![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রিয় বন্ধু .. প্রিয় সত্ত্বা .. সবচেয়ে আপন - গল্পের বই .. সাদা কাগজ আর কলম .. নিজেকে যখন মূল্যহীন মনে হয় তখন শুধু কলম চালিয়ে যাওয়ার জন্যই বাঁচতে ইচ্ছে করে ..
ভর দুপুর। মাথার উপর রোদ খাঁ খাঁ করছে। এখন নাকি বসন্ত কাল! কিন্তু দুপুরের রোদটা একদম বৈশাখের মতো।
তাড়াতাড়ি বাস ধরে জান্নাতের বাসায় যাবো। ওর বাসা সাভারে।
মিরপুর ১৪ তে দাঁড়িয়ে আছি প্রায় আধ ঘণ্টা হলো। আশ্চর্য একটা বাসও নেই! অথচ এই রাস্তায় সিরিয়াল ধরে কতো বাস দাঁড়িয়ে থাকে! ইতিহাস - তিতাস - আরো কি কি জানি!
বার বার আশেপাশে তাকাচ্ছি আমি। আমার মন বলছে ও আমাকে খুঁজতে আসবে, কিন্তু কিছুতেই ধরা দিবো না আমি।
কি পেয়েছে ও? বিয়ে করেছে বলে মাথাটা কিনে নিয়েছে? সারাক্ষণ জেরার মাঝে রাখে। 'এটা কেন করেছ? সারাক্ষণ বাসায় কি করলে? ফেসবুকে এতো কি তোমার?'
আমার ফেসবুক পাসওয়ার্ড ওর কাছে আছেই, তারপরেও কি ফেসবুক নিয়ে খোটা না দিলেই নয়? একটু খোটা না হয় সহ্য করা যায়, কিন্তু তার একটা সীমা থাকে। আমার স্কুল লাইফের এক ক্যাডেট ফ্রেন্ড বাসায় আসতে চেয়েছে বলে ও আমাকে মারলো! যা নয় তা বললো!
আশ্চর্য! ও তো মারুফের অনুপস্থিতিতে আসতে চায় নি! মেসেজে স্পষ্ট লেখা আছে - রিফা, তোর হাসবেন্ড বাসায় থাকবে যেদিন, দাওয়াত দিস তো! অনেকদিন কারো দাওয়াত খাই না।
হ্যা এটা ঠিক - ছেলেটা একসময় আমাকে পছন্দ করতো, প্রপোজও করেছিলো, কিন্তু ততোদিনে আমি মারুফের সাথে এংগেজড। ছেলেটা সবই জানে। এতোবছর পরে একটা মেসেজ নিয়ে মারুফের এমন রিএক্ট এর কি আছে!
অভিমানে কখন যে আমার চোখের জল গাল বেয়ে পরলো - বুঝলাম ই না।
চোখ মুছতেই স্পর্শে অনুভব করলাম গালে ফোলা দাগ। তিন আংগুলের ছাপ। হ্যা, মারুফ চড় মেরেছিলো।
সামনের চুলগুলো এলোমেলো ছড়িয়ে গাল ঢাকার চেষ্টা করলাম। বসন্তের মুগ্ধ করা সৌন্দর্য্য নেই কিন্তু বেয়াড়া বাতাসটা আছে। অবশেষে একটা ইতিহাস এর দেখা পেলাম।
শাড়ির কুঁচি তুলে ধরে বাসে উঠে বসলাম। আজ কিছুতেই বাসায় যাবো না আমি, শুধু আজ কেন! কোনদিনই যাবো না।
কেন যাব? শুধু ওরই অভিমান হয়? আমার হয় না? ও কতো রাত করে বাসায় ফিরে! কই আর কোন ক্যাপ্টেনের বাসায় ফিরতে তো এতো রাত হয় না! তাও প্রতিদিন!
