নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডাক্তার বনাম পুলিশ ও কিছু প্রাসঙ্গিক জিজ্ঞাসা!

১৯ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:১২

গতকাল এলিফ্যান্ট রোডে ডাক্তার বনাম পুলিশের যে ঘটনাটি ভাইরাল হয়েছে, তা নিয়ে আমার ছোট্ট মাথায় কিছু জিজ্ঞাসা কাজ করেছে! আমি পয়েন্ট আকারে বিষয়গুলো এখানে বলছি-

১. লকডাউনের মধ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যেমন তাদের দায়িত্ব পালন করছেন, তেমনি করোনা মহামারীতে চিকিৎসকরা সামনের সারির যোদ্ধা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এজন্য উভয় পক্ষকেই আমার স্যালুট জানাই। কিন্তু রাস্তার ঘটনাটি আপনি যদি পর্যবেক্ষণ করেন, আমি প্রথমেই জানতে চাইব- ভিডিওটির শুরুর অংশটি নাই কেন? নিশ্চয়ই পুলিশের সাথে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে চিকিৎসক ম্যাম গাড়ির দরজা খুলে বাইরে এসে তর্কে লিপ্ত হয়েছেন!

২. গাড়িতে যেহেতু হাসপাতালের স্টিকার লাগানো ছিল, পুলিশ ইচ্ছে করলেই গাড়িটি জরুরি সেবার নামে ছেড়ে দিতে পারতো! কিন্তু আমাদের দেশে একটা প্রবণতা হলো অনেকে যে প্রফেশনে নাই, সময় সুযোগ বুঝে গাড়িতে তারা এধরনের স্টিকার লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়। সেক্ষেত্রে পুলিশ দ্বিতীয় স্টেপে পরিচয়পত্র দাবি করতে পারে। পরিচয়পত্র দাবি করায় চিকিৎসক ম্যাম পরিচয়পত্র সঙ্গে নাই বলার আগে ছোট্ট একটা কথা বলতে পারতেন- স্যরি, আমি আইডি কার্ড সাথে রাখতে ভুলে গেছি! হয়তো এই ছোট্ট একটা স্যরি'তে ল্যাঠা চুকে যেত! পুলিশ এরপরেও সন্দেহ হলে তিনি নিজের পরিচয় দিতে পারতেন! এখানেই সমস্যাটির সমাধান হয়ে যেত! কারণ লকডাউনের সময় যেখানে জরুরি সেবায় নিয়োজিত সবাইকে বাধ্যতামূলক আইডি কার্ড সাথে রাখতে বলা হয়েছে, সেখানে সেই ভুলটির এভাবে সমাধান হতে পারতো! এই অংশটুকুতে কী ঘটেছিল, সেটি ভিডিওতে নাই, অর্থ্যাৎ ভিডিওটি অসম্পূর্ণ!

৩. এরপর আমরা উভয় পক্ষের তর্কবিতর্ক বাকবিতণ্ডা্ দেখলাম। খুবই সাধারণ প্রশ্ন- আমাদের প্রফেশনাল সার্ভিসগুলোতে মানুষের সাথে আপনি কীভাবে ব্যবহার করবেন, সেটি কী আদৌ শেখানো হয় না? একজন চিকিৎসক এই ভাষায় কথা কথা বলবেন কেন? তুই-তোকারি কোনো অফিশিয়াল ল্যাংগুয়েজ নয়। পুলিশের সাথে আপনি এই ভাষায় কথা বললে একজন সাধারণ রোগীর সাথে না জানি আপনি কী ভাষায় কথা বলেন? সুস্পষ্টভাবেই একজন চিকিৎসকের কাছ থেকে এরকম ভাষা আমাদের প্রত্যাশা নয়।

৪. মানুষের ক্ষমতা দেখানোর যে স্বাভাবিক টেন্ডেন্সি, এখানে চিকিৎসক ম্যাম ক্ষমতার অপব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন। ক্ষমতা পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো মোটেও কোনো সৎ উদ্দেশ্য হতে পারে না। প্রবল ক্ষমতাসম্পন্ন একজন মন্ত্রী মহোদয় আমার সামনে দিয়ে হেঁটে গেলে আমি ছালাম দিয়ে অতি সহজেই যেহেতু তাঁর সাথে করমর্দন পর্যন্ত করতে পারি, সেখানে তো মন্ত্রী মহোদয়কে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে দেখি না। বরং মন্ত্রী মহোদয় একজন সাধারণ নাগরিকের সাথে এধরনের সৌজন্য সাক্ষাতে খুশি হন। আর এধরনের সৌজন্যতা আমাদের সভ্যতাকেই সমর্থন করে। সেখানে একজন চিকিৎসক এত ক্ষমতা পকেটে নিয়ে ঘুরলে তিনি সাধারণ রোগীদের কীভাবে সামলাবেন?

