নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আগের ঠিকানায় আছি

সাদা_মেঘ

আমি আগের ঠিকানায় আছি

সাদা_মেঘ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রতিবাদী প্রজন্ম চত্বরঃ ১৫ দিনের বিশ্লেষণ নাকি কিছু এলোমেলো ভাবনা

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:০১

বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশের পর শিবিরের ক্যাডাররা যখন রাস্তায় নেমে তাণ্ডব করছিল, গৃহযুদ্ধের হুমকি দিচ্ছিল তখন মনে হচ্ছিল দেশটা কি রাজাকারগুলার হাতে আরেক বার জিম্মি হতে যাচ্ছে? ঠিক তার দুদিন পর উপযুক্ত তথ্যপ্রমান থাকা সত্ত্বেও 'মিরপুরের কসাই' কাদের মোল্লাকে ফাঁসির আদেশ না দিয়ে দেয়া হয়েছিল যাবজ্জীবন দন্ড। এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে শাহবাগে জমায়েত হয়েছিলেন কিছু 'মানুষ'। কেউই হয়ত ভাবেনি এই ছোটো চেষ্টাও স্ফুলিঙ্গের মত সবার মনের ক্ষোভের অঙ্গারের আগুন জালাবে। গোপন ক্ষোভে ফুঁসতে থাকা গণমানুষের প্রয়োজন ছিল একটু সাহসের, একটু পথ দেখনোর। এর পর শাহবাগে প্রতি মুহূর্তে এক- একজন করে এসেছেন- তরুন তরুণী, নারী, যুবা, শিশু, বৃদ্ধ সকলেই। ৪২ বছর আগে দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রায় প্রতিটি পরিবার থেকে অন্তত একজন নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন । ৪২ বছর পর পূর্বপুরুষদের বাকি রেখে যাওয়া হিসাব মেলাতে সবাই এসেছেন শাহবাগে। প্রতিবাদী মানুষ শারীরিকভাবে হাজির হয়ে, লাইভ টিভি, ফেসবুক, ব্লগে থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, শ্লোগান দিয়েছেন, যে যার মত, সাধ্যমত কন্ট্রিবিউট করেছেন, অনেকে প্রার্থনা করেছেন। সবার একটাই দাবী- ন্যায্য বিচার চাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই ।



আন্দোলনের এক পক্ষ চলে গেছে । এখনো বিজয় অর্জিত হয়নি , ফাঁসির ঘোষনা পাইনি কাদের মোল্লার, এখনো রায় আসেনি বাকি কসাইগুলার, নিষিদ্ধ হয়নি জামায়াত শিবির । যা পেয়েছি- আইন পরিবর্তন, নীরবতার শক্তি প্রদর্শন, মোমবাতি প্রজ্বলন এবং ২ টা বড় সমাবেশ।



এক পক্ষ পর প্রশ্ন করতেই হচ্ছে, আমরা কি আদায় করতে চাই, আমরা আর কতদুর যাবো? আমরা কি যুদ্ধাপরাধীদের ন্যায্য বিচার চাই নাকি কোন রাজনৈতিক দলের গোপন খেলার পুতুল হতে চাই? ১৫ দিন পর কোন ভুলে জনগনের সমর্থন কমে যাচ্ছে?



১। যে শ্লোগানটাকে দিয়ে প্রজন্ম চত্বর শুরু, তা হল - জয় বাংলা। প্রশ্নটা উঠবেই - এটা কি আওয়ামী লীগের দলীয় শ্লোগান নয়?? হ্যা, মুক্তিযুদ্ধের সময় এ শ্লোগানে দেশবাসী একত্র হয়েছিল কিন্তু আওয়ামী লীগ কি শ্লোগানটার সেই সার্বজনীন আবেদন বজায় রেখেছে? । আংশিক আওয়ামী শ্লোগানটা পুরো প্রোগ্রামটাকে আংশিক হলেও আওয়ামীকরণ করেছে । আমরা কি কেবল- বাংলাদেশ বলে শ্লোগান দিতে পারতাম না ?



২। কসাইদের বিচারের দাবিতে আমরা তরুণরা আশা করে ছিলাম একটা ক্লিয়ার-কাট কর্মসূচী। কিন্তু সমাবেশগুলোতে নেতারা দলীয় আনুগত্যের আঙ্গিকে শপথ পাঠ করিয়ে দিলেন আর আমরাও গতানুগতিক কর্মসূচীর মতন কিছু আবছা কিছু নিয়ে ঘরে ফিরলাম। ক্লিয়ার ২ / ৩ টা দাবির বদলে দাবির লম্বা তালিকা কি আন্দোলনের মুল উদ্দেশ্যকে বিভ্রান্ত করছে না?



৩। গনমানুষের প্রতিবাদ প্রকাশের প্লাটফর্ম হিসাবে শাহবাগের এই আন্দোলন , সরকারি মুখপাত্র হিসাবে নয় । কিন্তু সরকারি বাহিনীর প্রহরায় থেকে শ্লোগান দিয়ে, প্রতিদিন চিকেন বিরিয়ানি- সরকারি ওয়াসার পানি খেয়ে, পতাকা উত্তোলন, চিঠি বেঁধে বেলুন উড়ান কিংবা জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া- এগুলো কোন জাতের প্রতিবাদ হচ্ছে? দেখে তো আমার নিজেরই মনে হয় সরকার তার ভোটের লং-টার্ম প্ল্যান নিয়ে দানাপানি দিয়ে আমাদের মত তরুণদের পুষছে। অন্যদিকে আওয়ামী নেতারা বলে যাচ্ছে- ‘শেখ হাসিনার এক ডাকে ব্লগার তরুণরা আজ একত্রিত হয়েছে’। কে জানে প্রজন্ম চত্বরের এই সমাবেশ সাধারন মানুষ না চাইলেও সরকার পরবর্তী ভোট পর্যন্ত টিকিয়ে রাখবে।



