নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

এ ট্রিবিউট টু প্রোফেট আহমদ ছফা!

২৮ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:০২

আজ ছফা ভাই'র মহাপ্রয়াণ দিবস। ২০ বছর হয়ে গেল ছফা ভাই নাই। কিন্তু আমাদের আড্ডায় ছফা ভাই রোজ আসেন। ছফা ভাই'র গল্প যখন শুরু হয়, তখন আর ফুরায় না। বিকজ আহমদ ছফা ইজ আনলিমিটেড। ছফা ভাই বাংলামটরে যে বাড়িতে থাকতেন, সেই বাড়িটি এখন ভাঙ্গা হচ্ছে। চারতলার যে পাশটায় ছফা ভাই থাকতেন, ওটার এখন আর কোনো চিন্থ নাই। চারতলা বাড়িটি এখন তিনতলার সমান ভঙ্গুর কাঠামো নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

ওই বাড়িতে আমাদের অনেক স্মৃতি। ছফা ভাই যে ঘরে থাকতেন, সর্বশেষ সেই ঘরটা ছিল আমাদের বন্ধু সরকার হাবিবের মুক্ত টিভি'র অফিস। ওই বাড়ির দোতলায় ছিল বন্ধু নির্মাতা পিন্টু সাহা'র আবাসিক-কাম এডিটিং প্যানেল। আমাদের আড্ডার একটি চমৎকার জায়গা। গত জুন মাসে ওই বাড়ি থেকে সকল ভাড়াটিয়াকে চলে যেতে হয়। ওই বাড়িটা এখন ডেভেলপার কোম্পানি ভাঙ্গা শুরু করেছে। সেখানে হাই-রাইজ এ্যাপার্টমেন্ট হবে।

পিন্টু প্রায়ই ফোন করে বাড়িটার আপডেট জানতে চায়। সর্বশেষ আপডেট হলো- ওই বাড়িটার নীচতলায় মামুনের যে ভালোবাসা জেনারেল স্টোর ছিল, কেবল ওটা এখনো অক্ষত। বাড়িটার অবশিষ্ট কাঠামোর ম্যাক্সিমাম ভাঙ্গা প্রায় শেষ। দেখতে এখনো তিনতলা মনে হবে কিন্তু তা প্রায় অস্তিত্বরহিত! দোতলায় যেখানে আমরা আড্ডা দিতাম ওই অংশের দেয়ালগুলো ভাঙ্গা প্রায় শেষ। মোটামুটি সবগুলো ফ্লোরেই ভাঙ্গা চলছে। লকডাউনের কারণে কাজ বন্ধ না থাকলে ওই বাড়ির এখন আর কোনো অস্তিত্বই থাকতো না!

আমাদের আড্ডায় প্রায়ই ছফা ভাই'র গল্প হয়, সঞ্জীব দার গল্প হয়। সঞ্জীব দা মানে আমাদের সঞ্জীব চৌধুরী। ২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর সঞ্জীব দাও চলে গেছেন অন্যলোকে। ছফা ভাই আর সঞ্জীব দাকে নিয়ে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং গল্পটা প্রায়ই করেন আমাদের কবির ভাই। কবির ভাই মানে টাকলু কবির। আমাদের আহসান কবির। রম্য লেখক। কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের বড় ভাই।

যতবার ছফা ভাই বা সঞ্জীব দার বিষয়-আশয় আমাদের গল্পে আসে, ততবার কবির ভাই অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এই গল্পটি বলেন। আহসান কবির গল্প বলায় খুব ওস্তাদ। ভোকাল চেইঞ্জ করে এক্কেবারে কোনটা ছফা ভাই আর কোনটা সঞ্জীবদা, খুব স্পষ্ট করেই তা আমাদের বুঝিয়ে ছাড়েন। আর তখন বেচারার চোখেমুখেও ফুটে ওঠে কেবল রম্য আর রসের খই! রম্য আর রস ছাড়া কবির ভাই'র আর কোনো গান নাই। অবশ্য কবির ভাই গানও লেখেন। তো এই ফাঁকে ছফা ভাই ও সঞ্জীবদাকে নিয়ে আহসান কবিরের বিখ্যাত গল্পটা আবার একটু শোনা যাক-

