নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মদ ও পুলিশ বিষয়ক কাহিনী!

১৯ শে আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৪:৩৭

আপনি কোনো বারে মদ খেয়ে রাস্তা ধরে হাঁটবেন। পুলিশ আপনাকে চেক করার নামে মুখে গন্ধ পেলে বলবে- গাড়িতে ওঠেন। এবার আপনি পুলিশের সাথে দরকষাকষি করে থানায় নেবার আগে কিছু নগদ নারায়ণ হাতে ধরিয়ে ছাড়া পাবেন। এই হইল বাংলাদেশের পুলিশের মদ সংক্রান্ত খাসিলত।

আপনি যে নিজের টাকায় মদ খেলেন, নেশা করলেন, সব মাটি করে দেবে এই পুলিশ। এরকম ঘটনার আজ পর্যন্ত কোনটির কবে বিচার হয়েছে? আপনি বারে মদ খেয়ে রাস্তায় উল্টাপাল্টা কিছু না করলেও পুলিশে ধরে আপনাকে বেইজ্জতি না করে ছাড়বে না। তাহলে বাংলাদেশে বারগুলো কেন রাখা হয়েছে? পুলিশের টু-পাইস কামানোর ধান্ধার জন্য?

বাংলাদেশের আইনের কোথায় আছে যে মদ খাওয়া যাবে না? আর পুলিশের এই ধান্ধাগিরির আজ পর্যন্ত কোনোদিন একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। তবে মদ খাওয়া লোকটি যদি ভাগ্যক্রমে বড়লোকের পোলা হয়, তাহলে ভুলক্রমে পুলিশ একই কাজ করলে ওই পুলিশের চৌদ্ধগুষ্ঠির দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে যায়।

আমার এরকম একটি অভিজ্ঞতার কথা বলি-
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমরা পাঁচ জনের একটি টিম এমার্জেন্সি ইনজুরি কেসের উপর তখন গবেষণা করছিলাম। হাসপাতালে ইনজুরি নিয়ে আসা এমার্জেন্সি রোগীদের ইন্টারভিউ করে আমরা জানতে চেষ্টা করি- ইনজুরির কারণ। রোগীর একদিকে ক্ষতস্থানে সেলাই চলে, পাশাপাশি চলে আমাদের ইন্টারভিউ নেবার কাজ। রোগী ওয়ার্ডে যাবার আগেই আমাদের ইন্টারভিউ শেষ করতে হয়। আমরা পাঁচ জন রোস্টার করে ২৪ ঘণ্টা এমার্জেন্সিতে ডিউটি করি। দিনের বেলায় সকাল ৭টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ২ জন, দুপুর ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ২ জন এবং রাত ১০টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ১ জন। এভাবে আমাদের রোস্টার অনুযায়ী ডিউটি চলে।

আবার সপ্তাহে একদিন আমাদের ছোট কুমিরা টিটেনাস হাসপাতালে গিয়ে টিটেনাস রোগীদের ইন্টারভিউ করতে হয়। টিটেনাস রোগীদের অনেকে আবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ট্রান্সফার হওয়া। তাদের আপডেট নিতে হয়। এবং নতুন কোনো রোগী পেলে তার ইন্টারভিউ করতে হয়। সারা বাংলাদেশের ১৩টি সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা কাজে আমাদের ১৩টি টিম ছয় মাস নিযুক্ত ছিলাম।

সাধারণত রাতের বেলার আমি ডিউটি করি। কেউ যদি বিষ খেয়ে হাসপাতালে আসে বা কাউকে যদি পেট ওয়াশ করানো হয়, তাকেও আমাদের ইন্টারভিউ করার নিয়ম। তো একবার রাত বারোটার দিকে এমার্জেন্সি ডক্টরের রুমে বসে সারজাহতে অনুষ্ঠিত ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট খেলা দেখছি। এমার্জেন্সিতে কোনো রোগী নাই মানে আমার কোনো কাজ নাই। আবার ঘুমানোরও কোনো সুযোগ নাই। তো ডক্টরের সাথে বসে বসে আড্ডা আর খেলা দেখা চলছে।

