নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাউজফুল \'সাবিত্রী\' সিনেমার প্রিমিয়ার শো!

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৩:২০

হাউজফুল 'সাবিত্রী' সিনেমার প্রিমিয়ার শো!

২৪ জানুয়ারি ২০২৪ বিকাল ৫ টায় শিল্পকলা একাডেমির আর্ট গ্যালারি অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হলো 'সাবিত্রী' চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার শো। ২২তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে 'সাবিত্রী' চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশ প্যানোরমা বিভাগে প্রতিযোগিতা করছে। 'সাবিত্রী' চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন তরুণ নির্মাতা পান্থ প্রসাদ।

তুষার আবদুল্লাহ'র কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত 'সাবিত্রী' চলচ্চিত্রে পান্থ প্রসাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন এক দৃষ্টিকোণ থেকে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন প্রান্তিক সমাজের নারীর ত্যাগ এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রেক্ষাপটে সেই প্রান্তিক নারী ও তার যুদ্ধশিশুর এই সামজে টিকে থাকার সংগ্রামের নিগুঢ় অন্তর্বেদনার গল্প রূপায়ন করেছেন।

বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রচুর চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, ভবিষ্যতেও আরো নির্মিত হবে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে একজন প্রান্তিক সমাজের নারীর ত্যাগ ও সংগ্রামকে যে দৃষ্টিকোণ থেকে পান্থ প্রসাদ 'সাবিত্রী' চলচ্চিত্রে রূপায়ন করেছেন, তা এককথায় সত্যি অসাধারণ। 'সাবিত্রী' চলচ্চিত্রে একজন নারী চা শ্রমিকের জীবনের গল্প বলেছেন পান্থ প্রসাদ। সাবিত্রী একাত্তরের একজন বীরাঙ্গনা। যার একটি যুদ্ধ শিশু রয়েছে। তার নাম মঙ্গল বাউরী।

এছাড়া এই পরিবারের সাথে অত্যন্ত শক্তিশালী ও নির্ভরতার একটি সম্পর্ক রয়েছে আলী আহমেদ নামের একজন মুক্তিযোদ্ধার। জীবনের নানান সংগ্রাম ও চড়াই উৎড়াইয়ের সময় বীরাঙ্গনা সাবিত্রী এই বীর মুক্তিযোদ্ধার নানা ধরনের সহযোগিতা পান। 'সাবিত্রী' চলচ্চিত্রে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ দেখানো না হলেও মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী যে আফটার ইফেক্ট, অর্থ্যাৎ প্রায় ৫০ বছর পরে যখন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়, তখন সাবিত্রী ও তার যুদ্ধশিশু মঙ্গল এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমেদের জীবনের ঘটনাবলীকে দৃশ্যায়ন করা হয়েছে।

পান্থ প্রসাদ কার্যত এই তিনটি চরিত্রকে 'সাবিত্রী' সিনেমায় ডিল করেছেন। মূলত বীরাঙ্গনা সাবিত্রী ও তার যুদ্ধশিশু মঙ্গলকে নিয়েই কাহিনীর বিস্তার। স্বাধীনতার অনেক পর দেশে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়, তখন আদালতে সাক্ষী হতে গিয়ে সাবিত্রী ও তার যুদ্ধশিশু মঙ্গলকে এক নতুন লড়াই করতে হয়। স্বাধীনতার এত বছর পরেও সাবিত্রীদের জীবনের এমন নির্মম বাস্তবতা যেন নতুন আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ। 'সাবিত্রী' সিনেমায় মুক্তিযুদ্ধকে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানোর চেষ্টা করেছেন নির্মাতা পান্থ প্রসাদ।

'সাবিত্রী' চলচ্চিত্রে পান্থ প্রসাদ ভিজুয়াল ল্যাংগুয়েজে একটি চমকপ্রদ গল্প বলার চেষ্টা করেছেন। সিনেমার অসাধারণ সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন ড্যানিয়েল ড্যানি ও কমল চন্দ্র দাস। বিশেষ করে ঘূর্ণি ও পোকার শট ছিল দুর্দান্ত। খুব কথা কম বলে পান্থ প্রসাদ ভিজ্যুয়ালি সিনেমাটি দেখানোর চেষ্টা করেছেন। এটি 'সাবিত্রী' সিনেমার সবচেয়ে শক্তিশালী দিক। সুর্যোদয়ের দৃশ্য, চা-বাগান, লেক, নদী এবং বিশেষ করে মঙ্গলের জন্মক্ষণের দৃশ্যায়ন এককথায় অসাধারণ।

