![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটা অরাজনৈতিক দুষ্ট প্রেমের কবিতা আমি যে সময়ে লিখে ফেলতে পারি তার পুরোটা সময় আমি নিখিলেষের ঘোলাটে চশমার ফাকে ক্লান্ত চোখ দুটোর রঙ আবিষ্কারে ব্যাস্ত ছিলাম। কথোপকথনের শুরুটা হয়েছিল একটা নীল প্রজাপতির ডানা ভাঙগার গল্প দিয়ে, তারপর তার বান্ধবীর অ্যাবোরশান হয়ে কথা গড়িয়েছে হাফিজ মামার মেমোরি কার্ডে, এর মাঝে কথায় কথা উঠায় নিখিলেষের মুখে শুনতে পেলাম রূপাদির খোলাচুলে একদিন নীল প্রজাপতি বাসা বাঁধে, সেদিন ই নিখিলেষ রূপাদির খোলা - ভেজা চুলের ফাকে ধবধবে সাদা পিঠে কালো তিলের অস্তিত্ব বুঝতে পারে। সেদিন ছিল শ্রাবন মাসের ২২ তারিখ, রূপাদি বৃষ্টিতে ভেজার জন্য ছাদে এসেছিল। এ শহরের সবই অচেনা ছিল রূপাদির কাছে। কিন্তু রূপাদিতো জানতোই আজ শ্রাবন মাসের ২২ তারিখ, আজ এই অপরিচিত শহরে সেই পরিচিত বৃষ্টিতো আসবেই। আজ শ্রাবন মাসের ২২ তারিখ, আজ বৃষ্টি হওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক, এরকম ভাবতে ভাবতে রূপাদি ভিজছিল বৃষ্টিতে। রূপাদির হলুদ শাড়ির ব্লাউজের ফাকে বৃষ্টির ফোটাগুলো অন্তর্বাসের চেয়েও গভীরে চলে যাচ্ছিল। বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ায় হ্লুদ শাড়ির ফাকে অর্ধভেদ্য ঝিল্লীর মত রূপাদির সাদা ধবধবে শরীরের মানচিত্র বুঝা যাচ্ছিল। কেউ একজন কফির গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে ফেল ফেল করে তাকিয়ে ছিল রূপাদির দিকে। রূপাদি তার দিকে ফিরতেই নিখিলেষ জানালার পর্দা টেনে দিল।
রূপাদি মফস্বলের মেয়ে। জামার ফাকে অন্তর্বাসের ফিতে সম্পর্কে অযথা সবসময় সতর্ক থাকে। এ শহরে বেড়াতে এসেছে খালার বাসায়, এটুকুই শুনেছি কানাকানি করে। আর নিখিলেষ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ছে, তারচেয়ে বড় পরিচয় সে এলাকার ফুটবল টিমের গোলকিপার। তখন ফুটবলের মৌসুম চলছিল, নিখিলেষ ছাড়া এ এলাকায় গোলকিপার আর কেউ ভালো নেই। কিন্তু নিখিলেষ কোথায়? প্রায় দিনই এখন আর তাকে মাঠে দেখা যায়না। বিকেল বেলার সময়টাতে নিখিলেষ কে দেখা যায় রূপাদির খালার বাসার ছাদে নয়তো ওই বাসার পাশে অন্য আরেকটা বাসার ছাদে। নিখিলেষের বাসায় তেমন কেউ নেই। বাবার সাথে নিখিলেষের মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। বড় ভাই পড়ালেখা করেনি, পরিবারের হাল ধড়তে পাড়ি জমিয়েছে বিদেশে। আর রূপাদির পরিবারের কথা পাড়ার কেউ ই তেমন জানেনা। তবে আমার জানা মতে নিখিলেষ আর রূপাদিকে একসাথে কোথাও দাঁড়িয়ে কথা বলতে এ শহরের কেউ কখনো দেখেনি।