৫. পুলিশ ওই চিকিৎসকের বাহাদুরির সামনে যখন ব্যাড কমেন্ট করেছে, তখন সেটা আইনের পোষাক গায়ে লাগিয়ে করাটা মোটেও শোভন নয়। আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীতে কী মানুষের সাথে কীভাবে আচরণ করা হবে, সে বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না? এমনকি আসামী ধরার সময়ও পুলিশের এধরনের অশোভন আচরণ মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। পুলিশ জনগণের বন্ধু হিসেবে একটি বিশেষ দায়িত্ব পালন করে থাকে। সেক্ষেত্রে পুলিশকে খুব সতর্কতার সাথে শোভন আচরণ করাটা খুবই প্রাসঙ্গিক! যা এখানে লঙ্ঘিত হয়েছে!

৬. ভিডিওটির শেষের দিকে পুলিশ যখন বিষয়টি থেকে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে তখন চিকিৎসক ম্যাম ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে পুলিশ থেকে উল্টো স্যরি আদায় করার জন্য গো ধরেছেন! এটা সুস্পষ্টভাবে ক্ষমতার অপব্যবহারের সামিল! যা মোটেও একটি সুস্থ সমাজের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়!

৭. কার বাবা মুক্তিযোদ্ধা আর কার বাবা বীরবিক্রম এই পরিচয় টেনে সুস্পষ্টভাবে উভয় পক্ষই মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবোজ্জ্বল সম্মানকে খাটো করেছেন। কথায় কথায় আপনি কার সন্তান সেই পরিচয় দেওয়াটা ক্ষমতার অপব্যবহার ও নিজেকে ক্ল্যাসিফাইড করার সামিল! একটি সভ্য সমাজে আপনি নিজেই নিজের দায়িত্বটুকু ঠিকমত পালন করলে বাবার পরিচয় টানার প্রশ্নই ওঠে না!

৮. আপনি যে পেশার নাগরিক হন না কেন, আপনার ভদ্র ব্যবহারটুকুর কারণে আপনাকে অন্য যে কেউ যথাযথ সম্মান দেখাবে। আপনি নিজেই অভদ্র ব্যবহার করলে প্রতিপক্ষও সেই সুযোগ নেবে এটাই স্বাভাবিক! এক্ষেত্রে চিকিৎসক ম্যামের অ্যাটিচুড মোটেও স্বাভাবিক ছিল না! বরং পুলিশ অনেক ভদ্র ব্যবহার করেছে!

৯. আপনি পেশায় একজন চিকিৎসক। আপনি বাসা থেকে যদি অ্যাপ্রোন পরে হাসপাতালে গিয়ে একই অ্যাপ্রোনে রোগীর কাছে যাতায়াত করেন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই আপনি রোগীর জন্য, বিশেষ করে কোভিড রোগীর জন্য ভয়ংকর বিপজ্জনক। কারণ অ্যাপ্রোন আপনার গাড়িতে পরে থাকার জিনিস নয়। ওটার ব্যবহার হাসপাতালেই সীমাবদ্ধ থাকার কথা।

১০. যেখানে সাথে আইডি কার্ড না রেখে আপনি একটা চরম ভুল করেছেন, যা ছোট্ট একটা স্যরি বলেই পার পাওয়া যেত, সেখানে আপনি কে কী পাশ করেছে, কে কী পেশায়, কার পেশা বড় এধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন, যা মোটেও কোনো যৌক্তিক কথাবার্তা নয়। এগুলো পাগোলের প্রলাপ! আপনি একজন চিকিৎসক হয়ে গোটা চিকিৎসক সমাজের সম্মান হানি করেছেন!

১১. পুলিশ যখন জানতে পারলো এটা একজন চিকিৎসকের গাড়ি, তখন পুলিশ নিশ্চিত হবার পরেই কোনো ধরনের বাকবিতণ্ডায় না গিয়ে ঘটনার ইতি ঘটাতে পারতো! কারণ লকডাউনে চিকিৎসকদের যাতায়াতের উপর এত কড়াকড়ি থাকলে হাসপাতালে রোগী বাঁচাতে আরো সমস্যা তৈরি করবে। এক্ষেত্রে উভয় পক্ষই নিজেদের দায়িত্বে অবহেলা করেছেন!

