নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যা-ই লিখি, কাঠবিড়ালীর মত এখানে জমিয়ে রাখি। https://rimsabrina.blogspot.com/
.
ঝপাং করে বাস থেকে লাফিয়ে নামলাম। সেই আল্পবাখ। শীতে আর হেমন্তে তার আসলেই একেবারে দুটো আলাদা রূপ। সেবার তুষারঢাকা শুভ্রতা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। আর এবার ঝরা পাতার স্বর্নালি আভায় হারিয়ে গেলাম। পায়ের তলায় ম্যাপল পাতার মর্মরে ঝুমুরের ঝংকার। কে বলে ঝরা পাতায় প্রান নেই।
'সাবরিনা, আরে তুমি যে!' ঘাড় ঘোরাতেই মিষ্টি চেহারার শ্যামলা মেয়েটা হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে। মনিকা করে নাম। পিএইচডি করতে এসেছে ইন্ডিয়া থেকে। আগেরবারে খুব জমে গিয়েছিল ওর সাথে। মিউনিখ থেকে দূরে ফ্রাইজিং শহরে তার ল্যাব। তাই এই কনফারেন্স-কংগ্রেসের বাইরে সাক্ষাত-মোলাকাত হয় না বললেই চলে।
মনিকাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরতে ধরতে ওর পাশে দাঁড়ানো ছোটখাটো চাইনিজ মেয়েটাকে নজরে এল। এক গাল হেসে বললাম, 'একি, লিং পিং, তুমিও! আবার দেখবো ভাবি নি। কি সারপ্রাইজ! '
'স্যরি, আমি তো টিং টিং'। চাইনিজ-লুকিং মেয়েটার গম্ভীর, নিরুত্তাপ উত্তরে ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম। ভুলটা ধামাচাপা দিতে তাড়াহুড়ো করে অজুহাত দেখালাম, ‘কি জানো, তোমার হাসিটা না আমাদের আরেক কলিগ লিং পিং-এর মত। একদম গুলিয়ে ফেলেছি’।
পাশ থেকে মনিকা দুষ্টুমি হেসে টিপ্পনি কাটলো, ‘সেই মেয়েটার কিন্তু নাম ছিল পিং মিং। নাম ভুলে যাবার রোগ দেখি তোমার এখনও সারে নি’।
শুধু নাম কেন, নামের মালিকের চেহারাও বেমালুম ভুলে যাই। মনিকার ভাগ্য ভালো যে তাকে চিনতে পেরেছি। যাহোক, নতুন চিনা কন্যা টিং টিং-এর সাথে পরিচয় পর্বটা সেরে নিলাম। জানা গেল জাতে চৈনিক হলেও সে এসেছে হংকং থেকে। সেখান পিএইচডি বাগিয়ে জার্মানিতে পোস্টডক করছে মাস ছয়েক হল। আমিও পোস্টডক করছি শুনে শেষতক সে কিছুটা সহজ হল। স্বজাতি হিসেবে দলে ঢুকিয়ে নিল আর কি। পিএইচডি ছাত্র হয়েও মনিকা সেই দলে ঢুকে গেল ঠেলেঠুলে।
হোটেল খুঁজতে তিনজন এলোমেলো পায়ে হাঁটছি। চেক-ইন বাবদ ফর্ম পূরনের হ্যাপা ঝুলিয়ে রাখতে চাই না। তাছাড়া সফেদ বিছানায় পাঁচ মিনিটের একটা কুইক গড়ান দেয়ার সুযোগটা খুব লোভ দেখাচ্ছে। কিন্তু হোটেলের ঠিকানা যার যার ইমেইলে। ঠিকানা উদ্ধারে মুঠোফোন উঁচিয়ে ধরে লাভ হচ্ছে না বিশেষ। এইখানে পাহাড়ের ঢালে আমরা নেটওয়ার্কের বাইরে। অগত্যা মাথা চুলকে প্রানপনে হোটেলের নাম মনে করা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কি চীন দেশ, কি বঙ্গদেশ আর কি বন্দে মাতরম । তিন ললনার একই দশা।
মিউনিখ আর ফ্রাইজিং থেকে আসা দুই বাস ভর্তি করে আসা লোকজনও ভাগ ভাগ হয়ে গিয়েছে। এরা আগে থেকে ম্যাপে দেখে এসেছে কার হোটেল কোথায় পড়েছে। সেখানে আর কে কে উঠবে। হোটেল-কেন্দ্রিক ছোট ছোট দলগুলোকে সুশৃঙ্খল পিপীলকা-বাহিনীর মত লাগছে। হাঁটছেও রীতিমত মার্চ করে।
চকিতে বুদ্ধি খেলে গেল। এদের র্যানডম দু’চারজনকে জিজ্ঞেস করলে ঠিক হোটেলের দিশা মিলবে। সুতরাং, মামুলি খোঁজাখুঁজি ছেড়ে পিপড়া সৈন্যদের পিছু নিলাম আমরা।
ঢাল বেয়ে নেমে যাওয়া পথের দু’পাশে কাঠের বাড়িদের সারি। সাবেকি তাদের ধাঁচ। সব ক’টাই হোটেল-মোটেল-রেস্টহাউস। ব্যালকনির উপচে পড়া ফুলের টব অতিথিদের স্বাগত জানাতে পড়ন্ত হেমন্তেও অগুনতি পাপড়ি মেলে ভীষন ব্যস্তসমস্ত। তবুও হিম বাতাসের একেকটা হঠাৎ ঝাপটা ঠিকই নিয়মমাফিক শীতের চিঠি উড়িয়ে আনছে ম্যাপল পাতার কমলা খামে।
এদিকে পিপড়া-বাহিনীর মাধ্যমে ঠিকানায় পৌঁছেছি। ঠ্যাঙ্গা মতো ছেলেটা হাত নেড়ে বিদায় নিতে নিতে ফিঁচেল হাসলো, ‘কনফারেন্স বিল্ডিংটা চিনে আসতে পারবে তো? এই উল্টো পথে সোজা হাঁটলেই ডানে গির্জা বরাবর গিয়ে বামে ঘুরলেই আল্পবাখ কংগ্রেস হল’।
আমরা তিন কন্যা পুরোপুরি ভুল দিকে তাক করে চতুর জবাব দিলাম, ‘কি যে বল, এরপর কি আর চিনতে ভুল হয়?’। ছেলেটার চোয়াল ঝুলে পড়লো। বেচারা হতাশ হয়ে কেটেই পড়লো মানে মানে। (চলবে)
৩০ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:১৯
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: ভ্রমণের বেলায় ঝপাং ঝাপাঝাপি না হলে সে আবার কিসের ভ্রমণ। একটা গতির ব্যাপার আছে না, রাজীব ভাই?
