নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংগঠনগুলো কী নিয়ে ব্যস্ত জানতে হলে পড়তে হবে গোটা নিবন্ধ!

০৬ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১:৫১

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ১৯৯৭ সাল থেকেই কয়েকটি সিন্ডিকেট চক্রের ইচ্ছা-অনিচ্ছার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। কারা কীভাবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে ধ্বংস করছে, একটু মনোযোগ দিয়ে এই নিবন্ধটি পড়লে আপনি তা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারবেন। মূল নিবন্ধটি জাহিদ ভাই (জাহিদ হোসেন, চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিবেশক, পরিচালক, লেখক ও সংগঠক)-র লেখা। আমি আপনাদের বোঝার জন্য এটিকে কয়েকটি সেকশানে ভাগ করে দিচ্ছি। যাতে এই সিন্ডিকেট চক্রের সকল ষড়যন্ত্র, অপরাধ, চলচ্চিত্রকে ধ্বংস করার সকল পায়তারা আপনারা ঠিক ঠাক বুঝতে পারেন।

১. বাংলাদেশে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত 'বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি' ও 'বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবেশক সমিতি' নামে দুইটি আলাদা সংগঠন ছিল। ১৯৯৭ সালে 'বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি' নামে একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করে এই দুই সমিতিকে সংযুক্ত করা হয়। সেই আহবায়ক কমিটির প্রধান দায়িত্ব ছিল সংযুক্ত সংগঠনের একটি সংঘস্বারক ও সংঘবিধি প্রণয়ন এবং প্রথমবারের জন্য নির্বাচন সংগঠিত করা। এ পর্যায়ে আপনার মনে হবে- বাহ! দুটি সংগঠন মিলে এবার বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের অগ্রযাত্রায় বিশাল ভূমিকা রাখাবে।

একটু ধৈর্য ধরে নিবন্ধের বাকি অংশ পড়বেন। তাহলে বুঝবেন কেন এবং কী উদ্দেশ্য নিয়ে সংগঠন দুটি সেদিন একত্রিত হয়েছিল। দুই সংগঠন সংযুক্ত হবার পর যথারীতি ১৯৯৭ সালেই প্রথম নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হয় এবং নির্বাচনে দুই বছর মেয়াদের একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়। যেখানে মাসুদ পারভেজ সভাপতি ও সানোয়ার মুর্শেদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

২. দুই বছর মেয়াদি নির্বাচিত কমিটি সফলভাবে মেয়াদ শেষ করে। কিন্তু নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করতে ইচ্ছে করেই কয়েকমাস দেরি করে। অতিরিক্ত কয়েক মাস উক্ত কমিটি চলার পর ২০০০ সালে দ্বিতীয় বারের জন্য নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়। সেই নির্বাচনে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় জনাব জাফর সাহেবের নাম অন্তর্ভুক্ত না করায়, তিনি আদালতে মামলা ঠুকে দেন। নির্বাচন হওয়ার ঠিক পূর্বেই উচ্চ আদালত জনাব জাফর সাহেবকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির রায় দেন এবং যথারীতি নির্বাচন বাতিল করা হয়। ফলে এই প্রথমবারের জন্য সংযুক্ত সমিতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টিও রুলস অনুযায়ী প্রশাসক নিযুক্ত হন।

কিছুকাল পর সমিতির কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে প্রথমবারের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক সমিতিতে নাসিরুদ্দিন দিলু ও আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বলকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়। অতঃপর ২০০৩ সালে দ্বিতীয় নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়। সেই নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কে এম আর মঞ্জুর সভাপতি ও আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

৩. যথারীতি ঠিক দুই বছর পর ২০০৫ সালে আবার তৃতীয় নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়। সেই নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে শাহাদত হোসেন বাদশা সভাপতি ও মিজানুর রহমান খান দীপু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কিছুদিনের মধ্যে আবার শুরু হয় সিন্ডিকেটের মধ্যে আন্তঃকোন্দল। আবারো আদালতে মামলা হয় এবং কমিটির কয়েকজন সদস্য আদালতের রায় নিয়ে পদ-পদবীর পুণঃবণ্টন করে নাসিরুদ্দিন দিলু সভাপতি ও শরিফুদ্দিন খান দিপু সাধারণ সম্পাদক হন।