রূপাদি যে খালার বাসায় ছিলেন তিনি আপন খালা নন। আর রূপাদির পিছনে যে নিখিলেষ ঘুড়ছিলেন তার বয়স রূপাদির থেকে এক দশকের কিছু কম। আর একথা নিখিলেষকে রূপাদি আমার মাধ্যমেই বলিয়েছিলেন। আমার সাথে রূপাদির তেমন পরিচয় ছিলনা। রূপাদির খালার বাসা আর আমাদের বাসা ছিল এক বিল্ডিং এ। আর নিখিলেষ আমার কথা গেটের দাড়োয়ানকে বলেই আমাদের ছাদে আসত। রূপাদি যে খুব বেশি সুন্দরী ছিলেন তা নয়। বয়সের ছাপ বুঝা ছিল মুশকিল। তবে রূপাদিকে নিয়ে রাত জেগে দু একটা কবিতা লিখা যেতে পারতোই, বয়স এর পার্থক্য আর পরীক্ষা যন্ত্রনায় তা আর হয়ে উঠেনি। আর নিখিলেষ ছিল রোগা-পাতলা, আমি ভাবতাম এই বাতাসে উড়ে যাওয়া শরীর নিয়ে কিভাবে গোলকিপিং করে। থাক সে কথা। আমি কখনো রূপাদি আর নিখিলেষকে একসাথে দেখিনি। নিখিলেষ একটু কথা বলার সুযোগ খুজতো আর রূপাদি বয়সের দাম্ভিকতা নিয়ে নিখিলেষকে এড়িয়ে যেত।
এতদিনে রূপাদি এশহরের সবকিছু না চিনলেও বাসা থেকে গলির মুদি দোকান পর্যন্ত পথটুকু বেশ ভাল ভাবেই চিনে গেছেন, মূলত বাসার গেটের একটু সামনেই ছিল দোকান। আমার বাসার সামনের বারান্দা দিয়ে স্পষ্টই দেখা যেত দোকানে কারা আড্ডা দিচ্ছে। সেদিন সন্ধ্যায় হঠাৎই অনেক বৃষ্টি। গলির রাস্তা মুহূর্তেই ফাকা। আমি বারান্দার কাপড়-চোপড় বাসার ভিতরে আনতে যেয়ে দেখি রূপাদি ঐ মুদির দোকানে বৃষ্টিতে আটকা পড়েছেন। আমি কাপড় গুলো ভিতরের রুমে দিয়ে এসে দেখি রূপাদি দোকানের সামনে নেই, দোকান বন্ধ হয়ে গেছে।
সেই সন্ধ্যার পর রূপাদিকে অনেক দিন দেখিনা। হঠাৎ একদিন আমাকে তিনি ডেকে বসেন। নিখিলেষকে ডেকে দিতে হবে। আমি নিখিলেষকে খবর দিলাম। তারও অনেকদিন পর নিখিলেষ আমাকে শহরের একটা ক্লিনিকে ডেকে পাঠায়। আমি যাই সেখানে। আমি নিখিলেষকে রূপাদির হাতব্যাগ কোলে নিয়ে বসে থাকতে দেখি ক্লিনিকে। নিখিলেষের চশমার মোটা গ্লাস ঘোলা হয়ে আছে, আমি তার ভিতর দিয়ে নিখিলেষের চোখ দেখার চেষ্টা করি। নিখিলেষ আমার দিকে না তাকিয়ে কথা বলতে শুরু করে, "কয়েকদিন আগে এক সন্ধ্যায় হাফিজ মামার মুদি দোকানে রূপাদির রেইপ হয়....."