২| ৩০ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৩:০৬
শামছুল ইসলাম বলেছেন: বর্ণনার ভাষা ও ভঙ্গি তে মুগ্ধ।
ঝপাং করে আপনার লেখায় ডুবে গেলাম। পড়াশেষ করে ওঠতে খুব মায়া হচ্ছিল।
৩০ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:২০
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: খুব কৃতজ্ঞ বোধ করছি। প্রথম পর্ব পড়ার নেমতন্ন রইল।
৩| ৩০ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:২৭
অপু তানভীর বলেছেন: আপনার এই আল্পবাখের শিরোনাম পড়তে গিয়ে আমার কেবল বারবার এইটাই মনে হয় যে কেন অল্পবাখ (আ এর স্থানে অ চোখে পড়ে)? একটু বেশি বাখ হইলে কি সমস্যা !!
৩০ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:৫০
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: অপু ভাই, আগামী পর্বে নিশ্চিত বেশি বাখ থাকবে।
৪| ৩০ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৫:২২
সোনাগাজী বলেছেন:
ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বাজার দর বেড়েছে?
৩১ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১২:৪১
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: অফিস ক্যানটিনের বিদঘুটে ঘ্যাটের দামও আট আনা বাড়িয়ে দিয়েছে।
৫| ৩০ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৫:৩০
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বরাবরের মতোই দারুন লেখনি!
চুম্বকের মতো একটানে পড়িয়ে নিলো
পড়তে পড়তে দেখি ঝপাং করে শেষ হয়ে গেলো।
+++
৩১ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১২:৪৩
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: পরের পর্ব ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে এন্তার লেখা হয়েছে৷কালকে দেবো। আশা করি পড়বেন সামনে।
৬| ৩১ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১২:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: ভ্রমণের বেলায় ঝপাং ঝাপাঝাপি না হলে সে আবার কিসের ভ্রমণ। একটা গতির ব্যাপার আছে না, রাজীব ভাই?
ঝপাং করলে পায়ে ব্যথা পেতে পারেন। তাই ঝপাং করার দরকার নেই। পায়ে বেন্ডিজ নিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকা আনন্দময় কিছু না।
৩১ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১:১৮
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: সহমত।
৭| ৩১ শে মার্চ, ২০২২ দুপুর ২:৫২
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
ছোটবেলা আমি খুব ঝপাং করতাম। আমার প্রিয় খেলা ছিলো ঝপাং। অসংখবার পায়ে ব্যথা পেয়েছি। তারকাটা পেয়ে ঢুকেছে। ব্যান্ডিজ নিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়েছে।
৮| ৩১ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৩:০৪
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: চমৎকার ছবি সেই সংগে মধুর বর্ণনাশৈলী মুগ্ধ করে। যাক পরের পর্বের অপেক্ষাতে না হয় রইলাম।
০৮ ই এপ্রিল, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৭
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ লেখাটুকু পড়ার জন্যে। পরের পর্ব পোস্ট করেছি। পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে মার্চ, ২০২২ দুপুর ২:৩৬
রাজীব নুর বলেছেন: বাস থেকে ঝপাং করে লাফিয়ে নামতে হবে কেন?
ইহা ভুল। ঝপাং করে নামার ফলে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রতিটা মুহুর্ত আমাদের সাবধান থাকতে হবে। যে কোনো সময় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। দয়া করে আর বাস থেকে, গাড়ি থেকে ট্রেন থেকে, সিড়ি থেকে, লিফট থেকে, খাট থেকে, চেয়ার থেকে, প্লেন থেকে, হেলিকাপ্টার থেকে, লঞ্চ থেকে, জাহাজ থেকে, নৌকা থেকে, ঝপাং করে নামবেন না।