এই কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণকাল পর্যন্ত পরিচালিত হয়। অতঃপর ২০০৭ সালে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অস্থিতিশীলতা ('এক-এগারো';) সংগঠিত হলে দ্বিতীয়বারের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক আবার প্রশাসক নিযুক্ত হন। কিছুকাল পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক সানোয়ার মুর্শেদকে আহবায়ক করে দ্বিতীয়বারের মতো একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়।

৪. ২০০৮ সালে আবার চতুর্থ নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়। সেই নির্বাচন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তত্ত্ববধায়ক সরকার কর্তৃক দেশের সকল বাণিজ্যিক সংগঠনের নির্বাচন স্থগিত করেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনঃতফসিলের মাধ্যমে তারিখ পরিবর্তন করে চতুর্থ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচনী বোর্ড। ২০০৯ সালের ওই নির্বাচনে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে গাজী মাজহারুল আনোয়ার সভাপতি ও শরিফুদ্দিন খান দিপু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

৫. যথারীতি ঠিক দুই বছর পর ২০১১ সালে পঞ্চম নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়। ওই নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে মাসুদ পারভেজ সভাপতি ও মনোয়ার হোসেন ডিপজল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ঠিক এক বছর পরেই আবার সিন্ডিকেটের মধ্যে আন্তঃকোন্দল সৃষ্টি হয়। আবারো আদালতে মামলা হয় এবং কমিটির কয়েকজন সদস্য আদালতের রায়ে কমিটি পুণঃবণ্টন করেন, যেখানে মনোয়ার হোসেন ডিপজল সভাপতি ও সাইদুর রহমান মানিক হন সাধারণ সম্পাদক।

এ নিয়ে কমিটির দুই পক্ষের মধ্যে পরবর্তী একটি বছর ক্ষমতা গ্রহণ ও পাল্টা দখল চলতে থাকে, যাতে সমিতির ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ণ হয়। কমিটির কয়েক সদস্য পদত্যাগ করায় একপক্ষ কো-অপ করে কয়েক সদস্যকে সেই কমিটিতে সংযুক্ত করেন। কমিটির মেয়াদকালীন সময়ের মধ্যে নির্বাচনী তফসিল ও নির্বাচন সংগঠিত করতে ব্যর্থ হলে ২০১৩ সালে টিও রুলস অনুযায়ী মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার ঠিক পরদিনই সমিতিতে আবারো বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রশাসক নিযুক্ত হন।

৬. ২০১৪ সালে কে এম আর মঞ্জুর কয়েক সদস্যদের পরপর তিনবার নির্বাচিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে চতুর্থবার নির্বাচনে অংশগ্রহণে বিধিনিষেধ এর উপর সংঘবিধি ও টিও রুলস অনুযায়ী মামলা করেন। ওই মামলার কারণে আর সমিতির ষষ্ঠ নির্বাচন সংগঠিত হয়নি। ২০১৫ সালে আবার ষষ্ঠ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় মোহাম্মদ হোসেন জেমী সদস্য না থাকায় তিনি মামলা করেন এবং তফসিল অনুযায়ী চূড়ান্ত সদস্য তালিকা ঘোষণা করার পর, তার নাম না থাকায় সে আদালত কর্তৃক রায় নিয়ে যথারীতি নির্বাচন বোর্ডে জমা দিলে, সেই অনুযায়ী নির্বাচন বোর্ড পুণঃতফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিলেও সেই নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়।

কিছুকাল পর সমিতির সদস্যদের মধ্যে দুইপক্ষ সমঝোতা করে এবং ২০১৫ সালে নাসিরুদ্দিন দিলুকে আহবায়ক করে। সমিতিতে তৃতীয়বারের মতো আবারও উপদেষ্টা কমিটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত হয়। ২০১৬ সালে যথারীতি সমিতির ষষ্ঠ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এসময় একজন সদস্য জনাব নাসির সাহেব (পূর্বেকার কে এম আর মঞ্জুর কর্তৃক অনুরূপ মামলা) পরপর তিনবার নির্বাচিতদের চতুর্থবার নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন । ফলে ২০১৬ সালের নির্বাচন স্থগিত হয়।

