নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
১.
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক চালু হবার পর থেকেই বই পড়ুয়াদের সম্পর্কে বাজারে একটা বদনাম চালু হয়েছে। প্রথম কথা হলো- ফেসবুকের কারণে বইয়ের পাঠক কি তাহলে কমে গেছে? বইয়ের পাঠক কমে গেলে সেক্ষেত্রে ফেসবুক কতোটা দায়ী? যারা সত্যিকারের পাঠক, তাদের মধ্যে ফেসবুক কতোটা প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে? নাকি ফেসবুক আসায় বইয়ের পাঠক আগের তুলনায় বেড়েছে? দ্বিতীয় কথা হলো- জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশের কবি লেখক সংখ্যাও বেড়েছে। সেই তুলনায় পাঠক কয়জন বাড়লো? প্রকাশকের সংখ্যাও বেড়েছে। বই প্রকাশের সংখ্যাও বেড়েছে? কিন্তু কোয়ালিটি বই কতোটা বাড়লো? নাকি বাজারে যা বই আকারে বাড়ছে, সেগুলো আদতে আবর্জনা? শুধু শুধু কাগজের শ্রাদ্ধ? তৃতীয় কথা হলো- দেশীয় সংস্কৃতি বিকাশে বর্তমানের কবি লেখকরা কতোটা ভূমিকা পালন করছেন? নাকি শাসক দলের আস্থাভাজন প্রকল্পের অনুসারী হয়ে বোগল বাজানো কবি লেখকরাই কেবল দেশীয় সংস্কৃতির লালনপালনকারী? অন্যরা সবাই ক-অক্ষর মুর্খ্য? সংস্কৃতি চর্চার রাষ্ট্রীয় বাজেটে দেশের কবি লেখকরা শতকরা কত ভাগ পাচ্ছে? বাকি বাজেট কারা কিভাবে খরচ করছে? সর্বশেষ কথা হলো- রাষ্ট্র দেশের কবি লেখকদের জন্য স্বাধীনতার পর এই ৫০ বছরে কি কি দায়িত্ব নিল?
অনেকগুলো প্রশ্ন। এই প্রশ্নগুলোর জবাব কি কি হতে পারে বলে আপনি মনে করছেন? আমি আমার ভাবনাটা একটু বলি। ফেসবুক চালু হলেও দেশে পাঠক সংখ্যা বেড়েছে বলেই আমার ধারণা। নইলে প্রতি বছর এভাবে বই বিক্রি বাড়তো না। এভাবে কবি লেখক সংখ্যাও বাড়তো না। এভাবে প্রকাশকদের সংখ্যাও বাড়তো না। সাধারণ পাঠক বেড়েছে বলেই দেশে কবি-লেখক-প্রকাশক সংখ্যা বেড়েছে। বইয়ের বিক্রিও বেড়েছে। বইয়ের প্রকাশ সংখ্যাও বেড়েছে। পাশাপাশি আরেকটা গোপন বিষয়ও বই বিক্রির সঙ্গে জড়িত। বিক্রিত বই কয়টা কতটুকু পড়া হচ্ছে? আমি নিজেকেই যদি প্রথম আসামি বানাই, সেখানে দেখা যায় যে, গত বছরের বইমেলা থেকে কেনা বইগুলোর সব এখনো পড়া শেষ হয়নি। আবার কোনো কোনো বই দুই-তিনবারও পড়েছি। তার মানে বইগুলো কেনার সময় আমার আরো সতর্ক হবার প্রয়োজন ছিল। যে বইগুলো আদৌ পড়া হবে না, সে বইগুলো অযথা আমার বুকসেলফে জায়গা দখল করে বসে আছে। এরকম বইগুলো আমি কোনো লাইব্রেরিতে দিয়ে দেবার পক্ষপাতি। তাতে আমার সময়ও বাঁচে। বুকসেলফে নতুন কিছু বই রাখারও সুযোগ হয়।
আমার মতে বই পড়ার ক্ষেত্রে ফেসবুক অনেকটাই দায়ী। আমি নিজেকেই দেখেছি, কোনো কোনো দিন অকাজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেসবুকে অকারণে ঘোরাফেরা করাটা একটা নেশার মত। এতে খুব সময় নষ্ট হয় আমার। আবার ফেসবুকে একটু ঢু না মারলে মনের ভেতর যেনো কেমন কেমন একটা চুলকানি। এই চুলকানি আমার বই পড়ার যথেষ্ট বারোটা বাজিয়েছে। যে বইটি তিন দিনেই পড়া শেষ হয়ে যাবার কথা, সেটি শেষ করতে অনেক সময় সপ্তাহ লেগে যাচ্ছে। আবার কোনো কোনোটা হয়তো আর শেষ করাই হচ্ছে না। ফেসবুক এই জায়গায় আমার সাথে যে ঝামেলাটা করছে, এজন্য মিস্টার মার্ক জুকারবার্গ মশাইয়ের বিরুদ্ধে আমরা আদালতে মামলা ঠুকতে পারি কিনা? সেই মামলায় যে অর্থ পাওয়া যাবে, তা দিয়ে না হয় আরো কিছু পছন্দের বই কিনলাম!
