নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হইচই, হট্টগোল এড়িয়ে চুপচাপ, নিরিবিলিতে লুকিয়ে থাকতে ভাল লাগে।

রিম সাবরিনা জাহান সরকার

যা-ই লিখি, কাঠবিড়ালীর মত এখানে জমিয়ে রাখি। https://rimsabrina.blogspot.com/

রিম সাবরিনা জাহান সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবার আল্পবাখ ৪

১৫ ই এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৫:৪১


গরুর পাল পেছনে ফেলে মনিকা, টিং টিং আর আমি মৃদুমন্দ বাতাস কেটে এগোতে লাগলাম। আমাদের কাছিমীয় গতিতে হান্সের কোনো অভিযোগ দেখা গেল না। বরং সে আন্তরিক মনেই হাতের লাঠি দিয়ে ঝোপঝাড় সরিয়ে রাস্তা করে দিতে লাগলো।

‘ওরে বাবা, পা ব্যাথা করছে। তোমাদের সাথে ভিড়ে যেতে পারি?’।
আমাদের চারজনের দলটা সাঁতারের এ্যাক্রোবেট দলের মত এক সাথে মাথা ঘুরালাম। সোনালী চুলের মেয়েটাকে হাপুশ হুপুশ হাঁপাচ্ছে। দলছুট হয়ে পেছনে পড়ে গিয়েছে সে।
‘একশোবার’। দলনেতা হান্সের সুরে সায় দিয়ে সানন্দে দলে ভিড়িয়ে নিলাম তাকে।

নাম তাতিয়ানা। কাজাখস্তানের মেয়ে। হাসলে গালে গভীর টোল পড়ে। বেচারা দরদর করে ঘামছে। অথচ ফর্সা কপালে আর গোলাপি নাকের ডগায় চিকচিক ঘামে তাকে পরীর মত সুন্দর দেখাচ্ছে। মুহূর্তখানেক হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম সবাই মিলে।

এক রাশ ঝরা পাতায় ছাওয়া পথ মাড়িয়ে মচমচ করে চলতে লাগলাম নতুন সাথী জুটিয়ে। মাঝে মাঝে পাথুরে ঢিবির মতন। পাতার আড়ালে তারা নিখুঁত ক্যামোফ্লেজ নিয়েছে। তার উপরে খাড়া পাহাড়ি রাস্তা। হাঁপ ধরে যাচ্ছে রীতিমত। সাবধানে ঢিবিগুলো ডিঙ্গোতে ডিঙ্গোতে তাতিয়ানার সাথে আলাপ জুড়লাম, ‘হাই, আমি সাবরিনা, মিউনিখ ক্যাম্পাস থেকে আসছি। পোস্টডকেই আটকে আছি বছরখানেক। তুমি পিএইচডি করছো নাকি?’ ...। সামান্য বলেই মাছের মত হাঁ করে হাঁপাতে লাগলাম।

‘হাঁপাচ্ছো যে খুব?’
‘কোভিডে ধরেছিল, বুঝলে। সপ্তাহ দুয়েক হল নেগেটিভ হয়ে কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়া পেয়েছি’।
তাতিয়ানা এমনভাবে ঘাবড়ে তাকালো যেন সে জেল থেকে জামিনে ছাড়া পাওয়া ঘোড়েল চোর দেখছে।
চমৎকার ভুরু দু’টো বিকট বাঁকিয়ে প্রায় চিল চিৎকার দিল, ‘এ্যাঁ, কোভিড?’।

তারপরই সামলে নিয়ে বলে উঠলো,’আরে ঐ তো অমুক প্রফেসরকে দেখা যাচ্ছে কাছেই। খুব জরুরী একটা আলাপ আছে, চললাম’।
তারপর জবাবের তোয়াক্কা না করেই তাতিয়ানাকে দ্রুত গতিতে সামনে এগোতে দেখা গেল। সাবেক কোভিড রুগীর খপ্পর থেকে বাঁচাটা খুব জরুরী। দলছুট হয়ে আর কাজ নেই।

পেছনে আমরা আরেকবার হতভম্ব হয়ে হাঁ করে রইলাম।

যাহোক, প্যাঁচানো জিগজ্যাগ রাস্তায় ঘুরে ঘুরে যখন হাইকিং নামক অত্যাচারে অতিষ্ঠ, তখন টুইট টুইট্ শিস বাজিয়ে সামনের দলের গাইড আমাদের হান্সকে জানিয়ে দিল, ‘চূড়ায় পৌঁছে আবার নিচে নেমে আসছি। তোমরাও ফিরে চল। নইলে সময়ে কুলাবে না’। হান্সও পাল্টা সিটি বাজিয়ে জানিয়ে দিল, ‘ওকে, যা বলছো। ফিরে চলছি’।

