নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হইচই, হট্টগোল এড়িয়ে চুপচাপ, নিরিবিলিতে লুকিয়ে থাকতে ভাল লাগে।

রিম সাবরিনা জাহান সরকার

যা-ই লিখি, কাঠবিড়ালীর মত এখানে জমিয়ে রাখি। https://rimsabrina.blogspot.com/

রিম সাবরিনা জাহান সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবার আল্পবাখ ১

০৮ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ১২:০৩


অক্টোবরের পাতি শীতটা জ্যাকেট ফুটো করে হাড় কামড়ে ধরছে। ঝপ্ করে বাসে উঠে পড়বো নাকি বেকুব দাঁড়িয়ে থাকবো, ঠিক বুঝে উঠতে না পেরে সবাই বাধ্য ছেলের মত একটা ইশারার অপেক্ষায় চোখ পিটপিট করছি।

আমাদের অঘোষিত দলনেতা, আর্কুস নামের লম্বা-চওড়া ছেলেটা গাল চুলকাতে চুলকাতে এদিকেই এগিয়ে আসছে। আমাদের মিউনিখের এই টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ-ছজনের একটা ছোটাখাট রিসার্চ গ্রুপ আছে আর্কুসের। তবে আজকে জনা চল্লিশেক পিএইচডি-পোস্টডকের দলটার ভার ঘাড়ে পড়ে তার কিছুটা ত্রাহি ত্রাহি দশা। সবার নাম ডেকে হাতে হাতে করোনার র‍্যাপিড টেস্ট কিট তুলে দিয়ে পুরো ব্যাপারটার তদারকি করতে হয়েছে তাকে। কে কবে ভেবেছিলাম যে দিনে দুপুরে দল বেঁধে নাকের ফুটোয় তুলো প্যাঁচানো কাঠি ঢুকিয়ে নির্বিকার ঘুরাতে থাকবো আর তফাতে দাঁড়িয়ে কেউ একজন তার হিসাব নেবে। এক কোভিড এসে মান-ইজ্জত সব চিবিয়ে খেয়ে নিল।

যাহোক, নেগেটিভ রেজাল্ট নিয়ে এই শীতে বেশিক্ষন বাইরে থাকলে ঠান্ডা লেগে পজিটিভ হতে সময় লাগবে না। দূর থেকে আর্কুসের হাত নাড়া দেখে অবশ্য পজিটিভ বার্তা পাওয়া গেল। স্কুলের বাচ্চার মত হল্লা করে হুড়মুড়িয়ে বাস বরারবর ছুট লাগালাম। তর আর সইছে না। দিন কতকের ছুটিতে বেড়াতে যাবার মত আনন্দ হচ্ছে।

যদিও বেড়ানো ঠিক বলা যায় না একে। পুরোদস্তুর খটমটে কনফারেন্স। তবে দূরে কোথাও যাবার রোমাঞ্চে খানিকটা হলেও সুগার-কোটিং-এর কাজ করছে। বাসের ড্রাইভার রেডিও ছেড়ে দিয়েছে উঁচু ভল্যুমে। গানের বদলে নির্জীব কন্ঠে আবহাওয়ার পূর্বভাস ভেসে আসছে। সামনের ক’দিন শহরে প্যাঁচপ্যাঁচে বৃষ্টি। ওসব পাশ কাটিয়ে আমরা চলছি পাহাড়ঘেরা আল্পবাখের ওম ওম হেমন্তের ডাকে। ওপারে গিয়ে পড়তে পারলে বৃষ্টি আমাদের টিকিরও দেখা পাবে না।

জার্মানির সীমানা ডিঙ্গোলেই অস্ট্রিয়া। জায়গাটা সেখানেই। অস্ট্রিয়ার তিরল নামের অঞ্চলে পড়েছে। সাজানো গোছানো শহরতলী। আল্পস্-এর আঁচলে বিছানো বলেই নামটা আল্পবাখ। তুষার গলে পাহাড় চুঁইয়ে ঝর্না হয়ে নেমে এসেছে বলে হয়তো নামের শেষে ‘বাখ’। বাখ মানে ঝর্নার স্রোত।