জনাব মার্ক জুকারবার্গের বিরুদ্ধে লড়াই করার মত উকিল কোথায় পাবো? সেই উকিল ফি কত নিবে? ফি ছাড়া অ্যাডভ্যান্স কাজ করে দেবার মত উকিল কেউ আছে কিনা? তার ফি বা কত? আইনি লড়াই শেষে যা পাওয়া যাবে, তা উকিলের পাওনা মিটিয়ে অবশিষ্ট থাকবে তো? না থাকলে পকেটের পয়সা খরচ করে মিস্টার মার্ক জুকারবার্গের বিরুদ্ধে লড়াই করাটা ঠিক হবে কিনা? তবে, আমি যদি উপযুক্ত কোনো উকিল পাই, যিনি নিজ দায়িত্বে লড়াই করে আদালতকে এটাই বোঝাতে সক্ষম হবেন যে, আমার মক্কেলের এই ফেসবুকের কারণে এত ঘণ্টা বই না পড়ায় নষ্ট হয়েছে। ঘণ্টা হিসেবে সেই সময়ের মূল্য এত মিলিয়ন ডলার! আর যদি সেই লড়াইয়ে আমার উকিল আমাকে জয়ী করতে পারেন, আমি হলপ করে বলতে পারি, সেই টাকায় আমি গোটা বাংলাদেশে একটি আদর্শ পাঠাগার চালু করব। যেখান থেকে যে কেউ পড়ার জন্য পছন্দের বইটি বাসায় নিতে পারবেন। কোনো ধরনের ফি ছাড়াই। কিন্তু তেমন উকিল এই জনমে মিলবে কিনা তা নিয়ে অবশ্য আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে!
বই পড়ায় ফেসবুক যে পরিমাণ অনিহা সৃষ্টি করেছে, সময় নষ্ট করছে, তার জন্য মিস্টার মার্ক জুকারবার্গের বিরুদ্ধে অন্তত কয়েক লাখ মামলা হবার কথা। কিন্তু বাস্তবে সেই মামলার কোনো আলামত না দেখে আমরা বুঝতে পারি, পাল্লাটা বই পড়ার চেয়ে এখন ফেসবুকের দিকেই বেশি। ভবিষ্যতে হয়তো শোনা যাবে, পছন্দের বইয়ের চুম্বক অংশটুকু ফেসবুকেই পাওয়া যাচ্ছে। অন্তত পাঠক সময় বাঁচাতে সেই অংশটুকু পড়ে নিচ্ছে। সেক্ষেত্রে ফেসবুকের মাধ্যমেও নতুন পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার একটা সুযোগ আছে। সেক্ষেত্রে আমাদের যারা সচেতন পাঠক, তাদের কিছু বাড়তি দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে। কি সেই দায়িত্ব? আপনার পড়া কোনো ভালো একটি বইয়ের চুম্বক অংশটুকু আপনি ফেসবুকে অনেকটা বুক রিভিউ'র মত যদি আমাদের সামনে হাজির করেন, তাহলেও একটা পাঠক শ্রেণি তৈরি হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আর আপনার লেখা সেই বুক রিভিউটি পড়ে হয়তো অনেকের ওই বইটা পড়ারও ইচ্ছে তৈরি হবে। আমি বলতে চাইছি, অন্তত আপনি সপ্তাহে বা পনের দিনে বা মাসে অন্তত একটি বইয়ের রিভিউ ফেসবুকে আপলোড করেন। আপনি একজন ফেসবুক ইউজার হলেও আপনি এভাবে সত্যিকারের পাঠক তৈরি করতে নিরবে ভূমিকা পালন করতে পারেন। আমি সময় পেলেই আমার পড়া বইয়ের উপর দু'চার কথা ফেসবুকে লিখি। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো, সেই লেখাগুলো খুব কম সংখ্যক বন্ধুরাই পড়েন বলে আমি সন্দেহ করি।
এই ফাঁকে ফেসবুকে লাইক আর পড়ার মধ্যে একটা প্রকৃত পার্থক্যের কথা আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। কোনো লেখার লাইক সংখ্যা দিয়ে আদৌ জানার উপায় নাই, কয়জন পাঠক লেখাটি পড়েছেন? আর কয়জনের লেখাটি ভালো লেগেছে? আর কত জন লেখাটিতে লাইক না দিয়েও পড়ার কাজটি করেছেন? এমনিতে পড়ার কাজটি নিরবে ঘটলেই ভালো। তার সঙ্গে লাইক আর কমেন্টসের ব্যাপারটা অনেকটাই গৌন। তবে লাইকের তুলনায় কমেন্টস এখানে অনেকটাই মুখ্য। অন্তত পাঠকের এক ধরনের প্রতিক্রিয়া সেখানে প্রতিফলিত হয়। সেক্ষেত্রে আমি পাঠকের প্রতিক্রিয়াকেই প্রাধান্য দেব। যদি আপনি বিষয়টি পড়েন, তাহলে কিছু না কিছু লিখুন। বিষয়টি নিয়ে তখন আপনার মতামত অন্তত জানা যায়। হোক সে বিপক্ষের মত। তবু অন্তত ওই বিষয়ের উপর একটা নতুন চিন্তার প্রতিফলন তো পাওয়া যায়। কিন্তু কোনো কমেন্টস না করে শুধু হাজার খানেক লাইক দেখে কিছুই বোঝার সাধ্য নাই। আমি দেখেছি, ফেসবুকে সিরিয়াস লেখার চেয়ে চটুল বিষয়ের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি। অংশগ্রহণও বেশি। এই চিত্র দেখেই বোঝা যায়, এই ফেসবুক বই পাঠের উপর কেমন নেগেটিভ প্রভাব ফেলেছে। তাই ফেসবুক ইউজারগণ যাতে অন্তত কিছুটা পড়ার অভ্যাসও ধরে রাখে, সেজন্য আমাদের কাউকে না কাউকে তো কিছুটা বাড়তি দায়িত্ব পালন করতেই হবে। কে কে আছেন সেই দলে, হাত তুলুন এবং আপনার মতামত জানিয়ে আওয়াজ দিন।
২.