পাহাড়ের প্রাচীরে প্রতিধ্বনি তুলে এই টরেটক্কা কথোপকথনের ধরনটা বেশ মজা লাগলো। হাইকিংয়ে ইস্তফা দিয়ে ধুপধাপিয়ে নেমে এলাম সবাই। আসার সময়ে পেট্রল স্টেশন লাগোয়া সুপারমার্কেট থেকে গোটা কয় ইন্সট্যান্ট নুডুলস কিনে নিতে ভুললাম না।
হোটেলে ফিরে প্রথমেই এক প্যাকেট ঝাঁঝালো নুডুলস খেয়ে জানে পানি ফিরিয়ে আনলাম। দুনিয়ার কত আধপেটাকে যে বাঁচিয়েছে এই ইন্সট্যান্ট খাদ্য সমাধান। কৃতজ্ঞচিত্তে ভাবতে ভাবতে আধা ঘন্টার হালকা একটা ভাতঘুম। তারপরই ঝটকা মেরে উঠে ঝটপট তৈরি হয়ে নিলাম। ডিনার ধরতে হবে। সাথে মনিকা আর টিং টিংকেও নিতে হবে। নইলে এক পাল বিজ্ঞানীদের কচকচে আলোচনার মাঝে একাবোকা গিয়ে পড়লে দেঁতো হাসি নিয়ে আড়ষ্ট বসে থাকাই সার। হাত-পা ছড়িয়ে আরাম করে মাছের টুকরো চিবোনো আর হবে না।

মাছের কথা ভাবতেই বড় এক টুকরো লালচে স্যামন ভেসে উঠলো কল্পনায়। গলানো মাখনে সেটা গলা ডুবিয়ে শুয়ে আছে সফেদ থালার বিছানায়। তার ডানে-বামে আদুরে কোলবালিশ হয়ে ক’খানা রোস্টেড আলু। ভাজা মাছ আর রোজমারি পাতার বিদেশি সুঘ্রানটা যেন হ্যাঁচকা টান মেরে ঘরের বার করে ছাড়লো। নিজের অজান্তেই দ্রুত পা চালাতে লাগলাম রেস্তোরাঁ বরাবর। (চলবে)




মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: ফাঁকিবাজি পোষ্ট দিয়েছেন।
লেখার সময় তাড়াহুড়া করবেন না।

১৯ শে এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১২:৫৯

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: ফাঁকিটা ধরে ফেলেছেন, রাজীব ভাই। আসলে চাকরি আর পারিবারিক কিছু ব্যস্ততায় কোয়ালিটি টাইম পাচ্ছি না। মন মতো লিখতে না পারায় ব্যাপক অশান্তিতে আছি। তার উপর রমজান চলছে। সময় বের করার জন্যে কি করি বলুন তো।

২| ২৭ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১০:৩৫

মোঃ রাশেদুল হাসান সিয়াম বলেছেন: আপনার শুরু দিকের পোস্ট পড়লাম। তারাবি পড়ে ক্লান্ত লাগছিল। আপনার লেখা পড়লে চোখে ভাসানো যায়। একটানা অনেকগুলো ব্লগ পড়ে গেলাম। চালিয়ে যান। আমি প্রযুক্তি বিষয়ক নানা আপডেট, তথ্য, নিউজ শেয়ার করে থাকি ব্লগে।

১১ ই মে, ২০২২ রাত ২:০৭

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: সিয়াম ভাই, ক্লান্তি কিছুটা হলেও ঘুঁছেছিল সেদিন জেনে খুব ভাল লাগলো। আর উৎসাহটা বোনাস হিসেবে নিলাম। আসলে প্রবাসে অনেক রকম অ্যাাংজাইটি কাজ করে। তার থেকে রেহাই পেতে এই লেখালিখি। একটা পালিয়ে যাওয়ার জাআনালার মতন।

প্রযুক্তি নিয়ে লেখাগুলো নিশ্চয়ই অনেকের উপকারে লাগছে। ব্লগবাড়িতে সময় করে ঘুরে আসবো।
আপনি ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.