হঠাৎ পুলিশের একটি গাড়ি এসে একজন মদ্যপকে পেট ওয়াশ করানোর জন্য এমার্জেন্সিতে দিলেন। পুলিশের দলনেতা ডক্টরকে ডেকে কিছু পরামর্শ করলেন। ডক্টর আমাকে বললেন আপনি ইন্টারভিউ করবেন ওয়াশ শেষ হলে। জিজ্ঞেস করলাম কেন- ওয়াশ চলাকালীন ইন্টারভিউ করতে সমস্যা কী? ডক্টর বললেন- বেশি বেয়াদ্দপ পোলা, ভালো করে ওয়াশ করা লাগবে। আপনি চলেন আমার রুমে।

কিছুক্ষণ পর ওয়াশ রুমে চিৎকার শুনে আমি দৌড়ে সেখানে যাই। গিয়ে দেখি দু'জন হাসপাতালের ব্রাদার মদ্যপ লোকটাকে লাঠি দিয়ে মেরেছে এবং আমাকে দেখার পর লাঠি ফেলে দিয়ে ওয়াশ করার চেষ্টা করছে। আমি ডক্টরকে কমপ্লেন করলাম- একজন রোগীকে তো আপনারা মারতে পারেন না। আমি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন গবেষক এখানে উপস্থিত থাকতে আপনাদের এরকম অপকর্ম করার দুঃসাহস হলো কীভাবে? ডক্টর আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন- পুলিশের ইশারা ছিল। আমি মানতে নারাজ!

ওয়াশ শেষে আমি ছেলেটির ইন্টারভিউ নেওয়া শুরু করি। ইন্টারভিউ শেষ হলে ছেলেটি আমাকে একটা অনুরোধ করে। তার বাসায় একটি ফোন করার জন্য। তখন কার্ড ফোনের যুগ, ১৯৯৮ সাল। হাসপাতালের গেটে অপেক্ষমান পুলিশ। আমি হাসপাতালের কার্ড ফোন বক্স থেকে ছেলেটির বাসায় ফোন করি। ছেলেটির বাবা ফোন ধরেন। তিনি খুব প্রভাবশালী। আমার ফোন পাওয়ার আধাঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালের এমার্জেন্সি গেটের সামনে পুলিশের সঙ্গে একদল মানুষের দাঙ্গা শুরু হয়। হাসপাতালের গেট লক করে দিলেও তা ভেঙ্গে ওরা ছেলেটিকে হাসপাতাল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

রাতেই পাঁচলাইশ থানায় ছেলেটির বাবা পুলিশ ও ডক্টরের বিরুদ্ধে তার ছেলেকে মারার জন্য মামলা করে। সকাল ৭টায় ডিউটি শেষে আমি হাসপাতালের মেইন গেটের উল্টোপাশে আমাদের ডেরায় ফিরে যাই। সাধারণত ৭টার আগেই আমাদের দুইজন চলে আসে। একজনকে এমার্জেন্সিতে রেখে আমার সাথে একজন সকালের চা খায়। তারপর আমি ডেরায় এসে স্নান করে ঘুমাই। দুপুরে হাসপাতাল থেকে আমাকে এমার্জেন্সিতে জরুরি তলপ করা হয়।

কাহিনী কী? ডক্টরকে এই মামলা থেকে সেভ করতে পারে কেবল আমার সাক্ষ্য! ডক্টর আই ইসলাম বিশাল ফ্যাসাদে জড়িয়েছেন! দেশের সবগুলো গোয়েন্দা সংস্থা, সরকারী উচ্চ পর্যায়ের লোকজন সবাই আমার কথা শোনার জন্য অপেক্ষমান। আমি সত্য বললে ডক্টর সাহেব গ্রেফতার হবেন। আবার একই হাসপাতালে আমাদের গবেষণা কাজ চালিয়ে নেবার জন্য ডক্টরদের ও অন্যান্য হাসপাতাল কর্মীদের সহযোগিতা লাগবে।