স্বাধীনতার সময় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। ৫০ বছরে তা বেড়ে এখন দ্বিগুনেরও বেশি। সাধারণত ৩৫ বছরে কোনো একটি দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুন হবার ব্যাপার প্রচলিত। সেই হিসেবে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কবি-লেখক-প্রকাশকের সংখ্যা বেড়েছে। বই প্রকাশের সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় কোয়ালিটি বই প্রকাশের সংখ্যা কিন্তু বাড়েনি বলেই আমার মনে হয়। কোয়ালিটি বই প্রকাশ করা বলতে আমি বুঝি, যেমন ধরুন, ভারত ভাগের পর দেশভাগ নিয়ে অনেক ভালো ভালো বই লেখা হয়েছে। সে তুলনায় আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর অনেক বই লেখা হলেও এখনো কোনো কোয়ালিটি বই কিন্তু উল্লেখ করার মত নেই। এত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করেও স্বাধীনতার উপর কোয়ালিটি বই প্রকাশ বাড়লো না কেন? আমাদের স্বাধীনতার উপর কোয়ালিটি বই কোনগুলো? আমরা কিন্তু আদতে তা জানি না। এই সংখ্যাটি বাড়লো না কেন? এই দায় কিন্তু আমাদের যারা সিনিয়র কবি-লেখক তাদের ঘাড়েই বর্তায়।
রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বাধীনতার উপর তেমন কোনো কোয়ালিটি বই লেখা হলো না কেন? অন্তত মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসটুকু রাষ্ট্রীয়ভাবে কেন পাঠকের হাতে তুলে দেবার ব্যবস্থা হলো না? পাঠ্যবইয়ে কেন সঠিক ইতিহাসটুকু স্থান পেল না? ইতিহাস কেন ইচ্ছাকৃত ভাবে পাল্টে দিয়ে মিথ্যা দিয়ে পূরণ করতে হবে? তাহলে জাতীয়ভাবে আদতে আমরা কোন ইতিহাস লালন পালন করছি? এই দায় কিন্তু রাষ্ট্র এড়াতে পারে না। আমাদের বিগত শাসকরাও এড়াতে পারে না। বর্তমান শাসকরা যদি এই উদ্যোগ গ্রহন না করে, তারাও কিন্তু এই দায় এড়াতে পারে না। আর কোয়ালিটি বই প্রকাশের জন্য প্রকাশকদের আরো দায়িত্ববান হবার যে দায় রয়েছে, তারাও সেই দায় অন্যের ঘাড়ে চাপাতে পারে না। এই ব্যর্থতার দায় কমবেশি সবার ঘাড়েই কিছু কিছু পড়ে। তবু যদি আমরা সেই ভুলগুলো বুঝতে পেরে এখন থেকে বছরে অন্তত দশটি কোয়ালিটি বই প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করি, সেই উদ্যোগের জন্য প্রকাশকদেরকে আমার অন্তর থেকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা থাকবে। আপনারা হাজার হাজার বই না ছাপিয়ে বছরে অন্তত আমাদের দশটি কোয়ালিটি বইয়ের সন্ধান দিন। আমরা না হয় এই ফেসবুকের যুগে ওইটুকু পড়েই শান্তিতে থাকার চেষ্টা করি। নইলে আমরা আর কত কাগজের শ্রাদ্ধ করব?
৩.