৪। শাহবাগের সমাবেশে সবাই নিজ দলের সমর্থন উপেক্ষা করে, প্রানের দাবিতে এসেছে । আমরা বিএনপি সমর্থকদের সুযোগ পেলেই এক হাত দেখে নিচ্ছি। কিন্তু এই সমাবেশেকে বিএনপি আর কে আওয়ামী লীগ, - . তা বিবেচ্য ছিলো না । প্রজন্ম চত্বর যদি বিএনপি কে এই মেসেজ দিতে পারত যে – স্বাধীনতার শত্রুর এদেশে ঠাই হবে না, কিংবা গনজাগরনের চাপে দলটি জামায়াতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করত- সেটা প্রজন্ম চত্বরের একটা বড় সাফল্য হতে পারত।



৫। শাহবাগের প্রতিবাদ ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে, ধর্মের বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু কি হল? জামাত ইসলামী বা যুদ্ধাপরাধীদের নিষিদ্ধ করতে চাওয়ার বদলে আমরা দাবী করলাম ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক। দেশের মানুষের বড় অংশ প্রাক্টিশিং মুসলিম যারা জামাতকে ঘৃণা করে। যখন যুদ্ধাপরাধীদের ইস্যুতে আমরা দেশের প্রতিটি মানুষকে একত্র করতে পারতাম, জামাতকে একঘরে করতে পারতাম, তখনি এই ঘোষণায় আমরা দেশের মানুষকে বিভক্ত করে ফেললাম।



৬। প্রজন্ম চত্বরের সুত্রপাত হয়েছিল জনগনের আন্দোলনে এবং 'কেউ নেতা নয়' বলে। এখনো বিজয়ের সিকিভাগও অর্জিত হয়নি। কিন্তু এখনই দৃষ্টিকটুভাবে নেতা হবার অথবা টিভি চ্যানেলে টক-শো করে লাইমলাইট কাড়ার নির্লজ্জ প্রতিযোগিতা চলছে। ফলে মাত্র ১৫ দিন পরই সাধারন প্রতিবাদী মানুষের মাঝে এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য কি ছিল - তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ।



৭। ব্লগার রাজিব হত্যা প্রজন্ম চত্বরের জন্য বড় একটি আঘাত হিসাবে দেখা দিয়েছে যখন প্রজন্ম চত্বর রাজিবকে আন্দোলনের পাওনিয়ার হিসাবে প্রচার করলো। রাজিবের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, তিনি আন্দোলনের একজন যোদ্ধা ছিলেন কিন্তু অত্যাবশ্যকীয় অংশ নন। আন্দোলনের অত্যাবশ্যকীয় অংশ একটাই- বাংলাদেশ। দেখা গেল প্রজন্ম চত্বর থেকে রাজিবকে একজন অন্যতম প্রধান সংগঠক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে যিনি (দুঃখজনক হলেও সত্য) ধর্মীয় বিশ্বাসকে তীব্র ভাবে বিদ্রুপকারী একজন নাস্তিক ছিলেন। ফলে প্রজন্ম চত্বরের প্রতিবাদ কেবলই নাস্তিক-বাম সমাবেশ- এ কথাকেই সাধারন মানুষের কাছে প্রমানিত হল।







সর্বশেষ - শাহবাগের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা আর কতদিন বন্ধ থাকবে? রাস্তাটা যুক্ত করছে শহরের বড় কয়েকটি অংশকে। একই সাথে এই প্রজন্ম চত্বরের লাগোয়া আছে দুটি বড় হাসপাতাল। হয়ত রাস্তা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত চত্বরের নয় কিন্তু গনমানুষের কষ্টের জন্য আমরা কি দায়ী হব না? সরকারকে আমরাই কেন বলছি না রাস্তা খুলে দিতে। সেদিন ট্রাফিক জ্যামে বারডেমগামী এক যাত্রীর বাসে সবার সামনেই পস্রাব হয়ে গেল। কতটা অমানবিক দৃশ্য!! হয়ত জ্যামে কারো হার্টফেইল করে মৃত্যু হলে জনগনের গালাগালির মুখে রাস্তা খুলে দিতে হবে। সেটা প্রজন্ম চত্বর, শাহবাগ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী প্রতিবাদী মানুষের জন্য কোনক্রমেই শুভ হবে না।



আমি মনে করি, দেশের স্বার্থে আমাদের আরো একটু চিন্তা ভাবনা করার সময় এসেছে।





কৃতজ্ঞতাঃ ব্লগার দূর্যোধন কে। তাঁর কিছু কমেন্টস আমি বিনা অনুমতিতেই এই লেখায় ব্যবহার করেছি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৩৯

আমিতপু বলেছেন: লেখা অনেক বেশি লম্বা হয়ে গেছে।

তিন নং পয়েন্ট ছাড়া বাকি গুলার সাথে সহমত। আমরা এতটাই অশান্তিপ্রবন যে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করতে ভুলে গেছি। নীরবতার একটা শক্তি আছে, তাতে ফলাফল হয়ত দেরীতে আসে, এজন্যই তা অনেকেই মানতে চাই না। ধ্বংসাত্মক আন্দোলন করলে বাকি দলগুলার সাথে আপনার কিইবা তফাৎ থাকে?



হ্যাপি ব্লগিং

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৩৯

সাদা_মেঘ বলেছেন: আমরা অশান্তিপ্রবন বলেই শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আমাদের কানের মাছিও নড়ে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.