আমি আমাদের একজনকে নিয়ে হাসপাতালের কেন্টিনে দুপুরের খাবার খেতে বসেছি। কারণ ওই ঝামেলা কতক্ষণে শেষ হবে কেউ জানে না। সবচেয়ে ভালো পেটে কিছু দিয়ে তারপর যুদ্ধে যাওয়া। তো কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের একজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে ডক্টর সাহেব কেন্টিনে হাজির। ডক্টর সাহেব যা বললেন, তার সানে নাযুল হলো- আমার সাক্ষ্য থেকেই এই মামলায় তার গ্রেফতার এড়ানোর একমাত্র সুযোগ।

ডক্টর সাহেবকে বললাম- আপনি লাশকাঁটা ঘরে আমার যাওয়া নিয়ে সেদিন যে তর্ক করেছিলেন, সেটি যে ভুল ছিল, তা নিয়ে একবারও দুঃখপ্রকাশ করেননি। পরে হাসপাতালের পরিচালকের মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা হয়েছিল যে, প্রয়োজনে লাশকাঁটা ঘরে ইনজুরি চেক করতে যাওয়ার অধিকার আমাদের রয়েছে। তো সেদিনও অনেক হাঙ্গামা করে আপনি তর্কে হেরেছিলেন। আজকে আপনি কেন সিংহ থেকে একেবারে বিড়াল হয়ে অনুরোধ করতে এসেছেন? রাতের ঘটনা তো আমার চোখের সামনে ঘটেছে, যা যা ঘটেছে আমি সব এখন রাষ্ট্রকে বলে দেই? আপনার ডাক্তারির ফুটানিটা একবার দেখি?

ডাক্তার সাহেবের তারপর যা হয়েছিল, তা আর না বলি! আমার একেবারে হাতে পায়ে ধরা শুরু করলেন। আমি বললাম, ঠিক আছে আপনি যান। আমি খাওয়া শেষ করেই ওনাদের সাথে কথা বলব। যা বলার আপনার সামনেই তো বলা হবে। তারপর এমাজেন্সির সামনে আমি রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে সুস্পষ্টভাবে বললাম- পুলিশ ছেলেটিকে কয়েক দফা মেরেছে তারপর এমার্জেন্সিতে ওয়াশ করতে এনেছে। আর ওয়াশ শেষে ওর ইন্টারভিউ নেবার পর ওর বাসায় আমি ফোন করেছিলাম। আমার ইন্টারভিউ সিটে ওর শরীরে মারের ক্ষতস্থানগুলোর রেকর্ড লেখা আছে। মামলা থেকে ডক্টর সাহেবসহ হাসপাতালের সবাই সেদিন রেহাই পেয়েছিল। আর আমার ইন্টারভিউ সিটের ফটোকপি তাদেরকে দিতে হয়েছিল আমার কথার প্রমাণ হিসেবে।

পুলিশের এই যে চিনতে না পেরে বড়লোকের মদ্যপ পোলারে সায়েস্তা করতে গিয়ে নাকানিচুবানি খাওয়ার ইতিহাস, এটি সেদিন নিজের চোখে দেখেছিলাম। কিন্তু বড়লোকের পোলা না হইলে পুলিশের সেদিন কিচ্ছু হতো না। আমার সাক্ষ্য হয়ে গিয়েছিল হাসপাতালের ওই মারপিটে জড়িয়ে পরার এবং তাদেরও আইনের হাতে সোপর্দ হওয়ার পথ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়! কিন্তু আমি কেন সেদিন সত্য এড়িয়ে গিয়েছিলাম? ঢাকায় আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার পর আমাকে ডাক্তারকে বাঁচানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। নইলে পরবর্তী পাঁচ মাস আমাদের গবেষণা কাজে হাসপাতালের সহযোগিতা পাওয়া কঠিন হবে। তাই আমি ওভাবে পুলিশকেই গ্যারাকলে ফেলেছিলাম।