৭. ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে ঘোষণা দেয় যে, দুই বছর মেয়াদি কমিটির পরপর তিনবার নির্বাচিতদের চতুর্থবার নির্বাচনে অংশগ্রহণে এবং তিনবছর মেয়াদি কমিটির পরপর দুইবার নির্বাচিতদের তৃতীয়বার নির্বাচনে অংশগ্রহণে টিও রুলস-এ আর কোন বাধ্যবাধকতা থাকবে না। তবে যে সকল বাণিজ্যিক সংগঠনের স্ব-স্বক্ষেত্রে যদি বাধ্যবাধকতা থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই স্বারক ও সংঘবিধিতে বার্ষিক সাধারণ সভায় সংশোধনী আনতে হবে।

ওই সময়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির কোন নির্বাচিত কমিটি না থাকায় টিও রুলস অনুযায়ী বার্ষিক সাধারণ সভা ডেকে সংঘবিধি পরিবর্তন করতে পারেনি। অতঃপর ২০১৯ সালে সাধারণ প্রযোজকদের দাবির মুখে সমিতির গতিশীলতার লক্ষ্যে সকলের অংশগ্রহণে মামলা মোকদ্দমা'র উর্ধ্বে উঠে সমিতির বৃহত্তর স্বার্থে নির্বাচিত একটি কমিটি গঠন করার জন্য সকলেই একমত হন। যথারীতি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সকলের নিরবিচ্ছিন্ন অংশগ্রহণে সমিতির ষষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে নির্বাচিত একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে খোরশেদ আলম খসরু সভাপতি ও সামসুল আলম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে নির্বাচিত কমিটি শুরুতেই সমিতির এজিএম করেন। সেক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তী বছর ২০২০ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে আবারও একটি এজিএম করার সিদ্ধান্ত থাকলেও করোনা মহামারীর কারণে তা আর হয়নি। এখানে একটি বিষয় খেয়াল করুন- যদি সর্বাত্মক গুরুত্ব দিয়ে দ্রুতই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০১৮ সালের অগাস্ট মাসের সেই টিও রুলস-এর প্রজ্ঞাপন বিষয়ে সমিতির সংঘবিধি পরিবর্তনের একটি বিশেষ বার্ষিক সাধারণ সভা ডেকে কার্যকর করা হতো, তাহলে প্রযোজক পরিবেশক সমিতির জটিলতা হয়তো কিছুটা লাঘব হতো। (যদি না পুনরায় কোনো সদস্য আদালতে মামলা না করেন)।

যদিও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি করোনা মহামারীর মধ্যেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলে দাবি করা হয়। যেমন- চলচ্চিত্র উৎপাদনে নীতিমালা প্রণয়ন, চলচ্চিত্রের বহুমাত্রিক বাণিজ্য ক্ষেত্র সৃষ্টি, চলচ্চিত্রের কপিরাইট স্বত্বাধিকারী সংরক্ষণ, দেশে ইকোনোমী সিনেপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প প্রতিষ্ঠা, চলচ্চিত্রকে দেশের শিল্পনীতিতে সেবাখাত থেকে অগ্রাধিকার খাতে প্রতিষ্ঠা করা। যার প্রায় অনেকগুলোই সেই পুরানো কাসুন্দি! এসকল কাজ করোনা সংকটের কারণে গতি পায়নি বলে তারা দাবি করেন।

খেয়াল করুন- চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠনের সমঝোতায় চলচ্চিত্র উৎপাদন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি এই নীতিমালা মেনে নেয় নাই। তারপর কয়েকজন সিনিয়র চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বদের সমন্বয়ে এবং শিল্পী সমিতির কিছু ছাড় নেয়ার দাবি বাস্তবায়নের উপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্র নীতিমালা গৃহীত হয়।

৮. বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির পিকনিককে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এর মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। আর তা আরো গভীর সংকট তৈরি করে যখন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক-এর শিল্পী সমিতির সদস্যপদ, শিল্পী সমিতি তাদের সংগঠনের পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার যুক্তি দেখিয়ে স্থগিত বা বাতিল করেন।

