![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই দু-বছরেই নবীন কিছুটা অগোছালো হয়ে গেছে। সবকিছুই তার কাছে আপেক্ষিক মনে হয়। ঘুম থেকে উঠেই স্থির করলো আজ মা-কে দেখতে গ্রামের বাড়িতে যাবে। সে বাড়ি থেকে খুব বেশি দূরে থাকে না। তারপরও বাড়িতে খুব একটা যাওয়া হয় না। প্রায় চার মাস পর সে বাড়ি যাওয়ার চিন্তা করছে।
বাস থেকে নেমে দুপাশটা একবার দেখে নবীন আস্তে আস্তে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো। ভিতরে ভিতরে সে কেমন যেন একটা চাপা উত্তেজনা অনুভব করলো। আচমকাই তার পা গুলো কেনো যেন ভারী ভারী লাগছে। তার কেন জানি মনে হচ্ছে সবাই যেন তার দিকে অদ্ভূত চাহনিতে চেয়ে আছে। সবকিছু উপেক্ষা করে পা-এর অমতেই সে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো। বাড়ির সদর দড়জায় পা রাখতেই নিস্তব্ধ নিরবতা তাকে গ্রাস করে নিলো, যে নিরবতা থেকে মুক্তির জন্য সে নিরব থেকে নিরবতর হয়ে যাচ্ছে। তার মনে পড়ে যায় কোলাহলপূর্ন ছোটবেলার কথা। তারা দুই বোন পাঁচ ভাই, সে হলো সবার ছোট। সংগত কারণেই সে ছিল সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। ছোট বেলায় তাদের দুষ্টামিতে পাড়া-প্রতিবেশি পর্যন্ত অতিষ্ট হয়ে যেত, কিন্তু কেউ কখনো বিরক্ত হত বলে মনে হত না। বিরক্ত শুধু তার মা-ই হত। মা-এর বকুনি যেন দুষ্টমির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিত। যা আজ শুধুই অতীত। বাস্তবতায় ফিরে সে দরজায় কড়া নাড়লো।
-কে?
অস্পষ্ট গলায় তার মায়ের জীজ্ঞাসা। তার মা দরজার পাশের বিছানায় শুয়েছিল। নবীনের গলা শোনা মাত্রই দরজা খুলে দিলো। একটু আগেই সমস্ত বাড়িতে যে নিরবতা ছিল তার মাঝে যেন কিছুটা চাঞ্চল্যতা ফিরে এলো। নবীন কিছুই জিজ্ঞাসা করে না, সে সব বুঝতে পারে। সে জানে তার মা অসুস্থ। সে তার মাকে আগে কখনো দেখেনি সকাল ১১টায় শুয়ে থাকতে। আর মায়ের কন্ঠই বলে দিচ্ছে অসুস্থতার আগাম বার্তা। নবীন নিরবে কাটের উপর বসে থাকে। সে লক্ষ্য করে তার মা এমনভাবে চলাফেরা করার চেষ্টা করছে যেন তার শরীরে কোন অসুখ নেই। কিন্তু মা-বাবার চোখকে যেমন সন্তানেরা ফাঁকি দিতে পারে না তেমনি মা-বাবাও সন্তানের চোখকে ফাঁকি দিতে পারে না। নবীনের বুঝতে কষ্ট হয় না যে এটা তার মায়ের সুস্থ থাকার অভিনয়ু। একটা জিনিস নবীন লক্ষ্য করে, হৈচৈয়ের জন্য যে মা আগে বকাবকি করতো সেই মা-ই আজ হৈচৈয়ের জন্য বেকুল হয়ে আছে। নিরবতা যেন আজ তার দু-চোখের বিষ।
দুই বছর হলো নবীন মাস্টার্স পাস করেছে। কিন্তু চাঞ্চল্য ধরে রাখার প্রদীপ সে এখনো জ্বালাতে পারে নি। কেবলই নিজেকে ব্যর্থ মনে করে। পরিবারের এই নিরবতার জন্য নিজেকেই দ্বায়ী মনে করে। বড় ভাই-বোনেরা কেউই যে খুব ভাল প্রতিষ্ঠিত তা না, তার পরও নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। বেকারত্ব তার সব কিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে। সে পরিবারের কারোর অসুস্থতার জন্য নিজেকেই দোষী ভাবে, বিশেষত বাবা-মার। তবুও স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নই তার একমাত্র অবলম্ভন। মনের আত্ববিশ্বাসই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আর আছে সব কিছু আগের মত হয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। নবীনের চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই। তারপরও কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। না হওয়ার জন্য দেশের বর্তমান পরিস্থিতি অনেকটাই দ্বায়ী। তার শুধু আছে পরিবারের প্রতি দ্বায়বদ্ধতা আর লক্ষ্য অর্জনের বিশ্বাস।
আসরের আযান পড়তেছে। নবীন তার মায়ের বিছানায় বসে আছে। আজি সে চলে যাবে। তার মা নামাজ পরতেছেন। নামাজ শেষ করে তার মা নবীনের পাশে এসে বসে। বলে
-আজকের দিনটা থেকে যা
-না মা, কাজ আছে।
-কি কাজ?
-সামনে একটা পরিক্ষা আছে, পড়তে হবে।
-ও, আচ্ছা যা, ভালভাবে পড়িস আর এই টাকাটা রাখ, খরচ করিস।
নবীন দেখে পাঁচশত টাকার একটা নোট। সে বলে
-না মা, তুমি ওষুধ খেয়ো, আমার লাগবে না।
-আরে আমি কিসের ওষুধ খাবো? আমার তো কোন অসুখ নেই। নে তুই খরচ করিস।
নবীন আর চোখের জল ধরে রাখতে পারে না। ডুকরে কেঁদে উঠে। সে বাচ্চা ছেলের মত কাঁদতে থাকে। কিছুই বলতে পারে না।
-কিরে তুই কাঁদতেছিস কেন? বললামতো আমার কোন অসুখ নেই।
নবীন চোখ মুছতে মুছতে টাকাটা নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে পরে। সে জানে সব মিথ্যায় পাপ নেই। যেমন মায়ের এই মিথ্যায় কোন পাপ নেই। সে জানে কিছু ভালবাসা কষ্টের মাঝেই পূর্ণতা পায়, যেমন মায়ের ভালবাসা।
২| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:২১
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
ব্লগে স্বাগতম।
৩| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৯
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: সুন্দর। +++
লেখনী প্রশংসনীয়।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:৪১
কাবিল বলেছেন: নবীনের চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই। তারপরও কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। না হওয়ার জন্য দেশের বর্তমান পরিস্থিতি অনেকটাই দ্বায়ী। তার শুধু আছে পরিবারের প্রতি দ্বায়বদ্ধতা আর লক্ষ্য অর্জনের বিশ্বাস।
ভাল লিখেছেন অনেক ধন্যবাদ।