১২. ওখানে সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন, অথচ এরকম একটি ঘটনা কোনো ধরনের কোনো পক্ষ থেকেই অনুমতি না নিয়ে যিনি এটা স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করেছেন বা ভিডিওটি করেছেন, তিনি সুস্পষ্টভাবেই আইন লংঘন করেছেন। বিনা অনুমতিতে আপনি এধরনের ঘটনা স্যোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ করতে পারেন না। এমনকি ভিডিও করতেও পারেন না।

আমরা চাই করোনা মহামারীতে সকল জরুরি সেবায় নিয়োজিত সকল পেশার সবার কাছ থেকেই শোভন আচরণ। এধরনের ঘটনার আর যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারে সবাইকে আরো সতর্ক হতে হবে। কারণ করোনা মহামারীতে আমাদের সকলেরই সাইকোলোজিক্যাল অনেক সমস্যা ইতোমধ্যেই হয়েছে। তা সামাল দিয়েই সবাইকে যার যার দায়িত্ব পালন করতে হবে!


মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১০:২৫

রানার ব্লগ বলেছেন: ভদ্রমহিলা অন্যায় করেছেন, তার কাছে যদি আই ডি কার্ড না থাকতো তা হলে উনি বলতে পারতেন তা কাছে নাই তিনি বাসায় ফেলে আসছেন তিনি তা না করে যথেচ্ছাচার আচরণ করলেন এবং ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি তার মহান মুক্তিযোদ্ধা পিতা কে অসন্মান করলেন। অসভ্যতার চুরান্ত ছিলো তার আচরণ।

২| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১০:৪৪

জুন বলেছেন: আমরা তখন ক্লাস টু থ্রীতে পড়ি। পার্কে দোলনায় দুলছি সেই সময় আমাদের চেয়েও ছোট এক মেয়ে এসে হুকুমের সুরে দোলনা থেকে নামতে বল্লো। আমরা নামি নি। মেয়েটি তখন এক উর্দি পরা পুলিশ ডেকে নিয়ে আমাদের সামনে এসে বল্লো "সিপাই বলে দাও তো আমি কার মেয়ে"? সিপাই কাচুমাচু হয়ে হাত কচলে জানালো উনি এসপির মেয়ে আমরা যেন দোলনা ছেড়ে দেই।
এই হলো আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক আচার আচরণ ও শিক্ষা দীক্ষা।

৩| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:০৬

পদ্মপুকুর বলেছেন: গুড পোস্ট।

৪| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:১১

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: আমাদের দেশে প্রচন্ডভাবে আইন না মানার একটা প্রবনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং আইন না মেনে নিজের ক্ষমতা জাহির করা হচ্ছে যা সভ্যতার চরম লঙ্ঘন।

৫| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: ঢাকা শহরের সব শ্রেনীর মানুষ উত্তেজিত। তারা কেহ সহনশীল না- সমস্যা এই খানেই।

৬| ২০ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১০:২৮

অনেক কথা বলতে চাই বলেছেন: যারা এমন খেপে যায় তারা মনে হয় এক ধরনের insecurity বা গোপন কোন হীনমন্যতাতে ভুগে যা তারা ঝগড়ার সময় আক্রমণের অংশ হিসেবে অন্যের উপর "ঢেলে" দেয়।

কক্সবাজারে একটা হোটেলে সকালবেলা নাস্তা করছিলাম। হোটেলের লোক সবার ক্যুপন চেক করছিলেন। এক ভদ্রলোক খেপে গেলেন যে কেন তার ক্যুপন দেখাতে হবে!

বাসেও টিকিট চেক করতে চাইলে কেউ কেউ ব্যাপারটাকে offense মনে করে!

৭| ২০ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:২৫

স্থিতধী বলেছেন: চমৎকার বিশ্লেষণ। আর সাথে জুন আপুর মন্তব্যটাও আমাদের সমাজের অন্ধকার দিকটার কথা অল্প কথায় বলে দিলো।

৮| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:১৮

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: বাংলাদেশে শত ভাগ লোক নিজেকে বড় মনেকরে আর অন্যকে ছোট মানে অসম্মান করতে ভালোবাসে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.