স্বাধীনতার পর এই ৫০ বছরে রাষ্ট্র আমাদের কবি লেখকদের কতোটা দায়িত্ব নিল? আদৌ কি নিল কিছু? নাকি কেবল দলীয় কবি লেখকদের কিছু হিল্লে হবার নামে চলছে এক সংস্কৃতি চর্চার মহোৎসব? বাংলাদেশের গত ৫০ বছরের সংস্কৃতি চর্চার দিকে তাকালে দুই শ্রেণির মোটা দাগের বুদ্ধিজীবীদের অস্তিত্ব খুব ভালো ভাবেই টের পাওয়া যায়। কেউ কেউ জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবী। আর কেউ কেউ আওয়ামী বুদ্ধিজীবী। এর বাইরে যে দুর্বল শ্রেণি, সেটা অনেকটা ধ্বজভংগ টাইপের বুদ্ধিজীবী। এছাড়া মিডিয়াবাজ নামক একটি নতুন বুদ্ধিজীবী শ্রেণির উৎপাত সাম্প্রতিক সময়ে বেশ টের পাওয়া যাচ্ছে। এদের বাইরে যারা কবি লেখক, তাদের কোনো শ্রেণি বা ক্যাটাগরিতে ভাগ করাও হয় না। তাদের কণ্ঠস্বরকে বিবেচনায়ও ধরা হয় না। অথচ, এই অশ্রেণিভুক্ত কবি লেখকদের মধ্যেই হয়তো লুকিয়ে আছে আমাদের আগামী দিনের বিভূতিভূষণ, আমাদের আগামী দিনের জীবনানন্দ, আমাদের আগামী দিনের এক একজন আহমদ ছফা, হুমায়ুন আজাদ, আরজ আলী মাতুব্বর, শহীদুল জহির, মানিক-তারাশংকর। হয়তো এই অশ্রেণিভুক্ত কবি লেখকদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এক একজন গোর্কি, ট্যাগোর, অ্যাডগার অ্যালান পো, ইবসেন, গ্যাটে, রুমি বা গালিব।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের বিদ্যমান সংস্কৃতি চর্চায় এই অশ্রেণিভুক্ত কবি লেখকদের খুঁজে বের করার কোনো উদ্যোগ রাষ্ট্রীয়ভাবে বা ব্যক্তি উদ্যোগে এখনো এখানে গড়ে ওঠেনি। রাষ্ট্র বিগত ৫০ বছরে আমাদের কবি লেখকদের জন্য কোনো সত্যিকারের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এমন কি বছর বছর সংস্কৃতি চর্চার নামে বাজেটে যে বিপুল অংকের টাকা বরাদ্দ করা হয়, তা কোথায় কিভাবে ব্যয় হচ্ছে, কারা সেই টাকা পাচ্ছে, কেন পাচ্ছে, কি কারণে পাচ্ছে, এসবের কোনো যুক্তিসঙ্গত পরিমাপ যেমন নাই বা গড়ে ওঠেনি, তেমনি যারা এই বাজেটের টাকা হাতে পাচ্ছেন, তারাও সেই কাজটি যেভাবে করার কথা, সেভাবে করছে বলে আমার মনে হয় না। এই কাজটি যথাযথভাবে করা হলে, তার একটা চেহারা আমরা দিব্য চোখে দেখতে পারতাম। দেশের রাষ্ট্রীয় বাজেটে সংস্কৃতি চর্চার নামে যা ব্যয় হচ্ছে, তার বেশিরভাগই অপচয়। বছর শেষে যেটুকু সাফল্য দাবি করা হচ্ছে, তার আদৌ কোনো প্রভাব কি আমাদের বেড়ে ওঠা সমাজে কোনো ভূমিকা পালন করছে? বিগত ৫০ বছরের সংস্কৃতি চর্চায় তা কী আপনার চোখে পড়েছে? রাষ্ট্রীয় এই বাজেটের তুলনায় বরং কর্পোরেট যুগের বিরক্তিকর বিজ্ঞাপনই কেবল আমাদের সমাজের গোড়ায় গোড়ায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিদেশি সংস্কৃতির মাতাল হাওয়া ঢুকিয়ে দেবার ক্ষেত্রে অনেকটাই সফল বলা চলে। তাহলে স্বাভাবিক প্রশ্ন হলো, বাজেটের টাকা কারা পেল? তারা সেই টাকা নিয়ে করলটা কি? সেই টাকার কাজ কোথায়? আর রাষ্ট্র সেই কাজের জবাবদিহিতা চায় না কেন?
৪.