পুলিশ যে নিরীহ কোনো মদ্যপকে রাস্তায় পেলে নাকানিচুবানি করে, তা এখন পর্যন্ত প্রচলিত। মদ্যপ ধরার পর ধান্ধা ছাড়া পুলিশের আর কোনো কাজ নাই। পুলিশ মদের গন্ধ পেলে টাকার গন্ধ খোঁজে। আর টাকা না পেলে নানান কিসিমের কাহিনী বানায়। নানান মামলায় আপনাকে ফাঁসিয়ে দেবার ভয় দেখাবে। তো রাষ্ট্রের পুলিশের এই মদের গ্যারাকলের ইতিহাস যারা জানে না, তারা আইনকে কতটা ন্যায়বিচারের স্বার্থে ব্যবহার করবে! কথায় বলে না- বাঘে ছুঁইলে আঠারো ঘা আর পুলিশে ছুঁইলে ছত্রিশ ঘা, কথাটা কী বাংলায় আর এমনি এমনি প্রবাদ হয়েছে!

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৪:৪৮

সাজিদ! বলেছেন: এমন ইঞ্জুরির উপরে কোন কোর্স আছে যেখানে রোগী ক্যাজুয়ালটির ওটিতে ঢুকলে গোপনীয়তার ধার না ধরে ইন্টারভিউ নিতে হবে সেটা আমার জানা নাই।

ক্রিকেট খেলা দেখতে দেখতে আর আড্ডা দিতে দিতে ঠিকই গোয়াটা মেরে দিলেন। হাহাহা। কিসের গবেষনা ছিল ভাই?

২| ১৯ শে আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৪:৪৯

সাজিদ! বলেছেন: লাশ কাটা ঘরে কারন ছাড়া ঢুকে লাভ নেই। ওখানে সবার ঢুকা আইনসিদ্ধও নয়৷

৩| ১৯ শে আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০০

নতুন বলেছেন: দেশে অনেক মুসলমান আছে যারা মদ পান করে কিন্তু তাদের আপনি শুকরের মাংসের চপ দিলে খাবে না কারন ঐটা হারাম B-))

৪| ১৯ শে আগস্ট, ২০২১ রাত ৮:১১

প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন বলেছেন:



আপনি বলেছেন বাংলাদেশের আইনের কোথায় আছে যে মদ খাওয়া যাবে না?

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮ এর ১ এ বলা হয়েছে আরগ্যের প্রয়োজনে কিংবা আইন দ্বারা নির্দিষ্ট প্রয়োজন ব্যতিত রাষ্ট্র মদ্য পান নিষিদ্ধকরনের ব্যবস্থা গ্রহন করবে

এইতো গেলো সবিধান, এবার দেখি আইন কি বলে,
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ তে, ধারা ১১ এর (১) এ বলা হয়েছে পারমিট ব্যতীত কোনো ব্যক্তি অ্যালকোহল পান করিতে পারিবেন না এবং চিকিৎসার প্রয়োজনে সিভিল সার্জন অথবা সরকারি মেডিক্যাল কলেজের অন্যূন কোনো সহযোগী অধ্যাপকের লিখিত ব্যবস্থাপত্র ব্যতীত কোনো মুসলমানকে অ্যালকোহল পান করিবার জন্য পারমিট প্রদান করা যাইবে না।

আপনি আইনের কথা বলেছেন তাই দেখালাম, তবে পুলিশের ব্যপারে যা বলেছেন সত্য বলেছেন। পলিশ এটা নিয়ে ধান্দা পাতয়ে বসেছে

৫| ২০ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: ভাই আমি মদ খাই না। খাবোও না।

আপনার সিনেমা কবে মুক্তি পাবে? নাকি তার আগে আমার মৃত্যু হয়ে যাবে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.