নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হইচই, হট্টগোল এড়িয়ে চুপচাপ, নিরিবিলিতে লুকিয়ে থাকতে ভাল লাগে।

রিম সাবরিনা জাহান সরকার

যা-ই লিখি, কাঠবিড়ালীর মত এখানে জমিয়ে রাখি। https://rimsabrina.blogspot.com/

রিম সাবরিনা জাহান সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবার আল্পবাখ ৩

৩১ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:১৯


মাঝবয়সী হোটেল ম্যানেজার ভদ্রমহিলার জার্মান উচ্চারন বোঝা রীতিমত দুর্বোধ্য। কড়া অস্ট্রিয়ান টানে কি সব আউড়ে গেল বিনে দমে। তার মাঝ থেকে সবচেয়ে জরুরী তথ্য, সকালের ব্রেকফাস্টের সময় আর শেষ দিনের চেক-আউট টাইম জেনে নিয়ে চাবি হাতে চটপট রুম খুঁজতে দোতলায় উঠে গেলাম। দোতলায় এসে আবিষ্কার করলাম সেটা আসলে একতলা। আর রিসেপশনটা ছিল বেজমেন্টে। আল্পবাখের উঁচু-নিচু রাস্তার একটা দুষ্টু কারসাজি।

ছিমছাম সাজানো স্টুডিও ঘর। স্যুটকেসটা ঠেলে এক কোন বরাবর পাঠিয়ে সারা ঘরে পলক বোলাতে লাগলাম। কিং-সাইজ বেড ছাড়াও সোফা-টোফা আছে দেখছি। ছোট্ট একটা ডাইনিং টেবিলও পাতা। দেয়ালের একপাশে কিচেন। রান্নার চুলা, চা-কফির ইলেকট্রিক কেতলি, মিনি ফ্রিজ, বাসনকোসন-সবই হাতের নাগালে। পাহাড়ের কোলে নিজের জন্যে এমন একটা পাখির বাসা থাকলে মন্দ হতো না। কাজ শেষে দিনান্তে খিদে পেলে কিং-সাইজ পালঙ্কে শুয়ে গাজর-ফুলকপি ছুড়ে মারতাম চাল-ডাল বসানো ডেকচির গরম জলে। ব্যাস্, দশ মিনিটে সবজি খিচুড়ি তৈরি। আল্পবাখের অলি-গলি ছেয়ে যেতো বাঙালি রসনার ঝাঁঝালো সুবাসে।

সাধের দিবাস্বপ্নতে বাধ সাধলো দরজায় শুষ্কং-কাষ্ঠং ঠকঠক্। টিং টিং এসে গেছে। অ্যালুমিনিয়ামের সসপ্যানে ধোঁয়া ওঠা কাল্পনিক খিচুড়িটা ফেলে ছুঁচোয় ডন দেয়া গড়ের মাঠ খালি পেটটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ব্যাজার মুখে।

কংগ্রেস চত্বরে পৌঁছে দেখা গেলো, অতি অর্গানাইজড জার্মানরা তাদের ততোধিক অর্গানাইজড ব্যাকপ্যাকের গহীন চিপা থেকে নানান আকারের স্যান্ডউইচ বের করে গোগ্রাসে চিবোচ্ছে। ঠিক তক্ষুনি কাছের বিরাট গির্জাটায় ঢং ঢং করে দুপুর দু’টো বাজলো। আর খিদেয় পেটে বারোটা।

‘কাছেপিঠে কোথাও ক্যাফে-ট্যাফে আছে, জানো-টানো নাকি?’, উদাস গলায় শুধালাম মনিকাকে। সেও হোটেলঘর বুঝে নিয়ে ফিরে এসেছে।

‘হ্যাঁ, হাইকিং থেকে ফেরার পথে নাকি একটা পেট্রোল স্টেশন চোখে পড়বে। তার পাশেই সুপারমার্কেট’।

হাইকিং থেকে ফিরতে ফিরতে হজম হয়ে যাব নির্ঘাৎ। কিন্তু ভবিতব্যটা মেনে নিয়ে পায়ে পায়ে নিরুপায় এগোলাম গোল হয়ে দাঁড়ানো হাইকিং দল বরাবর। তবে সাথে লেমোনেডের ঝাঁজ ফুরানো একটা আধ-খাওয়া বোতল আছে। পিপাসায় ভরসা আর কি।

রুটি-ফুটি চিবিয়ে হাইকিং দল রীতিমত টগবগ করছে। এই বুঝি ধুলো উড়িয়ে রওনা দেবে আল্পবাখের পাহাড়ি ঢাল বেয়ে। তাদের বুমবাস্টিং এনার্জির পাশে দশ ওয়াটের ডিমবাতির মত টিমটিম করছি। দলটা নাকি দুইভাগে ভাগ হয়ে যাবে। এক ভাগের গন্তব্য ভীষন ঘুর পথ দিয়ে একেবারে পাহাড়ের চূড়ায়। আর বাকিরা হেলেদুলে শর্টকাট পথে সেই একই লক্ষ্য ছুঁয়ে আবার দুলকি চালে ফিরে আসবে। আর দু’বার না ভেবেই দুলকি দলে ভিড়ে গেলাম। তবে, ডানে-বামে তাকিয়ে টিং টিং আর মনিকা বাদে তৃতীয় কাউকে দেখা গেল না।