একটি জাতি গঠনে দেশের কবি লেখকদের ভূমিকাকে কখনোই অস্বীকার করার সুযোগ নাই। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা দাবি করে, আমাদের কবি লেখকরা মৃত্যুর পর এখন কিছু কিছু সম্মান পাচ্ছেন। আর জীবদ্দশায় তারা নানান কিসিমের কষ্টভোগ করছেন। তখন রাষ্ট্র এক ইঞ্চিও এগিয়ে আসে না। ইতিহাস এটাই সাক্ষ্য দেয়। যে রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে কবি লেখকদের লালন পালন করা হয় না, সেই দেশের সাংস্কৃতিক বিকাশ কতদূর অগ্রসর হতে পারে? আদৌ পারে কিনা? সেটা নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখার বিষয়।
অথচ আমাদের এখানে এখনো মেধাস্বত্ব বা কপিরাইটের চেয়ে পাইরেসি অনেক শক্তিশালী। আমরা কবি লেখকদের কপিরাইট দিতে যেমন ব্যর্থ, ঠিক পাইরেসি দমন করতে তারচেয়েও বেশি ব্যর্থ। আমাদের শিল্পীরা মেধাস্বত্ব ঠিকমত পায় না। আমাদের কবি লেখকরা কপিরাইটটুকু পায় না। অথচ আমাদের দেশে স্বাধীনতার পর ৫০ বছরে প্রকাশনা জগতে অনেকটা বিপ্লব ঘটে গেছে। নতুন নতুন ছাপার মেশিন এসেছে। ভালো কাগজ এসেছে। উন্নত মানের বাইন্ডিং হচ্ছে। কিন্তু কবি লেখকরা না খেয়ে ধুকে ধুকে মরছে। আর প্রকাশকরা ব্যবসার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সাইড বিজনেস খুলছেন। শুধু বই বিক্রিতে তাদের প্রকাশনা টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। তাই তারা কাপড় বিক্রি করছেন। ফ্যাশন হাউজ দিচ্ছেন। কফিহাউজ দিচ্ছেন। আর কিছু না হোক অন্তত নানান ঋতুতে নানান নামে বই উৎসব করে বই বিক্রি বাড়িয়ে ব্যবসায় টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু যে কাজটিতে আদতে প্রকাশকদের মনোযোগী হবার কথা, সেখানে তারা আদৌ কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
আমাদের প্রকাশনা জগতে বিপ্লব ঘটে গেলেও আমাদের এখানে ভালো এডিটর নাই। একটি ভালো বই প্রকাশের প্রথম শর্ত হলো- একজন ভালো এডিটর। একজন ভালো এডিটর লেখককে দিয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়টি লিখিয়ে নিয়ে, অত্যন্ত সুন্দর ভাবে সেটি পাঠক আকৃষ্ট করার মত টেকসই পদ্ধতিতে উপস্থাপন করবেন, যাতে বইটি পড়ায় পাঠকের আগ্রহটুকু অন্তত পাঠের শেষ পর্যন্ত থাকে। দুঃখের বিষয়, আমাদের এডিটর তো একদম নাই। এমন কি অনেক প্রকাশকের প্রুভরিডার পর্যন্ত নাই। হাজার হাজার বানান ভুলে ভরা বই, হাজার হাজার কপি প্রকাশ পাচ্ছে। বানান ভুলে ভরা বই, সে আমার নিজের লেখা হলেও, সেটি পড়তে আমার খুব বিরক্তি লাগে। বই প্রকাশ পেল কিন্তু হাজার হাজার বানান ভুল। তাহলে সেই প্রকাশনার মান নিয়ে নিশ্চয়ই প্রশ্ন করা যায়। এখন আমাদের প্রকাশকরা যদি এই বিষয়ে যত্নবান না হন, তারা যদি এডিটর নিয়োগ দান না করেন, তারা যদি বইটির যথাযথ দায়িত্ব পালন না করেই সেটি দায়সারাভাবে বাজারে আনেন, সেই বই কতটুকু বা পাঠকের নজর কাড়তে পারে?
৫.
আরেকটি বিষয় হল বইয়ের দাম। ইদানিং আমার নিজেরও মনে হয়, বইয়ের দাম অনেক বেশি। যে দাম দিয়ে আমি বইটা কিনব, পড়ার পর অন্তত সেটুকু আত্মতৃপ্তি যদি উঠে না আসে, তাহলে আমার পয়সা কেন এভাবে জলে দেব? আমার সময় বা কেন নষ্ট করব? কাগজের দাম, বাইন্ডিং, প্লেট, ছাপা, নানান অযুহাতে বইয়ের দাম বাড়ানোর কথা শুনি। কিন্তু বইটি পড়ার পর যতটুকু আমার লাভ হবার কথা, সেটুকু লাভ যদি না হয়, তাহলে তো টাকাই জলে গেল। আর এভাবে একজন পাঠক যখন বারবার ঠকে যায়, তখন বই কেনায় তো তার নিরুৎসাহিত হবার কথা।