আমি জিজ্ঞেস করলেই দোষ। কোনদিন বলবে ক্যাপ্টেন'স ওয়ার্ল্ড এ ট্রিট ছিলো - পার্টি ছিলো, ত্রিবেণী তে গিয়েছিলো - আর রাজ্যের লেডি অফিসারের সাথে ফটো ফেসবুকে। কই আমি তো কখনো এসবের জন্য রাগারাগি করি না ওর সাথে!
ও কখনো জানতেও চায় না - বাসায় আমার সময়টা কিভাবে কাটে! সারাদিন হসপিটাল - ক্লিনিকে দৌড়াদৌড়ি করেও ওর ফ্রি সময়টাতে নিজেকে পাশে রাখার ট্রাই করি। অথচ ওরই কোন পাত্তা নেই!
অভিমানী চোখের জল বাঁধ মানে না। কিছুতেই কান্না থামাতে পারছি না। আমি যাবো না, কখনো ফিরবো না ওর বাসায়।
.
এই আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি মারুফ বিরক্ত মুখে খাওয়া শেষ করলো। আমি যে না খেয়েই বাসা থেকে বেরিয়েছি সেটা মনে হয় ওর খেয়াল নেই। থাকলেও কিছু করবে না। কি করবে? ও ওর মতোই থাকবে, ভাববে ক্যান্টনমেন্টেই আছি। প্রমির বাসায় - নয়তো নীতির বাসায়। হাহ, এই আমি আজ অনেক দূরে যাবো। জান্নাতের কথা কিছুতেই মাথায় আসবে না তোমার, এজন্যই যাবো।
দেখবো খুব সকালে কিভাবে তুমি পি.টি তে যাও? আমার ডাক ছাড়া ঘুম ভেংগেছে কখনো তোমার?
উঠেই তড়িঘড়ি করে রেডি হবে। এই আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তুমি ক্যাপ খুঁজে পাচ্ছো না, মোজার একটা পেয়েছো, আরেকটা পাচ্ছো না। আরেকটা যে মেঝেতে পরে আছে - সেটা আমি না তুলে দিলে তুমি এক পায়ে মোজা ছাড়াই বুট পরতে। ব্রেকফাস্টে কি খেতে তুমি? তোমার পছন্দের আলু পরোটা কে বানিয়ে দিতো? ঘন দুধের এক কাপ চায়ের শেষটুকু কোথায় পেতে? তুমি তো কখনো চায়ে প্রথম চুমুক দাও না, আমি অর্ধেক খাওয়ার পরে খাও।
এই আমি আর কখনো যাব না। কখনো ফিরবো না তোমার বাসায়। বুঝবে আমি তোমার কি ছিলাম।
.
আচমকা জান্নাতের বাসায় আসায় ও কিছুটা অবাক হলো।
কিন্তু মুখ টিপে হাসলো। বোধহয় বুঝতে পেরেছে আমি রাগ করে বাসা ছেড়ে এসেছি। পরনের শাড়ি চেঞ্জ করি নি, মুখে মেকআপের আবরণ নেই, কোন সাজ নেই, যেকোন মেয়ে দেখলেই বুঝতে পারবে, আর যদি সে প্রাণের বান্ধবী হয় - তাহলে তো কথাই নেই।
.
খুব খিদে পেয়েছিলো। হাত মুখ ধুয়েই গোগ্রাসে খাওয়া শুরু করলাম। জান্নাত আমার এমন ফ্রেন্ড যার সাথে আমি সবই শেয়ার করি।
অনেকদিন পর দুই বান্ধবী একসাথে হয়েছি। আমাদের গল্প যেন আর ফুরায় না। একরকম জোর করেই গল্প চালিয়ে যাচ্ছি আমি। আমি চাইনা মারুফের কথা মনে পড়ুক, চাই না আমি ওকে মিস করি, চাই না আমি মোবাইলটা অন করি, চাই না ফেসবুকে ওর মেসেজ চেক করি।
এই আমি আর কখনো যাবো না। কখনো ফিরবো না ওর বাসায়।
.