এতো কিছু জানলাম কি করে? কারণ, আগে তো একবার গিয়েছিলাম। সেই বছর দুয়েক আগে। একই কনফারেন্স কাফেলার সঙ্গী হয়ে। বছর দুয়েক আগে জানুয়ারির জব্বর শীতে। ন্যাড়া বেলতলায় একবার গেলেও এই ন্যাড়া বার বার যেতে রাজি। হোক না পুরানো জায়গা। মনের চোখে একটা রঙ্গীন চশমা এঁটে নিলেই হল। পুরানোকে নতুন করে জানতে আপত্তি নেই এক ফোঁটাও। তাছাড়া সবাই বলাবলি করছে, পাতা ঝরার এই সময়ে নাকি আল্পবাখ ক্ষনে ক্ষনে রূপ বদলায়। ঠিক যেন ক্যামেলিয়ন।

পাশাপাশি দুই আসনের একটা করে খালি। হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে নবাবী কেতায় বসেছি। এই আরামটুকু সামাজিক দুরত্বের বাই-প্রোডাক্ট। নইলে পাশের জনের সাথে অদরকারি ভুং চুং আলাপ চালাতে হতো। কথায় কথায় পটেনশিয়াল কোলাবরেশন প্রজেক্ট দাঁড় করিয়ে ফেলার মত দুর্ধর্ষ বিজ্ঞানী নই। স্বভাবটা নেহাৎ মুখচোরা। ভদ্রতার আলাপটা তাই এক কথার বেশি দু’কথায় এগোয় না। তাছাড়া, বাসের হালকা দুলুনিতে সে লোক ঘুমিয়ে গেলে আরেক বিপদ। লটোপটো মাথাটা গড়িয়ে কাঁধে এসে ঠেকে। না ফেলা যায়, না রাখা যায়। আর গভীর ঘুমে লালা গড়িয়ে পড়লে তো কথাই নেই। এমন আগে বহুবার হয়েছে। পিএইচডি স্টুডেন্ট হয়ে পোস্টডকের বিদ্যা গিজগিজ পাঁচ টনি মাথাটা ঘাড়ে নিয়ে অসার বসে থেকেছি পুরো পথ। ঘুমন্ত হা মুখ থেকে বিপদজনক ভাবে লালা গড়িয়ে নামলো বলে। কিন্তু জুনিয়র হয়ে সিনিয়রের লালাঘুম ভাঙ্গাই কি করে। তবে সেই আতঙ্কের দিন শেষ। এখন নিজেই পোস্টডক। আজকে কারো ঘাড় পেলে মন্দ হতো না।

যাহোক, ওসবের বালাই নেই। বেঁচে গেছি। তাই সব ভুলে আয়োজন করে কাঁচের ওপাশের জগতটা দেখছি। শহরের গাড়িঘোড়ার ব্যস্ততা ফিঁকে হতে শুরু করেছে। দালানকোঠার দঙ্গল হঠিয়ে ঝোপ-জঙ্গল উঁকি দিচ্ছে জানালার বাইরে। হালকা কুয়াশা ফুড়ে চিকমিকে রোদ্দুর চোখে মুখে পরশ বুলিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে পলকেই। লুকোচুরিটা আদুরে বিড়ালের মত নরম।

ঘন্টা দেড়েকের পথ উড়িয়ে, শহরের পর শহর পেরিয়ে সরু পাহাড়ি পথে চলে এলাম। ড্রাইভার সাহেব হেব্বি জোরসে গান ছেড়ে রেখেছে পুরো পথ। ঢাকা-টু-গাজীপুর পিকনিক স্পটের বাসে যেমনটা বাজে। সেই যে তখন থেকে কোমর দোলানো চটুল পপ গান বেজে চলছে, আর থামার আশা নেই। বেশির ভাগই নিরীহ গবেষক বলে কেউ আপত্তিও তুললাম না। চুপচাপ গ্যাঁট হয়ে বসে বাস সমেত উঠতে লাগলাম আল্পবাখের আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে।