আমাদের প্রকাশকদের বই প্রকাশে আরো যত্নবান হবার পাশাপাশি আরো প্রফেশনাল হওয়াটা খুবই জরুরি। প্রতিটা বই প্রকাশের আগে এডিটর দিয়ে সেটির একটা ভালো সম্পাদনা খুব জরুরি। বানান নির্ভুল হওয়া জরুরি। বইয়ের দাম আরো কম হওয়া জরুরি। অর্থনীতির ভাষায় বলা যায়, কম মুনাফা দিয়ে বিক্রি বাড়িয়ে, মুনাফা বাড়ানো পদ্ধতি অনুসরণ করাটা জরুরি। বেশি লাভ, কম বিক্রি, বেশি মুনাফার চেয়ে, কম লাভ, বেশি বিক্রি, বেশি মুনাফা থিউরি বেশি কার্যকর হবে, যদি আমাদের প্রকাশকগণ প্রকাশনায় এই প্রফেশনালিজমটুকু অন্তত কষ্টকর হলেও একটা পর্যায়ে উন্নীত করতে পারেন। নইলে বইয়ের দোকানের জায়গায় বছর শেষে আরো কিছু ফ্যাশন হাউজ ঢুকে যাবে। বইয়ের দোকান বন্ধ হয়ে বই হয়তো গুদামে চলে যাবে। তখন আর যা হোক, পোকার লাভ হলেও দু'চারজন যারা বই পোকা এখনো আছেন, তাদের বড্ড অসুবিধা হবে বৈকি।
রাষ্ট্রীয়ভাবে কোয়ালিটি বই প্রকাশের উপর আরো জোর প্রদান খুব জরুরি। প্রকাশকদেরও আরো প্রফেশনাল ওয়েতে বই প্রকাশে উদ্যোগ নেওয়া এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি, কবি লেখকদের যথাযথ মেধাস্বত্ব প্রদানের বিষয়টি নিয়মিত চর্চার মধ্যে আনাটাও খুব জরুরি। বছরে শুধু হাতে গোনা কয়েকজন কবি লেখক প্রকাশক থেকে টাকা পাবেন, আর বাকিরা সবাই জালের কাঠি, এই নিয়ম বছরের পর বছর ধরে চলতে পারে না। তাহলে তাদের বই প্রকাশ কেন করলেন? বই প্রকাশ যখন করলেন, তখন সেই বই বিক্রি করার জন্য যথাযথ উদ্যোগটি কিন্তু প্রকাশকেরই নেবার কথা। সেই যথাযথ উদ্যোগ না নিয়ে ব্যবসার পুঁজি ওঠাতে সাইড বিজনেস চালুর উদ্যোগ কিন্তু এক ধরনের ফটকাবাজি।
তাহলে আপনার আসলে প্রকাশক হবার কথা নয়। আপনি ভুল করে এই লাইনে ব্যবসা করতে এসেছেন। এখন ব্যবসা লোকসান দেখে আপনার ভেতরের মুখোশ বের করছেন সাইড ব্যবসা চালু করে। আমাদের তো হাজার হাজার প্রকাশক দরকার নাই। আমাদের কোয়ালিটি প্রকাশক দরকার। সারা দেশে এমন কি সারা বিশ্বে যার বই প্রচার করার মত নেটওয়ার্ক আছে, তাদেরই প্রকাশনায় থাকা উচিত বলে আমি মনে করি। আপনি বই প্রকাশ করলেন, আর ফেব্রুয়ারি মাসের পর সেই অবিক্রিত বইগুলো বাংলাবাজার গুদামে পরে থাকল, আর বছর শেষে আপনি লেখকের ঘাড়ে সেই দায় চাপাতে পারেন না। আপনি সারা দেশের পাঠকের কাছে বই পৌঁছাতে পারেননি। আপনার সারাদেশে বই সাপ্লাই দেবার যোগ্যতা নাই, তাই বই বিক্রি হয়নি।
বইয়ের প্রকাশকদের এই নেটওয়ার্ক ব্যর্থতার চেয়ে আমাদের এখানে কবি লেখকদের ঘাড়েই বই কম বিক্রি হওয়ার দায়টা চাপানোর একটা প্রবনতা লক্ষ্য করছি। এটা সম্পূর্ণ ভুল। একজন স্বনামধন্য কবি বা লেখকের বই আপনি যেভাবে প্রচার করছেন, একই ভাবে না হোক, অন্তত যদি ন্যূনতম একটি প্রচারও সেই অপরিচিত কবি লেখকের বইটি পায়, আর সেটি যদি দেশের সর্বত্র পাওয়া যায়, অথবা সারা বিশ্বে সেই বই পৌঁছে দেবার মত নেটওয়ার্ক প্রকাশকের থাকে, তাহলে ওই বইটিও খরচ ওঠানোর মতই বিক্রি হবে। কিন্তু বইটি কতটুকু কোয়ালিটি বই নাকি বিজ্ঞাপন সর্বস্ব আশ্চার্য মলম, সেটিও একটা বড় প্রশ্ন। আমাদের রাষ্ট্র আমাদের কোয়ালিটি বই প্রদানে এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তেমনি আমাদের প্রকাশকরাও কোয়ালিটি বই প্রকাশে তেমন উৎসাহ দেখায়নি। মাঝখান থেকে ওই অশ্রেণিভুক্ত কবি লেখকদের ঘাড়ে সব দায় চাপানো হচ্ছে। এ যেনো একুশ শতকের আরেক দুঃখজনক মহানিয়তি!
আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র, নীতি নির্ধারকগণ, আমাদের প্রকাশকগণ এবং অবশ্যই আমাদের কবি লেখকগণ যতক্ষণ না এ নিয়ে সোচ্চার না হবেন, ততদিন এই নিয়ে সত্যিকারভাবে কোনো আশার আলো দেখা যাবে না। পাশাপাশি একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে আমাদেরও অনেক দায়িত্ব আছে। আমরা খামাখা ফেসবুকে সময় নষ্ট না করে অন্তত চব্বিশ ঘণ্টার যদি মাত্র এক ঘণ্টাও বই পড়ায় অভ্যস্থ হই, তাহলে আমাদের বছরে যে পরিমাণ সামাজিক দায়িত্ব পালন করা হবে, তার চেয়েও বেশি আমরা নিজেদের প্রতি সচেতন হব, নিজেদের সময় জ্ঞান সম্পর্কে সচেতন হতে পারব। এমন কি কিছু ভালো বই পড়ায় অন্তত সময় খরচ করব। আমাদের মানস গঠনে এটি দীর্ঘ প্রভাব ফেলবে। বই না পড়ে এক হাজার বছর বাঁচার চেয়ে মাত্র মাত্র ত্রিশ-চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর ভালো ভালো কয়েকটি বই পড়ার পর মরে যাওয়া অনেক ভালো বলে আমি মনে করি। আমরা কোনটি করব, সেই সিদ্ধান্ত কিন্তু আমাদেরই নিতে হবে। সুতরাং সাধু সাবধান।
ঢাকা
১৮ নভেম্বর ২০২১
২| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৫৬
মেহেদি_হাসান. বলেছেন: গত বছর ৯০ টা বই পড়েছিলাম এবছরেও প্রায় ৭০ টা পড়েছি।
আসলে কোয়ালিটিফুল বই বাজারে নাই যে দুচারজন লেখক কবিকে মানুষ চেনে তাদের বই এমন দাম থাকে যে তা কেনা সাধারণ পাঠকদের নাগালের বাইরে থাকে।
ফেইসবুকে খুব কম ইউস করি। আমি বই পড়লে বই সম্পর্কে দুএকলাইন ফেইসবুকে লিখি তা লাইকও পরে না কমেন্টও পরেনা অথচ আমার প্রায় ১২০০ ফ্রেন্ড। কিন্তু একটা ১৮+ পোষ্ট করলে ৩০০/৪০০ লাইক কমেন্ট পরে। সাধারণ মানুষ এবং বইয়ের মাঝে ফেইজবুক একটা বিশাল দেয়াল এটা ভেত করা সহজ নয়।
৩| ১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৩৯
রাজীব নুর বলেছেন: ফেসবুকের কারনে বই পড়ার সময় কমে গেছে। আবার ফেসবুকের কারনে বই প্রকাশ বেড়ে গেছে।
৪| ২০ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৩১
ঈশ্বরকণা বলেছেন: চমৎকার ! দেশের বই প্রকাশনা পদ্ধতির দজ্ঞযজ্ঞ নিয়ে মুটামুটি গ্রহন্থবেদের মতো একটা লেখা হয়েছে এটা। আপনার লেখার সেকশন ৩ নিয়ে কিছু কথা বলি । এবার কোভিডের আক্রমণে বিপর্যস্থ বইমেলাতেও বই প্রকাশিত হয়েছে ২৬৪০টা ।এটা কালেরকণ্ঠ পত্রিকার একটা হিসাব যদিও অন্যবার আরো বেশি বই পাবলিশ হয়েছে। আমার একটা ধারণা এই আড়াই হাজারের কিছু বেশি বইয়ের মধ্যে লেখক লেখিকাদের নামেই চেনে এমন বই যদি অর্ধেকও হয় তাহলেও হাজার খানেক বইয়ের লেখকদের পরিচিতি খুব অল্পই হবার কথা। এই অপরিচিত লেখকদের বইয়ের মধ্যে মানসম্পন্ন বই নিশ্চই আছে। এমন কি হয়তো অসম্ভব ভালো বইও আছে। কিন্তু ঝামেলাটা হলো এই সব লেখকদের বই নিয়ে কোনো রকম প্রচারণা নেই । সবচেয়ে বঞ্চিত শ্রেণী মনে হয় প্রবাসী লেখক লেখিকারা। তারা নিজেরা বই নিয়ে খুব বেশি প্রচার করতে পারেন না আবার দেশেও তাদের যে প্রকাশকরা এই বইগুলো প্রকাশ করেছেন তারাও মনে হয়েছে যতটুকু না করলেই নয় তার বাইরে প্রচারণা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাননি ।