একবার সঞ্জীবদা গেছেন ছফা ভাই'র বাসায়। ছফা মানে হযরত আহমদ ছফা। তো গিয়ে দেখেন প্রোফেট ছফা বাসার ছাদে পায়চারী করছেন। সঞ্জীবদাকে দেখেই ছফা ভাই বললেন, সঞ্জীব, তুমি কী আমার একটা উপকার করতে পারবা? সঞ্জীবদা জবাবে বললেন, কীসের উপকার ছফা ভাই? বলেন, এই বান্দা আপনার যে কোনো হুকুম তলব করতে বাধ্য!
জবাবে ছফা ভাই বললেন, আমাকে একজন ফটোগ্রাফার ম্যানেজ করে দাও।
- হঠাৎ ফটোগ্রাফার দিয়ে কী করবেন ছফা ভাই?
- ছবি তোলাবো?
- কার ছবি?
- কার আবার? আমার!
- আপনার ছবি তো যে কোনো সময় তোলা যাবে। আগে জানলে তো আমি ক্যামেরা সঙ্গে আনতাম।
- তুমি ব্যাপারটা খুব হালকাভাবে নিচ্ছো সঞ্জীব?
- হালকাভাবে কোথায় নিলাম? আপনি ছবি তোলাবেন। আমি তুলে দেব। বা কাউকে ডেকে তোলানোর ব্যবস্থা করবো।
- তুমি বুঝতে পারছো না সঞ্জীব, ব্যাপারটা খুব জরুরী।
- ছফা ভাই, আপনি একটু বসেন। শান্ত হন। আমি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতেছি। আর আমিও আপনার সাথে একটা জরুরী বিষয় নিয়ে কথা বলতে এসেছি। দয়া করে আপনি একুট বসেন ছফা ভাই। আমার কথাটি বলি!
- না আমি বসবো না। আগে তুমি আমার ছবি তোলার ব্যবস্থা করো। তোমারটার চেয়ে আমার ব্যাপারটা বেশি জরুরী, সঞ্জীব!
- ছফা ভাই আপনি কিন্তু ছেলেমানুষি করতেছেন?
- ছেলেমানুষি তুমি করতেছো সঞ্জীব! তুমি কী জানো আমার ব্যাপারটা কত সিরিয়াস?
- ঠিক আছে, আগে আপনার সিরিয়াস ব্যাপারটাই বলেন, শুনি।
- একটু আগে তসলিমা এসেছিল। বললাম, আমার একটু শরীর খারাপ। আজ তোমাকে বেশি সময় দিতে পারবো না।
- তারপর?
- তসলিমা বললো, আপনি সকালে ঢাকা মেডিকেলে আসেন। আমি দেখে দিবানি।
- তো, এখানে তো কোনো সমস্যা দেখি না। আপনি ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে চেকআপ করে আসেন।
- তুমি একটা মস্ত বড় গাধা! সমস্যা না জেনেই তুমি কোনো সমস্যা দেখতে পাচ্ছো না।
- ছফা ভাই, আপনার শরীর খারাপ। তসলিমা দেখে দেবে। আপনি একা যেতে না পারলে প্রয়োজনে আমরা কেউ সঙ্গে যাবো। এখানে তো আমি সত্যি সত্যি কোনো সমস্যা দেখি না।
- তুমি একটা আস্তো গাধা!
- আচ্ছা ছফা ভাই, খুলে বলেন তো আপনার সমস্যাটা আসলে কী?
- শোনো, আমার পাছায় একটা ফোঁড়া উঠেছে। যাকে বলে একেবারে গোদের উপর বিষ ফোঁড়া। যে কারণে আমি একদম বসতে পারছি না। তাই একজন ফটোগ্রাফার আমার খুব দরকার।
- তো আপনার ফোঁড়ার সাথে ফটোগ্রাফারের কী সম্পর্ক?
- তুমিই বলো সঞ্জীব, আমি কী তসলিমাকে আমার পাছা দেখাতে পারি? তোমার হলে কী তুমি দেখাতে পারতা?
- ফোঁড়া না দেখিয়ে কেমনে ট্রিটমেন্ট নেবেন ছফা ভাই?
- এই জন্যই বলি, তুমি একটা গাধা! ফটোগ্রাফার দিয়ে পাছার ছবি তোলাবো। তারপর তসলিমাকে সেই ছবি দেবো। ব্যাপারটা তুমি এখন ক্লিয়ার?
- হুম, একদম ক্লিয়ার, ছফা ভাই!

আহসান কবিরের গল্প বলা শেষ হবার আগেই আমরা হেসে একেবারে গড়াগড়ি যাই। এখন ছফা ভাইও নাই। সঞ্জীবদাও নাই। দু'জনে হয়তো ওপারে বসে বসে এমন মজার সব কাণ্ড ঘটাচ্ছেন। আমরাও এই করোনা মহামারীতে যে কেউ যে কোনো মুহূর্তে সঞ্জীবদা বা ছফা ভাইয়ের ঐতিহাসিক আড্ডায় আবার সামিল হবো। ততদিন আমরা কেবল সঞ্জীব দা আর ছফা ভাইকে হৃদয় দিয়ে স্মরণ করবো। এছাড়া তো আমাদের কাছে আর কোনো দাওয়া নাই! উই লাভ ইউ ছফা ভাই। উই লাভ ইউ সঞ্জীবদা। তোমরা ওই সুদূর আকাশের যে তারা হয়েই থাকো না কেন, একদিন আবার আমাদের নিশ্চয়ই দেখা হবে। অনেক আড্ডা হবে।

আজ আহমদ ছফা'র ২০তম মহাপ্রয়াণ দিবস। ছফা ভাইকে আমরা ভুলি নাই, ছফা ভাইকে কখনো ভোলা সম্ভব না। রেড স্যালুট কমরেড। জয়তু আহমদ ছফা। আহমদ ছফা অমর রহে!
......................
২৮ জুলাই ২০২১

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:১৬

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনি না বুঝে আহমেদ ছফার ক্ষতি করছেন।

২| ২৮ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৬

স্প্যানকড বলেছেন: গোপন অনেক কিছু জানলাম। দুজনকে আমার ভীষণ ভালো লাগে। লিজেন্ড এরা। ভালো থাকবেন এবং সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।

৩| ২৮ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১০:৫৩

কামাল১৮ বলেছেন: উনারা যখন তত্ত্ব নিয়ে ব্যস্ত আমরা তখন অনুশীলন নিয়ে ব্যস্ত।আমাদের মূলমন্ত্র ছিল সমাজকে ব্যাখ্যা না করে সমাজে কে পরিবর্তন করা দরকার।সমাজের পরিবর্তন হলে আজকে এই অবস্থা হতো না।

৪| ০৩ রা আগস্ট, ২০২১ সকাল ৯:২২

খোলা জানালা। বলেছেন: ছফা ভাইকে আমরাও ভুলি নাই। যুগের পর যুগ তাকে মনে করবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.