাকের পাশের সড়কটি গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে যারা গাড়িতে যাবে তারা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের গেট ব্যবহার করবেন।
১০. অমর একুশে বইমেলায় নোটবই, গাইডবই টাইপের প্রকাশকদের জন্য বইমেলায় নিষেধাজ্ঞা আনতে হবে। অমর একুশে বইমেলায় কোনো নোটবই বা গাইডবই বিক্রি করা যাবে না।
১১. বইমেলার প্রতিটি প্রবেশপথের সুবিধাজনক স্থানে পুরো বইমেলার মানচিত্র টানাতে হবে বইমেলার প্রথম দিন থেকেই। যাতে বইমেলায় আগতরা মানচিত্র দেখে তার প্রকাশনার অবস্থানটি চট করেই বুঝে নিতে পারে। প্রতি বছর আমরা বইমেলা প্রাঙ্গনের মানচিত্রের জন্য দাবি তুলি কিন্তু বইমেলার শেষপর্যন্ত এই দাবি অবহেলিত থাকে।
১২. বইমেলার তিনদিকেই টয়লেট ব্যবস্থা রাখতে হবে। পাশাপাশি কোনো ধরনের যুদ্ধ বা বিতর্ক না করেই একটি সুনির্দিষ্ট স্থানে ধূমপানের জন্য বরাদ্দ করতে হবে। বইমেলায় কবি-সাহিত্যিকরা ধূমপান করবেন তবে মূল মেলাপ্রাঙ্গনের বাইরে একটি নির্ধারিত জায়গায় গিয়েই করবেন। এটা পুলিশ দিয়ে হয়রানি করাটা প্রতিবছরই একটা বাড়তি বিড়ম্বনা তৈরি করে। যা বইমেলার শুরুতেই ফয়সালা হওয়া দরকার!
১৩. বইমেলার খাবারের দোকানের সামনে একটি মূল্যতালিকা শুরু থেকেই স্থাপন করতে হবে। খাবারের দোকানগুলো সবার পকেট কেটে ব্যবসা করে বই কেনার বারোটা বাজিয়ে দেয়। এই বিড়ম্বনা এড়ানোর জন্য কড়াকড়ি দরকার।
১৪. প্রতিবছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজেদের কাজের চাপ কমাতে সন্ধ্যা হওয়ার পর কয়েকটি প্রবেশপথ ও নির্গমন পথ বন্ধ করে দেয়। তখন বইমেলায় আগতদের বাড়তি বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। পুরো বইমেলার সময় সবগুলো প্রবেশপথ ও নির্গমন পথ সারাক্ষণ চালু রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
১৫. লিটলম্যাগ চত্বরে গণহারে লিটলম্যাগাজিনকে স্টল বরাদ্ধ বাতিল করতে হবে। যারা নিয়মিত ম্যাগাজিন প্রকাশ করে না, তাদের স্টল বরাদ্দ দেওয়া যাবে না।

আপাতত এই ১৫টি পয়েন্টে কথা বললাম। বইমেলার সার্বিক পরিকল্পনায় আমার থেকে বাড়তি কোনো পরামর্শ পেতে চাইলে আমি স্বেচ্ছায় তা দিতে রাজি আছি। কিন্তু বইমেলার কমিটিতে যারা নামসর্বস্ব গোবর-গনেশ তাদের রেখে খুব একটা লাভ হয় না। একটি চৌকশ টিম এই কাজটির দায়িত্ব নিলে বইমেলা পরিচালনা করতে অনেক সুবিধা হবে বলে আমি মনে করি।

বিনীত নিবেদক
রেজা ঘটক
কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৯

স্থিতধী বলেছেন: অনলাইন বই মেলার ব্যবস্থাটাই সবচেয়ে ভালো হবে। করোনা সিচুয়েশন খারাপের দিকে যাবার আশঙ্কা-ই বেশী।

২| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৩

অধীতি বলেছেন: ভালো পরিকল্পনা। এগুলোর সাথে অন্যান্যদের পরামর্শ পরিকল্পনা মিলিয়ে বেশ গোছালো বিড়ম্বনাহীন বই মেলা হতে পারে।

৩| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৫১

শাহ আজিজ বলেছেন: অনলাইন বেস্ট হবে , ঝুকি কম । প্রত্যেক প্রকাশক ফেসবুকে ( কারন প্রচারের দিক আর সবার ঝোঁক ফেসবুকের দিকে বেশি) অ্যাকাউন্ত করে চালাবেন ২৪ ঘণ্টা এককভাবে । একজন অর্ডার করলে বিকাশে টাকা প্রদান শেষে বই পাঠিয়ে দেবেন প্রকাশক । বিকাশ নিজের হলে নিরাপদ হবে । প্রকাশকের বিকাশ ভেরিফায়েড কিনা তা স্ক্রিনে দেখাতে হবে । এক্ষেত্রে গ্রুপ অর্ডার খুব ভাল ফল দেবে , ডেলিভারি খরচ কম হবে । আশাবাদী ।

৪| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার এবং দরকারী একটা পোষ্ট দিয়েছেন।

৫| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৪১

তৃণাঙ্কুর আহমেদ বলেছেন: ১ম প্রস্তাব সম্পর্কে বলি। আমি মাসের ৩০ দিনই মেলায় যাই। প্রতিবার ৫০ টাকা করে দিতে হবে বই বের করিনি বলে?
মাথা বটে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.