আমি একজনের কথা জানি যার বই এই ২০২১ সালের বই মেলাতেই প্রথম বের হয়েছে। তার প্রকাশক সেই বই নিয়ে নিজেদের প্রকাশিনীর ফেসবুকে বই প্রকাশের সময় একটা পোস্ট দিয়েই খ্যান্ত দিয়েছেন । ফেসবুকে সেই প্রকাশক এমন একটা পোস্টও দিয়েছিলেন যাতে উনি আর্গুমেন্ট করেছেন প্রকাশক বই প্রকাশক করবে তারপরে কেন তার প্রচারণার দায়িত্বও নিতে হবে । আমি তার পোস্ট পড়ার পরে সেখানে মন্তব্য করেছিলাম একটা ভালো বই প্রকাশ করা যদি প্রকাশকের লক্ষ্য হয় তাহলে সেই বইয়ের প্রচারটাও তার করা দরকার ।কারণ একটা ভালো বইতো শুধু প্রকাশ করলেই হবে না সেটা সবার কাছে পৌছুনোওতো দরকার ।তাতেতো প্রকাশকের ইনসেনটিভ আছে বই বেশি বিক্রি হবে । প্রকাশনীর সুনাম হবে এমন আরো অনেক পজিটিভ ব্যাপারই আছে । আর সেই প্রচারের কাজটা প্রকাশকই সবচেয়ে ভালো পারেন । নবীন লেখকদের চেয়ে অনেক ভালো ভাবেই প্রকাশক কাজটা ইচ্ছে করলেই করতে পারেন। সব প্রকাশনীরই একটা পাঠক শ্রেণী আছে । প্রকাশকদের সাথে দেশের শীর্ষ স্থানীয় লেখক সাহিত্যিকদের পরিচয় আছে ।সেই যোগাযোগ নেটওয়ার্কিংগুলো কাজে লাগিয়ে প্রকাশক যদি নবীন লেখকদের বইগুলো সম্পর্কে প্রতিষ্ঠিত/পরিচিত লেখকদের কিছু রিভিউ প্রকাশনীর ফেসবুকে,অনলাইন আউটলেটগুলো এমন কি প্রিন্ট মিডিয়াতে প্রকাশ করেন তাহলে পাঠকরা ভালো ভাবে জানতে পারবে নবীন লেখকদের বই নিয়ে। রিভিউকারীদের বইগুলোর সৌজন্য কপি দেয়া যায়।তারা তাদের অনেস্ট রিভিউ লিখবেন সেই শর্তে। কিন্তু আমার মন্তব্যের কোনো উত্তর সেই প্রকাশক দেননি ।
ইনফ্যাক্ট আমি আমার নিজের বই আমার বইয়ের প্রকাশককে তার পরিচিত দেশের প্রচিত লেখকদের সৌজন্য কপি দেবার কথাও বলেছিলাম ২০/২৫টা একটাই শর্তে যে বইয়ের গল্পগুলো সম্পর্কে যেন তারা তাদের অনেস্ট অপিনিয়নগুলো নিজেদের, প্রকাশিনীর ফেসবুকে (সম্ভব হলে প্রিন্ট মিডিয়াতেও) শেয়ার করে ।তাহলেই তাদের হাজার হাজার ফলোয়ার বইটা সম্পর্কে জানাতে পারবে। আর সে থেকেই পাঠকের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে নবীন/স্বল্প পরিচিত কোনো লেখকের বই ভালো কিনা বা সেটা কেনা যায় কিনা সে সম্পর্কে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এই উইন উইন কাজটাও আমার নামি প্রকাশক করতে পারেন নি। দেশে না থাকাতে সেই কাজটা আমার পক্ষেও করা সম্ভব হয়নি, নিট রেজাল্ট হলো : বইয়ের প্রচারটাই ভালো করে হয়নি বই মেলার সময়ে বা তার আগে । আমার নিজের উদ্যোগের কারণে যারা আমার বইটা পড়েছেন তারা কেউ কিন্তু খারাপ বলেননি লেখা (এদের মধ্যে কিছু সিরিয়াস সাহিত্যিকও আছেন যাদের নিজেদের একের বেশি বই পাবলিশ হয়েছে দেশের নামি প্রকাশনী থেকে ! আবার কিছু ব্লগার বইটা হাতে পৌঁছে দেবার পরেও আশ্চর্য রকম নিস্পৃহতা দেখিয়েছেন বইটা নিয়ে ব্লগে অল্প কিছু লিখে তাদের মনোভাবটা জানাতে।)। আমার ধারণা বইটার প্রচারণা ইফেক্টিভলি করতে পারলে বইটা পাঠকদের প্রশংসা পেতেই পারতো। এই থেকে আমার ধারণা বই মার্কেটিংয়ে প্রকাশকদের ভূমিকা আরো পজিটিভ হওয়া দরকার । নবীন লেখকদের লেখাগুলোর মূল্যায়নের এই কাজটা প্রকাশক ছাড়াও সরকারি বেসরকারি অনেক সংগঠনই নানা ভাবেই করতে পারে । কিন্তু সেটা কেউ করছে না।আপনিও সেটাই বলেছেন। দেশের প্রকাশনা সম্পর্কে আপনি আমার চেয়ে অনেক বেশি জানেন ।কিন্তু মনে হলো আমার অভিজ্ঞতাটুকুও আপনার সাথে শেয়ার করি। স্পেশাল নোট: আপনার যোগাযোগের একটা ইমেইল দিতে পারেন আমাকে। আমার বইটা তাহলে আপনাকেও পাঠাতে পারি, (প্রপোজালটা সিরিয়াস কিন্তু !) হাঃ হাঃ হাঃ । কুশলে থাকুন ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৯
নতুন বলেছেন: সামনের প্রজন্ম প্রযুক্তিতে মজা পেলে বই পড়তে চাইবেনা। এখন মানুষ লম্বা ভিডিও দেখতে চায় না। তাই ছোট ভিডিওর জোয়ার আসছে।
বই পড়ার এই পরিবর্তনে সমাজের মানুষের মানবিকতা বোধ, দর্শন, বিজ্ঞান শিক্ষায় অনেক বড় প্রভাব পড়বে।