অন্যদিকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি সিনিয়র শিল্পীদের দ্বারা গঠিত সদস্যপদ পুণঃবাছাই করণ প্রেক্ষিতে, উক্ত কমিটির প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী তাদের ১৮৪ জন সদস্য। যারা অনিয়মিত বা সংঘবিধি মোতাবেক আর পূর্ণ সদস্য থাকার যোগ্য নয় বলে সহযোগী সদস্য পদ প্রদান করেন। পাশাপাশি কয়েক সদস্যদের সদস্যপদ বাতিল করেন। এই সকল শিল্পীদের সদস্য পদ ফিরিয়ে দেয়ার দাবির পক্ষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি যখন একমত পোষণ করেন। ঠিক তখনই আবার শুরু হয় সিন্ডিকেটের চলচ্চিত্রের সাংগঠনিক আন্তঃকোন্দল। মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষ বিপক্ষে বাকবিতণ্ডা চলতে থাকে। চলচ্চিত্র শিল্পে আবারও এক অস্থিতিশীলতার মধ্যে পড়ে।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদককে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সদস্য পদ বাতিল বা স্থগিত করে দেয়ার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি কারণ দর্শানোর নোটিশ করে। নোটিশের জবাব দেয়ার পর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নির্বাহী কমিটি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক-এর উত্তরপত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির কমিটির কাছে যথাযথ নয় বলে তার সদস্য পদ স্থগিত বা বাতিল করেন।

ফলে ২০২০ সালের শেষের দিকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক, তার প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সদস্য পদ বহাল রাখার তাগিদে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। একই সাথে সেই ২০১৬ সালে প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সদস্য জনাব নাসির সাহেবের পূর্বেকার মামলা যা ২০১৮ সালে উচ্চ আদালতের রায়ের ডিরেকশন নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ তোলেন যে, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির বর্তমান কমিটি সম্পূর্ণ অবৈধ এবং এই নির্বাচিত কমিটির ২০১৯ সালের নির্বাচন সঠিক ও সংঘবিধি অনুযায়ী হয়নি। যুক্তি দেখান যে, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, পরপর তিনবার সমিতির নির্বাচনে নির্বাচিতদের তালিকায় থেকেই আবার চতুর্থবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নির্বাচিত হয়েছেন। এর বিরুদ্ধে আদালতের রায় রয়েছে।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি প্রণয়ন করেন। উক্ত কমিটি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতিতে সদস্য পদ স্থগিত করা এবং নির্বাচন সঠিক হয়েছে কিনা তা তদন্ত করে যে রিপোর্ট দেন, সেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় স্থগিত করা শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক-এর চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সদস্য পদ ফিরিয়ে দেন এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির ২০১৯-২০২১ মেয়াদের কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা করেন। পাশাপাশি ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে সমিতিতে প্রশাসক নিযুক্ত করেন।

৯. এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নির্বাহী কমিটির সকল সদস্যদের পক্ষে সভাপতি বাদি হয়ে উচ্চ আদালতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রীট পিটিশন দায়ের করেন। হাইকোর্ট রায়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে স্থগিত করেন এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নির্বাচিত কমিটি পুণঃরায় ক্ষমতা গ্রহণ করেন।

কিছুদিন পর আদালতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে বেসরকারি কোনো ব্যক্তি সংযুক্ততার বিধিনিষেধ বা জটিলতার কারণে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উক্ত মামলায় সরকারের পক্ষ হতে না পেরে নিজেই পক্ষ হয়ে উক্ত মামলায় জড়িয়ে তা মোকাবিলা করার চেষ্টা করেন। এবং এক পর্যায়ে আবার হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে স্থগিত আদেশ দেন উচ্চ আদালতের এপেলিড ডিভিশন।
ফলে আবারো বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রশাসক নিযুক্ত হন। বর্তমানে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত প্রশাসক কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে।