রাত বারোটা ত্রিশ মিনিট।
রিফা ঘুমিয়েছে - নিশ্চিত হওয়ার পর জান্নাত মেইন দরজা খুললো।
শ্যামা চিকন ছেলেটা আস্তে আস্তে ঘরে ঢুকলো।
খুব সাবধানে রিফা'র শোয়া ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো।
ঘুমালে রিফা যেন আরেক জগতে চলে যায়। ওর ঘুম খুবই গভীর। এক বারও নড়াচড়া করবে না। মারুফ যেভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে, সকালে সেভাবেই উঠবে।
.
রিফার শাড়ির আঁচল শরীরের সাথে কেমন পেঁচিয়ে আছে।
আস্তে করে ছাড়িয়ে দিলো ছেলেটা। ওর বালিশের পাশে তিনটা গল্পের বই রাখলো।
এগুলো রিফার লেখা গল্পের বই। এগুলো ছাপানোর জন্য সারাটা সপ্তাহ মারুফ অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছে।
এই মেলাতেই সে এগুলো প্রকাশ করতে চায় রিফাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য। যদিও রিফার এমন কোন প্ল্যান ছিলো না। এজন্যই মারুফের কষ্ট হয়েছে বেশি। রিফা থাকলে একবারেই সব শেষ হয়ে যেতো, ওর ছয়টা বই বেরিয়েছে, এগুলো মিলে নয়টা হবে।
রিফা জেনে যাবে বলে ওর পরিচিত প্রকাশনীতে যায় নি মারুফ। অন্য অফিসে যোগাযোগ করায় ছুটাছুটি বেশি হয়েছে।
বালিশের পাশে র্যাপিং করা প্যাকেটে শাড়ি আছে একটা। সাদা - কালো শাড়ি। কাল রিফাকে নিয়ে বই মেলায় যাবে মারুফ; জান্নাতের বাসা থেকেই। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে নিজেদের বাসায় ফিরবে। ততোক্ষণে তার বউটা নিশ্চয়ই আর রেগে থাকবে না।
.
রিফা'র মুখ থেকে এলোচুল গুলো সরিয়ে দিলো মারুফ।
ডিম লাইটের আবছা আলোয় ওর মুখটা কি পবিত্র লাগছে!
মারুফের কান্না পাচ্ছে খুব। কিভাবে বুঝাবে সে - তার বউটার পাশে একটা ছেলের ছায়াও সে সহ্য করতে পারে না! রিফা বাসা থেকে বেরোনোর পরপরই পিছন থেকে ওকে ফলো করছিলো মারুফ।
বেখেয়ালী মনে রিফার হাতটা নিয়ে কব্জি তে চুমু দিলো সে।
.
চুরির শব্দেই হোক - আর মারুফের স্পর্শেই হোক; আমার ঘুম ভাংলো। ওর গায়ের গন্ধটা খুব চেনা আমার, আর ওর অভ্যাসটাও। কতো রাতে সে আমার ঘুম ভাংগিয়েছে হাতে চুমু দিয়ে। দুষ্টু একটা।
এই আমি বার বার তোমার কাছে যাবো। হাজার বার অভিমান করে বেরিয়েও লক্ষ লক্ষ বার ফিরবো তোমার বাসায়।
২| ২৬ শে মে, ২০১৭ সকাল ৮:২৪
দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: দারুণ
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৭
এরশাদ বাদশা বলেছেন: চমৎকার!! সাংসারিক জীবনের মান অভিমান, প্রগাঢ় ভালোবাসা নিয়ে গল্প। ভালো লাগলো। এরকম আমার একটা গল্প আছে, অনেক আগের লেখা, তবে সেটার কলেবর অনেক বড়ো।
আপনার গল্প পড়ে সেটার কথা মনে পড়ে গেলো। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব কিভাবে তৈরী হয়ে যায় নিজেদের অজান্তেই, কেমন করে নিখাদ ভালোবাসায় ছেদ পড়ে যায়, ঠিক এরকম বিষয় নিয়ে লেখা।
ভালো থাকুন, লিখে ফেলুন পরবর্তী গল্প।