'সাবিত্রী' সিনেমার দ্বিতীয় শক্তিশালী দিক ছবির চমৎকার সম্পাদনা। সুজন মাহমুদ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ছবির দৃশ্যগুলো জায়গা মত জোড়া লাগিয়েছেন। 'সাবিত্রী' সিনেমার তৃতীয় শক্তিশালী দিক হলো সিনেমার কালার। চোখে শান্তি লাগে এমন একটি সফট টোন আমার ভালো লেগেছে। 'সাবিত্রী' সিনেমার চতুর্থ শক্তিশালী দিক হলো সিনেমার সাউন্ড। 'সাবিত্রী' সিনেমায় সুজন মাহমুদ সত্যি সত্যিই হেটট্রিক করেছেন সিনেমার এডিটিং, সাউন্ড ও কালার-এ। পান্থ প্রসাদ ছবিতে আদতে যা দেখাতে চেয়েছেন, সুজন মাহমুদ কার্যত সম্পাদনায়, শব্দশৈলীতে ও রঙবিন্যাসে তাই করে দিয়েছেন। এককথায় চমৎকার কম্বিনেশন।

'সাবিত্রী' সিনেমার পঞ্চম শক্তিশালী দিক সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ও গান। সাত্যকী ব্যানার্জী 'সাবিত্রী' সিনেমায় অত্যন্ত কার্যকর বিজিএম করেছেন। সিনেমার দুটি গান 'নাম-রূপ তকমা দিয়া দয়াল গড়াইছো সংসার' এবং 'যে যায় সেকি আসলেই যায়, নাকি যাওয়া আসা বলে কিছু নেই' -এর গীতিকার পান্থ প্রসাদ। গান দুটিতে অসাধারণ কণ্ঠ ও সুর দিয়েছেন সাত্যকী ব্যানার্জী।

'সাবিত্রী' সিনেমায় মঙ্গল বাউরী (যুদ্ধশিশু বড়) চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন সৈকত সিদ্দিকী। সাবিত্রী (বড়) চরিত্রে নারগিস আক্তার ও সাবিত্রী (ছোট '৭১) চরিত্রে বৈশাখী ঘোষ দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউটরের চরিত্রে রোকেয়া প্রাচীর অভিনয়ও মনে রাখার মত। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (বর্তমান ও '৭১) চরিত্রে অনন্ত হীরা সাবলীল অভিনয় করেছেন। সাবিত্রীর বাবা চরিত্রে বৈদ্যনাথের অভিনয় আমার হৃদয় ছুঁয়েছে। এছাড়া হরিবালা চরিত্রে হাসিমুন বাওয়া ও নিতাই চরিত্রে শ্যামল বাউরীর অভিনয় আমার ভালো লেগেছে।

সিনেমার এন্ডিংয়ে দেখা যায় সাবিত্রী ও মঙ্গল ট্রেনে শহরে যাচ্ছে, যা দেখে দর্শক বুঝতে পারে সাবিত্রী আদতে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আদালতে সাক্ষি দিতেই শহরে যাচ্ছে। 'সাবিত্রী' সিনেমার লোকেশান সুন্দর, ক্যামেরার মুভমেন্ট সুন্দর, আর সবচেয়ে সুন্দর পান্থ প্রসাদের ভিজ্যুয়ালি গল্প বলার ল্যাংগুয়েজ।

'সাবিত্রী' চলচ্চিত্রের চমৎকার টাইটেল করেছেন রহমান আজাদ এবং ইংরেজি সাব-টাইটেল করেছেন সয়রা মাহমুদ।

পান্থ প্রসাদ 'সাবিত্রী' চলচ্চিত্রটি উৎসর্গ করেছেন তার সিনেমাগুরু বিশিষ্ট নির্মাতা মোরশেদুল ইসলামকে। সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত 'সাবিত্রী' সিনেমাটি খুব শীঘ্রই সিনেমাহলে মুক্তি পাবে। 'সাবিত্রী' সিনেমাটি দর্শকদের একটি ভিন্নমাত্রার চিন্তার খোড়াক জোগাবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। পরিমিতিবোধ ও নতুন মাত্রার সিনেমা উপহার দেবার জন্য তরুণ নির্মাতা পান্থ প্রসাদকে আমার অন্তর নিড়ানো শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। 'সাবিত্রী' টিমের সবাইকে শুভেচ্ছা। জয়তু বাংলা সিনেমা।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৭:০৭

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: শুভকামনা রইল

২| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:০০

নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: শুভ কামনা দাদা...

৩| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ২:০১

এম ডি মুসা বলেছেন: শুভ কামনা রইলো! পোস্ট না পড়ে মন্তব্য করছি! কমেন্ট দেখে! সিনেমা সাফল্য আসুক।

৪| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: শুভ কামনা বড় ভাই।

৫| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৫:৪০

বিজন রয় বলেছেন: অভিনন্দন আর শুভকামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.