১০. উপরের নয়টি পয়েন্ট কী আপনি ধৈর্য নিয়ে পড়েছেন? যদি সত্যি সত্যি পড়েন আর চলচ্চিত্র নিয়ে বাংলাদেশে কী হচ্ছে তা যদি বুঝতে পারেন, তাহলে আপনি নিশ্চিত সমিতিকে ঘিরে এসব মামলা, আদালতের রায়, উচ্চ আদালতের স্থগিত আদেশ, দুই পক্ষের মনোমালিন্য, স্বার্থ, আন্তঃকোন্দল, মামলার পিঠে মামলা, দ্বন্দ্বের সাথে বিভেদ, ক্ষমতার লোভ, হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি দেখে বিগত ২৪ বছরে সমিতি কর্তৃক চলচ্চিত্র ধ্বংসের সকল প্রমাণপত্র হাতে হাতে পেয়েছেন।

১১. সরকার বাহাদুর বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বলতে কেবলমাত্র এফডিসি'র চলচ্চিত্র বোঝে! তাই এফডিসিতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো আদতে কী নিয়ে ব্যস্ত তা কখনো বোঝার চেষ্টা করে না। এফডিসিতে তিনটি বেসরকারি সংগঠন যথা- বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি আদতে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কী করছে তা কখনো খতিয়ে দেখতে চায় না। সরকার বাহাদুর একমাত্র প্রশাসক নিযুক্তি দিয়ে দায় মুক্তি চায়। যা মূলত চলচ্চিত্রের ধ্বংসকে আরো ত্বরান্বিত করার সামিল!

বছর ঘুরে যখনই নির্বাচন আসে তখনই সমিতির সদস্যরা পরম্পরায় মামলা-পাল্টা মামলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ করার এদের কারো আগ্রহের বিষয় নয়। নিজেদের নামের সাথে এসব সমিতির পদ-পদবী ব্যবহার করে একদল নষ্ট মানুষ গোটা এফডিসিকে বিগত ২৪ বছর ধরে এক কলংকের ইতিহাস রচনা করে চলেছেন। আর সরকার বাহাদুর এখনো চলচ্চিত্র বলতে এফডিসিকেই বোঝে! আহা মরি মরি!

বি.দ্র. আমার নির্মিত 'হরিবোল' চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড 'বিএফডিসি'র কথিত এনওসি'র দোহাই দিয়ে সেন্সর বোর্ডে বিগত ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে আটকে রেখেছে। বিএফডিসিতে এনওসি'র জন্য যাবার পর বিএফডিসি'র ব্যবস্থপনা পরিচালক আমাকে এফডিসি'র ফান্ডে নগদ এক লাখ টাকা জমা দিতে বলেন এবং এনওসি পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সদস্য পদ দেখাতে বলেন। উক্ত দুই সমিতির সদস্য হতে খরচ করতে হবে আরো প্রায় দুই লাখ টাকা। মোটামুটি তিন লাখ টাকার একটা চাঁদাবাজিতে আমি রাজি হলে 'হরিবোল' সেন্সর পাবে।

উপরে বর্ণিত সমিতিগুলোর কারবার যদি ঠিক ঠাক বুঝে থাকেন, তাহলে বলেন কে কেন এসব সমিতিতে সদস্যপদ নেবে? এরা কী দেশের চলচ্চিত্রের জন্য কিছু করে? যদি না করে তাহলে তাদের সদস্যপদ কেন নিতে হবে? সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং হলো- বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর আইনের কোথাও 'এফডিসি থেকে এনওসি' নেওয়ার কোনো বিধি নাই। এটা স্রেফ চাঁদাবাজি। আর এই গোটা সিন্ডিকেটের সভাপতি খোদ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড। এরা এদের থেকে নিয়মিত মাসোহারা না পেলে এরকম বেআইনী জিনিস দেখিয়ে আমার 'হরিবোল' চলচ্চিত্র আটকে রাখতে পারে না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:১২

রাজীব নুর বলেছেন: বাংলাদেশের আসল সমস্যা হলো- বাংলাদেশের মানুষ গুলো সব নষ্ট হয়ে গেছে।

২| ০৯ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:৫৪

মোঃমোজাম হক বলেছেন: তবে হরিবোল নামটিতে আপত্তি আছে।
এখানে আল্লাহ্‌ আকবর হলে মৌল্বাদের গন্ধ ছড়াতো, হরিবোলে নয় কেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.