কেউ একজন চাপা উল্লাসে বলে উঠলো, ‘আরে ঐ তো দেখা যায়’।

সিটের নিচ রাখা ব্যাকপ্যাকটা আপনা গড়িয়ে এসে পায়ে ঠেকলো। জানালার আঙটা ছেড়ে জ্যাকেটটাও ঝাপ দিয়ে কোলে পড়লো ঝপাং। এরা আবার কথা না বলে ওঠে, ‘এই আলসের ডিপো, হ্যাট হ্যাট্...'। (চলবে)




মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ১২:৪৫

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: মেঘের (ইউরোপের ফ্যাচফ্যাচে মেঘ ,এ যেন মেঘ নয় :P নাকের পানি) কোলে রোদ হেসেছে ,বাদল গেছে টুটি
আজ আমাদের ছুটিও ভাই ,
আজ আমাদের ছুটি ।

আসলে যে কোন বেড়ানোই বড়ই আনন্দের আমার মতে , আর এই আনন্দ উপভোগের জন্য কয়েকবার বাড়ি থেকে পালিয়েও গিয়েছিলাম স্কুল জীবনে । তবে এত সব জানা-শোনা (পিএইচডি/ডক্টরেট) মানুষের সাথে ঘুরা-ঘুরি কেমন হবে ? তা কি আদৌ মজাদার হবে ? নাকি খটোমটো জার্মান শব্দের মতই রস-কস বিহীন হবে - ভাবতেই কেমন লাগছে।

তারপরেও আশার কথা এটাই যে, যেখানে-যেই দলে রিম সাবরিনা জাহান সরকার নামে বংগদেশের এক শব্দের জাদুকর আছে সেখানে ভ্রমণ যতই নিরস হউক না কেন ভ্রমণের বর্ণনা যে আকর্ষনীয় হবে এতে কোন সন্দেহ নেই ।

আর এট ছোট পর্ব ?

মেনে নিলাম ভ্রমণ শুরুর তাড়া তাই , তবে পরের পব এত ছোট হলে পড়ুম না X(( কইলাম!!!!!!!!

০৮ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৩:৪৩

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: ভাই, আজকালের ভেতরই বাকি পর্ব লিখে ফেলবো। বেড়ানোর আনন্দ কেটেকুটে ভাগ করে না নিলে আর মজা হলো কিসে। আর তা যদি হয় প্রিয় সহব্লগারদের মাঝে।

১৫ ই মার্চ, ২০২২ ভোর ৪:১৫

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: এবার দেখুন তো।

২| ০৮ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: ছবি ও লেখা সুন্দর হয়েছে।

০৮ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৩:৪০

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: রাজীব ভাউ, আপনি সব পাঠকের বড় পাঠক। এমন নিষ্ঠা আর আগ্রহ নিয়ে পড়তে কম লোককেই দেখেছি আমরা।

৩| ১৫ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ৮:৩০

মিরোরডডল বলেছেন:




রিমাপুর সাবলীল লেখা সবসময় ভালো লাগে ।
ছবিগুলো অপূর্ব সুন্দর !
কবে যে আবার এরকম পাহাড়ের ঢালে মেঠোপথে যাবো, অপেক্ষায় আছি !



২৩ শে মার্চ, ২০২২ রাত ৩:৪০

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: পাহাড়ের ঢালেই তো নিয়ে যেতে চাই। কিন্তু পরের পর্ব আর এগোচ্ছে না। ইদানীং নানাবিধ দুনিয়াবী অকাজে আটক। মন পোকাটাকে কিছুতেই ছুটিয়ে আনতে পারছি না সেই মাকড়সার জাল থেকে।

৪| ৩০ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৫:৩০

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ভারী মজার ভ্রমণ বৃত্তান্ত।

ভুং চাং আলাপ, ... আরো কতক ডিকশনারী বহির্ভূত শব্দ দিয়ে আপনি ভালোই জমিয়েছেন।

ভ্রমণটাও বেশ জমে ওঠছে।

৩১ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১:১৯

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন। নিজের আনন্দের জন্যে লিখি। থেরাপিউটিক অভ্যাস। দ্বিতীয় কেউ আনন্দ পেলে সেটা বাড়তি বোনাস।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.