অপ্রস্তুত তাকিয়ে আছি দেখে গাইড মতন লোকটা মুচকি হেসে এগিয়ে এল, ‘আমি হান্স, তোমাদের গাইড আজকে। চলো, যাওয়া যাক, লেডিস’। মাথা নেড়ে ‘জি’ বলতে গেলাম। বেরোলো চিঁ জাতীয় একটা অস্ফুট শব্দ।

হান্সের বয়স বোঝা ভার। বাঁধাই করা সব এক সাইজের দাঁত দেখে আন্দাজ করা যায় বয়সের তুলনায় শরীরটা যথেষ্ট পেটানো। গ্রীষ্মে হাইকিং গাইড আর শীতে স্কি ইন্সট্রাক্টর। বেশ পেশা। আঁকাবাঁকা পথ ধরে পাসাপাশি চলতে চলতে জানা গেল, হান্স এক সাথে অনেক ভাষায় কথা বলতে পারে। ইংলিশ, ডাচ, রাশান ইত্যাদি আর জার্মান তো বটেই। বলতে বলতে যে কয়টা আঙ্গুলের কড়ে গুনলো পটাপট- তাতে দাঁড়ালো, হান্স এই এলাকার অঘোষিত ডঃ শহীদুল্লাহ।

রোদটা মিষ্টি। ঝিরঝির বাতাসে চোখ বুজে আসতে চাইছে। আর পথটা সবুজ। ঘাসেরা এখানে এখনও সতেজ। রঙ্গিন বুনোফুলে ফুলেল পাহাড়ি বাঁক বেয়ে হাঁটতে তেমন ক্লান্তি লাগছে না।

দূরের গির্জাটা দেখিয়ে হান্স ক্যুইজ ছুড়ে দিলো ‘ঐ যে চার্চটা দেখছো না, বলতো কত পুরানো হবে?’। ঘাড় ঘুরিয়ে গথিক চেহারার গির্জাটার দিকে তাকালাম। তার চূড়া যেন জাদুকরের চোঙ্গা টুপি। কত প্রাচীন আন্দাজ করা মুশকিল। কেউ দেড়শো-দু’শো কি বড়জোর পাঁচশোতে এসে ঠেকলাম। অবাক করে দিয়ে হান্স জানালো গির্জাটার বয়স নাকি এগারশো বছর। কাগজপত্রে যদিও লেখা ছয়শো-সাতশো বছর। কিন্তু আল্পবাখের অল্প কিছু লোকজন তার আসল বয়স জানে। সত্য-মিথ্যা নিয়ে মাথা ঘামালাম না। বিনা বাক্যব্যয়ে গাইড-প্রদত্ত তথ্য হজম করে নিয়ে হাঁটছি। লেমোনেডের হালকা চুমুকে দুপুরটা বেশ তরল লাগছে।

পাহাড়ি গরুর পাল আয়েশী কায়দায় জাবর কাটতে ব্যস্ত। বাদামী-সাদায় ছোপানো পুরু পশমে ঢাকা নধর শরীর। তাদের এক-আধজন কৌতূহল নিয়ে তাকালেই গলায় বাঁধা অতিকায় ঘন্টা টুংটুং করে বেজে উঠছে। নামের মিল থাকার কারনেই কি না জানি না, টিং টিং মেয়েটাকে ঘন্টা বরাবর এগোতে দেখা গেল। অলস ঝিমোতে থাকা একটা গরুর খুব কাছে চলে গেল সে। কিন্তু গরু তো গরুই। হাত বোলাতেই খ্যাক্ করে আঙ্গুল কামড়ে দিল প্রায়। আঁতকে পিছিয়ে এল টিংটিং। তার চাইনিজ ভালবাসার পুরোটাই অপাত্রে দান। কান্ড দেখে আমরা গলা কাঁপিয়ে হাসতে লাগলাম। এ এক নির্মল গবাদি বিনোদন।
(চলবে)






মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১০:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি এত ভ্রমন করেন, আর জানেন না- কোথাও গেলে সামান্য খাবার সাথে রাখতে হয়?

০১ লা এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১২:৫৩

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: গোছানো স্বভাবের নই। তাই ভুলভাল হয়ে যায়।

২| ৩১ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১১:১৭

গরল বলেছেন: খুবই সুন্দর যায়গা, একবার যেতে ইচ্ছা করছে।

০১ লা এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১২:৫২

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: আশা রাখি ভ্রমনের ইচ্ছেটা পূরন হবে একদিন।

৩| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২২ সকাল ৯:১৯

সোহানী বলেছেন: হায় হায় খালি পেটে হাইকিং!!!

দারুন গোছানো লিখা। পড়তে পড়তে নিজেই ব্যাগপ্যাক নিয়ে রওনা দিলাম।

তবে ছবিগুলো একেবারেই কমন পড়েছে আমার। ফল এর শুরুতে এমন দৃশ্য ইউরোপ আমেরিকার সবখানে।

০৮ ই এপ্রিল, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০৭

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: আপু, ঠিক বলেছেন। ইউরোপের সৌন্দর্য যথেষ্ট প্রেডিক্টেবল। আমেরিকার যমজ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.