আমি হতবিহ্বল হয়ে পড়লাম, আগ্নেয়গিরির লাভা যেন আমার দুই কান দিয়ে বেড়িয়ে আসছিল। আমার মুখে কথা গুলো কেমন যেন জড়িয়ে পড়ছিল। সেই সন্ধ্যায় আমিতো রূপাদিকে দেখেছিলাম হাফিজ মামার মুদি দোকানে। আমি এ কথা বলার সাহস পেলাম না নিখিলেষ কে। নিখিলেষ আমাকে জানায় সে আর রূপাদিকে নিয়ে ওই এলাকায় ফিরছেনা, খালা রূপাদির রেইপ হওয়ার কথা জানলেও রূপাদির ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নিতে রাজি নন। তাই নিখিলেষ রূপাদিকে নিয়ে অন্য এক শহরে গিয়ে থাকবে। যে শহরের কেউ জানবেনা রূপাদি নিখিলেষের চেয়ে এক দশকের বড়, রূপাদির রেইপ হয়েছিল হাফিজ মামার দোকানে, কেউ কিচ্ছু জানবেনা এমন একটা শহরে নিখিলেষ আর রূপাদি সংসার করবে। সেদিন রাতে আমি নিখিলেষ, তার বুড়ো মা আর রূপাদিকে ট্রেনে উঠিয়ে দিলাম। নিখিলেষ যাওয়ার আগে আমাকে একটা চিরকুট দিয়েছিল, চিরকুটে লিখা ছিল নতুন শহরের নাম আর লাল কালিতে লিখা ছিল হাফিজ মামার মেমোরি কার্ড। নিখিলেষ আর রূপাদি রাতের অন্ধকারে ট্রেনে চেপে চলে গেলেন এক অচেনা শহরে।
পরদিন সকালে আমি হাফিজ মামার মোবাইল আর মেমোরি কার্ডটা চুরি করি। আমি রূপাদির রেইপ হওয়া ভিডিওটা দেখি কয়েক বার, তারপর বাথরুমে মুখে গামছা চেপে ধরে কাঁদি। আমি মেমোরি কার্ডটা রেখে দেই আমার ডায়েরীর ভিতর।
আজ পাঁচ বছর পর....
শ্রাবন মাসের ২২ তারিখ। আমি নিখিলেষদা আর রূপাদির সেই নতুন শহরের নতুন বাসায় এসেছি। নিখিলেষদা এখন আদালত পাড়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় উকিল। রূপাদি এখন অন্তঃসত্তা। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নিখিলেষদার বাসায় নতুন অতিথি আসবে। আগে নিখিলেষদা কে নিখিলেষ বলেই ডাকতাম। আমি চাই লোকটা আমার মনে নিখিলেষদা হয়েই বেচে থাক। আজ ছিল শ্রাবন মাসের ২২ তারিখ, তাই একটু বৃষ্টিতো হবেই। আমি নিখিলেশদা আর রূপাদির কাছে বিদায় নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ফিরে আসি রেল স্টেশনে। আমার বুক পকেটে পাঁচ বছর আগের নিখিলেষদার সেই চিরকুট আর হাফিজ মামার মেমোরি কার্ডটা ছিল। আমি হাসতে হাসতে মেমোরি কার্ডটা ভেংগে ফেলে দেই ডাস্টবিনে। তারপর ট্রেনে চেপে আমি ফিরে আসি আমার শহরে।
নিখিলেষদা আর রূপাদি ভাল থাকুক সেই অচেনা শহরে। সেই শহরের সবই আমার অচেনা, চেনা শুধু নিখিলেষদা, রূপাদি আর শ্রাবন মাসের ২২ তারিখের বৃষ্টি।
১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:১৪
রোদ বৃষ্টি কাব্য বলেছেন: নিখিলেষ আর রুপাদিরা নিজেদের লুকিয়ে রাখেন।
২| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:০৯
দ্যা ফয়েজ ভাই বলেছেন: সত্যিই ভালো লাগলো।
নিখিলেষ নামক রুপকের হয়ত আজ কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।তবুও আশা রাখি,এমন হাজারো নিখিলেষ জন্মাবে।
১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:১১
রোদ বৃষ্টি কাব্য বলেছেন: নিখিলেষরা মাঝে মাঝে জন্ম নেয়।
৩| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:০১
আহমেদ জী এস বলেছেন: রোদ বৃষ্টি কাব্য ,
নিখিলেশ সামাজিক একটা ব্যাধির আত্মঘাতী গোলটাকে ঠেকিয়ে মনুষ্যত্বেরই জয় এনে দিয়েছে । অনেক সুন্দর লেখা
১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:০৯
রোদ বৃষ্টি কাব্য বলেছেন: একজন নিখিলেষকে অনেক অনেক বেশী সাহসী হতে হয়।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৫৬
কানিজ রিনা বলেছেন: খুব ভাল লাগল,এমন হাজার নিখিলেশ জন্ম হোক
রুপাদিদের ভালবাসার মানুষ হয়ে। ধন্যবাদ